পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা।
একদম খাঁটি কথা। আমি যে ফালতু লাইনে কাজ করি তাতে এই একটাই সুবিধে। মাঝেমধ্যে বিদেশ যাওয়া যায়।
আমি বেজায় ঘরকুনো ছেলে।
ঘুরতে যাওয়া অবধি ঠিক আছে। কিন্তু কাজের জন্য এতোদিন বাড়ির বাইরে থাকা ! ভাবলেই জ্বর আসে। তাও রাজি হয়ে গেলাম দেশটার নাম শুনে।
৩০ জুন বিকেল ৬ টা। কলকাতা এয়ারপোর্টে আমার বাবা-মা, শাশুড়ি মা, মামা, মাসি, মামাতো বোন আর একমাত্র বৌ।
আমি লাগেজ নিয়ে হাঁচোড় - পাঁচড় করতে করতে এমিরেটস এর কাউন্টারে পৌছে লাইন দেখে চোখ কপালে। ৫০ মিনিট পরে ৪০ জনের শেষে কাউন্টারে পৌছে কেতা করে ইংরেজী বলার জন্য গলা খাঁকারি দিতেই শুনি সবাই বাংলা বলছে !
কি আনন্দ ! ৩ কিলো বেশী লাগেজের জন্য একটা পয়সাও দিতে হলো না।
বোর্ডিং পাস নিয়ে আবার গেলাম বাড়ির লোকেদের কাছে। মা'র হাপুস কান্না, বাবার সাবধান বানি আর মামার চোখ টেপা দেখে হাসিমুখে বিদায় নিলাম।
কোনো কথা ছাড়াই পাসপোর্টে সিল মেরে দিলেন ইমিগ্রেশন অফিসার।
৩০ মিনিট পরে আমি প্লেনের পেটে। মোটামুটি খাবার, একটি হুইস্কি ও একটি সিনেমা সহযোগে ৪ ঘন্টা কাটার আগেই আমরা দুবাই এর আকাশে।
সারারাতের ওয়েটিং। বাইরে যেতে পারতাম। এমিরেটসের হোটেলে ব্যবস্থা ছিলো।
সিকিউরিটি ছেকের লাইন দেখে ইচ্ছেটাকে দমিয়ে ফেললাম। সাথে আরো দু জন ছিলো যাদের গন্তব্য সানফ্রানসিসকো। তাদেরও সকালবেলায় ফ্লাইট।
যা হোক একটা মোটামুটি ফাঁকা জায়গা দেখে বসা গেল। ইন্টারনেট কানেক্ট করে দেশে কয়েকটা মেসেজ করলাম।
তার পর বেড়োলাম টার্মিনাল ৩ ঘুরতে। প্রথমেই খুঁজে ফেললাম বিড়ি টানার জায়গা। তার পর কিছু টাকা ভাংগিয়ে কলিং কার্ড কিনে দেশে ফোন। তারপর যত্রতত্র ছবি তোলা। দোকান পাট দেখা।
সিটে গিয়ে ঘুমোনো। মাঝে মাঝে বিড়ি খাওয়া। এসব করতে করতেই সকালের আলো দেখা গেল। এয়ারপোর্টের টয়লেটে গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে আরেকটা বিড়ি খেয়ে জেনিভার প্লেনের বোর্ডিংএর লাইনে দাঁড়ালাম। চোখে ঘুম, পেটে ক্ষিদে।
প্লেনে উঠে সিট খুঁজে বসতেই পাশে এক বয়স্ক জাপানী দম্পতি এসে বসলেন। ভাষাগত সমস্যা থাকলেও আলাপ চালাতে কোনো অসুবিধে হয়নি।
আবার কয়েকটা সিনেমা, বারকয়েক টয়লেট আর প্লেনের ভেতরে হাঁটাহাঁটি করতে করতেই আল্পস পেরোলাম।
চোখে পড়ল জেনিভা লেক। আকাশ তখন মেঘলা।
পাইলটের গোমড়া গলায় ভেসে আসছে আবহাওয়ার খবর , "আজ পুরো সুইজারল্যান্ড জুড়ে বৃষ্টিপাত হবে। সারাদিন। "
জেনিভার রানওয়েতে জমা জল দেখতে পেলাম। কলকাতার রানওয়ের কথা মনে পড়ে গেলো.... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।