জেনিভা ইন্টারন্যাশানাল এয়ারপোর্ট। প্রচুর নামডাক শুনেছি। সেখানেই নামলাম। ঝুপঝুপ বৃষ্টি পড়ছে। জীবনে প্রথম বুঝলাম "ডিপ্রেসিং ওয়েদার" কাকে বলে !
সরু প্যাসেজ।
আলো কম। ছোট্ট ইমিগ্রেশন। প্রচুর লোক। ইউরোপের বাসিন্দাদের আলাদা লাইন। বাকিরা আলাদা লাইন।
উপরওয়ালার কালারশেডের কালেকশনের কাছে পিকাসোও কানা। একবার লাইনে দাঁড়ানো জনতার ওপর চোখ বোলালেই সেটা বোঝা যায়। কাউন্টারে পৌঁছলাম। ভিসাতে "মোটিফ : প্রোফেশনালে" লেখা দেখা মুচকি একটা হাসি খেলে যেতে দেখলাম অফিসারের মুখে। যাক গে! তোদের দেশে খেটে তোদেরকেই ট্যাক্স দিয়ে যাব ! হাসিটা সেজন্যই মনে হল !
কাঁধব্যাগ ঝুলিয়ে, পাসপোর্ট সামলে পা দিলাম এসকালেটরে।
এ কি! পাশাপাশি দুটো সিঁড়ির মাঝে প্রচুর মোড়ানো কোল্ডড্রিন্কের বোতল, পলিথিন। এই বিদেশী যাত্রীগুলোকে নিয়ে আর পারা যায় না! অন্যের দেশটাকে নোংরা করে দিয়ে যাচ্ছে! (এই ধারনাটা ভেঙে যেতে ৩ ঘন্টা সময় লেগেছিল মাত্র !)
লাগেজ বেল্ট থেকে আমার লাগেজগুলো নামিয়ে বাইরে এলাম। এয়ারপোর্টের সাথেই রেল স্টেশন। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটলাম। আমার গন্তব্য "লসান"।
টিকিটে কোনো ট্রেনের নাম বা সিট নাম্বার লেখা নেই। জানলাম যে এই টিকিটে আজকের দিনের মধ্যে আমি যেকোনো ট্রেনে সেকেন্ড ক্লাসে জেনিভা থেকে লসান যেতে পারি।
ভালো। এবার কলিং কার্ড চাই। এখানে "রিলে" বলে একটা চেইন শপ আছে স্টেশনগুলোতে।
সেখানে গিয়ে দাবি করলাম ভারতে সস্তায় কথা বলা যাবে এমন একটা কার্ড দিতে। ১০ ফ্রান্ক দিয়ে ৮০ মিনিটের একটা কার্ড পাওয়া গেলো। বাড়ির লোকেদের আশ্বশ্ত করলাম। তারপর নিচের তলায় গিয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা। সেই দিলওয়ালে দুলহনিয়াতে দেখা সুইস রেল আসবে।
আমি তাতে চড়বো। কি আনন্দ।
কিন্তু হায়। যে ট্রেনেটা এলো সেটা কোনো এক কালে সাদা ছিলো। অটোমেটিক দরজা খোলানোর জন্য দরজার সামনে মাইকেল জ্যাকসনের মতো "ইয়াও" করে গোল চক্কর দেওয়াটাই বাকি ছিল।
সিটগুলো ভালো। জানলা জলের ছাঁটে ঝাপসা। ছবি তোলার আশা ওখানেই ত্যাগ করলাম। স্টেশনটা আন্ডারগ্রাউন্ড। তাই সিটে বসে প্ল্যাটফর্মে বসা একদল ছেলেমেয়ের কান্ড দেখতে লাগলাম।
তার সিগারেট খাচ্ছে, চেঁচিয়ে গান করছে। হঠাৎ একটি মেয়ে হাতের ওপর ভর দিয়ে হাঁটা শুরু করল আর একটি ছেলে তাকে দিল এক ধাক্কা। মনে পড়ে গেলো আমাদের দেশের বাড়িতে রেলস্টেশনের জমাটি আড্ডাটা। আমাদেরও নিশ্চই কেউ না কেউ জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখত। ভালো লাগল খুব।
কিছু জিনিস সব দেশেই সমান। ট্রেন চলতে শুরু করলে টয়লেট যাবো ভেবে উঠলাম। কিন্তু টয়লেটের দরজা খুলেই আবার বন্ধ করে পালিয়ে আসতে বাধ্য হলাম। কেনো যে এরা জল ব্যবহার করে না কে জানে !
যাই হোক! কোনো মতে ৪০ মিনিট পেরোবার পরে ফ্রেন্চে ঘোষনা শুনলাম সামনেই লসান।
জিনিস পত্তর টেনে দরজার সামনে যেতে যেতেই স্টেশনে ট্রেন ঢুকে গেল।
এই দেশের এই একটা জিনিস দেখার মতো। ট্রেনের যাতায়াত একদম ঘড়ির কাঁটা ধরে।
স্টেশনে অপেক্ষা এক কলিগের জন্য যে আমাকে রিসিভ করতে আসবে।
তার মধ্যেই দেখলাম জনতা স্টেশনে অবাধে সিগারেট খাচ্ছে, থুতু ফেলছে। ট্রেনলাইনে সিগারেটের টুকরো ভর্তি।
ভারতে স্টেশনে বিড়ি খাওয়ার কথা ভাবাও পাপ।
আমার জন্য অবশ্য এটা সুখবর। খানিকক্ষন পরে সুকান্ত চলে এলো। লাগেজ টানতে টানতে স্টেশনের কাছেই হোটেলে পৌছলাম। রিসেপশন হীন ছোট্ট হোটেল।
এখানে সবই ছোট ছোট। গাড়ি ছোট। লিফ্ট ছোট। ঘর ছোট। একরাতের হোটেলবাস আমার।
পরদিন সকালে অফিস যেতে হবে। কম্পানি থেকে বুক করা ফ্ল্যাটের চাবি নিতে হবে আর আজ রাতেই ইউরো কাপের ফাইনাল। সেটাও দেখতে হবে।
কলিগের বাড়িতে চমৎকার রাতের খাবার খেয়ে এসে বিছানায় কাত হয়ে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি নিজেও বুঝি নি.... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।