আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। জামায়াত-শিবির সারা দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে তাণ্ডব চালাচ্ছে। তাদের এ কর্মকাণ্ডের মূলে রয়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করা। দেশের সব শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিয়ে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিরোধ করতে হবে। গত শুক্রবার চ্যানেল ৭১-এর টক শো 'একাত্তুর জার্নাল'-এ আলোচকরা এ অভিমত দেন।
তাঁরা বলেছেন, জামায়াত-শিবির একটি নেশাগ্রস্ত পরিস্থিতি তৈরি করছে, যেখানে বিশালসংখ্যক তরুণ যোগ দিয়ে তাদের জীবন বিপন্ন করছে।
সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের হামলা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে রাজশাহীতে জামায়াত-শিবিরের হামলা-আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সেখানকার মানুষ- সঞ্চালক নবনীতা চৌধুরীর এমন আলাপের পরিপ্রেক্ষিতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আরাফাত প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তিকে এক প্লাটফর্মে এসে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, 'দিলীপ বড়ুয়ার (সাম্যবাদী দলের সভাপতি ও শিল্পমন্ত্রী) মতো লোকদের একোমোডেট করতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। এখন আওয়ামী লীগ যেটা করছে, তা ঠিক আছে; কিন্তু আপনি এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জামায়াতকে রাখবেন, শিবিরকে রাখবেন, তা তো হয় না।
' তিনি আরো বলেন, 'যারা শিবির করে তাদের প্রতি আমার একটা সিমপ্যাথি আছে, তারা সবাই হয়তো খারাপ নয়; কিন্তু তাদের খারাপ বানানো হয়েছে। তাদের যেভাবে মগজ ধোলাই করেছে, নষ্ট করেছে, অন্ধ করে তুলেছে, তা ভয়াবহ। দুই ভাবে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। এক. সাংস্কৃতিভাবে প্রতিরোধ; অন্যটি সামাজিকভাবে প্রতিরোধ। ' শিবিরে যাওয়া তরুণদের সামাজিকভাবে বুঝিয়ে ফেরানোর ওপর জোর দিতে বলেন মোহাম্মদ আরাফাত।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর রাজনীতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, 'জামায়াতে ইসলামীর যিনি প্রতিষ্ঠাতা সেই মওদুদীর ছেলের একটি সাক্ষাৎকার পাকিস্তান থেকে আনা হয়েছে; সেই সাক্ষাৎকারে মওদুদীর ছেলে বলেছেন, 'আমরা ৯ ভাইবোন সবাই ইংরেজি মিডিয়ামে পড়েছি, আমাদের কাউকে মাদ্রাসায় পাঠানো হয়নি। আমাদের বাবা মওদুদী বলতেন, তোমাদের কেউ জমিয়তের (পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন) ধারে-কাছে যাবে না। '
সাক্ষাৎকারে তাঁর ছেলে উল্লেখ করেছেন, কোনো সময় যদি তাঁরা জামায়াতের কোনো সমাবেশে যেতেন তাহলে মওদুদী তাঁদের মানা করতেন, বকাঝকা করতেন। মওদুদীর ছেলে নিজে বলেছেন, 'জামায়াত হলো একটা ড্রাগের মতো। ড্রাগ দিলে যেমন পৃথিবীর সব বিবেচনা কাজ করে না, তেমনি এখানেও একই কাজ হয়।
' তিনি আরো বলেন, 'বাংলাদেশে যারা শিবির করছে তাদের সেখান থেকে আমাদের বের করে আনতে হবে। এটার জন্য পলিটিক্যাল সোশ্যাল- সব জায়গা থেকে কাজ হতে হবে। '
নবনীতা চৌধুরী জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করার উপায় কী জানতে চাইলে অনুষ্ঠানের আরেক আলোচক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম বলেন, 'আমরা যাঁরা জামায়াতের রাজনীতিকে ইনইফেক্টিভ করতে চাই; কিন্তু তা জামায়াতের ওপর জুলম বাড়িয়ে হবে না। আপনি যদি পারেন তাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলেন; তা আপনারা পারবেন না। যখন কোনো রাজনৈতিক দলকে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দেওয়া হয়, তখন তাদের কর্মীরা কিন্তু র্যাডিক্যাল হয়ে যায়।
' এ সময় নবনীতা বলেন, আরেকটি যুক্তি আছে, তাহলো যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে। এ রকম একটি বিচারিক প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে মিছিল-সমাবেশ করার আইনি অধিকার কারোর আছে কি না জানতে চাইলে ড. পিয়াস করিম বলেন, 'এটা আইনের একটা ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। আমি কিন্তু বলতেই পারি, এ বিচার চাই না। '
ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে কি কোনো স্লোগান আপনি-আমি তুলতে পারি? তাহলে জামায়াত কেন তুলবে_সঞ্চালকের এমন প্রশ্নে ড. পিয়াস করিম বলেন, 'না আমি-আপনি পারি না', কিন্তু জামায়াত যদি সেমিনার করতে যায়, তাহলে তাদের আটকে দেওয়া যায় না। '
সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়ার কারণেই কি শেষ আশ্রয় হিসেবে জামায়াত-শিবির চোরাগোপ্তা হামলা করছে_নবনীতা চৌধুরীর এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, 'একটি রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ সেমিনার করার অধিকার আছে; কিন্তু মানুষের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে।
একটা সভা-সমাবেশ থেকে কোথাও কোথাও নিরাপত্তা বিঘি্নত হতে পারে। এ অবস্থা তৈরি হলে সরকার কি বসে ঘাস কাটবে? সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা কী করবে? তারা কেন জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবকে কন্ট্রোল করতে পারেনি। ' তিনি বলেন, 'সভা-সমাবেশ-সেমিনার করার অধিকার জামায়াতের আছে; কিন্তু কর্মসূচীর পর তারা যে কাণ্ড ঘটাচ্ছে, সেখানে সরকারের আগে থেকে কিছু প্রতিরক্ষামূলক প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। ' ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।