লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ। নিম্নমানের পাঠক
মোহাম্মদ ইসহাক খান
আমি বই পড়বো।
সুপরিসর বইয়ের তাকের সামনে এসে দাঁড়ালাম।
কী বই নেই এখানে? গল্প, উপন্যাস, কবিতা, "পড়ার" বই, এনসাইক্লোপিডিয়া, ডিকশনারি, জীবনী, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, শিশুতোষ- এক কথায় সব।
কোন বইটা পড়া যায়? একটা গুরুগম্ভীর বই পড়বো, যেটা পড়লে জীবনদর্শন সম্পর্কে আমার চোখ খুলে যাবে, জ্ঞানের সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকবো? নাকি একটা হালকা বই পড়বো, যেটাতে "শিক্ষামূলক" কিছুই নেই, আছে সস্তা একটা গল্প, আছে কিছু হাসির খোরাক, আছে একটা "হ্যাপি এন্ডিং"?
আমি একটা পাতলা দেখে গল্পের বই টেনে নিই। হালকা ধরণের চটুল বই। পড়ার জন্য গভীরভাবে চিন্তার কিছু নেই, লেখকের মুন্সিয়ানা দেখে থেকে থেকে শিউরে ওঠার কিছু নেই, শুধু একটু বিনোদন, শুধু স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাতা উল্টে যাওয়া।
এবার গান শুনবো।
র্যা ক ভর্তি করে সাজানো আছে গানের সিডি। কম্পিউটারে আছে অসংখ্য গান। কোন গান শুনবো? রবীন্দ্র, নজরুল, ভাওয়াইয়া, পল্লিগীতি, হারানো দিনের, পুরনো দিনের, হারিয়ে যাওয়া, ফিরে পাওয়া গান? কোন নামকরা ওস্তাদের কালোয়াতি দেখানো উচ্চাঙ্গ সংগীত? সুমধুর বাঁশির সুর, ইন্সট্রুমেন্টাল?
আমি বেছে বেছে ঠিক করলাম এমন একটা গান, যেখানে কথার কোন আবেদন নেই, গায়কের গলায় তেমন সুর নেই, সমঝদার মানুষ যেটাকে বেসুরো চিৎকার বলবে, ভাল করে কান পাতলেও যে গানে কথা বোঝা যায় না, মনে হয় কেউ মার খেয়ে চিৎকার করছে। কিন্তু আমার এই গানটাই ভাল লাগে, তালে তালে মাথা দোলাই আমি।
একটা মুভি দেখা যাক।
আমার সংগ্রহে আছে অনেক অনেক সিনেমা। বাংলা, ইংরেজি, ইরানী, হিন্দি, চাইনিজ, রাশান, চেক। কেমন মুভি দেখবো? এগারোটা অস্কার জেতা "ক্লাসিক" একটা পুরনো দিনের ছবি, যেটার প্রতিটি ডায়ালগে, প্রতি "ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে" মিশে আছে পরিচালকের কারিকুরি, যে ছবির মুগ্ধ প্রশংসা করেছেন সমালোচকেরা, যে ছবি তিন ঘণ্টা ব্যাপী ধরে আমার মতো কমবয়সী দর্শকদের ঘুম পাড়িয়ে দেয়? নাকি দেখবো দেড় ঘণ্টার একটা অ্যাকশন ছবি, যেটাতে হিরো কিছু অতিমানবীয় সব দক্ষতা দেখিয়ে ভিলেনকে কুপোকাত করে দেবে, যেটাতে একটু পরপর আছে হাসির দৃশ্য, যেটা দেখে আমার কোন লাভ হবে না, যেটা দেশ ও সমাজের কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না? যেটা বোদ্ধা মানুষজন বলবেন "সস্তা ছবি"? "লেইম" বলে উড়িয়ে দেবেন?
আমি অ্যাকশন ছবির প্লে বাটনে চাপ দিলাম। আমার দরকার বিনোদন। ক্লাসিক ছবির কোন প্রয়োজন আমার কাছে নেই।
আমি সস্তা ধরণের বই পড়ি। সস্তা ধরণের গান শুনি। সস্তা ধরণের ছবি দেখি। অনেক মানুষজন আছে, ভাল না লাগলেও খুব উঁচুমানের বলে "হাই থট" জিনিসপত্র অভ্যস্ত। তারা হয়তো এই করে করে জীবন পার করে দেবে, কারণ মানুষ জিজ্ঞেস করলে সে যদি বলে, তার কাছে সস্তা ধরণের বিনোদন ভাল লাগে, তাহলে হাসির পাত্র হবে, মোটা ফ্রেমের চশমার আড়াল থেকে (কিংবা চশমার কাঁচের ওপর দিয়ে) তার দিকে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে তাকানো হবে।
তাই ঘুম ঘুম চোখে তারা বিশাল পরিসরের একটা বিরক্তিকর ছবি দেখবে, বিরক্তিকর সমাজ ও দেশ নিয়ে লেখা "আশা জাগানিয়া, মন হরণিয়া" উপন্যাস পড়বে, বিরক্তিকর প্যানপ্যানে গান শুনবে।
আমি নিজের কাছে সৎ। সৎ এই কারণে যে, আমি যা ভাল লাগে, সেটাই করি, কাউকে দেখানোর জন্য আমি উঁচুমানের কিছু বেছে নিই না। আমি নিম্নমানের পাঠক, নিম্নমানের দর্শক, নিম্নমানের শ্রোতা। আমি এভাবেই ভাল আছি, এভাবেই থাকতে চাই।
আমার একমাত্র সান্ত্বনা, আমি অন্তত আনন্দটা পাচ্ছি, সেটাতে কোন খাদ নেই।
(২ ডিসেম্বর, ২০১২)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।