আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসহায় ও আত্মপ্রত্যয়ী এক নারীর কথা বলছি। আসুন মানবিকতার হাত বাড়াই। একটি স্বপ্নকে বাচিঁয়ে তুলি।

লেবাসধারীতা থেকে মুক্তি পাওয়ার এক যন্ত্রনায় ছটফট আমার আর্তনাদ। আমি একটি কিশোরীর স্বপ্নের কথা বলছি- যে কিনা জীবনের কঠিন বাস্তবতায় অনেকটা হারিয়ে গেছিল। তথাকথিত প্রেম নামক এক অভিশাপ যে কিশোরীর জীবনটাকে ছারখার দিছিল। সেই তরুণীটি আজ আমি-আপনি সবার কাছে সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করেছে। আসুন সেই অসহায়-আত্মপ্রত্যয়ী তরুনীটির জীবনকাব্য পড়ি।

অতঃপর সহযোগিতার হাত বাড়াই- নির্মম যে জীবন ‘অল্প বয়সে পিরিতি করিয়া হয়ে গেল জীবনের শেষ। ’ রোমান্টিক গানের এই কলির বাস্তবতা মিলে তেঁতুলিয়ার মোছা. তাহমিনা আকতার ময়নার জীবনে। কিন্তু নিরলস চেষ্টা ও সাধনায় ময়নার জীবন শেষ হয়েও হয়নি শেষ। অক্লান্ত পরিশ্রম ও অদম্য প্রচেষ্টা তার মেধাকে করেছে বিকশিত, প্রতিভা হয়েছে প্রস্ফুটিত। তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের রণচণ্ডি গ্রামের আবদুল মালেকের মেয়ে ময়না।

পরিবারে ৪ ভাই ৮ বোনের মধ্যে সে ৬ষ্ঠ। দৃঢ়প্রত্যয়ী ময়না এবছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাল্যপ্রেম, নানা রকম বাধা-বিঘ্ন ময়নার প্রতিভাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ময়নার বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তার অবুঝ প্রেমের সংগ্রামী জীবনের আত্মকথা। ময়না স্থানীয় রণচণ্ডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ চুকিয়ে রণচণ্ডি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় ।

তখন থেকে সে বখাটে চাচাতো ভাইয়ের প্রলোভনে প্রেমে পড়ে। এর মাঝে সে সপ্তম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে অষ্টম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়। অষ্টম শ্রেণীতে তার ক্লাস রোল ছিল ১। কিন্তু প্রেমের টানে বাবা-মার অনিচ্ছা সত্ত্বেও বখাটে নেশাখোর এ ছেলেকে বিয়ে করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলী ও ম্যানেজিং কমিটির লোকজন তার বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

এখানেই থেমে যায় ময়নার পড়াশোনা। বিয়ের পর নববধূর শরীরে হলুদের রং মিশে যেতে না যেতেই তার দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে বখাটে নেশাখোর স্বামীর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নেশাখোর স্বামী তার শরীরের বিভিন্ন অংশে সিগারেটের আগুন দিয়ে পুড়ে দেয়। অল্পবয়সী ময়না বখাটে স্বামীর অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে পারেনি। মনের দুঃখে-ক্ষোভে ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ময়না সবার অগোচরে নাইট কোচে চড়ে রাজধানী ঢাকা পালিয়ে যায়।

কিন্তু ঢাকায় তার কেউ নেই; উঠবে কোথায়? এই চিন্তা ময়নার মাথায় খটকা বাধে; তখন সে মনে মনে ভাবে, সকাল হলে গাড়ি থেকে নামবে আর কোনো নারী দেখলে তার কাছে ছুটে যাবে। যেই কথা সেই কাজ। ভোর ৫টায় সে ঢাকা মালিবাগে পৌঁছায়। সেখানে সূর্য ওঠার সময় পর্যন্ত গাড়িতে বসে থাকে। সকালে টিফিন বক্স হাতে দুই অপরিচিত নারীকে দেখে গাড়ি থেকে নেমে তাদের কাছে গিয়ে জানায়, ‘আপু ঢাকায় আমার কেউ নেই।

আমিও তোমাদের সঙ্গে কাজের খোঁজে যাব। ’ অপরিচিত দুই নারী তাকে গার্মেন্টে নিয়ে যান। গার্মেন্টে খুশি নামে এক নারী কর্মী তাকে দুপুরে খাবারের জন্য হোটেলে নিয়ে যান। কিন্তু গ্রাম ছেড়ে ঢাকা গিয়ে তার মন টিকে না, কষ্টে বুক ফেটে যায়। ছলছল দু’চোখের জল গড়িয়ে পড়ে।

সে এ অবস্থায় হোটেলে ভাত না খেয়ে উঠে পাশে মোবাইলের দোকানে গিয়ে গ্রামের বাড়িতে বড় ভাইকে জানায়, ঢাকায় চলে এসেছে। বড় ভাই ময়নাকে আনার জন্য উকিল বাবার শরণাপন্ন হয়। পরে তার উকিল বাবা ঢাকায় চাকরিরত পুলিশ কনস্টেবল শ্যালকের মাধ্যমে মোবাইলের দোকানে খোঁজ নিয়ে গার্মেন্ট থেকে তাকে বাসায় নিয়ে যান। উকিল মামার সঙ্গে ঢাকার বাসায় কিছুদিন থাকার পর বড় ভাই তাকে বাড়িতে এনে বিচার সালিশের মাধ্যমে বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও পুনরায় তাকে শ্বশুর বাড়িতে পাঠায়। এখানে তার এক মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়।

এতকিছুর পরও ময়নার জীবনে সুখ আসেনি বরং বখাটে নেশাখোর স্বামীর অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন আরও বেড়ে যায়। শ্বশুর বাড়ির লোকজন ও তার স্বামীর নির্যাতনে ময়না অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তারা ময়নাকে তার পথ বেছে নিতে বলে। নিরুপায় ময়না স্বামীর অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আবারও সবার অগোচরে কোলের শিশুকে ফেলে রেখে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। শালবাহান রোড মাঝিপাড়া নামক স্থানে তাকে বখাটে স্বামী আটক করে বাড়িতে নেয়ার চেষ্টা করলে সে চিত্কার শুরু করে।

এতে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়। ময়নার কাছে নির্যাতনের ঘটনা জেনে তারা স্বামীর কাছে না পাঠিয়ে তাকে দুলাভাইয়ের জিম্মায় দিয়ে বোনের বাসা আজিজনগরে পাঠান। সেখানে ময়না ২ মাস থাকে। এরপর তার আপন মা ও সত্মা তার বাবাকে না জানিয়ে বাড়িতে নিয়ে আরেক বোনের বাসায় রাখেন। এখানে থাকাকালে ময়না স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও পরিচিত শিক্ষকদের কাছে ঘটনার ফয়সালা চেয়ে তালাক নেয়ার কথা জানান।

কিন্তু তারা ময়নার বাবার অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু করতে নারাজ। পরে মায়ের সঙ্গে আলোচনা করে বাবার পা ধরে ক্ষমা চায় ময়না। কিন্তু বাবার শর্ত ছিল শিশু মেয়েটি রেখে আসতে হবে এবং আবার তাকে পড়াশোনা করতে হবে। বাবার দুই শর্ত ওই মুহূর্তে সে মানতে পারে না। তথাপিও বখাটে স্বামীর বাড়িতে যাবে না বলেই সে বাবার শর্তে রাজি হয়।

পরে বাবা আবদুল মালেক ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় স্বামীর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেন। দীর্ঘদিন পর বাবার বাড়িতে এসে ময়না সব ধরনের লাজলজ্জা ফেলে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে আবার বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করে। শিক্ষকমণ্ডলীর সহায়তায় ময়না দশম শ্রেণীর টেস্ট পরীক্ষায় ৪৩ জন ছাত্রছাত্রীর মাঝে প্রথম স্থান অধিকার করে। পরে নিয়মিত ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লেখাপড়া চালিয়ে এসএসসি-২০১০ চূড়ান্ত বোর্ড পরীক্ষায় একমাত্র জিপিএ-৫ পেয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এত ঘটনা, বাধা-বিঘ্নের পরও অবুঝ প্রেম থামিয়ে দিতে পারেনি ময়নার পথ চলা।

আত্মপ্রত্যয়ী ময়না তার আবেগময় ভুলের কৈশোর জীবন কাহিনী শেষে বলেন, অবুঝ থাকায় দীর্ঘদিন বখাটের প্রেমে পড়ে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে আমি আর পড়াশোনা করতে পারব না ভেবেছিলাম। কিন্তু বাবার শর্ত পূরণের জন্যই শিক্ষকমণ্ডলীর সহযোগিতায় দৃঢ়বিশ্বাস নিয়ে এ সাফল্য অর্জন করেছি। আমি ভবিষ্যতে লেখাপড়া করে শিক্ষক হতে চাই। আত্মপ্রত্যয়ী ময়না ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, না বুঝে আবেগের কারণে আমার মতো ভুল যেন কোনো ছাত্রী না করে!। সুত্র: দৈনিক আমার দেশ, প্রথম আলো।

(বিস্তারিত জানতে আপনারা যোগাযোগ করতে পারেন: আতাউর রহমান কাবুল: ০১৫৫২৬৩৩৪০৮) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.