পুলিশ কর্তৃক দিনের শেষে পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি এবং এক নারী সাংবাদিককে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে জামালপুরের আওয়ামী লীগের এক এমপির পারিবারিক জমি দখলের অপচেষ্টার অংশ হিসেবে এ সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। এর পর জামিনে মুক্ত হওয়ার পর স্থানীয় এমপির মদদে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় মধ্যাহ্ন দৈনিক ‘দিনের শেষে’র জামালপুর জেলার ইসলামপুর প্রতিনিধি পুতুল রাণী রায়।
পুলিশি নির্যাতনের ভয়ে এখন তিনি ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না।
পুতুল রাণী অপহৃত হলে ২১ অক্টোবর বাংলানিউজে “৩ দিনেও খোঁজ মেলেনি জামালপুরের সাংবাদিক পুতুল রাণীর” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এর পর ২২ অক্টোবর “জামালপুরে নিখোঁজ সাংবাদিক পুতুলকে খুঁজে পাওয়া গেলো সিলেটে” শিরোনামে আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরই শুরু হয়, পুলিশি হেফাজতে হয়রানির ঘটনা।
পুতুল রাণী বাংলানিউজকে অভিযোগ করে জানান, ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের নির্দেশে ইসলামপুর থানার পুলিশের ওসি (তদন্ত) মতিয়ার রহমান তদন্তের অজুহাতে তাকে উদ্ধারের নামে ২৩ অক্টোবর দিনগত রাতে ইসলামপুর থানার হাজতখানায় রেখে যৌন নিপীড়নের চেষ্টা চালান।
এসময় তিনি চিৎকার দিলে ওসি মতিয়ার হাজতখানা থেকে বের হয়ে যান এবং পুতুলকে “চরিত্রহীন”, “দেহ ব্যবসা করে” বলে অভিযোগ তোলেন। পুতুলকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
পুতুল জানান, অপহরণ থেকে উদ্ধার হওয়ার পর ২৩ অক্টোবর পরিশ্রান্ত অবস্থায় গোসল করতে বাড়ি যেতে চাইলে তার মাকে পোশাক আনতে পাঠিয়ে ওসি (তদন্ত) মতিয়ার ওসির বাথরুমে গোসল করার জন্য পুতুলকে চাপ দেন।
এসময় ওসি মতিয়ার পুতুলকে নির্দেশ দেন, বাসার যাওয়ার দরকার নেই। ওসির গোসলখানায় গোসল করেন।
এরপর পুতুলের মা বাড়ি থেকে পোশাক আনতে গেলে পুতুল ওসির গোসলখানায় গোসল করতে যান। সেখানে ঢুকে তিনি শাওয়ারে সনি কোম্পানির তৈরি গোলাপি রঙের ২ থেকে ৩ ইঞ্চি ভিডিও ক্যামেরা দেখতে পান তিনি।
এর পর তিনি বাথরুমের বাইরে এসে এবিষয়ে অভিযোগ জানান।
এঘটনার পর ওসি মতিয়ার রহমান তাকে হাজতখানায় আটকে রাখেন। এদিন দিনগত রাত ৩টার দিকে ওসি মতিয়ার হাজতখানায় ঢুকে তার ওপর যৌন নিপীড়নের চেষ্টা চালালে পুতুল চিৎকার দিতে থাকেন। তার চিৎকারে ওসি মতিয়ার তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং “চরিত্রহীন”, “দেহ ব্যবসায়ী” হিসেবে উল্লেখ করে মামলার আসামি হিসেবে আদালতে চালান দেওয়া হবে জানান।
এসময় পুতুল প্রতিবাদ জানালে হাজতখানার সামনে বসে থাকা তার মা ছুটে আসলে পুতুলকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরে পুতুল তার অপহরণকারীদের নামে মামলা দিতে চাইলে ওসি মতিয়ার তাকে আবারও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। এর পর তিনি বাংলানিউজের ঢাকা অফিস এবং ভোরের কাগজ-এর সম্পাদককে ঘটনার বিবরণ জানান।
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত ঘটনাটি জানার পর পুতুলকে ঢাকায় আসতে বললে তিনি বৃহস্পতিবার সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করেন এবং শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হন।
সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে পুতুল রাণী বাংলানিউজকে ফোনে অভিযোগ করেন, স্থানীয় এমপি এবং ইসলামপুর থানার ওসি আবারও তাকে হয়রানি করতে পারেন।
এসময় বাংলানিউজকে তিনি ফোনে বলেন, “স্থানীয় জামালপুর-২ আসনের এমপি ফরিদুল হক খান দুলালের (জামালপুর-ইসলামপুর) বাড়ির সামনে আমাদের বাড়ি।
আওয়ামী লীগের অফিস স্থাপনের জন্য আমাদের বাড়ি কিনে নিতে চাইলে আমরা রাজি হইনি। সে কারণে এমপির মদদে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ তার মেয়ে লুৎফুন্নাহার হ্যাপিকে লুকিয়ে রেখে আমি অপহরণ করেছি বলে ১৯ জুন আমার বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন।
এ মামলায় পুলিশ ২২ জুন আমাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। ”
তিনি জানান, পরে হ্যাপি আদালতে হাজির হয়ে তার বাবা হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জানায়, তার বাবা (হারুন অর রশিদ) তাকে ঘরে আটকে রেখে পুতুলের নামে মিথ্যা অপহরণ মামলা দায়ের করেছে। এর পর পুতুল ২৮ জুন মামলায় জামিনে ছাড়া পান।
এ বিষয়ে ওসি (তদন্ত) মতিয়ার রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, ঘটনাটি পুরোটাই মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
তিনি বলেন, “পুতুল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। ”
ওসি কাজী সাইদুর রহমানকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। ”
জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, এ ধরনের অভিযোগ পেলে নিশ্চয়ই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র : Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।