আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাতার নিচে কে..রে..?.. এটা মানিক!!..

আমি মনে প্রাণে একজন মুসলিম। ঘৃণা করি ধর্ম বিদ্বেষী নাস্তিকদের এবং ধর্ম ব্যবসায়ী ছাগু তথা উগ্রবাদীদের। ক্যঁচাল পছন্দ করিনা । । দেখতে এইরকমই ছিলো আমার সেই ছাতাটা।

সেই ছোট্টবেলার কথা। প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল লাগাতার কয়েকদিন ধরে। আব্বা ব্যবসা করতেন রংপুরে। ব্যবসার কাজে রংপুরেই ছিলেন বাড়িতে মানুষ বলতে মা আর দাদী ছাড়া কেউ নেই। আমার বয়স তখন ৭-৮ বছর।

রান্না করার জন্য চুলা জ্বালাবার ম্যচও নেই। কি আর করা আম্মা পন্ঞ্চাশ টাকার একটা নোট বের করে একটা ম্যচ কিনে আনতে বললেন। বাবার বড় ছেলে হওয়ায় অনেক আদরের ছিলাম। আমার একটা সুন্দর ছাতা ছিল ছাতাটার একফালি লাল এবং অন্যফালি হলুদ। সেইছাতা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম ম্যচ কিনতে।

প্রথমে একটা দোকান পেলাম দোকানদার একটাকার ম্যচ বিক্রী করে ৫০ টাকা ভাংতি দিতে পারলোনা এজন্য আরো সামনে এগুতে থাকলাম। বটতলা বাজারে গেলাম সেখানে কয়েকটি দোকানে গেলাম একই দশা কেউ ম্যচ বেচে ৫০ টাকা ভাংতি দিচ্ছেনা। চলতে শুরু করেছি ছাতা মাথায় নিয়ে তখন নাকি আমার ডাইলগ ছিল “ছাতার নিচে কে রে?. এটা মানিক” এরকম বলতে বলতে বেতিল মার্কেটে চলে এলাম সেখানে একজন দাড়িওয়ালা ভদ্র দোকানদার আমাকে দেখে ম্যচ দিলেন এবং ৪৯ টাকা ফেরৎ দিলেন। ম্যচটা পকেটে পুরে একটা আইসক্রীম কিনতে একটু সামনে যেতেই দেখি তিনরাস্তার মোড়। সেখান থেকে আরেকটু এগিয়ে এক দোকান থেকে ২ টাকা দিয়ে একটা নারিকেলের আইসক্রিম কিনে রাস্তা ভুলে উল্টোরাস্তায় চলতে থাকলাম।

কিছুদুই যাই আর বলি “ছাতার নিচে কে রে?. এটা মানিক” এভাবে চলতেই থাকলাম কিন্তু রাস্তাঘাট অচেনা লাগছে….কিছুতেই বাড়ি খুজে পাচ্ছিনা। একসময় সামনে আরেকটি বাজার পেলাম সেখানে অনেক লোকজন দেখলাম তাদের জিজ্ঞাসা করলাম বাড়ি যাওয়ার রাস্তার কথা তারা বাবার নাম জিজ্ঞেস করলো বাবার নাম বললাম তারা চিনলোনা এরপর গ্রামের নাম সেটা বলতে পারলামনা। তারপর আবার পথচলতে শুরু করলাম। সেদিন ছিলো বুধবার সোহাগপুরের বিখ্যাত কাপড়ের হাট। আমার মেঝনানা হাটে গিয়েছিলেন কাপড় বিক্রী করতে।

নানা কাপড় বেচে বেপারীদের থেকে টাকা নিয়ে সাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ লক্ষ্য করলেন একটি শিশু রঙিন ছাতা নিয়ে হেটে যাচ্ছে আর কান্নাজড়িত কন্ঠে বলছে ছাতার নিচে কে..রে.েএটা মানিক!!.. তৎক্ষনাত নানা সাইকেল থেকে নামলেন। এরকম ছাতাতো আমিনার ব্যটার!!.. নানা কাছে এসে দেখলেন অনুমানটা সত্যিই আমাকে দেখে বললেত তুই কোথায় যাচ্ছিস? বাড়িতে.. বাড়ি এই দিকে?.. চড় সাইকেলে!!.. হারিয়ে যাচ্ছিলি এখনি?.. আমি সাইকেলে চড়লাম। নানা সাইকেল চালিয়ে চলছে… এদিকে বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেছে। নানাবাড়িতে খবর দেয়া হয়েছে নানারা আটভাই তাদের ছেলেরা মামারা সবাই আমাকে খুজতে বের হয়েছে গ্রামের মসজিদের মাইক থেকে হারানো সংবাদ জারী করা হয়েছে.. গ্রামের লোকজনও খোজাখুজি করছে।

এদিকে বিকেল গড়িয়ে গেছে সন্ধ্যা প্রায় হয়ে গেছে। সাইকেল নিয়ে মেঝনানা আমাদের বাড়িতে এসে থামলেন। গেটে শব্দ করতে আম্মা কাদতে কাদতে গেট খুলে দিলেন। সাইকেলের দিকে তাকিয়েই আমাকে কোলে তুলে নিলেন। এদিকে আমা্মা দাদী কাদছেন সাথে আমিও কাদছিলাম… দিন বিগত হয়েছে অনেক।

মেঝনানা আজ বেঁচে নেই। আল্লাহপাক তাকে জান্নাত নসিক করুন। এখনো শ্রাবণের বৃষ্টি হলে আম্মা সেই কথা মনে করিয়ে দেন যে ছোট্টবেলায় বৃষ্টির দিনে হারিয়ে গিয়েছিলে!!... (এটা আমার জীবনের একটা সত্য ঘটনা) টিকা; যে দোকানদারের কাছ থেকে ম্যচ কিনেছিলাম ভাগ্যক্রমে তিনিই আমার শ্বশুর হয়েছেন।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.