সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল পাঠকদের প্রবল অনুরোধে নির্ধারিত সময়ের আগেই তৃতীয় পর্ব দেয়া হলো। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
যেখান থেকে শুরু হলো
সোভানাল্লাহ ! একি । মেয়ে যেন ইচ্ছে করেই বুকের আচল ফেলে দিলো।
" আচ্ছা আমাকে তোমার সে রকম মনে হয়? আমার পক্ষ্যে কারো ক্ষতি করা সম্ভব বলো? না না চুপ করে থেকো না, তোমাকে আমার বুকের দিব্যি ! "
হায় হায় কিয়ের কসম দিলো।
আমার মাথা নষ্ট !
"তোমাকে আমার ঢের বোঝা হয়ে গেছে বাপু। আচ্ছা আমার একটু ফ্রেশ হতে হবে। তোমার রুমটা কই গো? "
দেখছোনি কারবার ! ইন্ডিয়ায় টয়লেটের কি সাংঘাতিক অভাব ! যে দেশে টাট্টিখানা নাই, সেই দেশের সাহারা গ্রুপ আমাদের দেশে মিলিয়ান মিলিয়ান ডলার খরচ করে উপশহর গড়তে চায় ! ফাইজলামির আর যায়গা পায় না?
শশব্যাস্ত হয়ে আমার রুমে নিয়ে গেলাম ! হাজার হোক, যেখানে সেখানে ইয়ে করে ফেলতে তো আর দেয়া যায় না।
"আচ্ছা শোন, আমার না ভীষনননন তেস্টা পেয়েছে। অ্যাই যাও না গো, আমার জন্য একটা রাম কোক নিয়ে এসো।
"
আহা রে ! একসাথে বাথরুম আর তেস্টা পাওয়া। খুবই ফাপড়ে আছে মেয়েটা। খুব মায়া লাগলো।
কিন্তু রাম এন্ড কোক কি জিনিস? ওদিকে মেয়ে তো সটান বাথরুমে। কারে জিগাই? মনে হয় বড় কোক আনতে বলছে।
বাংলা ভাষায় রাম মানে তো বড়। তাই ই হবে ! রুম সার্ভিসকে কল দেয়া বুবুর নিষেধ আছে। খামাখা পয়সা নষ্ট করা যাবে না।
নিজেই নীচে চলে গেলাম। এর পর দুই লিটারের কোকের বোতল নিয়ে এসে দেখি মেয়ে একেবারে বিছানায় !
এই রে ! ডায়ারিয়া হয়ে শয্যাশায়ি দেখছি।
আগে জানলে ওরসেলাইন নিয়ে আসতাম।
"ভোঁদার মত দাঁড়িয়ে আছো যে?"
একি ! ভাষার কি ছিড়ি ! এই সব কি কথা?
"এটা কেমন ভাষা হলো? এই সব আকথা কুকথা কোথা থেকে শিখেছো?"
"ওমা ! এটা কুকথা হলো কবে থেকে? আমাদের ভাষায় ভোঁদা মানে বোকারাম, তোমাদের ভাষায় ওর মানে কি ?"
দেখো দেখি কারবার ! আমি এখন কেমনে বুঝাই? যাই হোক কেমনে বুঝাইছি এইসব লিখা যাবে না। তবে শুনে টুনে মেয়ে একদিকে লজ্জায় লাল অন্যদিকে হেসে কুটি কুটি !
"এ মা ! কি বিচ্ছিরি গো তোমাদের ভাষা। কি শব্দকে কি বানিয়ে দিয়েছো। "
যাই হোক।
এর পর মাসুদ রানার সাথে যা ঘটে, আমার সাথেও তাই ঘটলো। পার্থক্যটা হলো এই ক্ষেত্রে মেয়েটাই মাসুদ রানার ভুমিকায় অবতীর্ণ।
সিডর হারিকেন সাইক্লোন টাইফুন সব কিছু আমার উপর দিয়েই বয়ে গেলো। মানে আমি শেষ।
তখন মনে হয় পড়ন্ত বিকেল !
"অ্যাই বোকারাম, ওঠো ওঠো আর কতক্ষণ ঘুমাবে? কি ঘুমকাতুরে বাবা ! "
"অ্যা ! ওই কেডা ? আমি কই?"
" এ মা ! তুমি কই মানে? তুমি তোমার রুমে।
ওহ শোন ! তুমি যখন ঘুমাচ্ছিলে তখন দুটো লোক তোমার খোজ করছিলো। নাম বললো শমসের আর রিয়াজ। আর একটা ফোনও এসেছিলো, বললো তোমার বুবু। আমি বলে দিয়েছি, তুমি ঘুমাচ্ছো। "
আমি শেষ।
শেষ মানে তুলে মুলে শেষ। নারী জাতির ছলনায় পড়ে যা যাওয়ার তো গেছে। এখন ভাবির কাছে ইজ্জতের ফালুদা। আর বুবু আমাকে আস্তা রাখবে না।
বুবুর কথা মাথা আসতেই ঘুম টুম সব শেষ ! কোনমতে বাথরুম শেষ করে আসতেই দেখি একটা চিরকুট।
মেয়ে গায়েব।
" তোমার জন্য একটা ক্লু রেখে গেলাম। প্রতিধবনি কথাটা মনে রেখো। ইতি তোমার সোনা। "
নাহ যেতে যেতেও দেখি অশ্লিল শব্দ বলে গেলো।
আর যেভাবে এলো আর গেলো মনে হচ্ছে ইন্ডিয়ান নারীরা আর আগের মত নেই। অনেক প্রগতিশীল হয়ে গিয়েছে।
কেমনে কি করি ! নাহ আগে বুবুকে কল দেই।
"আগে ক মাইয়া টা কে?"
"মাইয়া? আমি জানি না তো বুবু ! ভাবির হাতে চা খাওয়ার পর এমন ঘুম, আমার ফিটের দশা হইছিলো বুবু। " কান্না কান্না কন্ঠে বললাম।
"দেখছো কি ডাইনি বুড়ি ! আমার ভাইরে বিষ খাওয়াইয়া মারতে চাইছিলো? ওরে আমি... কিন্তু মাইয়া টা কেডা আছিলো?"
" মনে হয় রুম সার্ভিস ! ইন্ডিয়ান গো তো ভদ্রতা জ্ঞান খুব কম। গেস্টের ফুন ধরছে। আমি কি অমন পুলা কও বুবু?"
" হু তাও তো কথা ! আচ্ছা, তাইলে কি কোন খবরই পাস নাই?"
যা করে আল্লায়। আমি বলে ফেললাম
"বুবু তোমার গোয়েন্দা গো কও প্রতিধবনি কথাটার মোজেজা বাইর করতে। এইটাই নাকি চাবি ।
"
" আচ্ছা আচ্ছা ! তবে শোন, ওই মাথারির হাতে আর কক্ষনো কিছু খাবি না্ বুঝলি?"
যাক বাবা ! একটা ফাড়া তো কাটলো । দেখি এখন ভাবিজিকে কি করে ভুজুং ভাজুং দেয়া যায়। মহিলাদের পেটে তো কোন কথাই থাকে না।
একি ! বুবুর দেয়া ৩০ হাজার টাকায় ইন্ডিয়ান ১৪ হাজার রুপি পেয়েছিলাম। এর মধ্যে দেখি ১০ হাজার টাকাই গায়েব ! হায় হায় রে।
। ইজ্জতের সাথে সাথে দেখি টাকারও শ্রাদ্ধ !
গেছে যাক ! আগে ওই দিক সামলাই ।
"এসো এসো রসিক দ্যাওড়া। শরীর টরির ভালো আছে তো?"
কান টান লাল হয়ে গেলো। কি জবাব দেবো?
"ভুয়া হও আর যাই হোক।
দ্বায়িত্ব যখন নিয়েছো, তখন পালন তো করো। কিছুক্ষনের মধ্যেই কিন্ত সুষমা স্বরাজের বাসায় বিকেলের নাস্তা খেতে যাবো। চট করে দেখে এসো তো। "
প্রটোকল অফিসার নিরঞ্জন উড়িষ্যার ছেলে। খুবই ভালো।
ওই ই আমাকে সেখানে নিয়ে গেলো। নিরাপত্তা ব্যাবস্থা কড়া। তবে খুতখুতে স্বভাবের বলে, আমি খানিকটা বাড়তি চেক করলাম। রান্না ঘরের বাইরে থেকে উকি দিয়ে দেখছি ভেতরে কাজের লোক ময়দা মাখাচ্ছে। আর মোটামুটি তরুণি একজন তদারকি করছে।
" আ লো মাতারি, কইয়া দেই যদি খাওন যদি মজা না হয় তাইলে তোর খবরই আছে। আর টাল মার্কেট থেইকা যেই থালা বাসন হাড়ি পাতিল গ্লাস চামচ যা আনছোস, সব খাওয়া ওই গুলির মধ্যে বাড়বি। আর খাওয়া শেষ হইলে, সব একদম বাড়ির বাইরে ফেলায়া গোবর দিয়া পুরা রান্না ঘর পবিত্র করবি। ইস ! বাড়িতে স্মেচ্ছ যবন আইনা আম্মায় দেখি বাড়িটারেই নাপাক করার বন্দোবস্ত করছে। "
নিরাপত্তায় ত্রুটি নেই।
ক্লিয়ারেন্স দিতেই হলো। ভাবিকে স্বয়ং বিজেপির নেত্রি সুষমা স্বরাজ নিজ বাসভবনে স্বাগত জানালেন। যথারীতি কথাবার্তা হলো।
পররাস্ট্রনীতি বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের কি সরকার কিংবা বিরোধী দল, সবাই একটাই ভাঙ্গা রেকর্ড বাজায়। "দেবো", "হবে" "উন্নতি চাই" ইত্যাদি ইত্যাদি।
মিসেস স্বরাজও একই ডায়লগ দিলেন।
"চলেন ভাবিজি, নাস্তা খাবেন। "
নাস্তা নিয়ে সেই তরুণী বেশ হাসি খুশি ভাব করে এলেন।
"এই যে এটা আমার মেয়ে ভাবিজি। আপনি আসবেন বলে সব কিছু নিজের হাতে রান্না করেছে।
উনাকে নমস্কার করো বেটি !"
ইন্ডিয়ানরা দেখি বাংলাদেশকে ভোদাই মনে করে। কি নীতিতে কি মুখের কথাতে, মিথ্যা ছাড়া সত্যি বলে না।
ভাবিজি অবশ্য বেশি খান না। ওইদিকে গোচোনা খাবার অভিজ্ঞতায় শমসের আর রিয়াজ ভাই দেখলাম পানি পর্যন্ত মুখে তুললেন না।
এর পর রাতের দাওয়াত।
ওখানে গিয়ে দেখি ইন্ডিয়ার সব জাতের লোক উপস্থিত। মানে সিভিল সার্ভেন্ট। ইনারাই ইন্ডিয়া চালায়।
বুড়া বুড়া চুল মোচ দাড়ি পাকা সব লোক। দেখলেই মনে হয় দুনিয়ার ঘাগু।
ভয় ভয়ও লাগে। এই জন্যই মনে হয় স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সম্ভবত আমলা মহিউদ্দিন সাহেবকে বলেছিলেন,
"বৃটিশ আমলে পাশ করা, এই সব ঘাগু ইন্ডিয়ান আমলা গো লগে তোরা কি পারবি রে?"
এর মধ্যে একজন এসে বললো, " জহরলাল লোন"
লোন? দুপুরে ইজ্জতের সাথে সাথে আমার টাকা পয়সাও ডাকাতি হইছে। আর এই লোক লোন চায়? আমি শুধু বললাম
" না ভাই, আমি ব্যাংকের অফিসার না, সিকিউরিটি অফিসার। "
আরেক লোক দামি কাপড় পড়া সুটেড বুটেড এসে সবাইকেই বলছে
"খয়রাত হায় ভাই খয়রাত?"
একি জ্বালা? রাস্ট্রিয় প্রটোকলের আন্ডারে ডিনারে দাওয়ার। এর মধ্যে ফকির ডুকছে কেমনে?
আমি যত পারি ওই লোকের কাছ থেকে দূরে থাকার চেস্টা করলাম।
আমি নিজেই ফকির, ওই রকম পোষাকের লোককে কি খয়রাত দিবো?
এর মধ্যে দেখি একটা মহিলা। এসে পরিচিত হলো
" হাই আই এম নীতা পুরি। "
"কিসের পুরি? না না আমি পুরি মুরি খাবো না, পেট ভরা। "
কিয়ের মধ্যে পড়লাম, এক ব্যাটায় লোন চায়, আরেক ব্যাটা খয়রাত করে আর মহিলা দেখি পুরি বেচে।
এর মধ্যে দেখি রিয়াজ ভাই।
উনি প্রাক্তন কুটনীতিবিদ।
" আচ্ছা রিয়াজ ভাই রাস্ট্রিয় প্রোটকলের আন্ডারের একটা পার্টিতে লোন চাওয়া, খয়রাত করা , পুরি বেচা, এই সব চলে নাকি?"
"ছি ছি এই সব কি বলছো?"
"না মানে একজন কইলো লোন, আরেকজন খয়রাত খয়রাত করে বেড়াচ্ছে। আরেকজন পুরি মুরি কি সব যেন বলছিল। "
"উফ বাচ্চু, তোমার ভুগোল সেন্স খুবই কম। লোন আর পুরি হলো নামের পদবি।
আর খয়রাত মানে হলো কুশল। "
অ্যা ! কয় কি? লোন , পুরি এই সব কারো পদবি হয়? হইতেও পারে। ইন্ডিয়ানদের নামের পদবি একটার সাথে আরেকটা মিলে না।
আর পদবির কি ছিড়ি ! স্ক্রুওয়ালা, বোতলওয়ালা। আর সারা জীবন শুনে আসছি খয়রাত হলো ভিক্ষা।
এখন শুনি কুশল। নাহ দুনিয়াটা বড়ই বিচিত্র !
ভাবি সবার সাথে কুশল বিনিময় করছে। ইন্ডিয়ান নিরাপত্তা রক্ষিরা তার সাথে সাথে আমার দিকেও নজর রাখছে। কিন্ত তাতে কি? আমি হইলাম বাংলাদেশি পোলা। আমারে নজরে রাখবি? এত্ত সোজা?
ফাক বুঝে গায়েব হয়ে গেলাম।
দেখি কিছু পাই টাই কিনা !
এদিকটা বেশ অন্ধকার। দেখি দুই জন মদ হাতে কি যেন আলাপ করছে। ইন্ডিয়াতে একটা জিনিস দেখার। যত মন্দির তত মদের দোকান।
- আচ্ছা হেমান্ত সাহাব, হাপনার কি মনে হয়? শিং সাহাব কি সাচ সাচ ভাবিজি কো ওয়াদা করলো?
- হাপনারও দেখি দিমাগ কা বাত্তি গুল হোয়ে গেলো সুরাজ সাহাব।
আরে নেহেরুজি যে পলিসি রাখকে গিয়েছে, উহার কুনদিন নড়চড় হোবে? কি কংগ্রেস ইয়া বিজেপি, সোবার একঠোই স্বাপ্না। আখান্ড ভারাত ! ইয়ে সাব বাত কি বাত ! বোলতে হোয় তাই বোলেছে। চাল্লিশ সাল ধরেই তো বুদ্ধু বানাচ্ছি "
- ফির ভি ! বোলা তো যায় না। বাংলাদেশ কি আদমি ওরা বহুত খারাব আছে। হামাদের তো দেখতেই পারে না।
- আরে ওরা সুধু মু মেই হ্যান করেগা তেন করেগা। ইত্না সাল সে ওদের গাঢ় মেরে আরাহা হু, কোই কুছ বোলেছে? শ্রেফ জিয়ামে কুছ থা চিন্তার ! মাগার উস্কো ভি তো হামাদের ইন্দিরাজি ভগবান কা পেয়ারা কর দিয়া । হেহেহেহে
- ভাবিজি তো উস জিয়াকি পত্নি হয় না?
-আরে পাত্নি হোয়েছে তো কি হোয়েছে? জমানা বদল গিয়া। বাংলাদেশ কি নিউ জেনেরেশন কো দেখো। ইন্ডিয়ার হার কুছ পেয়র করতা হায়।
আর হাস্না বিবি যব তক হামার সাথ হায়, তব তক হামাদের ডিমান্ড সাপ্লাই হোতেই থাকবে।
আমি ভাব করছিলাম যেন বাগানে ফুলের গন্ধ নিচ্ছি। অভিনয় করতে গিয়ে ফুল শুকতে গিয়েছিলাম। হালার এক পোক, নাকের ভিতর ঢুকে যাওয়াতে কাশি আটকাতে পারলাম না।
- ওই কোউন হায় উধার?
এই রে ধরা পড়লে আমার তো খবর আছে?
আমিও মাতালের ভান করে গান গাওয়া শুরু করে দিলাম
"আমি এক পাহারাদার সাধ্য আছে কার বাবার, আমার চোখে ধুলা দিয়া হইয়া যাবে পার।
"
মাতাল মনে করে ওরা দুইজন চরম বিরক্ত হলো
"আরে কি সোব আদমি আয়া। দারু খেতে জানে না, ফিরভি দারু পিয়ে। চালিয়ে হামলোগ দুসরা যাগামে। "
চলবে... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।