আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলাম যখন 4th subject

"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম" আমার বোধয় এই মুহূর্তে এই বিষয়ে লিখা ঠিক হচ্ছেনা। আমি আমার ঈমানের দুর্বলতম অধ্যায় অতিবাহিত করছি। এই রকম জোড়াতালি মার্কা ঈমান নিয়ে এমন একটা ব্যপারে লিখতে বসেছি যা এই অবস্থায় নিতান্তই অশোভন। কিন্তু অনূভূতিগুলো ফ্রেশ থাকতে থাকতেই লিখতে চাই। কাউকে খাটো করতে বা সমালোচনা করতে নয় বরং আমাদের অন্তরে প্রোথিত একটি মারাত্নক “রোগ” সম্পর্কে আমার এবং আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

১। আমরা 4th সাবজেক্ট বলতে কি বুঝি? গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে টানাটানি শুরু হলে এই সাবজেক্ট থেকে পয়েন্ট ধার করে যেন এ প্লাসটা বাঁচানো যায়। আর যদি কেউ এই সাবজেক্টের পয়েন্ট বাদেই জি পি এ ৫ পেয়ে যায় তাহলে তো কথাই নেই! তাইনা? অর্থাৎ বিপদের বন্ধু, আর সুসময়ে যার কথা মনে না করলেও চলে। অন্য সাবজেক্টগুলো ভালমত পড়লে এর দরকার নাও লাগতে পারে। ২।

পিউলি সারাজীবন ভাল ফলাফল করে এসেছে। মেধার কথা উঠলেই সবাই ওর নাম নিত। হোক সে লেখাপড়া বা extracurricular activities. ওর কাজিনদের মা তাদেরকে বলতেন ,বড় হলে পিউলি আপুর মত হবে,বুঝেছ। পিউলি যে একদিন আকাশ ছোঁবে এই নিয়ে কারো কোন সন্দেহ ছিল না। স্কুল ,কলেজ,ইউনিভার্সিটিতে ছিল সবার চোখের মণি।

ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় কি জানি হল পিউলি সালাত পরতে শুরু করল,হিজাব করতে শুরু করল, গায়ের মাহরাম সহপাঠীদের সাথে কথা বার্তা একেবারেই বন্ধ করে দিল। তখন থেকেই পিউলি আর অন্যদের জন্য আদর্শ রইলনা। পিউলি ঠিক করল ও আর কো এডুকেশনে পড়বেনা, যদি পড়তেই হয় কেবন ইসলাম নিয়েই পড়বে। বলার অপেক্ষা রাখে না এই সিদ্ধান্তের পর পিউলির উপর কি পরিমান ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু ও ওর সিদ্ধান্ত থেকে নড়েনি এক পা-ও।

পিউলির নানী পিউলিকে বলল, ইসলামে কি পড়াশোনা করতে মান আছে? তুমি জাকির নাইকের মত হতে পারনা? উনি তো ডাক্তার আবার দাওয়াহও করেন, উনার মত হতে তোমার কি সমস্যা। পিউলি অবাক হল। ও যখন নামায পড়তনা, হিজাব করতনা তখন তো নানী তাকে বলেনি তুমি কেন নামায পড়না, কেন হিজাব করনা। তোমার লেখাপড়ার পাশাপাশি এগুলোও তোমাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। আরও আশ্চর্য হল এই ভেবে যে কেন খাদিজা, ফাতিমা, আয়িশা, নুসাইবাহ (রা) থাকতে জাকির নাইকের উদাহরণ আসবে।

(বি দ্রঃ আমি জাকির নাইকের ফ্যান, কিন্তু আমার আদর্শ সালাফে সালেহীনগণ) পাঠক, আপনারা কি বুঝতে পারছেন এখানে ইসলামকে 4th সাবজেক্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে। অর্থাৎ তোমাকে ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে এর পাশাপাশি ইসলাম পালন করতে চাইলে করতে পার। শুধু নানী কেন ,আমাদের অনেকের মধ্যেই এই ধারণা নিজের অজান্তেই মনের গভীরে গেঁথে গেছে। পিউলির মা দিন রাত অশ্রুপাত করেন, তার মেয়ে “কিছু” হতে পারেনি এই জন্য। পিউলির বাবা মেয়েকে নিয়ে আগের মত গর্ববোধ করেন না।

পিউলি নাকি পাগল। কারন ও গান শুনতে চায় না, নাটক দেখতে চায় না, সিনেমা দেখতে চায় না। এবং অন্য কেউ দেখুক এটাও চায় না। পিউলির মা একদিন রাগের মাথায় বললেন পিউলিকে নাকি শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা উচিৎ। পিউলির মা পিউলিকে বাড়িতে মেহমান এলে সামনে নিয়ে যায় না।

কেউ পিউলির কথা জিজ্ঞেস করলে এড়িয়ে যায়। পিউলির মা বেনামযী,বেপর্দা মেয়ের অবস্থা কথা চিন্তা করে ততখানি কষ্ট পাননি যতটা এখন পান। মেয়ে জাহান্নামে জ্বলবে এই ভাবনা তাকে এতটা ভাবায়নি যতটা তিনি মেয়ের দুনিয়ার জীবন নিয়ে ভেবেছেন। পিউলির বৃদ্ধা নানী ---পিউলি খুব একটা মনে করতে পারেনা কখোনো তার নানীর তাহাজ্জুতের নামায ছুটে গেছে কিনা----পিউলির বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এই নানীও কি ইসলামকে 4th সাবজেক্ট হিসেবেই দেখেন? ৩। নিখিল আপাদমস্তক মা বাবার বাধ্য অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র।

মা বাবার একমাত্র ছেলে, তাকে নিয়ে বাবা মায়ের গর্বের যেমন শেষ নেই , শেষ নেই আশা আকাংক্ষারও। নিখিল যখন থেকে পাজামা পাঞ্জাবী ধরল,সেই সাথে দাড়ী রাখা শুরু করল এর পর থেকে ২ বছর তার বাবা তার সাথে কথা বলেনি, খরচের টাকা দেয় নি, মায়ের নির্ঘুম রাত কেটেছে এতোটা বছর। নিখিলের রেজাল্ট খারাপ হল, সব দোষ গিয়ে পড়ল “ইসলামের” ঘাড়ে। দোষ অবশ্য ইসলামেরই ছিল। ১০০% ছিল।

যেই নিখিল সারাজীবন পাঠ্য বইয়ে মুখ গুঁজে ছিল সে ইসলামের বিশাল জ্ঞান ভান্ডারের সন্ধান পেয়ে আর ঠিক থাকতে পারেনি। তার কেবলই মনে হত এই অসাধারণ জিনিসটি কিভাবে এতদিন তার কাছে লুকানো ছিল? সে ইসলাম নিয়ে পড়তেই থাকে । । পড়তেই থাকে...। ক্লাসের পড়ায় তার মন বসে না।

...। মুসলিম উম্মাহর দুর্দশা তাকে এক মুহুর্তও শান্তি দেয় না। এসব মিলিয়েই নিখিলের রেজাল্ট খারাপ হয়। পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। হ্যাঁ নিখিলের হয়তোবা ভুল ছিল...।

ও হয়তো balance করতে পারেনি। কিন্তু এতগুলো বছর যে ও ইসলাম সম্পর্কে গাফেল ছিল এর জন্য কি ও বাবা মা এক মুহুর্তের জন্যও অশ্রুপাত করেছেন? ক্লিন শেভড,স্যুট ,টাই পড়া ছেলেকে দেখে বাবা মার যত আনন্দ হত মুখ ভর্তি দাড়ি দেখে সেই চেহারায় কেন বিষাদের ছায়া? পাঠক, আমি স্কুল কলেজের শিক্ষার বিরোধী একেবারেই নই। একজন মানুষ সফলভাবে নিজের ক্যরিয়ার গঠন করবে এর বিরুদ্ধেও আমার অবস্থান নয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কেন এগুলোই মূখ্য হবে? একজন ছাত্র নামায না পড়লে আপনি যে রিঅ্যাকশন দেখাবেন যে যদি লেখাপড়া ছেড়ে দেয়, আপনি কি একই রিঅ্যাকশান দেখাবেন? আপনার ছোট ভাইটি লেখাপড়া ছেড়ে দিলে আপনার যেমন রাগ হবে ...ও যদি দাড়ি শেভ করে ফেলে আপনার কি একই রকম রাগ হবে? আপনার বোন এ প্লাস পেলে আপনি খুশিতে আটখানা হন, ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানান। আচ্ছা ও যদি প্রতিদিন ফজরের নামায সময়মত পড়ে, হিজাব করে তখনও কি আপনার একই রকম আনন্দ হয়? আপনি/আপনার সন্তান/ভাই/বোন কোন পাবলিক পরীক্ষায় ফেল করলে আপনি যে কষ্টটা পাবেন ,এক ওয়াক্ত সালাত ছুটে গেলে কি একই রকম কষ্ট অনুভব করেন? আমার সন্তান একজন ইঞ্জিনিয়ার-এই বলে পরিচয় দিতে একজন বাবা/মায়ের যতখানি গর্ববোধ হয়, আমার সন্তান একজন প্র্যাক্টিসিং মুসলিম-এই বলে পরিচয় দিতেও কি এতোটাই গর্ববোধ হয়? কতবার কত গুরুজনের কাছে বিভিন্ন কারণে দোয়া চেয়েছি...আমরা কি মনে করতে পারি কোন দিন কাউকে বলেছি কিনা, “দু’আ করবেন, যেন একজন ভাল মুসলিম হতে পারি।

” আচ্ছা, আমরা কি এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াটাকে compulsory আর ইসলামকে 4th subject বানিয়ে ফেলেছি? Collected From Sister তারার আকাশ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.