কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! বড়লোকের মেয়ে শিরিন। ভার্সিটিতে পড়ে। শুধু তার জন্যই বাসা থেকে একটা লাল প্রাইভেট বরাদ্দ। সেই লাল প্রাইভেটে করে ভার্সিটিতে যায় আসে মেয়েটা।
লাল প্রাইভেটের সামান্য ড্রাইভার লিটন।
অল্পবয়স্ক তরুণ ড্রাইভার। কাজের অভিজ্ঞতা মাত্র দুবছর। এই কাজটা টিকিয়ে রাখা তার দরকার, খুব দরকার।
শিরিনের বয়ফ্রেন্ড রওনক ভাই। মাঝে মাঝেই লাল প্রাইভেটে চেপে শিরিন আর রওনক ভাই খেতে যায়।
আর সপ্তাহে একবার দুবার দূরে কই যেন যায়।
লাল প্রাইভেটে চড়ে রওনক যখন হলুদ দাঁত বের করে হাসতে হাসতে শিরিনের হাত ধরে, লিটন সেটা আয়নায় দেখতে পায়। তার খুব মেজাজ খারাপ হয়। তার মনে হয় হারামজাদাকে এখনই দুই থাপ্পর লাগিয়ে দিলে মন্দ হত না। এমনিতে শিরিনকে দেখলে লিটনের গা শিরশির করে, আর হারামাজাদাটাকে দেখলে করে গা কিড়মিড়।
শিরিন আজকাল একটু বেশিই ঢলাঢলি করছে। বাসায় বলা বারণ। বাসায় বললে চাকরি নট। আর চাকরি একবার নট হলে আর রক্ষা নাই, না খেয়ে মরতে হবে।
শিরিন আর রওনক ভাই হাত ধরাধরি করে পুরান ঢাকার একটা বাড়িতে ঢুকছে।
হারামজাদার হাত শিরিনের বুকে। শিরিন খিলখিল করে হাসছে।
শিরিন বেরিয়ে এল। হারামজাদা বেরিয়ে এল। বিধ্বস্ত।
বাসায় বলা বারণ। বাসায় বললে চাকরি নট।
***
"বাবা লিটন, তোমাকে তো আমরা নিজের ছেলের মতই দেখি, তো তুমিও তো আমাদের মেয়েকে পছন্দ করেছ, ও-ও আর আপত্তি করে নি, তাই বলছিলাম কি, বিয়েটা তোমরা করেই ফেল। এই মাসের মধ্যেই হয়ে যাক সব, শুভ কাজে দেরি করতে নেই, কি বল?"
লিটনের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। শিরিন ম্যাডাম আজ আসছেন না।
লিটনের অস্থির লাগছে। শিরিন যখন হাম হয়ে বিশ দিন ভার্সিটিতে যায় নি তখন লিটনকেও ডিউটিতে আসতে হয় নি। তখন ঠিক এইরকমই অস্থির লেগেছিল, বুকের ভিতর অনুভূত হয়েছিল অদ্ভুত শূন্যতা, স্পষ্ট মনে আছে লিটনের।
কিন্তু আজ কি হল? শিরিন ম্যাডাম আসেন না ক্যান? কি হয়েছে? উনার কোন অসুখ হয় নি তো? বা অন্য কিছু? খারাপ কিছু? খুব খারাপ? আর লিটন এই স্বপ্নটা কেন দেখল?
আবার কেন দেখল?
কততম বারের মত দেখল?
***
কয়েকদিন পর।
বাজারে ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে।
মাত্র ত্রিশ টাকা সিডি। ছেলেবুড়ো হুমড়ি খেয়ে পড়ে সিডি কিনছে।
সিডিতে ছেলেটাকে তেমন বোঝা যায় না। ছেলেটার মুখ কেমন অন্ধকারে। মেয়েটার মুখ স্পষ্ট।
আলোকিত।
সিডির মেয়েটা লাল প্রাইভেটের মালিক শিরিন। লিটনের শিরিন ম্যাডাম।
***
দু মাস পর।
"বাবা লিটন, তোমাকে তো আমরা নিজের ছেলের মতই দেখি, তা তুমি খুব মনোযোগ দিয়ে একটা কথা শোন।
তোমার শিরিন ম্যাডামের শরীরে একটা টিউমার ধরা পড়েছে। ওভারিয়ান টিউমার, অনেক মেয়েরই হয়। তবে শিরিনেরটা সিরিয়াস। ডাক্তার বলেছে এক বছরের মধ্যে বাচ্চা না নিলে ও আর মা হতে পারবে না।
তো তুমি হয়তো জানো শিরিনের এক ছেলেবন্ধু ছিল, রওনক নাম।
ঐ কুত্তাটা এখনই বিয়ে করতে হবে এই কথা শুনে শিরিনকে ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিল। তখন শিরিন বলেছিল, ওদের সম্পর্কের প্রমাণ শিরিনের কাছে আছে। কুত্তাটা হেসে বলেছিল তার কাছেও নাকি আছে। তারপরের কাহিনী তো তুমি জানোই। কুত্তাটা আমেরিকা চলে গেছে, যাবার আগে আমার মেয়েটার সর্বনাশ করে দিয়ে গেছে।
এই ভিডিও দেখার পর এখন আমার মেয়েকে কে বিয়ে করবে বল? আর করলেও, এখনই কে বিয়ে করবে?"
শিল্পপতি আবুল হাসান চোখ মুছছেন। শিরিন মেয়েটাকে তিনি মানুষ করতে পারেন নি। আধুনিকতার মোহ থেকে তাকে সযত্নে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন নি।
"বাবা লিটন, আমি চাই তুমিই আমার মেয়েকে বিয়ে কর। আমি জানি, অন্তত আমার মুখের দিকে চেয়ে অসহায় মেয়েটাকে তুমি ক্ষমা করতে পারবে।
আর তোমাকে আমি অনেক টাকা দেব, অনেক, তোমার আর কোন অভাব থাকবে না"।
বিএসসি (তৃতীয় শ্রেণী) পাশ লিটন খন্দকার ওরফে লিটন ড্রাইভার অবাক হয়ে তার চাকরিদাতার দিকে তাকিয়ে আছে। বিএসসি পাশ করে সে অনেকদিন বড় ভাবির বাসায় রান্নাবাড়া করে দিত। কুকুরের মত ভাইয়ের সংসারে পড়ে থেকে পেট চলত তার। তখনই তার জীবনে আসেন শিল্পপতি আবুল হাসান।
এই মানুষটা চাকরি না দিলে দুই বছর আগে হয়তো আত্মহত্যাই করত সে।
আর হ্যাঁ, মানুষটার অনেক টাকা।
আর হ্যাঁ, শিরিনের চেহারা স্মরণ করলেই এখনও গা শিরশির করে ওঠে লিটনের। কই, আর কারো বেলায় তো এমন হয় না! তবে এটাই কি প্রেম?
***
"স্যার, আমার একটা সমস্যা আছে"।
"কি সমস্যা?"
"থাক বাদ দেন"।
"আরে বল না, লজ্জা কর কেন? হাজার হোক, তুমি আমার হবু জামাই"।
"না থাক স্যার, আরেকদিন বলব"।
***
লিটন হা করে শিরিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
শিরিন বলল, "আপনাকে বলতে নিষেধ, তাও বলছি। আপনাকে আমার সাথে জোর করে কেন বিয়ে দিল জানেন?"
"তোমার টিউমার...?"
"টিউমার? হুহ, বানানো কথা।
আপনাকে আব্বু সহজ সরল পেয়ে মিথ্যা বলেছে, আপনি সেটা বিশ্বাসও করেছেন! যাকগে, আসল কারণটা শুনুন। কুত্তার বাচ্চা রওনক আমার সর্বনাশ করেছে। রওনকের বাচ্চা আমার পেটে। অ্যাবরশন করাতে নেয়া হয়েছিল, ডাক্তার বলেছে আমার নাকি রক্তস্বল্পতা আছে, অ্যাবরশনের ধাক্কা আমি নিতে পারব না, অ্যাবরশন করতে গেলে মারা যাব প্রায় নিশ্চিত"।
লিটনের চোখের পলক পড়ছে না।
শিরিন বলল, "বুঝতেই পারছেন, আপনার আমার বিয়ে শুধু এই সন্তানকে বৈধতা দেবার জন্য। আর আমাকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাবার জন্য। এখন বলেন, এই কথা শোনার পর কি আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন?"
***
লিটন হাসছে। বড় সুখের হাসি হাসছে সে।
তার স্পার্ম কাউন্ট কমের কথা কি এখনই বলবে সে? সে কি এখনই বলবে ডাক্তার বলেছিল স্বাভাবিকভাবে বাবা হওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়? সে কি এখনই বলবে আজ থেকে তিন বছর আগে উথাল পাথাল প্রেম করে তাকে পালিয়ে বিয়ে করা রেবেকা ঠিক এই কারণেই তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল?
না থাক, পরেই বলুক।
শিরিন আর লিটনের দাম্পত্যে এই একটা ব্যাপার টুইস্ট হিসেবেই থাকুক। তাদের মধ্যে পৃথিবীর সব নিয়ম পাল্টে দেয়া অদ্ভুত এক ভালবাসা জন্ম নিক। অসম্ভব গল্পের নায়ক নায়িকা লিটন ও শিরিন সুখে থাকুক, তাদের সন্তান নিয়ে সুখে থাকুক। অসম্ভব সুখ।
(এই গল্পের মূল আইডিয়া আলাউদ্দিন আল আজাদের একটা গল্প থেকে নেয়া হয়েছে।
বরাবরের মতই ১৮+। আপনি ১৮- হলে নিজ দায়িত্বে পড়বেন, পড়ার পর আপনার যা হবে তার জন্য লেখক দায়ী নহে। ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।