তখন আমার বয়স কতটুকুই বা হবে- ছয় কি সাত । ক্লাস টু-এ সবে উঠেছি। সেবার খুব শীত পড়েছিল। গ্রামে এ সময়টাতে বিভিন্ন স্থানে মাহফিল হয়ে থাকে। গওহরডাঙা (টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ) মাদ্রাসায় অত্র অঞ্চলের মধ্যে বৃহৎ মাহফিল হতো।
আমাদের বাড়ি থেকে জায়গাটার দূরত্ব ৩৫ কি.মি. হলেও রাস্তাঘাট না হওয়ায় সেটাকেই খুব বড় পথ বলে মনে হতো। তার পরেও প্রতিবছর আমাদের গ্রাম থেকে অনেকে নৌকায় বা ভ্যানে করে ওখানে যেতো ওয়াজ শুনতে। সেবার আমি বাবার সাথে গিয়েছিলাম ভ্যানে করে। যেদিন প্রথম গেলাম সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত ওয়াজ শোনার পর আমার খুব খিদে পায়। আমি বাবাকে খাবার কথা বললে তিনি আমাকে ওয়াজ উপলক্ষে বসা একটি অস্থায়ি হোটেলে নিয়ে যান।
সেখানে আমি শোল মাছ এবং ডাল দিয়ে ভাত খেয়েছিলাম কিন্তু বাবা খেলেন শুধু শবজি আর ডাল দিয়ে। আমি বাবাকে বললাম “আব্বা! তুমি মাছ নেও নেই ক্যান?”। বাবা জবাব না দিয়ে শুধু আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। সে হাসির অন্য কোনো অর্থ ও বয়সে আমার বোঝার কথা নয়।
এ ঘটনার প্রায় একযুগ পর।
২০০৭। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি-প্রথম বর্ষে। হলের খরচ কম হলেও বাড়ি থেকে খুব কষ্ট করে যে টাকাটা বাবা পাঠাতে পারেন তাতে খুব কোনো মতে চলতে হত। মাঝে মাঝে সকালের নাস্তার সময়টা ঘুমিয়েই কাটাতাম। ‘সাবজেক্ট দুর্বল’- তাই একটি টিউশনিও হচ্ছিল না।
এরমধ্যে একদিন বাবা বললেন “তোমাগো হল দেকতি আসফ”। আমি খুব করে চাইলাম তাকে ’না’ বলতে। কিন্তু পারলাম না। অনেক দিনের স্বপ্ন তার- ছেলে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে আর তিনি নিজে এসে কয়েকদিন থেকে যাবেন। বাবা আসলে তাকে ভার্সিটির বিভিন্ন জায়গা ঘুরিয়ে দেখিয়ে দুপুর বেলা খেতে নিয়ে গেলাম সূর্যসেন ক্যাফেটেরিয়ায়।
যারা ওখানে খেয়েছেন তারা জানেন এখানে মাছ-মাংস দুই রকমের- স্পেশাল আর নরমাল। স্পেশাল গরু বা রুই মাছ ৩৫ টাকা আর নরমাল ২০ টাকা। সেদিন টোকেন নিয়ে খেতে ক্যান্টিনবয় যখন খবার নিয়ে আসলো তখন মাছের দিকে তাকিয়ে বাবা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন “আমার মাছ খান বড় তোমার হান ছোড কেন?” আমি হাসলাম। কারণ অনেক দিন আগের এমনি একেটি হাসির অর্থ সেদিন আমি বুঝতে পেয়েছিলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।