সংস্কৃতিমন্ত্রীকে টেক্কা দিয়ে ইউনেস্কোর সংস্কৃতিবিষয়ক প্রোগ্রামে যোগ দিতে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অনুষ্ঠানে তিনি স্রেফ ১৫ মিনিট অতিবাহিত করবেন। এই সময়ের মধ্যে পরররাষ্ট্রমন্ত্রী কী অর্জন করবেন তা বোধগম্য নয় অনেকের কাছে। তবে শেষ মুহূর্তের ফটোসেশনে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেতে পারেন মন্ত্রী।
জাতিসংঘের ইউনেস্কোর সংস্কৃতি বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে বুধবার সকালে নিউইয়র্কে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার।
তবে সময়ের হিসাবে সে কর্মসূচির সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট পেতে পারেন দীপু মনি। তাও ফ্লাইট শিডিউলে সামান্যতম হেরফের না হলেই তা সম্ভব হবে।
সূত্র জানিয়েছে, শেষ ১৫ মিনিটের ফটোসেশনে হয়তো যোগ দিতে পারবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।
এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অন্তত সেটুকু সময়ের জন্য হলেও বৈঠকস্থলে হাজির করা নিয়ে ঘুম হারাম হয়ে গেছে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের।
মিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইট নির্ধারিত হিসাবে স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে পৌঁছাবে জনএফ কেনেডি বিমানবন্দরে।
চেক আউট করতে সময় লেগে যাবে আরও ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট। সে হিসাবে দীপু মনির হাতে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে জাতিসংঘ সদর দফতরে পৌঁছাতে হাতে থাকবে মাত্র ১ ঘণ্টা।
উল্লেখ্য, ইউনেস্কো আয়োজিত সংস্কৃতি উন্নয়ন বিষয়ক হাই প্রোফাইল মিটিংটি শুরু হবে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায়। শেষ হবে দুপুর ১টায়।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেন বাংলানিউজকে জানান, “সম্ভাব্য সব চেষ্টা চালানো হবে শেষ মূহূর্তে হলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুষ্ঠানস্থলে হাজির করানোর।
ফ্লাইট শিডিউলে হেরফের না হলে আমরা তা পারবো। ”
এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান ড. মোমেন। তিনি বলেন, “পররাষ্ট্রমন্ত্রীর লাগেজ যাতে তার সফরসঙ্গীদের কেউ একজন ছাড়াতে পারেন, সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি দ্রুত বের হয়ে আসতে পারলে আমরা তাকে নিয়েই ছুটবো জাতিসংঘ সদর দফতরের উদ্দেশ্যে। তবে পথে ট্রাফিক জ্যাম কি রকম থাকবে সে নিয়ে উদ্বিগ্ন আছি।
”
এদিকে জাতিসংঘ মিশনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফর তার জন্য যতোটা প্রযোজ্য তার চেয়ে বেশি প্রযোজ্য ছিলো দেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রীর। যে কর্মসূচিতে অংশ নিতে তিনি নিউইয়র্ক আসছেন সেটি সংস্কৃতি বিষয়ক এবং অন্যান্য দেশ থেকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রীরাই আসছেন। কোনো কোনো দেশ থেকে যুব কিংবা ক্রীড়ামন্ত্রী আসছেন। কোনো দেশেরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন না।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেন এতো টাইট শিডিউল হাতে নিয়ে নিউইয়র্ক আসছেন তার কোনো উত্তর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেনি।
তবে প্রথমার্ধে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তৃতা করতে না পারলে দ্বিতীয়ার্ধে বিশেষজ্ঞদের উপস্থাপনায় একটি স্লট নেওয়া হবে। এ পর্বে অবশ্য মন্ত্রীদের কেউ থাকবেন না। এতে বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা তাদের সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন প্রেজেন্টেশন দেবেন পারস্পরিক বিনিময়ের অংশ হিসেবে। এ অংশে বক্তৃতা দিয়েই নিউইয়র্ক ছাড়বেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
চলতি সফরে তিন দেশ সফর করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।
আজারবাইজান হয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং সেখান থেকে সুইজারল্যান্ড। আজারবাইজানে ফিলিস্তিন বিষয়ক একটি আলোচনায় অংশ নিয়ে সেখান থেকেই নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সূত্র জানিয়েছে, আজারবাইজানের আলোচনাটিও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নয়। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়া অন্য বন্ধু দেশগুলোর কর্মকর্তা পর্যায় থেকেই ওই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি। আর নিউইয়র্ক থেকে বুধবারই সন্ধ্যা ৭টায় সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে জেএফকে বিমানবন্দর ছাড়বেন দীপু মনি।
সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় কাউন্টার টেরোরিজম বিষয়ক একটি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন তিনি।
এ কর্মসূচিটিও মূলত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নয়। এতে অংশ নেবেন বিভিন্ন দেশের স্বরাষ্ট্র কিংবা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা। এখানেও একমাত্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ কর্মসূচিতে অবশ্য সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এক ঝলকের জন্য দেখা যাবে।
কারণ, অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করবেন তিনি।
বাংলাদেশ থেকে কেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেনেভার কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন এমন তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে এ কর্মসূচিতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের অংশ নেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু কোনো একটি জটিলতায় তিনি জেনেভা যাচ্ছেন না।
এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ত্রিদেশীয় ‘অপ্রয়োজনীয়’ সফরসূচি একটার সঙ্গে অন্যটি মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন, তখন দেশে তার চলছে কঠোর সমালোচনা। মঙ্গলবার সংসদে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা দীপু মনিকে ‘হাইব্রিড মন্ত্রী’ উল্লেখ করে তার বিদেশ ভ্রমণ নিয়েও কটাক্ষ করেন।
এসব বক্তব্য সংসদে দফায় দফায় উত্তাপও ছড়ায়। সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা এ সময় হইচই করলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিরোধী দলের সদস্যদের দেওয়া বক্তব্যের কেউ প্রতিবাদ করেন নি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।