পূর্ব-পাকিস্তানের হতভাগ্য লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন খুব দেরিতে এসেছে। রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও দমননীতি ভারতের হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে — যেন ভারতের নিজেরই এধরনের সমস্যা নেই — তাকে একাই ৪০ লক্ষ উদ্বাস্তুর দেখাশোনা করতে হচ্ছে। অনেকের জন্য কলেরা হলো দুর্যোগের চতুর্থ ধাপ –এর আগে তাদের ভাগ্যে ছিল তিন দুর্যোগ: গত নভেম্বরের সাইক্লোন, ইয়াহিয়া খানের সামরিক হত্যাভিযান এবং জনগণের উদ্বাস্তুতে রূপান্তরিত হওয়া। এখনকার সমস্যা হলো পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ব পাকিস্তানের যাদের সাহায্য প্রয়োজন, যত দ্রুত সম্ভব তাদের সাহায্য-প্রদান নিশ্চিত করা।
দুই এলাকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পৃথক।
পূর্ব-পাকিস্তানের মতো পশ্চিমবঙ্গের কোথাও চলে যাওয়ার সমস্যা নেই। ভারতকে দ্রুত দেখাতে হবে যে তার একার পক্ষে উদ্বাস্তুদের দেখাশোনা করা সম্ভব না। ভারত বাইরের সহায়তাকে স্বাগত জানিয়েছে। সাহায্য যা আসবে তা দিয়ে হয়তো পুরো প্রয়োজন মিটবে না। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো ভারত-সরকার জাতিসংঘের কাছে সাহায্য-প্রার্থনা করেনি।
এই আমলাতান্ত্রিক বাধার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তুরা অনেক সহায়তাই পাচ্ছে না।
পূর্ব পাকিস্তানে যাদের হত্য করা হয়নি, কিন্তু এই মুহূর্তে ক্ষুধার্ত রয়েছে, তাদের জরুরিভিত্তিতে খাদ্য প্রয়োজন। কিন্তু ইয়াহিয়া খানকে সরাসরি সাহায্য ব্যতিরেকে তাদের কীভাবে সাহায্য করা হবে? নাইজেরিয়ার বায়াফ্রার জন্য যখন আন্তর্জাতিক সাহায্য দেয়া হয়েছিল তখন জেনারেল গাওন অযৌক্তিকভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন এই বলে যে সাহায্যদানকারীরা তার শাসনপদ্ধতিতে অন্যায় হস্তপে করেছেন। ইয়াহিয়া খান এসবেরই লক্ষণ দেখাচ্ছেন — বলছেন পাকিস্তানের নিজস্ব সংস্থাসমূহ সাহায্য পরিচালনা করে। কিন্তু তিনি এবং দাতারা জানেন, এভাবে সাহায্য দেয়ার অর্থ, সেনাবাহিনীর হাতে তা দেয়া, যে-সেনাবাহিনী দুর্গতদের হত্যাকারীর ভূমিকা পালন করে এসেছে।
সাহায্যদাতারা ইয়াহিয়ার মহত্ত্বের ভান করাটাকে এড়িয়ে চলতে পারেন যদি বিশ্বের অর্থসংস্থাসমূহ তাকে শর্তহীনভাবে নাকচ করে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তানের অর্থনীতি এখন খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে এবং অবমূল্যায়ন প্রকট হয়ে উঠেছে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও অর্থসংস্থাসমূহের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে এখানে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে নিশ্চিত করতে হবে যে, ইয়াহিয়া খান যেন বাড়তি কোনো সাহায্য না পান, যা তিনি চাচ্ছেন। ইয়াহিয়া খানকে এটা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে যে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে যে-দমননীতি চালিয়ে যাচ্ছেন, তাতে সাহায্য করার জন্য তার পাশে কেউ নেই।
পরিতাপের বিষয় এই যে, যখন এই রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা হবে, ইতোমধ্যে আরও উদ্বাস্তু দেশ ছাড়বে এবং খেতে না পেয়ে আরও অনেক মানুষ মারা যাবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।