সচকিত সচলায়তন ইশতিয়াক (ছদ্মনাম) আমার বন্ধু ও সহকর্মী। কিছুদিন যাবত আমরা একই ব্রাঞ্চে কাজ করছি। প্রায় প্রতিদিনই আমরা অফিস শেষে কাজলা’র মোড়ে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত শরীরেও রাজশাহী’র অন্যান্য ব্রাঞ্চের সহকর্মীরা মিলে আড্ডা দেই। ব্যাংক ও ব্যাংক ভিন্ন অনেক বিষয় আমাদের আলাপচারিতায় উঠে আসে। বাদ যায় না ব্যাক্তিগত বিষয়গুলোও।
গতকালকের ঘটনা, যাকে নিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম, তার। বাবা, ছোট ভাই আর ইশতিয়াক মিলে ওদের পরিবার। মা নেই। গত হয়েছে বছর কয়েক আগে মরনব্যাধি ক্যান্সারের কাছে হার মেনে। ওর বাবা এই কয়েক বছর ধরেই মা-বাবা দু’জনের ভুমিকা-ই পালন করে আসছে সফলভাবেই।
কিন্তু কি এক অজানা কারনে ইশতিয়াকের বিয়ের ব্যাপারে তিনি খুব বেশি উৎসাহ দেখান না। প্রায়ই ইশতিয়াক-কে বলি, “কিরে, বিয়ের বয়স তো এক্সপায়ারের পথে, কিছু কি হলো”? আংকেল কি রাজী হলো?” তার নির্লিপ্ত, অসহায় উত্তর, “নাহ”। “এ প্রসঙ্গে কোন কথাই বলেন না উনি”। বলল, “কয়েক দিন আগে লাজ-লজ্জা ফেলে একবার আব্বাকে বলেই ফেললাম বিয়ের বিষয় টা। উনি এমন ভাব করে বিষয় টা এড়িয়ে গেলেন যেন আমার কথাগুলো তার কান অবধি পৌছায়-ই নি।
আমি হতাশ হলাম”। আমি টিপ্পনি কেটে বললাম, “ তোর বিয়ের বোধহয় ফুল-ই ফোটেনি, নাকি ঔষধি গাছের মতো তোর বিয়েটা। ফুল ফুটবে না, ডাইরেক্ট ফল পাবি। তুই অন্যপথে ট্রাই করে দেখতে পারিস”। ও হাসে।
বলাবাহুল্য ইশতিয়াক সত্যিই অন্যরকম। আপাদমস্তক ভদ্র ও বাধ্য সন্তান। ও কিছুতেই ওর বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু চিন্তা করে না বরং এটাকে ও ভদ্রতার ব্যাত্যায় বলে মনে করে। আমরা মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে যাই, ওর দূরাবস্থা দেখে। বলি “চল তো আংকেলের কাছে যাই, সবাই মিলে ওনাকে বুঝিয়ে বলি যে তোর বিয়ে করা দরকার।
কত আর ইন্সট্রুমেন্টাল সঙ্গীত চর্চা করবি”! ও আবারও হাসে। আমাদের থামিয়ে দিয়ে বলে, “দেখি আর কয়েকটা দিন। সুদিন আসে কি না। আমার প্রতি আব্বা সদয় হয় কি না”। তবে বাবা-ছেলের কালকের কথপোকথন টা সত্যি-ই ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।
ইশতিয়াকের ভাষ্যমতে, গত শনিবার, ছুটির দিন, দুপুরে খাওয়া-দাওয়া সেরে ও বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। এমন সময় ওর বাবা ওর ঘরে ঢুকলো। কোন রকম ভুমিকা ছাড়াই ইশতিয়াকের উদ্দেশ্যে উনি বলে উঠলেন, “বাবা শোন, পৃথিবীতে শক্তির পরিমান নির্দিষ্ট। সুতরাং শক্তির কোনরকম অপচয় কর না”। ইশতিয়াক হকচকিয়ে গেল, ঘামতে শুরু করল।
ভাবতে লাগল, কখনও কি বাথরুমের দরজা খোলা রেখেই...। নাহ...। সে মেলাতে পারছে না। সে তো, এমন কি শোবার ঘরের দরজাও প্রায় সময়-ই লাগিয়ে রাখে। সম্বিত ফিরল ওর বাবার পরের কথায়, “বাবা দিনের বেলায় আলো জ্বেলে ঘুমিয়ো না, খোদা নারাজ হয়”।
ইশতিয়াক হাফ ছেড়ে বাঁচল। বলল, “উফ, শুধু শুধু কি না কি চিন্তা করছিলাম”। আমরা হাসিতে ফেটে পড়লাম। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।