আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রামছাগল

(১) জাহিরুল মিয়ার পেটভর্তি রাগ , আর মাথা ভর্তি গোবর ! তার সদা সিরিয়াস মুখখানা যেন বাংলার পাঁচ ! সাধে কি আর ছেলেরা তাকে “ভেটকি মাছ” বলে ডাকে ? ভেটকি মাছ দেখতে কেমন , যদিও কারো তা জানা নেই । তবে জাহিরুলের ভেটকে রাখা মুখ আর পিণ্ডি চটকে দেয়া চাহনি দেখলে তারা কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারে । দিন দিন ভেটকি মাছের রাগের মাত্রা যত বাড়ছে, বুদ্ধির মাত্রাও ব্যস্তানুপাতে ঠিক ততটাই কমছে ! ক্ষেপে গেলে আমের আঁটির মত লম্বাটে মুখখানা তার কুঁচকে একেবারে বরইয়ের বিচির সমান হয়ে যায় ! আর দাঁতে দাঁত চেপে রাখতে রাখতে ফর্সা মুখটা গাঢ় লাল থেকে নীলচে বর্ণ ধারণ করে । তখন হঠাৎ তার রাম চিৎকার কিছুক্ষণের জন্য সবার হার্ট ফেইল করিয়ে দেয় ! এমন কাউকে পাওয়া যায়নি, যে তার হাতে থাবড়া খাওয়ার মত বিরল সম্মাননা থেকে বঞ্চিত হয়েছে ! এমনকি সেই বোকা-সোকা , পড়ুয়া ছেলেটাও ; যাকে সবাই ‘আঁতলা মিয়া’ বলে ডাকে ; সেও একবার বিশাল একখানা চড় খেয়ে দুইদিনের জন্য বধির হয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিল । আর তাতেই আশীর্বাদ হিসেবে তার কপাল জুড়ে জেঁকে বসেছিল ভীষণ জ্বর ।

সুতরাং স্কুল বন্ধ । ইচ্ছামত খাও, আহ্লাদ পাও আর ঘুমাও । যাকে বলে ‘সাক্ষাত স্বর্গ’ ! অনেকেই এজন্য তাকে ‘হিংসে’ করত । ভেটকি মাছের বিরুদ্ধে কথা বলবে , এমন দুঃসাহস কারো নেই । কিন্তু আজ বিকেলবেলায় ঘটল অঘটন ! কদমা এসে জানাল হেডস্যার ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছেন ।

ওর আসল নাম কামরুল । কদম ছাঁট চুলের জন্য নামের এই কিঞ্চিৎ পরিবর্তন । তাছাড়া দলে থাকতে হলে সবারই ছোট , সহজে উচ্চারণযোগ্য এবং হাস্যকর একটা ডাক নাম চাই ! কদমা মিয়ার ভাগ্যটাই যেন কেমন ! যতবারই সে জন সিনার মত হেয়ার কাট দেবার বাসনা নিয়ে সেলুনে ঢুকেছে , ততবারই ফিরে এসেছে মাথায় এক বিশাল কদম নিয়ে ! কিন্তু নাম কদমা হলে কি হবে ? সারা মাথার ছোট ছোট ধারালো চুলগুলোর মত তার বুদ্ধির ধারও কম নয় । ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রস্তাবটা সে-ই দিয়েছিল স্যারকে । খবরটা শুনে সবাইকেই খুব খুশি খুশি দেখাল ।

ভেটকি মাছও গম্ভির গলায় ঘোষণা করল, “ তাহলে তো আমাদের জার্সি বানিয়ে ফেলা উচিত !” নেতার মত নির্দেশ দেয়া শুরু হল তার ; জার্সি কেমন হবে – কি রঙের হবে – সস্তা কাপড় চলবে না – মাঠে কার অবস্থান কোথায় হবে ইত্যাদি । ভাবখানা এমন, যেন এক সুপরিচালক রাখাল বালকের নেতৃত্বের অপেক্ষায় কতগুলো হাবা ভেড়ার দল মুখে বুড়ো আঙুল পুরে বসেছিল ! হুট করে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের জন্য কিছু রুলসও দাঁড় করিয়ে ফেলল সে । এর মধ্যে প্রথম শর্ত হল, চাঁদা ! তাও আবার এক হাজার টাকা ! কলিমউদ্দিন ওরফে কলা আপত্তি তুলে বসল, “ এত টাকা কিভাবে সবাই দেবে ?” - তাইলে খেলিস না ! আমাদেরকে তো ফুটবলও কিনতে হবে ! দোকানদার তো তোদের মামা হয় না , যে আবদার করলেই হাতে রসগোল্লার মত ফুটবলটাও ধরিয়ে দেবে ! নুরুজ্জামানদের আর্থিক অবস্থা শোচনীয় । এদের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র সে নিজেই । বাবা রিকশা চালান ।

বাকিদের বাবা সরকারি চাকুরে কিম্বা ছোট-খাট ব্যবসায়ী । পাড়ার সরকারি স্কুলেই নুরুর সাথে এদের পরিচয় । চাঁদার কথা শুনে প্রথমে বিশাল এক ঢোক গিলল সে । এরপর ঝি ঝি পোকার মত চিঁ চিঁ করে বলল , “ আরেকটু কমানো যায় না ?” ভেটকি মাছ তীব্র চোখে তাকাল সেদিকে । নুরুকে সে অকারণেই অপছন্দ করে , “না ।

যার টাকা নাই , তার খেলা নাই । নুরার ব্যটা নুরাকে খেলতে হবে না । তুই দুধভাত ! কিমবা চিয়ার লিডারও হতে পারিস ! মাত্র একদিনের জন্যও যে এক হাজার টাকা জোগাড় করতে পারে না , সে একটা আস্ত রামছাগল !” কথাটা কারো কাছেই ভাল লাগল না । ঝাড়ু হঠাৎ প্রতিবাদ করে বসল । ঝাঁকড়া চুলের জন্য সবাই তাকে ঝাড়ু বলে ডাকে ।

ওর মাথায় এতই চুল যে, সবার ধারণা তার ভেতরে একজন আস্ত মানুষের পক্ষেও হারিয়ে যাওয়া সম্ভব !!! বলল, “ একজন কিছু কম টাকা দিলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে তোর ?” কিছুক্ষণ তর্কের পর আমতা আমতা করে ভেটকি মাছ বলতে থাকল, “ তাহলে ক্যাপ্টেনের কথা তোরা মানবি না ? আমার কথা না শুনলে, যা গা ! নিজেরা নিজেরা খেল ! দেখি কেমন পারিস !” কলা চুপ করে মাঠের ওপর বসে ঘাসের আগাগুলো ছিঁড়ছিল । বলল, “ভেটকিরে তো ডিফেন্সে নামাব !” কলিমউদ্দিনের তপ্ত বাক্যে জাহিরুলের গায়ে যেন ফোসকা পড়ে গেল । ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দুটো টেনে তুলে ছুঁড়ে ফেলে দিল দুই প্রান্তে । সবার কাছ থেকে একটানা প্রতিবাদ সহ্য করে ব্রাউনীয় গতি শুন্য হয়ে গেছে তার ! কিন্তু স্বভাবসুলভ গোঁয়ার্তুমিটা যে না দেখালেই নয় । তারই বহিঃপ্রকাশ এটা ! স্ট্যাম্পগুলো ছিল কলার ।

ভুরু উঁচিয়ে হাল্কা রসিকতা মিশ্রিত স্বরে সে বলল , “ এর জন্য কিন্তু পে (pay) করতে হবে !” অসহ্য রাগে গট গট করে চলে গেল জাহিরুল । সামনে একটা ফুটবল পড়তেই ছুটে গিয়ে সজোরে লাথি লাগাল তাতে । ক্ষেপে সুপারসনিক হয়ে গেছে সে । কিন্তু ভাগ্যটাও বিশ্বাসঘাতকতা করল তার সাথে । হ্যাঁচকা টানে প্যান্টের পেছনের প্রান্ত ছিঁড়ে সগৌরবে নির্লজ্জের মত বেরিয়ে এলো তার লজ্জা স্থান ! এর পরের ঘটনাগুলো খুব তাড়াতাড়ি ঘটেছিল ! ২,৯৯,৭৯২,৪৫৮ মি/সে এর চেয়েও যেন দ্রুত দৌড়ে আলোকেও হার মানিয়ে দিয়েছিল সে ! (২) “খালি এইডা লাগব ! হেইডা লাগব ! আশ্চার্যি পুলাপাইন !” গতরাতের বাসি হাঁড়ি-পাতিল মাজছিলেন মা ।

তার সমস্ত রাগ যেন হাঁড়িগুলোর ওপর গিয়েই পড়েছিল । তার দিয়ে ঘষে ঘষে চকচকে ক্রোমিয়ামের স্তরখানাও তুলে ফেলবেন তিনি ! নুরু স্কুল থেকে ফিরেছে । আজকে বৃহস্পতিবার । হাফ ক্লাস । দরজার এক পাল্লায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে হজম করছিল বকুনি ।

মায়ের রাগ অবশ্য তার উপর নয় । এখনো সে কাউকে ফুটবলের কথা বলেনি । রাগটা মূলত তার সাবিনার ওপর । বেশ কিছুক্ষণ আগে সাবিনা ভয়ে ভয়ে রান্নাঘরের কাছে এসে স্টাডি টুরের কথা বলে গেছে । তখন থেকেই মায়ের ভীষণ রাগ ।

না, তিনি তাকে পঞ্চাশ টাকাও দিতে পারবেন না , “ টাকা কামাই করা কি সহজ কথা রে ? আবার বলে, পঞ্চাশ টাকা মাত্তর ! পঞ্চাশ টাকা তোদের কাছে কিছুই না ! পারলে একদিন কামাই করে দেখাইস !” নুরু ওখান থেকে সরে এলো । এরকম মুহূর্তে কি করে সে চাঁদার কথা বলবে ? নিজেকে একটা আস্ত রামছাগল মনে হল তার । আজকে ভেটকি মাছের আচ্ছা শিক্ষা হয়েছে । নুরু নিজেও জানে এটা জাহিরুলের প্রাপ্য ছিল । মানুষ তাই পায়, যা সে করে ।

কিন্তু তবুও ভেটকির নেগেটিভ কথাগুলো মাথার চারদিকে ঘুরতে থাকল তার ! (৩) বিকেলের দিকে আরেকবার মাঠে গেল নুরু । প্রায় সবারই টাকা জোগাড় করা শেষ । কাল সন্ধ্যার মধ্যে জমা দিতে হবে । ইতস্তত করে ঝাড়ু একবার তার দিকে তাকিয়ে বলল, “ তুই পারবি তো ?” ভীতু ভেড়ার মত সিটকে পড়ে থাকা নুরুর আত্মসম্মান বোধে ঘা হানল কথাটা । মুহূর্তে সিংহের মত বলিষ্ঠ স্বরে সে বলল, “ হা ।

পারব । ” কিন্তু ভেতরকার সেই রামছাগলটা তাকে তাড়া করে ফিরল । (৪) নুরু ভেবে রেখেছিল রাতের বেলায় কথাটা তুলবে সে । হ্যাঁ, সে বীরের মতই বুক ফুলিয়ে বলবে – তার টাকা চাই । এক হাজার টাকা ! বাবা-মা তার জন্য কি করেছেন ? এটুকু আবদারও তারা পূরণ করতে পারবেন না ? ঠিক খাবার সময় প্রসঙ্গটা তুলল নুরু ।

এরপর যথারীতি মায়ের মুখ কালো হয়ে গেল । বাবা কিছুই বললেন না । তার নিজের একদিনের ইনকামই তো এক হাজার টাকার নিচে ! মা-ও সুযোগ বুঝে বকার ঝুড়ি নিয়ে বসলেন । আজ অনেকদিন পর বাড়িতে দুধ আনা হয়েছে । জ্বাল দিয়ে দিয়ে গাঢ় সর ফেলা হয়েছে তাতে ।

নুরু আর সাবিনা দুধ পেলেই খুশি । আর কিচ্ছু চাই না তখন ! সর দুজনেরই খুব প্রিয় । তবে তা খাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব কিছু রুলস আছে । যেদিন নুরু সর খায় , সেদিন হাঁড়িটা সাবিনার । সবার দুধ খাওয়া শেষে সে হাঁড়িটা নিয়ে বসে ।

এরপর চামচ দিয়ে চেছে হাঁড়ির গায়ে লেগে থাকা সরগুলো জমিয়ে রাখে এক কোণে । জমানো শেষে সারা ঘর হেঁটে বেড়ায় আর নুরুকে দেখিয়ে দেখিয়ে খায় ! ব্যাপারটা নুরুর খুবই অপ্রিয় ! সাবিনার ঢং দেখলে ওর কান টেনে ছিঁড়ে দিতে ইচ্ছে হয় তার ! আজকে নুরুর সরের দিন । মা বকতে বকতে নুরুর প্লেটে দুধ ঢেলে দিলেন । মোটা হলদে সরখানা তুলে প্লেটের এক কিনারে রেখে দিলেন তিনি । নুরু এতক্ষণ চুপ ছিল ।

এবারো কিছুই বলল না । একটি আঙুলও ছোঁয়ালো না দুধে । হঠাৎ মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ালো । হাত ধুয়ে তাদের কাঠ আর ইটের তৈরি চৌকির এক কিনারে গিয়ে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়ল । মা বললেন, “ না খাইলে নাই ।

এত চ্যাত কিসের ? নবাবজাদা হইছেন আপনারা !” তবে তিনি যে দুঃখ পেয়েছিলেন, সে ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত । বাবা মাথা নিচু করে খেয়ে দেয়ে উঠে গেলেন । একমাত্র সাবিনাকেই আনন্দিত দেখাল । আজকে তার সুখের দিন । নুরুর সরটা এখন তার-ই ! (৫) কদিন ধরেই প্রচণ্ড গরম পড়েছে ।

বৃষ্টির কোন পাত্তাই নেই । অথচ আষাঢ় মাস প্রায় শেষের পথে । নুরুর বাবা রিকশা চালাচ্ছেন । অসহ্য গরমে মাথার তালুটাও ফেটে চৌচির হয়ে যাবার উপক্রম ! রোদের ভেতরে রিকশা চালান যায় না । ক্যালরি খরচ হয়ে হয়ে একসময় ফুয়েল ফুরিয়ে যায় ! তখন আর জোর খাটানর মত বল থাকে না শরীরে ।

প্যাসেঞ্জাররা প্রায়ই রেগে যান, “ নবাবের রিকশায় উঠছি ! চালাইতেও শেখো নাই !” গরমে তারও মেজাজ বিগড়ে যায় । তবুও কিছুই বলেন না । ভারবাহী গাধার মত নিঃশব্দে চালিয়ে যান । পিপাসায় শুষ্ক জিহ্বা বেরিয়ে আসে তার । জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকেন ।

আজকে সে কোনমতেই ছায়ায় বিশ্রাম নেবে না । ছেলেটা তার আবদার করেছিল । কাল রাতে কিছুই খায়নি । আজ সকালেও অভিমান করে কিচ্ছুটি মুখে দেয়নি । বুকের মধ্যে অদ্ভুত এক সুক্ষ দুঃখবোধ কাজ করতে থাকে ।

কাল চামড়া বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরতে থাকে তার । একটা সময় যেন শরীরের পানির পরিমাণও অস্বাভাবিক কমে যায় । পিশাচ কোষগুলো তখন রক্তধারা থেকে শুষে নিতে থাকে প্রয়োজনীয় পানির কণা । মাথাটা বনবন করে ঘুরতে থাকে তার । মনে হয়, এই বুঝি উত্তপ্ত মগজটা গলে গলে গড়িয়ে পড়বে মাথার দুধার দিয়ে ।

আজই কি কিয়ামত ? রিকশাটাকে এক পাশে রেখে একটা নাম না জানা গাছের ছায়া প্রায় শুয়ে পড়লেন তিনি । পাশ দিয়ে এক আইস্ক্রিম আলা ঘণ্টা বাজিয়ে বাজিয়ে চলে যাচ্ছিল ! টিং! টিং! টিং! টিং! আইস্ক্রিম মালাই মালাই ! টিং! টিং! টিং! টিং! অস্পষ্ট চোখে তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করলেন তাকে । জল খাওয়ার মত ভঙ্গি করে বোঝানোর চেষ্টা করলেন পানি আছে কি না ! আইস্ক্রিমআলা একটা ঠাণ্ডা মামের বোতল এগিয়ে দিল । টাকা না দিয়েই আগে ঢক্ ঢক্ করে গিলতে শুরু করলেন তিনি । এরপর বোতল নামিয়ে রাখলেন ।

টাকা দিলেন তাকে । চলে গেল আইস্ক্রিম আলা - টিং! টিং! টিং! টিং! আইস্ক্রিম মালাই মালাই ! টিং! টিং! টিং! টিং! নুরুর বাবা বসে আছেন গাছের ছায়ায় । নিরব ! নিথর ! মামের বোতল পড়ে গেছে । তা থেকে গলগল করে বেরিয়ে যাচ্ছে জল । পিপাসার্ত মাটি বুবুক্ষুর মত শুষে নিচ্ছে তা ।

সামান্য পরেই ভেজা মাটি আবার ধূলিময় হয়ে উঠল । নুরুর বাবা বসেই আছেন । কতগুলো কাক কোত্থেকে যেন জড় হয়েছে । ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে তারা । এই ভরদুপুরে একটানা কাকের ডাক আসলেই কুলক্ষণ ! একটা কাক তার ঘাড়ের ওপর বসল ।

এ কি উপহাস ! রাক্ষসী সূর্য এখনো খ্যান্ত দেয়নি । আগুন লাগিয়ে দিয়েছে চারিদিকে । এবার সে অন্য কাউকে গ্রাস করবার ফন্দি আঁটছে । আর নুরু ? সে এখন স্কুলে । ক্লান্ত দুপুরে একঘেয়ে পাটিগণিত করছে ফ্যানের গরম বাতাসের নিচে বসে ।

খিদের চোটে পেটের ভেতরকার গুড়ু গুড়ু ডাক তাকে বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে জার্সির কথা । আশায় ঝিকিমিকি চোখ নিয়ে সে তাকাল জানালার দিকে । একটা কাক বড়ই জ্বালাতন করছে ! এত ডাকাডাকির কি হল ! নুরুর মন পড়ে নেই সুদ কষাকষির জটিল-প্যাঁচালো অঙ্কে ! জানালা ছাড়িয়ে বহুদুর অতিক্রম করেছে তার দৃষ্টি । প্রখর রোদের মাঝে বাবা ফিরে আসবেন । নুরুর এত বড় অপমান কিভাবে সহ্য করবেন তিনি ? নুরুর বাবা আগের মতই বসে আছেন নাম না জানা গাছের ছায়ায় ।

মামের বোতলটা শুধু নেই । টোকাইরা নিয়ে গেছে ওটা ! কেউ জানে না তার কি হয়েছে ! কেউ জানে না সে কোথায় ! শুধু জানে আইস্ক্রিমআলা আর কাকগুলো । আর এভাবেই একটি প্রাণের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে , মৃত্যু ঘটে গেল আরো কিছু সম্ভাবনাময় প্রাণের । কেউ কিছু জানল না । কেউ কিছু বুঝল না ।

বোকা নুরুটাও জার্সির আশায় বসে রইল । বুঝতেও পারল না তার জন্য কি অপেক্ষা করছে ! আস্ত একটা রামছাগল সে । এখানে কোন নিশ্চয়তা নেই কারো... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.