আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কফিন বাক্স ও অন্যান্য (ছোট গল্পের চেয়েও ছোট)

"অপার্থিব অপূর্নতা শব্দটা আমার বিশেষ প্রিয়। আভিধানিক ভাবে কী অর্থ তা ঠিক জানা না থাকলেও আমি আমার মত একটা ব্যখ্যা বানিয়ে নিয়েছি বৈকি। অপার্থিব অনূভূতির ক্ষেত্রে আমার মন-এ হয় যে, আমরা সব সময় অপূর্নতা বয়ে বেড়াই।

সকাল থেকেই আলকেস আলি বসে আছে গেটের পাশে। আজকে নিয়ে ছয়দিন।

গেল শুক্রবারের ঝড়টাই সব ঝামেলার গোড়া। বেশ ভালই যাচ্ছিল তার আগে দিয়ে। শীতের সকালের রোদ পিঠে লাগিয়ে বসে থাকে আলকেস। রোদের ওম পেতে পেতে আলকেস মনে করতে থাকে বাক্সের কথা। দুইটা লুঙ্গী, তিনটা শার্ট, ছমিরনের শাড়ী গোটা চারেক, কলেজের মিনা খালার দেয়া পুরনো লিপস্টিক, আর গত ঈদে শখ করে কেনা জুতা জোড়া।

জুতা জোড়ার কথা মনে পড়তেই মেজাজটা খিচড়ে উঠে আলকেসের। শালার ঝড় ! গাছের ডাল ভাঙ্গবি তো ভাঙ্গ, তো ভাঙ্গা ডাল বাক্সের উপর ফেলার কি দরকার? সে রাতেই পানিতে ভিজে জুতাটা শেষ। "কিরে? এখনও পাস নাই?" আলকেসকে দেখে বদলি ডিউটিতে আসা দারোয়ান হারুন মিয়ার প্রশ্ন। হাতে নেভি সিগারেট। "না ভাই।

" লোকটাকে পছন্দ করে আলকেস। পাঁচ বছর হলো হারুন মিয়াকে দেখছে আলকেস। কখন গালমন্দ করতে দেখে নাই। "চিন্তা লইস না। " গাল ভরতি ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে বলে হারুন "আমি অন্য দারোয়ানগো কইয়া দিমু, বাক্স আইলে যেন তোরে খবর দেয়।

" আরো কিছুক্ষন বসে থাকে আলকেস। বিষন্ন চোখে তাকিয়ে থাকে আলকেস। কিছুটা নস্টালজিক হয়ে বসে থাকে আলকেস। আগের বাক্সটা যখন প্রথম নিয়ে আসে আবাক চোখে তাকিয়ে ছিল ছমিরন। সামনের রিক্সার গ্যারেজ থেকে হাতুড়ি নিয়ে এসে বাক্সের ভিতর পলিথিন পেরেক দিয়ে লাগিয়ে দিসিল আলকেস।

বৃষ্টির দিনেও বাক্সে পানি ঢুকতো না। আর কয়েক দিন হলে একটা তালা লগানোর ব্যবস্থা করা যেত। মিনা খালার কাছে তালা চেয়েছে ছমিরন। প্রায় দিন বিকেলে আলকেছের ফুটপাতের দোকানে ফুচকা খেতে আসে মিনা। বেশির ভাগ দিনই অলীক থাকে ওর সাথে।

আলকেস দোকানে ফুচকা-চটপটি বানায় আর ছমিরন এটো বাসনগুলো ধোয়। দিনের বেলা কলেজের হোস্টেলে কাজ করে ছমিরন। ছমিরনের ভাষার কয়েকজন খালার সাথে তার "কনটাক" আছে। ছমিরন তাদের ঘর পরিস্কার করে দেয়, কাপড় ধুয়ে দেয়, বাজারও করে। আবার খালারা যেদিন অনেকে মিলে আনন্দ করে, সেদিন রান্নার কাজেও হাত দেয়।

আলকেসের দিন শুরু হয় দেরিতে । আসলে আলকেস কাজ শুরু করে দুপুরের দিকে। চটপটির ডাল বসায় কাঠের লাকরির চুলায়, আর তেতুল গুলে টক বানায়। পেয়াজ-মরিচ কাটার কাজটা করে সবার শেষে। সপ্তাহে দুইটি দিন মাল কিনতে গেলেই হয়।

ছমিরনের খালাদের কল্যানে ব্যবসাটা ভালোই চলে। বিকেলে-সন্ধ্যায় তারা আসে, কেউই একা আসে না, সাথে থাকে বন্ধু-বান্ধবি, কখনো ভাই-বোন। কয়েকদিন আগে মিনা খালার সাথে করে তার মাকে নিয়ে এসেছিল, উনার মায়ের খুব সখ মেয়ে হোস্টেলে কেমন করে থাকে দেখার। তাই মেয়ের কাছে বেড়াতে এসেছে। "কাকা পুরান গেটে একটা ট্রাক আইসা থামসে।

" দৌড়ে এসে বলে নয় বছরের মিজান। এই অল্প বয়েসেই জীবনের অনেক কঠিন মারপ্যাচ শিখে গেছে সে। ভালো করেই বুঝে গেছে আলকেসর একটা বাক্স দরকার বাচার জন্য। পুরান গেটে এসে দাড়ায় আলকেস। না, ট্রাক থেকে নামে না বাক্স, নামবে কি করে? কোন বাক্সই নাই।

"চিন্তা লইয়ো না কাকা, এত বড় শহর, কেউ না কেউ বাক্স লইয়া আইবো। কতো মানুষ মরতাসে.." অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকে আলকেস। এই বাচ্চাটাও তার সাথে কামনা করে মানুষের মৃত্যুর। যার লাশ আসবে কোন এক বাক্সে। আলকেস আবার সাজাবে তার সংসার সেই বাক্সে।

-------------------------------- পাঠক, বড় বড় কবরস্থানগুলোর পাশ দিয়ে যাবার সময় লক্ষ্য করবেন এই রকম কফিন বাক্সে সংসার গেড়েছে আলকেসের মত অনেকেই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।