আহ অমরত্ব, তোমার উষ্ণ ঠোঁটে রাখি ঠোঁট, চোখ বন্ধ করে সবটুকু আনন্দ ভোগ করি। তোমার উষ্ণতায় বারেবারে বিলীন হয়ে যাই, দিতে পারিনি কিছুই, শুধু নষ্ট করে যাই। কোলাহল কখনই পছন্দ ছিলনা আমার। তাই দুর্গাপূজা দেখতে যাওয়া হয়না। বন্ধুদের অবশ্য এ ব্যাপারে সীমাহীন আগ্রহ।
ব্যাপারটাতে অবশ্য অন্য কিচ্ছু আছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার চেয়ে ফ্রয়েডীয় চেতনা বেশী কাজ করে।
যাই হোক বন্ধুদের অনুরোধে পূজায় গেলাম। চীৎকার চেঁচামেচি তে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। তবে উৎসব মুখর পরিবেশটা ভালোই লাগছে।
মুসলমান পরিবারে জন্ম নেয়াতে হিন্দু ধর্মের প্রতি একটা বিদ্বেষ জন্মগত ভাবেই লাভ করেছিলাম। সেটা সময়ের পরিক্রমাতে অনেকটাই ক্ষয়ে গেছে। তারপরও যেটা ঠিকে আছে সেটাই বিদ্বেষ তৈরির জন্য যথেষ্ট।
পূজার ব্যাপারে তেমন একটা আগ্রহ তাই ছিলনা। এখন পূজায় এসে দেখি ব্যাপারটা খারাপ লাগছেনা।
আমি পূজার মণ্ডপের দিকে এগিয়ে গেলাম। কয়েকজন মেয়ে শাড়ি পরে নাচছে। আমি নাচ দেখছি। আমি মণ্ডপের কাছে এগিয়ে গেলাম। সবাই ভক্তিভরে প্রণাম করছে।
আমি দুর্গার দিকে তাকালাম। এক অসাধারণ সৌন্দর্যে আমার চোখ দুটি ছেয়ে গেল। এটাকে কি বলা যায়, ভক্তি না প্রেম?
আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম, এই অনুভূতিটা আসলে কি?
না এটা ভক্তি নয়, এটা প্রেম। এক রমণীর প্রতি প্রেম। আমি নিস্পলক তাকিয়ে আছে।
আমি প্রেমময় চোখে তাকিয়ে আছি। আমার মনে হল আমি হাত বাড়ালেই পেয়ে যাবো তাঁকে।
আমার হাতে কোন এক দেবী হাত রাখবেন, আমি তখন হয়তো মেঘ হয়ে যাব, কিংবা শিশির হয়ে যাবো কিংবা কোন এক রঙিন ডানার প্রজাপতি হয়ে যাবো। আমার অস্তিত্ব ডুবে যাচ্ছে প্রেমে, আমার সময় ডুবে যাচ্ছে প্রেমে। আমি দেখি, আমি তার পা দুটি স্পর্শ করি।
অদ্ভুত এক শিহরণ কাজ করে আমার মধ্যে।
আমি কতক্ষণ এভাবে ছিলাম জানিনা। বন্ধুদের ডাকে আমি চমকে উঠি। আমি অদ্ভুত ভালো লাগায় আচ্ছন্ন হয়ে আছি। বন্ধুরা জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।
আমি জবাব দেইনা, আমি হাসি। অবশেষে বন্ধুদের সাথে সেদিন চলে আসি।
আমি সারারাত ভেবেছি, এটা কি হতে পারে। অনেকটা অন্যায়ের মধ্যে পরে যায় এটা। আসলে অন্যায় টা কি? অন্যায় একটা বোধ, সেটা যখন কাজ করে তখনই আসলে ন্যায় অন্যায় চিহ্নিত হয়।
আমি এখন এই বোধ নিয়ে ভাবছিনা। আমি একটা প্রেম নিয়ে ভাবছি, একটা সপ্ন নিয়ে ভাবছি। আমি প্রেমে পরে গেছি এক দেবীর। যার ভক্ত অনেক, কিন্তু আমি ভক্ত না হয়ে প্রেমিক হয়ে গেছি।
পরদিন সকাল হতেই আবার সেই মণ্ডপে গেলাম।
সকালের স্নিগ্ধ আলোয় দুর্গার চোখমুখ ঝলমল করছে। আমি সেই ঝলমলে সৌন্দর্য দেখি। এটাই আমার প্রথম প্রেম। এক ঐশ্বরিক প্রেম, এক অদ্ভুত প্রেম। সারাটা দিন কিভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারিনি।
চীৎকার হল্লা সবকিছুকেই মনে হয়েছিল এক মধুর সংগীত। দিন পেরিয়ে রাত হয়। রাতের গভীরতা আমাকে ফিরে আসতে বাধ্য করে। আমি ক্লান্তিহীন ভাবে ফিরে আসি ঘরে।
পরদিনও গেলাম।
আজকের আবহাওয়াটা কেমন যেন অন্যরকম। সবার মধ্যে একটা দ্রুততার ভাব। আমি মণ্ডপের সামনে গিয়ে দাড়াই। আজ পাঁচটি গোলাপ নিয়ে এসেছি। আমি গোলাপ গুলো দিয়ে আমার প্রেম নিবেদন করলাম।
আমি সহস্র নয় লক্ষ নীল পদ্ম এনে দেবো। বেলা ফুরিয়ে যাচ্ছে। শুনতে পেলাম আজ নাকি বিসর্জন। আমার হৃদয় কেঁপে উঠলো।
আমি আসন্ন অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছি।
এই বিসর্জন সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি ক্রমাগত অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছি। বিসর্জনের সময় চলে আসে। ঢাকের বাজনা আমার হৃদয়ে আঘাত করতে থাকে। আমি অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছি।
সবাই তাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি পিছনে পিছনে যাচ্ছি। জনতা যেন উম্মত্ত হয়ে গেছে। মাঝ নদীতে নিয়ে গেল তারা।
আমি তীরে দাঁড়িয়ে আছি।
ঝুপ করে একটা শব্দ হল। হ্যাজাকের আলোয় আলোকিত হওয়া জায়গাটার দিকে আমি তাকাই। ডুবে যাচ্ছে সে, তাঁর হাত দুটো বাড়িয়ে দিচ্ছে আমার দিকে। আমি আর সহ্য করতে পারিনা। সব শেষ হয়ে যায়।
সব চীৎকার শেষ হয়ে শুরু হয় নীরবতা। আমি বাড়ি ফিরে আসি। এভাবেই প্রেমকে বিসর্জন দিয়ে। কোন এক জোছনায় অবারিত নদীর জল ধারন করেছে আমার প্রেমকে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।