তোমার অস্তিত্বে সন্দিহান, তবু্ও সদাই তোমায় খুঁজি
দেবী দুর্গা বৎসরে একবার তাঁর স্বামীগৃহ কৈলাস পর্বত হতে মাটির পৃথিবী অর্থাৎ তাঁর পিতৃগৃহে বেড়াতে আসেন। সাথে নিয়ে আসেন চার সন্তান গণেশ, কার্তিক, স্বরসতী ও লক্ষীকে। একেক সময়ে তিনি একেক বাহনে আসেন, একেক বাহনে যান। পন্ডিতদের মতে এবার তিনি এসছিলেন দোলায় চড়ে এবং ফিরে গিয়েছেন হাতিতে। হাতিতে ফিরার কারণে পন্ডিতদের মতে এবার নাকি পৃথিবী শস্যে ভরে যাবে।
পৃথিবী শস্যে ভরে যাবে কিনা তা পরে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে আপাতত তিনি যেটা দিয়ে গেছেন সেটা চোখের সামনে স্পষ্ট। আপনি যদি পুজার পরবর্তী সময়ে ভারতীয় বাংলা চ্যানেলগুলো দেখে থাকেন তবে দেবীর বিদায়ের সময়ে তিনি পৃথিবীকে কি দিয়ে গেছেন তা খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। টিভি চ্যানেলগুলো দিনে-রাতে শুধু দেখাচ্ছিল দেবীর বিসর্জনের কারণে পবিত্র গঙ্গা কীভাবে দূষণে একাকার হয়ে যাচ্ছে। লক্ষ, লক্ষ প্রতিমা বিসর্জনের ফলে প্রতিমা তৈরীর সামগ্রী আর কাদামাটির কারণে গঙ্গা মোটামুটিভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
এটা নিয়ে হাইকোর্টে একটি মামলাও হয়। কলকাতা কর্পোরেশন প্রচুর জনবল আর বহু টাকা খরচ করে এখনও পবিত্র গঙ্গাকে পুরোপুরি কলুষমুক্ত করতে পারেননি।
আমাদের বুড়িগঙ্গা নদীতেও অনেক প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদী এমনিতেই দূষিত। তাই 'বোঝার উপর শাকের আটি' মনে করে হয়তো কেউ এটা নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি।
অথবা সাম্প্রদায়িকতার একটা তকমা লেগে যাবে এই ভয়েও হয়তো আমাদের পরিবেশবাদীরা নীরব ছিলেন। সব বাদীরাই আসলে সময়ে সরব আর অসময়ে নীরব থাকেন।
অশ্রুসজল নয়নে দেবীকে বিদায় দেওয়ার একমাসও গত হয়নি। এরমধ্যেই আজকে পত্রিকায় দেখলাম রমনা কালিমন্দিরে দেবীকে (কালি আসলে দুর্গারই আরেক রূপ) কীভাবে নির্মমভাবে ভাংচুর করা হয়েছে। পত্রিকার রিপোর্টে যা বুঝলাম, ভাংচুরকারীরা কেউ ভিন্ন ধর্মের নন।
সবাই দেবীর অনুসারী, দেবীর একান্ত ভক্ত। ঠিক কি কারণে তাঁরা দেবীর প্রতি এমন নির্মম হলেন তা কেবল দেবী আর তাঁর বিতৃষ্ণ ভক্তরাই বলতে পারবেন। তবে এতটুকুন ভেবে তৃপ্তি পেলাম যে, এ ঘটনা দিয়ে অন্তত বাংলাদেশকে সাম্পদায়িক অসহিষ্ণু রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ থাকলনা। সভা, সেমিনারে মানবতাবাদী সাজা যাবেনা। আয়োজন করে ভিডিওচিত্র উদ্বোধন করা যাবেনা।
কোনরকমে হয়তো রাখ-ঢাক দেওয়ারই চেষ্টা চলবে।
পাটটীকাঃ আমি কোরবাণীর মতো এই আরম্বরপূর্ণ পুজাকেও অতিমাত্রায় বাড়বাড়ি বলে মনে করি। শুনে থাকি প্রতিটি মন্ডপে প্রায় লাখ টাকার মতো খরচ করা হয়। সরকারও নাকি সাহায্য দেয়। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশের সাধারণ হিন্দুদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা খুবই করুণ।
যারা উচ্চবিত্ত ছিলেন তাঁরা দেশভাগের পর এবং পরবর্তীতে ৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ ও ৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে চলে গেছেন বা চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। নিতান্তই যাদের যাওয়ার সামর্থ্য নেই তাঁরাই পড়ে আছেন। সত্যি হচ্ছে এই যে, এদের উন্নতির জন্য স্বাধীনতার পর হতে এ পর্যন্ত কোন সরকারই আলাদা করে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এক্ষেত্রে পুজার নামে যে টাকা অপচয় হয় তা কি এসব দরিদ্র হিন্দু শ্রেণীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা যেতনা? আমার মনে হয় সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।