........ যুগে যুগে মানুষ নানাভাবে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে আরোগ্য লাভ করার জন্য উপায় উদ্ভাবন করে চলছে । প্রাচীনকালে মানুষ বিশ্বাস করত যে অসুখ-বিসুখকে স্রষ্টার অভিশাপ মনে করত । সময়ের চাকা গড়ানোর সাথে সাথে নতুন নতুন রোগ যেমন আবিস্কার হয়েছে, তেমনি বিজ্ঞানীরা নানা জটিল রোগের প্রতিরোধ করার উপায় আবিস্কার করেছেন । চিকিতসাবিজ্ঞান কেমন করে আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছুল???
১০০০০খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চিকিতসাশাস্ত্রের অগ্রযাত্রার ক্ষুদ্র বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম ।
১০০০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দঃ
ইউরোপ ও আমেরিকায় ট্রিপানিং নামক এক প্রকার অদ্ভুত পদ্ধতি অনুসরণ করা হত ।
মানুষের মাথার খুলিতে ফুটো করে দেয়া হত । কারণ, প্রাচীন ্মানুষেরা অশুভ আত্মাকে অসুখ-বিসুখের জন্য দায়ী বলে মনে করত । তাদের বিশ্বাস ছিল এভাবে ফুটো করলে খারাপ আত্মা ঐ পথ দিয়ে বেরিয়ে যাবে । ফ্রান্সে প্রাচীন ১২০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল, এর মাঝে ৪০ খুলিতে এভাবে ফুটো করা ছিল । এই পদ্ধতিটিকে প্রাচীনতম সার্জারি হিসেবে অনেকে বিবেচনা করেন ।
শিল্পীর চোখে ট্রিপানিং
২৭০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দঃ
এই সময়ের ইতিহাসের প্রথম নামকরা ডাক্তারের আবির্ভাব ঘটে । প্রাচীন মিশরের ইমহোটেপ নামক এক ব্যাক্তি রোগ সারাই কুরে খ্যাতি অর্জন করেন । জানা যায়, তাকে পররবর্তীতে ‘ঈজিপসিয়ান গড অব মেডিসিন’ বলেও মান্য করা হয়েছিল ।
ইমহোটেপের প্রতিকৃতি
১০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দঃ
এসময় ইন্ডিয়াতে শল্যচিকিতসার অনুশীলন করা হত । সার্জনরা এম্পুটেশন(কোন রোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অংগ-প্রত্যঙ্গের অপসারণ), স্কিন গ্রাফট(চামড়ার টিস্যু প্রতিস্থাপন ও চোখের ছানি কাটা ইত্যাদি অপারেশন করতে পারতেন ।
৪০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দঃ
গ্রীক চিকিতসক হিপোক্রেটস “হিপোক্রেটিক অথ” এর ধারণা প্রদান করেন ।
২ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দঃ
চায়নাতে এক ধরণের চিকিতসা চালু হয় । এতে চামড়া ছিদ্র করে রোগ সারানোর চেষ্টা করা হত । এটি “আকুপাংচার” নামে পরিচিত ।
মিং ডাইনাস্টির সময়ের আকুপাংচার চার্ট
১৩০ সালঃ
একজন মানুষের মন মেজাজ দেহের অভ্যন্তরের চার প্রকার তরলের ওপর নির্ভর করে- ১৩০ সালে গ্রীক ফিজিশিয়ান গ্যালেন এমন একটি ধারণা প্রদান করেন ।
এই ধারণাটিকে "দি ফোর হিউমার" ও বলা যেতে পারে । তবে বর্তমান চিকিতসাবিজ্ঞান এ ধারণা সমর্থন করে না ।
"দি ফোর হিউমার" বিষয়ক একটি ছবি
১০২৫ সালঃ
কিংবদন্তী চিকিতসক ইবনে সিনা(৯৮০-১০৩৭) "কানুন ফিত-তিব" নামক গ্রন্থ রচনা করেন । এই বইটি "এনসাইক্লোপিডিয়া অব মেডিসিন" নামেও খ্যাত ।
"কানুন ফিত-তিব" এর একটি পাতা
১৩০০ সালঃ
মানুষের দেহ থেকে রক্ত চুষে নেয়ার জন্য জোঁক শরীরে ছেড়ে দেয়া হত ।
কিছু কিছু রোগের কারণ অতিরিক্ত রক্ত- এমন ধারণা থেকেই জোঁক-চিকিতসা করা হত ।
১৫৪৩ সালঃ
আন্দ্রে ভেসালিউস(১৫১৪-১৫৬৪) মানুষের দেহের প্রথম নিখুঁত এনাটমির চিত্র আঁকতে সমর্থ হন । তাঁর একাজের উপকরণ ছিল চুরি করা মৃতদেহ!
ভেসালিউসের আঁকা এনাটমি
১৫৯০ সালঃ ডাচম্যান জেকারিয়া জ্যান্সেন কম্পাউন্ড মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কার কুরেন ।
১৬০০খ্রিষ্টাব্দঃ দক্ষ্ণ আমেরিকায় ম্যালেরিয়া সারানোর অন্য কুইনাইন ব্যবহার করা হত ।
১৬১৫ খ্রিষ্টাব্দঃ ইটালিয়ান চিকিতসাবিদ স্যাঙ্কটোরিয়াস(১৫৬১-১৬৩৬) থার্মোমিটার আবিষ্কার করেন ।
১৬২৮ খ্রিষ্টাব্দঃ প্রথম চার্লস এবং প্রথম জেমসের চিকিতসক উইলিয়াম হার্ভে(১৫৭৮-১৬৫৭) মানবদেহে রক্ত সঞ্চালনের ধারণা প্রদান করেন ।
১৬৮৩ খ্রিষ্টাব্দঃ
অলন্দাজ বিজ্ঞানী আন্থনি ভন লিউয়েনহুক(১৬৩২-১৭২৩) ব্যাকটেরিয়া আবিশকার করেন ।
১৭৯৬ খ্রিষ্টাব্দঃ
ব্রিটিশ ডাক্তার এডোয়ার্ড জেনার স্মলপক্সের প্রতিষেধক টিকা আবিস্কার করেন ।
১৮০০ খ্রিষ্টাব্দঃ ইটালিয়ান ফিজিসিস্ট ভোল্টা(১৭৪৫-১৮২৭) পেশীর ওপর ইলেক্ত্রিসিটির প্রভাবের ব্যাপারে আলোকপাত করেন ।
১৮০৫ খ্রিষ্টাদঃ
আফিম থেকে মরফিন নামক পেইনকিলার পৃথক করা হয় ।
১৮১৬ সালঃ ফরাসী ডাক্তার রেঁনে লেনেঁক(১৭৮১-১৮২৬) কাগজ দিয়ে স্টেথোস্কোপ তৈরির প্রচেষ্টা চালান ।
১৮৪৪ সালঃ হোরয়াস ওয়েলস(১৮১৫-১৮৪৮) লাফিং গ্যাস(নাইট্রিক অক্সাইড)কে সাধারণ চেতনানাশক হিসেবে ব্যবহার করেন ।
১৮৪৬ ও ১৮৪৭ সালঃ ইথার ও ক্লোরোফরম যথাক্রমে আমেরিকান ডেন্টিস্ট উইলিয়াম মর্টন ও স্যার জেমস সিম্পসন চেতনানাশক হিসেবে ব্যবহার করেন ।
১৮৪৯ সালঃ প্রথম মহিলা হিসেবে আমেরিকার এলিজাবেথ ব্ল্যাকোয়েল মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট হন ।
এলিজাবেথ ব্ল্যাকোয়েল
(চলবে, অনেক ছবির কারণে দুই পর্বে দিতে হচ্ছে)
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া ও সংগ্রহ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।