আমাদের আড্ডার মধ্যমণি হচ্ছেন পটকা ভাই। এলাকার অনেক বড় ভাইয়ের আড্ডারও মধ্যমনি ছিলেন পটকা ভাই। নিজের প্রেমিকার বিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ফ্রেন্ড সার্কেল এর বিবর্তন পটকা ভাইয়
ের জীবনের একটা বড় অংশ দখল করে আছে। বিলকিসের বিয়ে হয়ে যাবার পর থেকে পটকা ভাই কেমন যেন উদাস উদাস ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়ান। নিজের সরকারি চাকরি করা বাবার ঘুষের টাকার প্রতি তার অনেক রাগ থাকায় উনি সেগুলো দিয়ে সিগারেট কিনে ধোয়া বানিয়ে উড়িয়ে দেন।
পটকা ভাইয়ের এমন উদাস উদাস ভাব আমাদের বুকে ভীষণভাবে বাজিল। আমরা চিন্তিত হয়ে পড়লাম। আড্ডায় আর প্রান নেই। সেদিন আমাকে হঠাৎ এসে বললও,
-নোমান আমার জন্য একটা চাকরি দেখতে পারবি?
-কেন? আঙ্কেল কি ঘুষ খাওয়া ছেড়ে দিছে?
আমার এমন উত্তরে পটকা ভাই আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন, নিশিও হার মানবে এই দৃষ্টির কাছে। আমি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করলাম,
-কি ধরনের চাকরি দরকার আপনার?
-পিজা ডেলিভারির।
শুনে খটকা লাগলো প্রানে। ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। শুধু কালা না, বহুত খুবসুরুত কালা হ্যায়। আমাদের এই এলাকায় রিমি আপার পিজা প্রীতির ব্যাপারে জানেনা, এমন কোন মানুষ নেই। এমনকি বাচ্চাদের মায়েরাও নাকি তাদের ঘুম পাড়ান এই বলে, না ঘুমালে, রিমি তোমাকে পিজা বানিয়ে খেয়ে ফেলবে।
বাচ্চারাও পিজা হয়ে যাবার ভয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তবে কি পটকা ভাই রিমি আপুর প্রেমে পড়লেন? সর্বনাশ! রিমি আপুকে দেখলে মনে হয় আন্তর্জাতিক ভারোত্তোলন এ স্বর্নপদক পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমাদের মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস আছে, উনি অলিম্পিকে গেলে স্বর্ন পদক মিস গেলেও ব্রোঞ্জ মিস যাবেনা। আমাদের মধ্যে জলিল একটু বেশি ত্যাদড়। সেও দেখি আমার মনের ভেতর ঢুকে বসে আছে!
সে বত্রিশ দাঁত (মতা
ন্তরে ৩১) বের করে বলল,
-ঘটনা কি ভাই? রিমি আপার প্রেমে পড়লেন নাকি?
জবাবে পটকা ভাইয়ের লাজুক হাসি দেখে আমরা আতঙ্কিত হয়ে গেলাম।
সর্বনাশ তাহলে ঘটে গেছে! আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-রিমি আপার প্রেমে পড়ার সাথে পিজার ডেলিভারি ম্যান হওয়ার সম্পর্ক কি?
পটকা ভাইয়ের বরাতে জানা গেল, একমাত্র পিজা ডেলিভারি ম্যানকেই নাকি রিমি আপার ম্যান মনে হয়। এছাড়া আর কারো নাকি ম্যানলি ভাব নেই। আমরা আরো বেশি চিন্তিত হলাম, ঘটনা শুনে। আমরা কোন সমাধান খুঁজে পেলাম না। পটকা ভাই আর উদাস হয়ে গেলেন।
আমাদের আড্ডা আর মরে গেল। পটকা ভাইয়ের মন খারাপটা আমাদের আর সহ্য হচ্ছিলোনা।
একদিন দুপুরে পটকা ভাই রিমি আপাদের বাসার সামনে উদাস হয়ে হাঁটাহাঁটি করতে গিয়ে বাসার সামনের ম্যানহোলে পড়ে গেলেন। যে ম্যানহোল রিমি আপার মত হস্তিনীকে গেলার সাহস করলোনা, সেই ম্যানহোল পটকা ভাইকে অর্ধেক গিলে ফেলল। আর সেইসময় পটকা ভাই রিমি আপার বারান্দা হতে ভেসে আসা হাসির শব্দে মুগ্ধ হয়ে গেলেন।
ভাবলেন, রিমি আপা হাসছে। তিনি ভাব মেরে তাকিয়ে দেখেন রিমি আপাদের কাজের মেয়ে সখিনা হাসছে। পটকা ভাই রেগে গেলেন। ম্যানহোল থেকে উঠে পড়লেন। এমন সময় তার কাছে ফোন এল।
রিমি আপা ফোন দিয়েছে! তিনি ফোন রিসিভ করলেন,
-হ্যালো রিমি।
-তুমি নাকি ম্যানহোলে পরে গেছ?
রিমি আপা খিলখিল করে হেসে উঠলেন। হাসি শুনে পটকা ভাইয়ের মন ভরে গেল। রিমিকে বিয়ের পর বেয়াদপ সখিনাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে। পটকা ভাইয়ের মাথা হটাৎ শ্রাবণের আকাশের মত ক্লিয়ার হয়ে গেল।
-রিমি শোন, আমি ভেবে দেখলাম ম্যানহোলে পড়াটা ভালো হয়েছে। ম্যানহোলে মানুষ পরে বলে এটার নাম ম্যানহোল। তারমানে এটাতে যারা পরে তাদের মধ্যে ম্যানলি ভাব আছে।
রিমি আপা এই কথা শুনে হাসি থামিয়ে বললেন,
-ঠিক বলছো। এখন থেকে তুমি তাহলে ম্যানহোলেই থাকো।
ম্যানলি ভাব আরো বাড়ুক।
সেই থেকে বেশকিছুদিন ধরে পটকা ভাই ম্যানহোলে বসত গড়েছেন। আর আমরা সবাই উদাস হয়ে ম্যানহোলের চারপাশে ঘুরছি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।