আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি। আগের রাতে পটকা ভাই আরাম করেই ঘুমাইছলেন। কিন্তু নরকে ২য় রাতে টের পেলেন জাহান্নাম কাকে বলে। মাত্র চোখটা বন্ধ করেছেন। হালকা হালকা ঘুম আসছিল, চোখের সামনে বিপাশা বসু তখন এসে হাজির।
মাত্র কাপড়ে হাত দিছেন, ঠিক তখন টের পেলেন কেমন যেন গরম অনুভতি হচ্ছে। না বিপাশার জন্য শাররীক গরম না। শরীরের ঘামসহ গরম। কিছুই বুঝলেন না। মনে হয় কারেন্ট চলে গেছে।
অবাক হয়ে গেলেন। সঙ্গে খেয়াল করলেন বাংলাদেশের জাহান্নামি মশাও হাজিরা। আরে আজবতো তাইলে আর মইরা কি লাভ হইল। বাংলাদেশ আর জাহান্নামের পার্থক্য কি? গরম আর মশার যন্ত্রনায় রুম থেকে বের হতে গিয়ে নরকরক্ষীর সাথে দেখা হল। নরকরক্ষীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী “স্বর্গে বিদ্যূৎ দিয়ে যা থাকে তা জাহান্নামে দেয়া হয়, আজ রাতে আর কারেন্ট আসার সম্ভাবনা নাই”।
আগে বাংলাদেশে থাকলে পটকাভাই এই অবস্থায় বলতেন “এর থেকে জাহান্নাম ভাল” এখন কি বলবেন? এরথেকে বাংলাদেশ ভাল??
সারারাত ঘুমাতে পারেননি। শেষ রাতে হাল্কা একটু ঘুম আসছে। আল্লাহ জানে সকালে আবার ইভা রহমানের গান শুনতে হয় নাকি? ওইযে শুরু হয়ে গেল। কিন্তু এটাতো কালকের কন্ঠ না। নরকরক্ষীর কল্যানে জানা গেল ইনি তিশমা।
আগে তিশমার গান এফএময়ে দিলে চ্যানেল চ্যান্জ করে দিতেন কিন্তু এখন কিচ্ছু করার নাই। একেতো ঘুম হয় নাই। তার উপর তিশমার চিল্লাচিল্লি। পুরা নরকীয় যন্ত্রনা। মুক্তির উপায় নাই।
নিজের উপর রাগ উঠছে পটকা ভাইর “কোন আক্কেলে যে মরতে গেলাম”
একসময় গান বন্ধ হল। নাস্তা করার পর নরক কতৃপক্ষ একটা কাগজ ধরিয়ে দিলেন।
এটা কি?? পটকা ভাই জিজ্ঞেস করলেন।
-আপনার নরকের PR (Permanente Resident ) এর কাগজ। নরকরক্ষীর উত্তর।
-এটা দিয়ে কি করতে হবে?
-এটা নিয়ে আপনি এখন ৭ কি.লি. দূরে আমাদের ব্রাঞ্চ অফিসে যাবেন। ওখানে থেকে একটা সিগনেচার নিয়ে আসবেন।
-কিভাবে যাবে? কিসে যাব?
-আমাদের নিজেদের কোন ট্রান্চপোর্ট নাই। আপনাকে লোকাল ট্রান্চপোর্টে যেতে হবে।
পটাকা ভাই ওকে বলে কোন রুটে যেতে হবে জেনে নিলেন।
ভাবলেন নরকের বাস সার্ভিসতো একটু হয়ত খারাপ হবে। কিন্তু কতটা আর খারাপ হবে। কিন্তু রাস্তায় গিয়ে দেখলেন অবস্থা খারাপ। কোটি কোটি মানুষ রাস্তায় দাড়িয়ে আছে। কোন বাস নাই।
কিছুক্ষন পর ৭ নম্বর নামক একটি বাস আসল। পটকা ভাই তার আশে পাশেও পৌছাতে পারলেন। একটা সিএনজি দেখে এগিয়ে গেলেন।
“মামা যাইবে ব্রাঞ্চ অফিস?
-“না যামুনা” সিএজি ড্রাইভারে কটমট উত্তর।
-“কেন মামা,চলনা” পটকা ভাইয়ের অসহায় অনুরোধ।
-“এখন রেষ্ট লইতাছি” বিড়িতে আরেকটা টান দিতে দিতে ড্রাইভার সাহেব উত্তর দিলেন।
পুরা ৩ ঘন্টা দাড়িয়ে অবশেষে একটা বাসের হ্যান্ডেল ধরে কোনমতে উঠলেন । দুই মিনিট না যেতেই বাস দাড়িয়ে গেল। পুরা আধঘন্টা দাড়ানোর পর জানা গেল নরক প্রধান তার অফিস থেকে স্বর্গে (বাসভবন) ফিরছেন। নরক প্রধান হলেও তিনি থাকেন স্বর্গে।
সেখান থেকে জাহান্নাম চালান,জাহান্নামের সেবায় নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন। তাই জ্যাম। এদিকে পটকা ভাইকে ছোট প্রকৃতি অনেক্ষন ধরে ডাকছে, একলোক বাসের তলা মনে করে তার কয়েকশ কেজি পা খানা পটকা ভাইর পায়ের উপরে রেখে দিয়েছন। এসব সহ্য করতে না পেরে পটকা ভাইর মুখ থেকে বের হয়ে গেল “ওরে আমার বাংলাদেশরে”
অবশেষে ৩ ঘন্টা পর মুক্তি পেলেন জ্যাম থেকে। সোজা নরকের ব্রাঞ্চ অফিসে গিয়ে দেখলেন সবাই বেশ মজা করে খোশগল্প করছে।
নিজের সমস্যা নিয়ে একজনের কাছে গেলেন। তিনি আরেকজনকে দেখিয়ে দেলন। যার কাছে যান তিনি অন্যজন দেখিয়ে দ্যান। অদ্ভুত সমস্যতো। শেষ পর্যন্ত সবরকম কাজ শেষ করে পটকা ভাই যখন জাহান্নামে নিজের রুমে ফিরলেন তখন সন্ধ্যা সাতটা।
রুমে নরকরক্ষী এসে হাজির। নরকরক্ষী পটকা ভাইকে বললেন “ আপনার জন্য দুটো সুখবর আছে” পটকা ভাই খুশী হয়ে গেলেন। এত ঝামেলার পর দুই দুইটা ভাল খবর।
-আপনি এখন থেকে আমাদের স্থায়ী নাগরিক। আপনার কাগজপত্র সব ওকে।
আর ২য়টা হল আমরা আপনাকে একজন সঙ্গী দিব। মানে আপনাকে বিয়ে দিব। রাত ১০টার দিকে কনের লিষ্ট দেয়া হবে,এখন ফ্রেশ হয়ে টিভি রুমে আসুন” এই বলে নরকরক্ষী চলে গেলেন।
পটকা ভাই মনে মনে খুশীই হলেন। শুনেছেন নরকে নাকি পৃথিবীর সব সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে আসে।
তার মানে তার ভাগ্যেও একজন সুন্দরী আছে। যাক ভালই হল। একটা সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করার শখ ছিল।
তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে টিভি রুমে গিয়েই দেখলেন ষ্টার প্লাসে হিন্দী সিরিয়াল দেখানো হচ্ছে। বুঝলেন আজকে শেষ।
এখন কি করবেন। নরকরক্ষীকে বলে চ্যানেল চেন্জ করালেন। এখন আসলো ষ্টার জলসা। কিচ্ছু করার নাই। এটা এক প্রকার শাস্তি।
নরকে এ দুটা চ্যানল ছাড়া আর কোন চ্যানেল নাই। নরকরক্ষী জানাল এটা মনেযোগ দিয়ে দেখতে হবে। আগামীকাল এর উপর একটা পরীক্ষা দিতে হবে। কি আর করা সকল মনেযোগ ষ্টার জলশার সে নারীর উপর দিলেন যে লাখটাকার শাড়ী পড়ে ঘর ঝাড়ু দিচ্ছেন। দেখতে দেখতে পটকা ভাই ভাবলেন “আমার শাস্তি না হয় হিন্দী সিরিয়াল দেখা, কিন্তু মেয়েদের শাস্তি কি? অনেক্ষন এ প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত কৌতুহল দমাতে না পেরে নরকরক্ষীকে প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেই ফেললেন । নরকরক্ষী বললেন “তাদেরকে পুরা একটি টেষ্ট ম্যাচ দেখতে দেয়া হয়। আর পাপ অনুযায়ী জাভেদ ওমর বেলিম এবং রাকিবুলে খেলা বার বার দেখতে দেয়া হয়। তবে রাকিবুলেরটা বেশী দেখানো যায় না। ব্যাটাতো ক্রিজে বেশীক্ষন থাকতে পারে না”।
পটকা ভাই নিজের দুঃখের কথা ভুলে গিয়ে হা হা হা করে হেসে দিলেন।
রাত দশটা সময় পটকা ভাইর হাতে পাত্রীর নাম ধরিয়ে দেয়া হল। পাত্রীর নাম দেখেই পটকা ভাই মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেলেন। পাত্রীর নাম লিখা আছে “সাদিয়া জাহান প্রভা”। নরকরক্ষীদের চেষ্টায় জ্ঞান ফিরল, তিনি বিয়ে করতে অস্বিকৃতি জানালেন।
কিন্তু নরকরক্ষী জানালেন কিচ্ছু করার নাই, একটু পরেই বিয়ে আর আজ রাতেই বাসর। পটকা ভাই আবার জ্ঞান হারালেন।
রাত ১২টা দিকে বিবাহের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হল। এখন বাসরের পালা। প্রভা বসে আছে।
পটকা ভাই ঢুকলেন ঘরে। অপূর্ব সুন্দর লাগছে প্রভাকে। মূহুর্তে পটকা ভাইর চোখে প্রভার ঐতিহাসিক ভিডিও চোখের সামনে বাসতে লাগল। অস্ফুট স্বরে মুখ থেকে বের হল “ না ভিতরে কি আছে আমি সব জানি “। পটকা ভাইর লজ্জা দেখে প্রভা নিজেও এগিয়ে আসল।
প্রভা যতটা এগিয়ে আসে পটকা ভাই ততটা পিছায়”। অবশেষে প্রভা পটকা ভাইকে ধরে নিজের ঠোঁট পটকা ভাইর ঠোটেঁর দিকে এগিয়ে আনছে......প্রভার ঠোঁট পটকা ভাইর ঠোটেঁ। পটকা ভাই “কেমন যেন কেঁপে উঠলেন ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলেন “ছেড়ে দে বলে....................
তারপর পটকা ভাইর আবার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এ নিয়ে ২য়বার নরকের বাজে স্বপ্ন দেখলেন। আজকে ঘুম ভেঙ্গে আর টিভি খুললেন না।
যদি প্রভার মুখ দেখতে হয়। পত্রিকাটা নিয়ে বসলেন। অভ্যাস বসত বিনোদন পাতা খুলেই চোখ আঁটকে গেল “ আজ বিয়ে করেছেন প্রভা”
নরক নিয়ে আগের লিখাটা এখানে।
নরকের ১ম স্তরে একদিন।
ব্লগার কালীদাসকে বিশেষ ধন্যবাদ।
তিশমার আইডিয়াটা তিনিই দিয়েছেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।