আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি।
জীবনে আজ অবধি কোনরুপ সুখ স্বপন দেখিতে পারিলাম না দেখিলাম কেবল স্বপ্ন দোষ। এবার স্বপ্নপূরণ করিতেই হইবে। ওহো শুনেন আপনারা ভাবিতেছেন আমি কে? নোমান নমির ব্লগ হইলেও আমি হইলাম পটকা। আদর করিয়া সকলে পটকা ভাই ডাকে।
নোমান এর আগে আমার সম্পর্কে আজে বাজে অনেক কিছুই লিখিয়াছে। ব্যাটা একখান বজ্জাত। তাই ভাবিলাম এবার নিজেই নিজের ঘটনা লিখিব।
স্বপ্ন দোষ কাটাইয্যা নতুন স্বপ্ন দেখিতে লাগিলাম। জীবনে একটা স্বপন রহিয়াছে প্রধানমন্ত্রীর সহিত তাহার ড্রুয়িংরুমে এক কাপ চা গলদঃকরন করিব।
পাঁয়ের উপর ঠ্যাং তুলিয়া দেশে চলমান সুখের বন্যা সম্পর্কে কথা বলিব। স্বপ্নখানা নোমানকে শুনাইলাম। নোমান ব্যাটা কহিল “ভাই প্রধানমন্ত্রী মানে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী,বুইঝেন কিন্তু। উনি আপনার আমার মত মানুষ না। উনি তৃতীয় মাত্রায়ও যান না”
আমি কহিলাম “ক্যান ভোটের আগেরদিন তিনি কান্নাকাটি করেননি,এইতো ৯৬ সালের ঘটনা,উনি তৃতীয় মাত্রায় আসিবেন কেন দশম বা নবম মাত্রায় হইলে আসিতেন”
নোমান বেচারা আমার সহিত পারিয়া উঠিল না।
সাগর-রুনী বেডরুমে খুন হইল,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলিলেন “বেডরুমের নিরাপত্তা তিনি দিবেন না” তথাস্তু দিবেনই বা কেন। ইহা কি সম্ভব। অন্যের বেডরুমে কি হইতেছে তাহার খোঁজ নেয়া আপনার দায়িত্ব? এই লইয়্যা সারা বিকাল বন্ধুর সহিত তর্ক করিলাম। আমি বলিলাম উনি ঠিক বলিয়াছে। আমার বন্ধু বলিল “দোস্ত উনার বাবাও বেডরুমে খুন হইছে”
তাহা যাহাই হোক মরছেতো কি হইয়াছে? প্রধানমন্ত্রী কি বলেন নাই “স্বজন হারানোর ব্যাথা আমি বুঝি?” বন্ধু চুপ হইয্যা থাকিল।
আবার জিজ্ঞেস করিলাম “বল বলেন নাই উনি? উনার বোঝার ক্ষমতা জানস?
যাহা হোক স্বপ্ন দোষ হইতে বাঁচিয়া নতুন স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা স্বপ্ন দোষের মত সহজলভ্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর সহিত কিছু সমস্যা লইয়্যা আলোচনা করা জরুরীও বটে। এইতো কদিন আগের ঘটনা। মহান ভাষা দিবসে ছাত্রলীগ শহীদ মিনারে আগে ফুল দিতে না পারিয়া প্রতিবাদে ফাটিয়া পড়িয়াছে। এতজন ছাত্রলীগের জন্য কেবল একটি মাত্র শহীদ মিনার এরুপ ব্যাপার জাতি হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর জন্য লজ্জাকর।
যে দেশে ফুলের মত পবিত্র জিনিস দিবার জন্য কোন সঠিক পথ খোলা থাকে না সে দেশে কিভাবে দেশপ্রেম জাগিয়া উঠিবে? এ ব্যাপারে তাহার ড্রয়িংরুমে বসিয়া আলোচনা করিব। দেশপ্রেম ড্রয়িংরুম হইতে শুরু করিতে হইবে।
প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিতে হইবে পটকা ভাই কি জিনিস,রাষ্ট্রকে প্রমান করিয়া দিতে হইবে পটকা ভাই কেবল স্বপ্নদোষ দেখে না,তাহার স্বপ্নে গুণও আছে বটে।
হাঁটিতে হাঁটিতে গণভবনের সামনে দাড়াইলাম। গণ ভবন অথচ মানুষের বালাই নাই।
চারিদিকে পুলিশ,আর্মি আর আনসার (উত্তর না)। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথার যুক্তি খুজিয়া পাইলাম। যে পরিমান নিরাপত্তা লইয়্যা উনি রহিয়াছেন অন্যের নিরাপত্তা দিবার লোক কই?? তোমরা বাঙালী শুধু অযৌক্তিক কথা বল। উনি প্রধানমন্ত্রী উনার কি মানুষের বেডরুমে উঁকি মারা সাজে? এসব ভাবিতে ভাবিতে এক পুলিশ আসিয়া আমার পশ্চাদে আলতো করিয়া লাঠি স্পর্শ করিয়া বলিল “ওই এইহানে কি করস? প্রাইম মিনিষ্টার যাইবো ওইদিকে যা”
পুলিশের লাঠির বাড়ি খাইয্যা কিঞ্চিত রাগ করিয়াছি,আলতো করিয়া স্পর্শ করিলেও ভিতরে যে লাল হইয়্যাছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত। চন্দ্রিমা উদ্যানের লক্ষে হাঁটিতে লাগিলাম।
অবাক হইয়্যা ভাবিলাম জিয়ার মাজারের পাশে কি করিয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাস করেন। ইহার জন্য একটা নোবেল বাঙালী জাতি তথা প্রধানমন্ত্রী পাইতে পারেন। আর যাহাই হোক এতটা সহ্য কেই বা কোনদিন করিয়াছে? বিরোধী দলীয় নেত্রীরেও কিছু একটা দিবার দরকার রহিয়াছে বটে।
দু কদম হাঁটিবার পর আরেক পুলিশ ধরিয়া বলিলেন “ওই মিয়া কই যান,প্রাইমমিনিষ্টার বাইর হইবো,ওইখানে দাড়ায়া থাকেন” এই পুলিশ আমাকে আপনি সম্বোধন করিয়াছে। উনি নিশ্চয় সম্ভ্রান্ত মুসলমান ঘরের উচ্চবংশীয় লোক।
শ্রদ্ধ্যায় মাথা নুইয়ে পড়ল। রাস্তার দিকে তাকাইয়্যা বুঝিলাম প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে দুপাশের গাড়ী দাড় করাইয়্যা শ্রদ্ধা আদায় করনো হইতেছে। ইহা অবশ্যই করা উচিত। একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী যাইবে আর আমরা বেয়াদবের মত গাড়ীতে চড়িবে। চিন্তা করতেই জিহ্ববা বাহির করিয়া কামড় বসাইয়্যা মাথাটা দুদিকে ঘুরাইলাম।
নিজে ভাবিতে ভাবিতে শ্রদ্ধা জানানোর লাগিয়ে কয়েকজন পথচারীও পাইয়্যা গেলাম। একজন ভারী নাখোশ। উনি বয়ান করিতে লাগিলেন বারাক ওবামা নাকি রাস্তায় চলাচল করিতে এহেন নিরাপত্তা ব্যাবহার করেন না। আমি মনে মনে কিঞ্চিত অভিমান করিয়া বলিলাম “আরে বাবা বারাক ওবামাও রাষ্ট্র প্রধান,আমাদের প্রধানমন্ত্রীও রাষ্ট্র প্রধান। তোমারে বুঝিতে হইবে সবকিছু”
আরেকজন আরও বেশী রাগান্বিত হইয়্যা বিড়বিড় করিতে লাগলেন যাহার অর্থ উনার গুরত্বপূর্ণ কাজে লেট হইয়্যা যাইতেছে।
তাহার উদ্দেশ্যে আমি মনে মনে বয়ান করিলাম “তুমিতো দেশ চালাও না,চালাও বৌ পোলার সংসার,উনি দেশ চালায় সে দেশে ১৮ কোটি লোক। হুমমমম। তোমার ঘরে আছে বুড়ি মা,যৌবনা বৌ আর বাচ্চা। তার ঘরে দেশে কি আছে তা শুনলে অজ্ঞান হইবা”
হঠাৎ করিয়া সাঁইসাঁই শব্দে পুলিশের এক খানা মোটর সাইকেল সামনে দিয়া চলিয়া গেল। স্যালুট ঠুকবো কিনা সিদ্ধান্ত লইবার আগে একখানা পুলিশ ভ্যান ,দুখানা কার এবং এক খানা পাজেরো গেল।
তাহার পর আসিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গাড়ী। কাল গ্লাস ভেদ করিয়া উনাকে দেখিবার সাধ্য আমার নাই,উনিও দেখছেন না নিশ্চিত। দেখিলেতো নিজের সংসার দেখিতেন,থামাইয্যা রাখিতেন না।
সে যাই হোক শ্রদ্ধা শেষ করিয়া যে যার মত বিড়বিড় করিয়া (গালি না খোদার কসম)চলিয়া গেল। আমি থাকিলাম গণভবনে চা খাইয়্যা নিজের স্বপ্ন গুণের প্রকাশ করিবার নিমিত্তে।
গণভবনের গেইটে দারোয়ান মামা আসলে আর্মি মামাকে সব খুলিয়া বলিলোম। মামা এমনভাবে তাকাইলেন ফেলানী মরিবার পরে ফেলানীর দিকেও আমরা এমনভাবে তাকাইবার সময় পাই নাই। যাহা হোক মামারে মামা ডাকিয়া আমি আবার বুঝাইতে চেষ্টা করিলাম। কিন্তু মামা ডাকে মামা বেদনাহত হইলেন। রাগান্বিত স্বরে কহিলেন আপনি যান? আমি আর বুঝাইতে গেলাম না।
একটু আগে পুলিশ মামার লাঠির আলতো ছোঁয়া এখনও বিশেষ জায়গায় মলম ডাকিতেছে এর বেশী হইলে সামলাইতে পারিব না। তখন হাসপাতাল ডাকিবে।
না হইল না। কত কথা জমিয়া ছিল। ভাবিয়াছিলাম সীমান্তে হত্যা নিয়া বলিব।
হত্যার সহিত আমিও একমত । হত্যা তো সীমান্তেই হইবে,হত্যা হইবে বেডরুমে,রাস্তায়। হত্যা কি ডাষ্টবিনে হইবে? আর উনি ব্যস্ত মানুষ উনি এইসব খেয়াল রাখিবেনইবা কিভাবে? উনার সংসার কি রমিজ উদ্দিন,তমিজ উদ্দিনের মত ছোট?
নিরস বদনে এলাকায় ফিরিয়া আসিয়া নোমানের সহিত দেখা হইল। সে আমারে দেখিয়া মুচকি হাসিয়া কহিল “আপনারে একটা প্রসেস বলি পটকা ভাই,আপনি প্রথমে আমরিকা যাইবেন,ওবামার লগে দেখা করবেন। তারপর ওবামারে কইবেন আপনি আমগো প্রধানমন্ত্রীর লগে দেখা করবেন।
হে যদি কিছু করতে পারে তাইলে আপনার স্বপ্নগুণ প্রমাণ করতে পারবেন। নইলে স্বয়ং ঈশ্বরের সাধ্য নাই আপনার স্বপ্ন পূরণ করে। সারাজীবন খালি স্বপ্নদোষ দেখবেন”
আমি ভীষন দুঃখিত হইলাম। আমেরিকায় কেমন করিয়া যাইবো। ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীর সাগরেদরা যখন বাড়ীতে হামলা করিয়াছে তখনতো অনুমতি লয় নাই।
বাথরুমে,বেডরুমে হামলা দিয়াছে। স্বামী স্ত্রীর বিশেষ কাজে বাঁধাও দিয়াছে। নিজেকে বোকা ভাবিতে লাগিলাম। আরো বেশী হাসি আসিতে লাগিল ব্লগার রাজসোহান কদিন আগে গনভবনে রাত্রিযাপনের জন্য আবেদন পত্র লিখিয়াছে। আমি গেইট ঘুরিয়া পাই না আর সে আবেদন পত্র লিখিয়া গণভবনে স্বপ্নদোষ করিতে চায়!কি বোকা।
বিবাহ করিব ভাবিতেছিলাম। বেডরুমে নিরাপত্তার অভাবে বাসর কই সাজানো যায় সেই দুশ্চিন্তায় আর এগুলাম না। যাই হোক রাস্তায় বাসর সাজাইয়্যাতো মানুষরে বিনামূল্যে সিনেমা দেখাইতে পারিনা!
স্বপন ভাঙ্গিয়া যাইবার দুঃখে আমি ক্লান্ত ভাবিতে লাগিলাম “সারাজীবন কি স্বপ্ন দোষই দেখিব? স্বপ্নগুণ দেখিব না? পুত্তুম পিলাচেরও এইটে ভাবা উচিত।
সো বি রেডি ফর স্বপ্ন দোষ!
ছবি : ব্লগার অপরিনীতা
পটকা ভাই সিরিজের আগের পোষ্টগুলো
আজ মামাত বোনের বিয়ে
বিলকিস তুমি কেবলই বিলকিস
সুপার ষ্টার কাউ
নরকের প্রথম স্তর
নরকের দ্বিতীয় স্তর। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।