আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি।
মায়ের ষ্টার জলসাতে জলপান এবং বাবার রাত বিরেতে টক-শোতে তেতুল ভোজন দেখে যারপরনই বিরক্ত পটকা ভাই। এভাবে চলতে পারেনা। দিনে খান দুয়েক ফেসবুক স্ট্যাটাস মেরে এবং জলি মলির সাথে লুতুপুতু প্রেম কর ক’দিন ল্যংড়া হয়ে বসে থাকা যায়? সময়তো আর কাটে না। লজ্জা শরমের মাথা,গলা,মুখ খেয়ে পটকা ভাই তার বাবার মুখোমুখী হয়ে বললেন “বাবা আমি বিয়ে করতে চাই”।
পটকা ভাইয়ের বাবা পদ্মা সেতু নির্মান বিষয়ে একটি টক-শো দেখছিলেন। টিভি থেকে চোখ না সরিয়েই বললেন “দ্যাশে পদ্মা সেতু হচ্ছে না, আর তোমার বিয়ে হবে কি করে ভাবলে?
-পদ্মা সেতুর সাথে আমার বিয়ের সম্পর্ক কি?
-নিজেরতো মুরোদ নাই, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির কারনে পদ্মা সেতুর জন্য অর্থ দিবে না বলছে। তুমি গত এক বছরে যা করেছো কি করে ভাবলে তোমাকে বিয়ে করিয়ে, তোমার বৌয়ের ভরন পোষনের অর্থ আমি বরাদ্দ দিবো?
নাহ ! বাবা যেভাবে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের মত তুলোধুনো করলেন তাতে আর কিছ বলার থাকে না। এই রাত বারোটায় রাগের বশে সেদিনের বাসি হওয়া পত্রিকাটা হাতে নিয়ে চোখে পড়লো অর্থমন্ত্রী বলেছেন “বিশ্বব্যংকের বিজ্ঞপ্তি দেশকে অপমান করেছে”। যাক অপমানটা দেশের উপর দিয়েই গেল, মন্ত্রীদের উপরতো না।
তার মানে খাপে খাপ মেলালে দাড়ায় বাবার সিদ্ধান্ত পুরো পরিবারকে অপমান করেছে। নাহ এর একটা বিহিত করতে হবে। এভাবে পরিবারের অপমান কিছুতেই সহ্য করা যায় না। বাবা তখনও টিভিতে টকশো গলধঃকরন করছিলেন। পটকা ভাই মাথার চুলটা সামান্য বামপাশে দিয়ে গিয়ে বললেন “বাবা পদ্মা একটি নদীর নাম, ইহার উপর যে সেতু হবে তার নাম পদ্মা সেতু।
বাবা তুমি যদি আমারে সেতু নামের মেয়ের সাথে বিয়ে দিতা তাহলে, তোমার বৌমা সেতুরে নিয়ে আমি পদ্মার উপর দিয়া কুয়াকাটা যাইতাম”
ছেলের বেয়াদবি আর সহ্য হলো না রফিক সাহেবের। “হারামজাদা এখনই ঘর থেকে বের হয়ে যা”।
পটকা ভাই ব্যাপক অপমানে নিজের ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে কিছুক্ষন কাঁদলেন। কাঁদার জন্য পটকা ভাই বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করেন। প্রথমে একটি নরম দেখে বালিশ নেন, তারপর বিছানায় আড়াআড়িভাবে কাৎ হয়ে নরম বালিশ বুকে নিয়ে কান্না শুরু করেন।
এটা পটকা ভাই ষ্টাইল। কান্না পর্ব শেষ করে উঠে ব্যাগ গুছালেন। বাবার সংসারকে সালাম দিয়ে চলে যাবেন। নাহ এবার আর আত্নহত্যা করা যাবে না। পত্রিকায় যদি আসে বিয়ে না করতে পেরে মেধাবী যুবকের আত্নহত্যা তাহলে বড় লজ্জার বিষয় হবে।
তবুও বাসা থেকে বের হতে হবে, মাঝরাত্তিতে শহরে পুলিশ ছাড়া আর কোন সমস্যা নাই। কিন্তু মনে পড়লো যাবার আগে একটা স্ট্যাটাস দেয়া দরকার। ফেসবুকে পটকা ভাইয়ের আবার বিরাট জনপ্রিয়তা। প্রায় বিভিন্ন ধরনের কাব্য লিখেন। বিলকিসকে নিয়ে পটকা ভাইয়ের ৬৪ পর্বের কাব্য সমগ্রতো পাঠকরা গোগ্রাসে গিলেছে।
ফেসবুকে তিনি লিখলেন “সব বাবারা ভালো হয় না, আমি বাবা হলে আমার ছেলেকে জন্মের পর পরই বিয়ে দিয়ে দিতাম। আমার বাবা হওয়ার পথে বাঁধা হয়ে আছে আমার বাবা এবং পদ্মা সেতু”।
সাথে সাথে রিলিপের ত্রানের মত লাইক আর কমেন্ট পড়তে থাকলো। কুলসুমা নামের একজন লিখেছেন “পটকা ভাই ইউ আর জিনিয়াস ম্যান”। পটকা ভাইয়ের খুব ইচ্ছা হচ্ছে বলতে “তুমি আমার ছেলের মা হবা? তোমারে শ্বাশুড়ি বানাবো দ্রুত”।
কিন্তু এটা ফেসবুক। তাই মনের গোপন ইচ্ছা গোপনই রাখলেন।
ফেসবুকে ছেলেপেলে প্রায় পদ্মা সেতু বানিয়ে ফেলেছে। কেউ কেউ মন্ত্রিদের দুষছেন। কিন্তু কেউ জানেনা সরকার পদ্মা সেতুর টাকা মেরে কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থা কঠিন করেননি, পটকা ভাইয়ের বিবাহের সকল পথ বন্ধ করে দিয়েছেন।
আর যেন কোন যুবকের বিয়ে বন্ধ না হয় সেজন্য বড় হয়ে মন্ত্রি হবার শপথ করলেন তিনি। ভাবতে ভাবতে ফেসবুকেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। বাবার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো পটকা ভাইয়ের। মা সহ মিটিংয়ে হাজির করা হলো পটকা ভাইকে। রফিক সাহেবই মুখ খুললেন “তুমি বিয়া করতে চাও?
মাত্র ঘুম থেকে উঠেছেন।
বুঝতে পারছেন না বাবা কি অফার করছেন নাকি প্রশ্ন করছেন, নাকি আবার উত্তর পেলে বিয়ের সাথে পদ্মা সেতুর যে আত্নিক অথবা আর্থিক সম্পর্ক সেটা শুনিয়ে দিবেন। তাও মাথা নাড়ালেন পটকা ভাই।
-তা খাওয়াবা কি বৌকে?
-ভাতই খাবে, একটু বড়লোকের মেয়ে হলে অবশ্য ফ্রাইড রাইচ, পিজ্জা খাইতে পারে। সেটা ব্যাপার না। আমি ম্যানেজ করে নিবো।
রফিক সাহেব স্তব্দ হয়ে গেলেন “বলি টাকাটা আসবে কই থেকে?
-ক্যান বাবা তুমি দিবা। তোমার যদি একটা মাইয়া থাকতো তারে চালাইতা না? ধরে নাও তোমার মেয়ে। বৌকেতো মেয়ের মতই দেখতে হয়। তাই না মা?
রফিক সাহেব আর কথা বাড়ালেন না। তিনি বিয়েতে রাজি।
তবে শর্ত আছে। মেয়ে খোঁজার দায়িত্ব পটকা ভাইয়ের একার। আর কেউ খুজবে না। পটকা ভাই ঘুমঘোরে শর্তে রাজি হলেও ব্যাপারটা এত সহজ নয়। পটকা ভাইয়ের সাথে এখন কেউ নেই।
ফেসবুকেও রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস সিঙ্গেল পড়ে আছে। পাড়ার ছেলেপেলেদের মধ্যে বান্ধবী কালেকশনের ব্যাপারে সোহাগের বিশেষ খ্যাতি আছে। সোহাগের সাথে দেখা করেই পটকা ভাই সোহাগকে বললেন “ছোট ভাই আমার , তোর একটা বান্ধবী আছে না জান্নাত না কি? দে না ওরে তোর ভাবি বানাইয়া?
সোহাগ অবাক হয়ে কেবল জিজ্ঞেস করলো “কি ভাই?
পটকা ভাই সব খুলে বললেন। “ভাই আমার যেগুলানা বান্ধবী আছে, আমার হইয়া আফনের হইবো নাতো”
-মানে?
-মানে ভাই আমার চাহিদা আছেন না
-তর বান্ধবী কয়ডা?
-হিসাব করছি নাকি? আমি কি হিসাব কইরা বান্ধবী বানাই?
-একটা দিলে কি হয়? তর কইমা যাইবো। আমিতো বিয়াই করুম।
-কইমা যাইবো না। একটা দিমু মানে একটা হারামু। বহুত কষ্ট কইরা বান্ধবী জোগাড় করছি। রেডিমেট দোকান পাইছেন? যান দর্জির কাছে গিয়া অর্ডার দেন।
জুনিয়র একজনের কাছে এরকম অপমান হবার পরও পটকা ভাই অপমানিতবোধ করলেন না।
সময়টা অপমানের না,বৌ খোঁজার। খুঁজলেন না এমন কোথাও নাই। বন্ধু,বান্ধবী, ছোটভাই সবাইকে রিকোয়েষ্ট করলেন । কিন্তু স্বার্থপরের দুনিয়ায় কেউ কারো নয়। সমাজের উপর বিরক্তি ধরে গেছে পটকা ভাইয়ের।
যে সমাজ একজন বুভুক্ষ যুবককে একজন বৌ দিতে পারে না সেটা কাপুরুষ সমাজ। কিন্তু দমে যাবার পাত্র পটকা ভাই নয়। ইউরেকা পেয়েছি বলে পটকা ভাই একটা নাচ দিয়ে উঠলেন। সুমাইয়া নামের একটা মেয়ের সাথে তিন বছর আগে প্রেম করতেন পটকা ভাই।
নিজের প্রেমিকাদের র্যং কিং করতে বলা হলে সুমাইয়াকে এক নম্বরে রাখবেন পটকা ভাই।
কি চোখ, কি ফিগার, কি কথা সবদিক থেকে সে সেরাদের সেরা। বিভিন্ন জায়গা থেকে চেষ্টা করে সুমাইয়ার নম্বর জোগাড় করলেন পটকা ভাই। দুরুধদুরু মনে ফোন দিলেন “হ্যালো সুমা আমি পটকা”
-কোন পটকা?
-ইয়ে তোমার সাথে তিন বছর আগে প্রেম করেছিলাম, মনে পড়ছে না?
-ও হো পটকা, আছো কেমন?
সেদিন সুমাইয়ার সাথে পটকা ভাই প্রায় ঘন্টাখানেক আলাপ হলো। এখানে একটা চালাকি করছেন পটকা ভাই। প্রথমদিন বিয়ের অফার দেননি।
দিলে সুমাইয়া রাগ করতে পারে। সুমাইয়ার সাথে টানা এক সপ্তাহ কথা বললেন। আবার নতুন করে সুমাইয়ার প্রেমে পড়েছেন তিনি। আজ সুমাইয়াকে বলবেন পটকা ভাই।
-সুমা তোমাকে একটা কথা বলবো
-ওমা একটা কেন অনেকগুলা বলবা।
একটু ধরতো
ফোন ধরে আছে পটকা ভাই, দুরুদুরু করে বুক কাঁপছে। সুমাইয়া হ্যালো বললো। পটকা ভাই বললেন “শোন বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন, আমি এখন বিয়ে করবো”
-বাহ ভালোতো। আমি কিন্তু আমার স্বামী এবং বাবুকে নিয়ে গায়ে হলুদের দিন চলে আসবো। ওলে বাবা একটু বাবা..মামার সাথে কতা বলবা…পটকা মামার সাতে….মামার বিয়েতে যাবো,,,,কাঁদেনা বাবু…
পটকা ভাই নিজেই কেঁদে দিলেন।
আবার নিজের রুমে গিয়ে নিজ ষ্টাইলে কাঁদলেন পটকা ভাই। ফেসবুক খুলে একটা কাব্য লিখলেন
“সুমা কাব্য ০১”
সুমা তোমার বাবু
কেঁদেছিলো জোরে
আমার কান্না দেখনি সুমা
আমি কেঁদেছি বালিশ ধরে।
সেদিন রাতে বাবার মুখোমুখী হয়ে পটকা ভাই বললেন “বাবা যতদিন পদ্মা সেতু হবে না ততদিন আমি বিয়ে করবো না। যে দেশে পদ্মার উপর সেতু নেই সে দেশে বিছানার উপর বৌ রেখে কি লাভ? পদ্মা সেতু হইলে তারপর বিয়া করবো, পদ্মা সেতুর টোলরুমে বাসর করুম।
রফিক সাহেব খুশী হতে চেয়ে মাত্র মুখ প্রসারিত করে হাসি দিয়েছিলেন, কিন্তু পটকা ভাইয়ের শেষ কথায় মুখ ভার করে টিভিতে পদ্মা সেতু বিষয়ক টক-শো দেখতে লাগলেন।
পটকা ভাইকে নিয়ে আগের পোষ্টগুলো
স্বপ্নদোষ টু গণভবন
আজ মামাত বোনের বিয়ে। বিলকিস তুমি কেবলই বিলকিস
পটকা ভাই-নরকের প্রথম স্তরে একদিন।
নরকের ২য় স্তর। হাল্কা ১৮+
সুপার ষ্টার কাউ
ছবি : ইন্টারনেট ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।