আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি।
কোরবানীর আর দিন দশেক বাকি। পটকা ভাইয়ের বাবা হজ্বে গেছেন বলে এবার গরু কেনার দায়ীত্ব পটকা ভাইয়ের উপর। এ নিয়ে পটকা ভাই ভীষন অস্থিরতায় আছেন। জীবনে এত বড় দায়ীত্ব আর কখনই পাননি।
অবশ্যই বাবা থাকলে এরকম দায়ীত্ব তিনি পেতেন না। পটকা ভাইয়ের বাবার চোখে পটকা ভাই একটা গাধা ব্যতীত কিছুই না। গরু কেনার দায়ীত্ব পটকা ভাই পেয়েছেন শুনে উনি ফোনেই বললেন” গলির দোকান থেকে যে সয়াবিন তেল আনতে গিয়ে কেরোসিন তেল আনে সে কিভাবে গরু কিনবে? যাই হোক পটকা ভাইয়ের সব ভাবনা এখন গরু নিয়ে। অনেকদিন যাবত মিলি বলছিল পটকা ভাই নাকি কোন কিছুতেই মিলির পছন্দ অপছন্দের মূল্য দেন না। মিলি হল পটকা ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড।
এবার সুযোগ এসেছে মিলির পছন্দেই গরু কেনা হবে। পটকা ভাই মিলিকে ফোন দিলেন “ হ্যালো মিলি চল না এবারের ঈদ শপিংটা আমরা এক সাথেই করি,তোমার পছন্দমত”
মিলি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল “ঈদ শপিং মানে? কুরবানীর ঈদে কি কেউ ওভাবে শপিং করে নাকি”
-আরে মানে কুরবানীর গরুটা এক সাথে কিনবো,তোমার পছন্দে।
মিলি চেঁচিয়ে উঠল “ছি আমি গরুর হাঁটে যাব? নোংরা গন্ধ”
পটকা ভাই একটু ভয় পেয়ে “না মানে চাচ্ছিলাম তোমার পছন্দে গরু কিনবো”
মিলি সেটাতে রাজি হল। সিদ্ধান্ত হল মিলির পছন্দে গরু কেনা হবে। পটকা ভাই বাজারে গিয়ে গরুর ছবি তুলে মিলিকে এমএমএস করবেন তারপর মিলির পছন্দ হলে গরু কেনা হবে।
পকেটে টাকা নিয়ে পটকা ভাই গেলেন গাবতলী গরুর বাজারে। মিলি বলেছে গরুর গায়ের রং অবশ্যই লাল হতে হবে। লাল গরু নাকি দেখতে স্মার্ট। পটকা ভাই একটা লাল গরু পছন্দ করে ছবি তুলে মিলিকে পাঠালেন। মিলি মেসেজে রিপ্লাই করল “গরুর সব কিছু ঠিক আছে তবে চোখের নিচে ময়লা” পটকা ভাই মেসেজ পেয়ে গরুর কাছে গিয়ে দেখলেন সত্যিই চোখের নিচে কাল।
বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করল “আপনার গরু মনে হয় রাতে ঘুমায় না??
বিক্রেতা বেকুবে হয়ে বলল “মানে?
-মানে কিচ্ছু না,গরুর চোখের নিচে শশা লাগান।
আরেকটা গরুর ছবি তুলে পটকা ভাই মিলিকে পাঠালেন। রিপ্লাই আসল “পিছন থেকে একটা ছবি তোল”
পটকা ভাই পিছন থেকে ছবি তুলে পাঠালেন। ৫ মিনিট পরে রিপ্লাই আসল “না লেজটা দেখতে পঁচা। এটা হবে না”
পটকা ভাই এবার আরেকটা গরুর দুদিক থেকে ছবি তুললেন (এবার আর ভুল করলেন না)।
মিলিকে পাঠিয়ে দিলেন। দুমিনিট পর রিপ্লাই আসল “এ গরুর সবকিছু ঠিক আছে তবে ভুড়ি একটু বেশী,এটাই কিনে ফেল এক সপ্তাহ ডায়েট করালে ঠিক হয়ে যাবে”
মহা উল্লাসে পটকা ভাই ৮০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনে নিয়ে আসলেন। কিন্তু বাসার কারো পছন্দ হল না। পটকা ভাইয়ের ছোট ভাই মন্তব্য করল “এই গরু ৫০ হাজার দিলেও আমি কিনতাম না” পটকা ভাই একটা ধমক দিয়ে চুপ করালেন।
পটকা ভাই গরুর একটা ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিলেন।
মিলি আর পটকা ভাই মিলে লাইক দিল ৩ জন। বিলকিস ছবির নিচে কমেন্টস করল “এটার সাথে তোর অমিল হইল তুই কালা এইডা লাল” বিলকিস হল পটকা ভাইয়ের খালাত বোন। বিলকিসের এই কমেন্টস নিয়ে মিলি আর বিলিকিসের ঝগড়া বেঁধে গেল।
রাতে মিলি ফোন দিল।
-হ্যালো
-গরুর স্বভাব কেমন?
-গরুর স্বভাব মাপা যায় নাকি?
-কিছু গরু আছে বেয়াদব কিসিমের,মেয়ে দেখলেই তাকিয়ে থাকে।
-না না সেরকম গরু আর যেই কিনুক পটকা কিনবে না।
-জানো পটকা আজ টিভিতে দেখলাম গরু নিয়ে একটা রিয়েলিটি শো হবে, “বাক্স চ্যানেল U সুপারষ্টার কাউ ” সেখানে তোমাদের গরুর নাম রেজিষ্ট্রেশন করাও।
পটকা ভাই মহা উত্তেজিত “কিভাবে”
বিখ্যাত ফটোগ্রাফার অস্থির চৌধুরীকে দিয়ে গরুর ফটোশ্যুট করা হল, সেগুলা পাঠানো হল। এছাড়া সব রকম ফরমালিটিজ শেষ করা হল। অডিশনের জন্য ডাকা হল।
আজ পটকা ভাইয়ের গরুর অডিশন। সকাল থেকে পটকা ভাইয়ের কাজের কোন হিসেব নাই। গত রাতে গরুকে খাবার দেয়া হয়নি। ভুড়ি কমাতে হবে। সকালে এক পোয়া সবুজ ঘাস, এবং হাফ বালতি পানি।
দুপুরে লাক্স সাবান দিয়ে গরুটাকে ভাল করে গোসল করিয়েছেন, মুখ পন্ডস ফেসওয়াস দিয়ে ৪ বার ধোয়া হয়েছে, লেজের একেবারে মাথায় হালকা সোনালী রং দেযা হয়েছে। এতে নাকি গরুটাকে সেক্সি এবং ক্রেজি লাগবে। এসব সবই মিলির পরিকল্পনা। পটকা ভাই অবশ্য মিলিকে জিজ্ঞেস করেছিল লিপিষ্টিক দিবে নাকি? মিলি না করেছে। লিপিষ্টিক দিলে নাকি ম্যানলি ভাবটা চলে যায়।
মিলি বারবার বলেছে “দেখ পটকা গরুর কিন্তু কোন সেন্স নাই “ওসব” করে দিতে পারে সেটার একটা ব্যবস্থা নাও”
পটকা ভাই অনেক ভেবেও কোন আইডিয়া পেলেন না। নিজের কথা চিন্তা করলেন। ওসব চাপ দিলে কি আর জগতের কোন বাঁধা মানা যায়? অনেক ভেবে চিন্তে শেষ পর্যন্ত পটকা ভাই পলিথিন থেরাপীর ব্যবস্থা করলেন।
অডিশন শুরু। বুকে ধুরু ধুরু নিয়ে পটকা ভাই আর মিলি।
একটা একটা গরু আসে সঙ্গে গরুর মালিক। কিছুক্ষন হাটা চলা করে,এরপর জার্জরা যা বলে তা গরুকে করতে হয়। হঠাৎ মাইকে ভেসে আসলো “পটকা এন্ড হিজ কাউ”
পটকা ভাই গরুর পশ্চাপদে ধপাস করে এক ঘা দিলেন গরুর জন্য কেনা একটা বেত দিয়ে, তারপর মঞ্চে প্রবেশ করলেন। বেয়াদব গরু আর হাটে না। আবার দিলেন গরু এবার হাটল।
মঞ্চের চারপাশ চক্কর দিয়ে বিচারকদের মুখোমুখি হয়ে দাড়ালেন পটকা ভাই এবং তার গরু।
প্রথম বিচারক বিশিষ্ট গরু ব্যবসায়ী কেরামত বললেন “আপনার গরুর ডাক শোনান দেখি”
পটকা ভাই গরুর পশ্চাপদে আরেক ঘা লাগিয়ে দিলেন। গরু হাম্বা করে ডেকে উঠল। বিচারক কেরামত “ওয়াও” বললেন।
বিশিষ্ট গরুর দুধ ব্যবসায়ী কুদ্দুচ গোয়ালা বললেন “হুমম গরুর সবকিছু ভাল তবে ভুড়িটা একটু ভারী,এসব জায়গায় আসলে ফিট শরীর লাগে”
গরু সৌন্দর্য্য বিশেষজ্ঞ কাফিজ আলফাজ বললেন “তোমাকে বেশ সুইট লাগছে,লেজের গোল্ডেন কালার অবশ্যই তোমাকে আলাদা মানিয়েছে।
দেখ কি হয়”
সবশেষে পটকা ভাই টিভি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বললেন “আমার গরুটিকে যদি আপনাদের ভাল লেগে থাকে তবে আপনার মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখুন P cow এবং সেন্ড করে দিন 1111 নম্বরে,যতখুশী প্লিজ প্লিজ প্লিজ”
বাড়ী যাওয়ার আগে মিলি পটকাকে বলে দিল যাতে সে গরুর যত্ন নেয়, খাবার যাতে হিসেব করে দেয,সবুজ ঘাসের সাথে একটার বেশী শশা কোন মতে দেয়া যাবে না। আজকাল নাকি বাজারে জিরো ফিগারের খুব দাম। যে করেই হোক জিরো ফিগার আনতেই হবে। একবার মিলি অবশ্যই পারসোনাতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল। পরে ষ্টার হয়ে যাওয়ার আগে ভিডিও স্ক্যান্ডেল বের হয়ে যাবার ভয়ে মানা করল।
পটকা ভাইয়ের গরু নিয়ে নানান কর্মকান্ড পটকা ভাইয়ের মা মারফত পটকা ভাইয়ের বাবার কানে পৌছে গেছে। বাবা একদিন পটকা ভাইকে ফোন দিলেন
-হ্যালো বাবা আসসালামু আলাইকুম
-ওয়ালাইকুম আসসালাম
-আছ কেমন বাবা?
-আছি ভালই,তুমি গরু নিয়ে যা করতেছ তা যদি না থামাও আমি দেশে আইস্যা তোমাকে দিয়া কোরবান দিব,তুমি কোন অংশে গরুর চেয়ে কম নয়।
পটকা ভাই একটা ঢোক গিলে বললেন “আচ্ছা বাবা”
পটকা ভাই সিরিজের আগের দুটি লেখা নিচে
নরকের প্রথম স্তর
নরকের দ্বিতীয় স্তর
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।