আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পটকা ভাই : তুমি দেখতে তার মত!

আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি। পটকা ভাইয়ের হবে হবে প্রেমিকা বিলকিস এর বিয়ের পর তিনি বেশ মুচড়ে পড়েছিলেন। তবে খেই হারাবার মানুষ উনি নন। ঠিক বিলকিসের মত দেখতে এলাকার টিনা নামের এক মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলেন হঠাৎ করেই। এ যেন স্বয়ং বিলকিস টিনার ছদ্মবেশে এসেছে পটকা ভাইয়ের কাছে।

প্রথম দেখাতেই তীব্র ঝাঁকুনিতে একটা ধাক্কা খেলেন। পাশে আমি দাড়িয়ে ছিলাম,আমাকে ধরেই বললেন “ভাইরে এটা ঈশ্বরের দান ছাড়া কিছুই নারে,ঈশ্বর আমাকে দেখেছেন”। আমি না বুঝেই বললাম “কি দেখেছেন ভাই? পটকা ভাই সামান্য বিরক্ত হলেন বটে তবে তার হঠাৎ আস্তিক হওয়া কমলো না “আসলেই তিনিই পারেন সব,সব পারেন সব,বিলকিস ফিরে এসেছে,বিলকিস রিটার্ন”। আমি উত্তেজিত গলায় বললাম “কসকি পটকা ভাই মানে কনকি পটকা ভাই? বিলকিস এর প্রথম পার্ট আছে নাকি? দেখি নাইতো। আপনার পিসিতে আছে? তাইলে আজ রাতে বিলকিস এবং বিলকিস রিটার্ন দুইটাই আমারে দিবেন পেনড্রাইভে,ঠিকাছে? “একদম উষ্ঠা মারুম,আরে বিলকিস আমার খালাতো বোন” পটকা ভাইয়ের গলা উঁচু হলো।

আমিও বুঝলাম “ও আচ্ছা তাই বলেন,তা আপনার খালু আবার এই বয়সে বাচ্চা নিছে নাকি? পটকা ভাই কোন উত্তর দিলেন না। পরে বুঝিয়ে বললেন সব। তার এক কথা টিনাকে আমার চাইই চাই। আমাদের মধ্যে রোকন বেশ চালাক চতুর ছেলে। সে কিভাবে যেন টিনার ফোন নম্বর টম্বর ব্যবস্থা করে একাকার।

এক ফোন নম্বরেই হাজীর বিরানীর ঢেকুর বেশ ভালো ভাবেই তুললাম। পটকা ভাই দারুন মাল,ক’দিনেই টিনা নামের বিলকিসরুপধারী বালিকাকে পটিয়ে ফেললেন। তবে আমাদের সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়। ডেটিংএ যাচ্ছেন বলে,যেতেও দেখি তাই বলে প্রমান হয় না যে প্রেম শুরু হয়েছে। এরকম এক ডেটিং শেষে পটকা ভাই পাড়ার চা দোকানে উপস্থিত।

পটকা ভাইকে দেখেই আমি ৫টা চা ৪টা সিগারেট অর্ডার দিয়ে দিলাম। পটকা ভাই প্রেম করেন উনি সিগারেট খাবেন না বলে ঘোষনা দিলেন। সার্টিফিকেট প্রেমিকরা সিগারেট খায় না। আমি উনার দিকে তাকিয়েই বললাম “তা ভাই ইদানীং ওসব খাচ্ছেন নাকি? পটকা ভাই চে চে করে উঠলেন “ধুর আমি ওসব গাঞ্জা মাঞ্জা খাই না”। কি বুঝলাম কি বুঝে।

-না মানে ঠোঁট দিয়ে খায়,গাঁজা না -হুম ডেটিং এ গেলেতো আইসক্রিম খেতে হয়,তোর ভাবী আবার আইসক্রিম খুব পছন্দ করে। পটকা ভাইয়ের মত এমন পজেটিভ মানুষ আমার জীবনে দ্বিতীয়টি দেখিনি। কনফার্ম বেহেশতে যাবেন। পরদিন আবার ডেটিং সেরে আসার পরপরই রোকন প্রশ্ন করলো “কি ভাই করেছেন নাকি কিছু? পটকা ভাই মুখটা উদাস করে বললেন “হুম করতেতো হয়,তোদের ভাবী খুব পছন্দ করে,ওর নাকি ভালো লাগে,তাই একবার দেখা হলে মিনিমাম দুবার গান করতেই হয় আমাকে”। না ভুল পটকা ভাই পৃথিবীর সবচে পজেটিভ মানুষ না,উনি পৃথিবীর সবচে বলদ মানুষ।

যাকগে পরদিন ঘটলো ঝামেলা কাহিনী। হন্তদন্ত হয়ে পটকা ভাই টং দোকানে এসে বলল “ওরে সর্বনাশ হয়ে গেছেরে। আমরা সমস্বরে আওয়াজ দিলাম কি? পটকা ভাই দশমিনিট যাবত যা বললেন তার অর্থ হলো গতকাল তার ফেসবুকে এক মেয়েকে পছন্দ হয়েছে সে দেখতে হুবুহু টিনার মত,কিন্তু টিনা না। এখন উনি ওই মেয়ের প্রেমে পড়েছেন। এতো দেখে মহা ভেজাল।

শুনেছি আল্লাহ নাকি একই রকম দেখতে দশজনকে পৃথিবীতে পাঠান। ওই দশটাই যদি মেয়ে হয় তাহলে পটকা ভাইতো সব শেষ করে দিবে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম এটা কিভাবে সম্ভব? পটকা ভাই দারুন উত্তেজিত “আর বলিস না,সেই নাক,সেই চোখ,সেই ঠোঁট যা কাল বিকালে দেখেছি টিনার সাথে ডেটিংয়ে,কিন্তু রাতে শ্যামলী নামের এক মেয়েকে ফেসবুকে দেখলাম সেসব চোখ,ঠোঁট,নাক নিয়ে বসে আছে। দিলাম একটা লাইক। কি আছে জীবনে।

আই লাভ শ্যামলী। -টিনার কি হবে? -আরে টিনাতো আছেই,থাকবে,রবে,ঘুমাবে -আর -আর! শ্যামলী দারুন, “এই দ্যাখ” বলে পটকা ভাই তার মানিব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করলেন। এই যে দেখি কবিতা তুমি দেখতে ঠিক তার মত টিনার মত টানাটানা চোখ, মুখ যেন বিলকিস শ্যামলী তুমি রবে নীরবে টিনা-বিলকিস হয়ে। মনের উত্তেজনা রাখতে পারলাম না “ভাই শ্যামলীকেও কি ঈশ্বর পাঠিয়েছেন আপনার জন্য? পটকা ভাই ভীষন অবাক হলেন “তো কে পাঠাইছে? ফাইজলামি করস আমার সাথে? ঈশ্বরের দান নিতে হয়রে! পটকা ভাই ঈশ্বরের দুই দান নিয়ে মোটামুটি লাপাত্তা। দিনে টিনার সাথে পার্কে,রাতে শ্যামলীর সাথে ফেসবুকে।

উনাকে দেখে মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীতে সব মেয়েই বিলকিসের জমজ বোন। চা দোকানে আড্ডা মারছিলাম আবার পটকা ভাইয়ের আগমন চোখে উত্তেজনা। যেই লোকের চোখে উত্তেজনা বেশী,তার গুরুত্বপূর্ণ জায়গা উত্তেজনা কম হয় বলেই শুনেছি। এটা এখন প্রমান করার বিষয় দুজন নিয়ে এভাবে চালানো উত্তেজনা কম না অতিরিক্ত বেশী। “কাম সারছেরে” বলে পটকা ভাই বসে পড়লেন।

-কি ভাই দুজনের লগে করতে গিয়ে ধরা খাইছেন? -আরে ধুর! নতুন ভাড়াটিয়া আসছে,মেয়েটা দেখতে একদম শ্যামলির মত! এই কথা শোনার পর প্রথম যে কথা মাথায় আসলো তা হলো “রুখে দিতে হবে,একই চেহারার অজুহাতে সব মেয়ের দখল দারিত্ব নিয়ে নিচ্ছে চোখের সামনে। এটা অবিচার এবং একই সাথে স্বৈরাচারও বটে। মেনে নেয়া যায় না। আবার দৈনন্দিন চা সিগারেটের বিলও একটা ব্যাপার। “ওই দুইটা চা দে একটা বিড়ি দে,জ্বি পটকা ভাই বলুন ওই মেয়ের সাথে লাগাবেন নাকি? তিনি উত্তেজিত চোখে তাকালেন।

“না মানে লাইন লাগাবেন নাকি জিজ্ঞেস করছি” বলেই বিড়িটা নিলাম হাতে। পটকা ভাই সামান্য চিন্তিত “নাহ মানে শ্যামলী বাসা ভাড়া নিলো নাতো? -আপনি তারে জিগান -আরে সে বলছে নেয় নাই। বাট সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। -ব্যাপার না ভাই আমাদের উপর ছেড়ে দেন। বিকালেই মিশনে নামছি।

মিশন অবশ্যই সাকসেসফুল হবে। ভাই গ্রীলের অর্ডার কি দিয়ে রাখবো। পটকা ভাইয়ের দুইটা হলুদ দাঁত দেখা যাচ্ছে “ওকে দিয়া রাখ”। দুদিন পরেই সেই মেয়ের সাথে পটকা ভাইয়ের ডেটিং ফিক্সড হলো। মেয়ের নাম নিশি।

নিশিকে নিয়েও কবিতা লিখা শেষ। আগেকার কবিরা অতি বোকা কিসিমের ছিলো। তারা প্রেমিকার চুলের উপমা দিতে পাহাড়ী ঝর্না ভাবতেন,চোখের উপমা দিতে পাখীর বাসা ভাবতেন। অথচ পটকা ভাইয়ের কবিতায় টিনার চেহারার উপমা বিলকিসের চেহারা,শ্যামলীর উপমা টিনা,নিশির উপমা টিনা। কবিতা পরিবর্তন আসছে,পরিবর্তন আসছে লাইনেও।

পটকা ভাই লিখে ফেললেন আমি বিলকিসকে ভালোবাসি,তাই তোমাকে চাই নিশি আমি চাই সারাজীন টিনার চুলের ঘ্রান,তাই তোমাকে চাই নিশি আমার দরকার শ্যামলীর চোখ,তাই তোমাকে চাই নিশি। কবিতা পড়ে আমরা মুগ্ধ। পটকা ভাই আমাদের মুগ্ধতা দেখেই মুগ্ধ। বিকালেই ডেটিং। এরশাদ চাচার নাম নিয়ে রওনা দিলেন।

আমরা কেবল মিটিমিটি হাসলাম। এক ঘন্টা পর পটকা ভাই বিমর্ষ মুখে ফিরে এসে প্রথম কথা বললেন “নিশিকে নিয়ে লেখা আমার কবিতা তারে দেখাইছে কে ? রোকন সবগুলো দাঁত বের করে বলল “জ্বি ভাই আমি” ঠাস করে একটা চড়ের শব্দ শুনলাম। চড় দিয়েছে ভালো হয়েছে। পরের প্রশ্ন করলেই আমার আইডিয়ার কথা বের হয়ে আসতো। রোকন কাঁদো কাঁদো গলায় বলল “কি করবো! আপনি এমন সুন্দর একটা কবিতা লিখলেন তাকে নিয়ে, আমি ভাবলাম তাকে দিয়ে আসি,তাহলে প্রথম দিনেই লাগাইতে পারবেন” পটকা ভাই রীতিমত ক্ষেপে গেলেন “ওই আমি কি লাগাইতে গেছি? লাগাইতে গেছি? কিন্তু অযথাই আমারে লাগাইয়া দিলো” একযোগে আমরা চোখ কপালে তুললাম “কি কন ভাই? পটকা ভাই প্রায় কেঁদেই দিলেন “হুমম কবিতা পইড়া চড় লাগাইয়া দিছে,কেবল তোদের জন্য”  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.