আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি অনবদ্য বই ও ছাপাখানার ভূত

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ মুগল-পূর্ব ঢাকা শহরের মানচিত্র। মো: খালেকুজ্জামান- এর ‘বিজন জনপদ থেকে রাজধানী ঢাকা’ বইটি ঢাকা শহরের ইতিহাসের ওপর একটি তথ্য সমৃদ্ধ ও অনবদ্য বই। বইটির প্রচ্ছদ, কাগজ, বাঁধাই, অক্ষর এবং মোটামুটি সুলিখিত হলেও বইটিতে প্রচুর বানান ভুল চোখে পড়ে।

সবচে বিস্ময়কর যেটি-বইটিতে সূচীপত্র নেই! সূচীপত্র ছাড়া একটি বই হাতে নিয়ে পাঠক বিভ্রান্ত হন!এই সময়ের একটি বইয়ের সূচীপত্র নেই-ভাবা যায়? খান সাহেব আবিদ আলী খান "গৌড় ও পান্ডুয়ার স্মৃতি" শিরোনামে বিখ্যাত বইটি লিখেছেন ১৯১২ সালে। যে বইটিতে বিস্তারিত সূচিপত্র রয়েছে। কিন্তু, সূচিপত্র ছাড়া বই ছাপানোর দায় কি লেখকের? ধরে নিলাম এটি লেখকেরই অনিচ্ছাকৃত ভুল। তাই বলে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবং ছাপাখানা কর্তৃপক্ষের কি এ ক্ষেত্রে কোনওই ভূমিকা নেই? বইটির শেষে লেখক মো: খালেকুজ্জামান সুপরিকল্পিত ভাবে পাদটীকা (ফুটনোট) বিন্যস্ত করেছেন এবং নির্বাচিত গ্রন্থপঞ্জীর সংযোজন করেছেন। এতে করে পান্ডুলিপি তৈরির সময় লেখকের পরিশ্রম ও সতর্কতার যথেষ্ট প্রমাণ মেলে।

তো, এই পরিশ্রমী লেখাটি যথন পাঠানো হল ছাপাখানায়- কালো অক্ষরের ওপর ভর করল বিখ্যাত ছাপাখানার ভূত! ছাপাখানার লোকজন ঘুমের ঘোরেই যেন বইটি ছাপিয়ে ফেললেন! মো: খালেকুজ্জামান- এর বিজন জনপদ থেকে রাজধানী ঢাকা বইটির শব্দের ওপর ছাপাখানার ভূতের আছার এতই বেশি যে অত্যন্ত ক্ষুব্দ হতেই হয়। প্রতি পাতায় অন্তত ৪ থেকে ৫টি করে (খুব সহজ) বানান ভুল। লিখতে গেলে বানান ভুল আমাদেরও হয়, তবে সেটা সংশোধনের চেষ্টাও থাকে। অত্যন্ত আকর্ষণীয় বিষয়ের ওপর একটি বইয়ের পাতায়-পাতায় প্রচুর শব্দ-বিভ্রাট যে কোনও পাঠকেরই অত্যন্ত মনক্ষুন্ন হওয়ার কথা। বিশেষ করে আমি এ প্রজন্মের তরুণ পাঠকের কথা ভেবে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠি।

এ দেশের ইতিহাস-সংস্কৃতির সম্বন্ধে জানার আগ্রহ তরুণ প্রজন্মের মাঝে দিনদিন বাড়ছে। যে কারণে তারা বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থানের ঐতিহাসিক কেন্দ্র ঢাকা শহরের ইতিবৃত্ত সম্বন্ধে আগ্রহী হবেই। মো: খালেকুজ্জামান ঢাকা শহরের পূর্বারপর ইতিহাস সম্বন্ধে আমাদের জানিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বইটি পড়ার সময় পাতায়-পাতায় হোঁচট খেতে হয় বলেই তরুন প্রজন্মের পক্ষে বইটি পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলাই স্বাভাবিক। বইটি পড়ে বোঝাই যায় যে মো: খালেকুজ্জামান তরুণ প্রজন্মের কথা মনে রেখে বইটি সহজ করেই লেখার চেষ্টা করেছেন। তাহলে সমস্যা তৈরি হল কোথায়? লেখক সম্ভবত হাতে লিখে পান্ডুলিপি তৈরি করেছেন; তারপর যিনি পান্ডুলিপিটি কম্পিউটারে টাইপ করেছেন তিনি সম্ভবত অসতর্ক ছিলেন।

তারপর সেই ভুলে-ভরা কপিই লেখক যখন প্রকাশনা সংস্থায় জমা দিলেন এবং প্রকাশনা কর্তৃপক্ষ সেটি সেভাবেই ছাপাখানার পাঠিয়ে দিলেন তখন ভূতের আছর পড়ল! এ জন্যেই বাংলাদেশের প্রতিটি প্রকাশনা সংস্থায় এক বা একাধিক সাহিত্য ও ভাষাবোধসম্পন্ন "সম্পাদক" নিয়োগ জরুরি মনে হয়। যিনি বানান এবং ভাষাগত ক্রটি সংশোধন করে পান্ডুলিপি চূড়ান্ত করবেন। ‘বিজন জনপদ থেকে রাজধানী ঢাকা’ বইটি মোটামুটি সুলিখিত হলেও বেশ কিছু বাক্য দূর্বল এবং অসমাপ্ত যা ইতিহাসবিষয়ক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বইতে অপ্রত্যাশিত। একজন যোগ্য সম্পাদক পান্ডুলিপিটি সংশোধন করলে এমন বিভ্রাট ঘটত না বলে মনে হয়। তবে একথা সত্যি যে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে একজন সম্পাদক নিয়োগ করা হলে বইয়ের মূল্য বেড়ে যাবে।

তবে একটি ভূতগ্রস্থ বই না পড়ার জন্য, একটি সুন্দর বইয়ের জন্য বইপ্রেমিক পাঠক হয়তো বিরক্ত হবেন না। ‘বিজন জনপদ থেকে রাজধানী ঢাকা’ বইটির প্রচ্ছদ। দিব্যপ্রকাশ থেকে ২০০২ সালে ‘বিজন জনপদ থেকে রাজধানী ঢাকা’ বইটি বেরোয়। আশা করছি কর্তৃপক্ষ এরকম একটি অনবদ্য গ্রন্থ সংশোধন পরবর্তী সংস্করণ প্রকাশ করবেন। আর, চমৎকার সব বই তো এ দেশের প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান থেকেই বেরুচ্ছে, আর দিব্যপ্রকাশও তো অখ্যাত কোনও প্রতিষ্ঠান নয়।

তাহলে ঢাকার ইতিহাসের মতন গুরুত্বপূর্ন একটি ইতিহাসের বইয়ের ক্ষেত্রে এই নির্মম উদাসীনতা কেন? (আলোচ্য বইটির দাম লেখা আছে ১৫০ টাকা; এই দামের ওপর কমিশন পাওয়া যাবে। তাতে বইটির দাম আরও কমে যায়। সম্পাদক কর্তৃক সংশোধিত বইটির দাম ২০০ টাকা (বা তারচে কিছু বেশি হলেও) ইতিহাস বিষয়ে আগ্রহী পাঠক ঠিকই বইটি সম্বন্ধে আকর্ষন বোধ করবেন। ) প্রথম ছবিটি ইন্টারনেট থেকে গৃহিত  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.