সারা বছরই কাঠ পাচারের মহোৎসব চলছে। কতিপয় কাঠ চোরের যোগসাজসে প্রতিদিন শত শত ঘন ফুট কাঠ পাচার হচ্ছে। ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে পরিবেশ। সৌন্দর্য হারাচ্ছে প্রকৃতি। করাতকল স্থাপন করে রাত দিন বৃক্ষ চিরাই করা হচ্ছে।
কাঠ ব্যবসায়ীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে গাছ কিনে তা কেটে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করছেন। ব্যবসায়ীরা গাছ কিনে ফরিদপুর, সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। এসব কাঠ ইটভাটার জ্বালানি এবং পারটেক্স ও দেশলাই কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে বন ও প্রকৃতি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য বজায় রাখা, দুর্যোগ মোকাবিলা, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বনের ভূমিকা অপরিসীম।
বনভূমি বেদখল চলতে থাকলে আগামি ৭/৮ বৎসরের মধ্যে সরকারের বেশির ভাগ বনভূমি বেদখল হয়ে যাবে। ফলে চরম বিপর্যয়ের আশংকা করছেন অভিজ্ঞরা। গাছ উজাড় হলে তাপমাত্রা বেড়ে যাবে; অসময়ে বৃষ্টি-বাদল ও বন্যা দেখা দেবে। পটুয়াখালী থেকে প্রতিদিন অন্তত ১২ হাজার মণ কাঠ বিভিন্ন স্থানে চালান হয়ে যাচ্ছে। গাছের দাম ভালো পাচ্ছেন বলে গ্রামাঞ্চলের অনেক গরিব মানুষ তাঁদের গাছ বিক্রি করে দিচ্ছেন।
বনজ দ্রব্য পরিবহন নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০১১ অনুযায়ী, ব্যক্তিমালিকানার বাগান থেকে গাছ কাটতেও বন বিভাগের অনুমতি লাগে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বার বার বিপর্যয়ে পড়া সুন্দরবন প্রকৃতির হাত থেকে রেহাই পেলেও কিছু অসাধু বনরক্ষক আর স্বার্থলোভী বাওয়ালীদের হিংস্র থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র। সুন্দরবন লোপাট করে সুন্দরী, ধন্দুল, পশুর, গেওয়াসহ অবৈধ কাঠ পাচার চলছে।
প্রতিদিন গাছ সংগ্রহের জন্য গ্রামে গ্রামে দালাল নিয়োগ করে তাঁদের মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন ও ব্যক্তিমালিকানার গাছ কিনে তা কেটে প্রথমে বিভিন্ন সড়কের পাশে জড়ো করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এসব কাঠ কিনে ট্রাক কিংবা কাভার্ড ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছেন।
বন বাগানে কাঠ চুরির মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, প্রতিদিন কমপক্ষে ১শ’ সেগুন কাঠ কাটা হচ্ছে। পরিমান কাঠ পাচার ও ইটভাটায় কাঠ পুড়ছে তাতে দেশে সরকার আছে বলে মনে হয় না। জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করছে বন মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনডিপি। ১৯৪৭ থেকে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অঞ্চলভিত্তিক বন বিভাগ ছিল বনরক্ষক-এর অধীনে, এবং পরবর্তিতে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রধান বনরক্ষকের অধীনে ছিল। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেলে সংরক্ষিত ও প্রস্তাবিত সংরক্ষিত বনগুলো বাংলাদেশ বন বিভাগের আওতাধীন হয়ে যায়।
১৯৭১ থেকে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশ বন বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন ছিল।
কতিপয় কাঠচোর বন বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন কাঠ নিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম শহরে। কাঠ পাচারকারীদের সঙ্গে বনকর্মীদের নিবিড় সখ্যতায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ পাচার হচ্ছে প্রকাশ্যে। বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন তা দেখেও না দেখার ভান করছে। এতে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব।
খাগড়াছড়ি,রাঙ্গামাটি,বান্দরবানে বর্তমান ক্ষতমাসীন সরকার আমলে সর্ব কালের রেকর্ড পরিমান কাঠ পাঁচার চলছে। বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের বন মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে সুন্দরবনের উভয় অংশে বাঘ সমীক্ষা পরিচালনা করে। বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫১ শতাংশ জুড়ে সুন্দরবনের, বন থেকে আসা মোট আয়ে অবদান প্রায় ৪১ শতাংশ এবং কাঠ ও জ্বালানী উৎপাদনে অবদান প্রায় ৪৫ শতাংশ (বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, ১৯৯৫)। অনেকগুলি শিল্প (যেমনঃ নিউজপ্রিন্ট, দেয়াশলাই, হার্ডবোর্ড, নৌকা, আসবাবপত্র) সুন্দরবন থেকে আহরিত কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল।
চোরাই কাঠ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেড অবৈধ্য ভাবে সরকারী বনাঞ্চলের বন বাগান উজার করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
রাতেই পাচারকারীদের কাঠ পাঁচারের প্রধান মুহুত্ব হিসেবে ঠিক করে নিয়েছে। বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে বোঝাইকৃত অবৈধ কাঠের গাড়ীর উপরি ভাগে কলাসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বোঝায় করে প্রশাসনের চোখে ধুলা দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষ সংরক্ষিত বনাঞ্চলে জুম চাষের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় বন উজাড় করা হচ্ছে। খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলার পরীক্ষন ফাড়ী গুলো দিয়ে অবাধে কাঠ পাচার হচ্ছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ফ্যাতরা থেকে সুন্দীর গাছ কেটে ট্রলার ভর্তি করে নিয়ে আসা হয় উপজেলার লতাচাপলি ইউনিয়নের নাইউরি-পাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে।
এভাবে প্রতিদিন রাতের অন্ধকারে ভ্যানগাড়ির আলো নিভিয়ে সুন্দরীসহ বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ পাচার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, শিল্পায়ন, কৃষি সম্প্রসারণ ও নগরায়নের ফলে বিশ্বব্যাপী বন ও বনভূমি হ্রাস পাচ্ছে। আমি দেশের বন রক্ষার জন্য সরকারের পাশাপাশি জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। ”
কাঠ পাচার রোধে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই বন ভূমি উজাড় হয়ে পড়বে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সুন্দরবনের চেয়ে বড় বন্ধু আর নেই আমাদের।
তাই সুন্দরবন সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সকলের। নির্বিকারে বৃক্ষ নিধন সুন্দরবনকে শুধু মরু ভূমিতেই পরিণত করবে না দক্ষিণ অঞ্চলের অস্থিত্ব বিলীন হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।