পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন প্রতিনিয়ত উজাড় হচ্ছে। প্রতিদিন অবাধে কাটা হচ্ছে হাজার হাজার সুন্দরী, মেহগনি, কাঁকড়া, গরানসহ বিভিন্ন মূল্যবান গাছ। বন আইন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কাঠ পাচারকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠলেও বন সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা বনবিভাগ রহস্যজনক কারণে কাঠ পাচার রোধে রয়েছে একেবারে উদাসীন। এতে করে সরকার বঞ্চিত হয় রাজস্ব থেকে, আর সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে নিজেরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে বনবিভাগের ওই সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। অন্যদিকে ধ্বংস হচ্ছে সুন্দরবন।
সূত্র জানায়, ২০০৭ এর ১৫ নবেম্বর ভয়াবহ সিডরে প্রায় বিধ্বস্ত সুন্দরবন থেকে দীর্ঘদিন বনজ সম্পদ আহরণ বন্ধ ছিল। প্রাকৃতিকভাবে সিডরের ক্ষতি সম্পূর্ণ পুষিয়ে ওঠার আগেই কয়েক মাস আগে বনজীবীদের কথা চিন্তা করে সুন্দরবনে সম্পদ আহরণ শুরু হয়। এ সময় গোলপাতা ও গরান এবং মধু ও মোম সংগ্রহের অনুমতি দেয়া হয়। গোলপাতা ও গরান আহরণ মওসুম এবং মোম ও মধু আহরণ সম্প্রতি শেষ হয়েছে বর্তমানে চলছে মৎস্য আহরণ। অভিযোগ রয়েছে প্রতি মওসুমে বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীরা পারমিট ইস্যু ও বিভিন্ন গাছ কাটার বিধি বহির্ভূত অনুমতি দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
নৌকায় ক্ষমতা বহির্ভূত পরিমাণে কাঠ বোঝাই করে তা পাচার করা হলেও বনবিভাগ এক্ষেত্রে বাড়তি নজরানার কারণে নিরব থাকে। এভাবে পাচারকারীরা বনকর্মীদের সামনেই কাঠ পাচার করে থাকে।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের শরণখোলা, বগী ষ্টেশন ও তেরাবেকা, ধানসাগর ক্যাম্প এলাকায় অবাধে কাঠ পাচার অব্যাহত রয়েছে। পাচারকারী একেকটি সিন্ডিকেট ১০/১৫ জন লোক নিয়ে বনে প্রবেশ করে। ইচ্ছে মতন সুন্দরবন থেকে গাছ কেটে তা ট্রাকে, ভ্যানে, নৌকায় বিভিন্ন মোকামে নিয়ে যায়।
শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা, রসুলপুর, রাজাপুর, ধানসাগর, পল্লীমঙ্গল, বগী, তাফালবাড়ী, সোনাতলা এলাকায় কাঠ পাচারকারী চক্রগুলো স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সক্রিয় রয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, কয়েকদিন পূর্বেও পাচারকারীরা ২০/২৫ টি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তেরাবেকা ও বগী স্টেশন এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ কাঠ পাচার করেছে। রেঞ্জের সুপতি স্টেশন কাঠ পাচারের অপর একটি আখড়া বলে জানা গেছে। একই সূত্র জানায়, গত ১ মে রসুলপুর এলাকা থেকে ১ ট্রাক কাঠ পাচার করা হয়েছে। ২৭ এপ্রিল তাফালবাড়ী এলাকা থেকে ২৬ ব্যান কাঠ পাচার করা হয়।
তবে বনবিভাগ মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে ২০/৫০ ঘনফুট কাঠ উদ্ধার করে থাকে। অভিযোগ রয়েছে অভিযানের অন্তরালে হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ পাচারের সুযোগ করে দেয়া হয়। কাঠ পাচারকারীরা নিয়মিত ফরেস্ট ষ্টেশনগুলোতে মাসোহারা প্রদান করে থাকে। তাই বনবিভাগ এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করে না। মাসোহারা নিয়ে ঝামেলা হলে তখনই কাঠ উদ্ধারে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা হয়ে থাকে।
পশ্চিম বনবিভাগেও কাঠ পাচারকারীরা সক্রিয় রয়েছে। পশ্চিম বিভাগের কাশিয়াবাদ স্টেশনের হায়াতখালি, কয়রা ও দজদজা টহল ফাঁড়ির মাধ্যমে প্রতিদিন কয়েকশ' ঘনফুট কাঠ রাতের অন্ধকারে পাচার করা হয়ে থাকে। এছাড়া বানিয়াখালি স্টেশনের আশেপাশের এলাকায়ও কাঠ পাচার করা হয়। কোবাদক স্টেশন এলাকায় কয়েকটি সিন্ডিকেট কাঠ পাচারে সক্রিয় রয়েছে। প্রতিদিন সুন্দরবন থেকে হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ পাচার করা হয়ে থাকে।
এতে সরকার বঞ্চিত হয় মুল্যবান রাজস্ব থেকে। বনবিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সুন্দরবনকে ধ্বংস করে চলেছে। সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে নিজেরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে। অন্যদিকে নিঃস্ব হচ্ছে সুন্দরবন।
এ বিষয়ে একাধিক রেঞ্জ এর কর্মকর্তার সাথে কথা হলে জানান, কাঠ পাচারকারীদের প্রতিহত করতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তবে বনবিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা কাঠ পাচারে জড়িত নন। এরকম অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন দেশের গর্ব। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও পিরোজপুরের একাংশ নিয়ে এর অবস্থান। ইতোমধ্যে এই বন বিশ্ববাসীর মনে স্থান করে নিয়েছে।
নতুন সপ্তাশ্চার্য নির্বাচনে ২৮ এর মধ্যে সুন্দরবনের অবস্থান। একে ভোট নতুন ৭ম আশ্চার্য প্রাকৃতিক সম্পদে পরিনত করতে সকলেই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এতে মানুষ তথা বিশ্ববাসী ভোট দিচ্ছে তার জীব বৈচিত্রের জন্য, বিশ্বের এক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০২৮০ বর্গ কিলোমিটার যার মধ্যে বাংলাদেশেরে অংশে ৬০১৮ কিলোমিটার। এখানে রয়েছে সুন্দরীসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির আর্কিড। প্রানী ও বৃক্ষের বৈচিত্রময় সমাহারের এই বন বৈজ্ঞানিক নৃতত্ত্ব ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিবেচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ব আজ তাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এই কারণে। বিশ্ব ঐতিহ্য এই সুন্দরবন রক্ষায় জোরালোভাবে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।