আমি করিম চাচার জমিতে এবার ভাল ফলন হয়েছে। উন্নতজাতের বীজ আর ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ব অর্থনীতির সাথে তাল মিলিয়ে উনিও চলার চেষ্টা করছেন। কারন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বা সারের দাম বা বীজের দাম বাড়লে করিম চাচার জন্য ও দাম বারে, কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে করিম চাচার জন্য কোন জিনিসের দাম কমে না।
করিম চাচার পরিবারের আয় রোজগার বাড়ানো ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে আরও কিছু বাঁধা আছে। ফলস কেটে ঘরে আনার পথে গায়ের চোর সম্প্রদায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত উন্নয়ন তহবিলে কিছু দিয়ে আসতে হয়।
এর পরও মাঝে মাঝে বুঝতে পারেন তার গোলার ফসল চুরি হয়ে যাচ্ছে। একদিন বুদ্ধি করে করিম চাচা তার গোলায় লাইট লাগালেন যাতে করে চোরকে চিনতে পারেন। কিন্তু তার পর বেশ কিছুদিন চুরি হল না। করিম চাচা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলেন।
একদিন পারার সেই “চোর সম্প্রদায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত উন্নয়ন তহবিল” থেকে কয়েকজন লোক একটি কম্পিউটার নিয়ে চাচার বাড়িতে হাজির হলেন...
চাচা ও করিম চাচা... বাড়িতে আছেন নাকি?
কে বাবা ? ভেতরে আসো...
চাচা, আপনারা সবাই মিলে আমাদের যে গ্রামটারে পালটানোর দায়িত্ব দিছেন তার জন্য আপনার জন্য একটা উপহার আছে...
বাবা, আমরা দায়িত্ব দিলাম কই !! তোমরাই তো......
থাক চাচা, থাক... ওই একই কথা..।
চাচা আমরা আপনারে পুরা একজন ডিজিটাল কৃষক বানাইতে চাই, এই দেখেন আপনার জন্য একটা কম্পিউটার নিয়ে আসছি।
বাবা, এইটা দিয়া কে করে?
চাচা, ওইসব আস্তে আস্তে শিখে যাবেন, এইবার বলেন আপনার বাড়ির মেইন সুইচ কই?
কেন বাবা? মেইন সুইচ দিয়া কি করবা?
বন্ধ করুম চাচা, এইটা (কম্পিউটার) সেট করতে মেইন সুইচ বন্ধ করতে হইব...
ঠিক আছে বাবা, কর...
এর পর তারা কম্পিউটার সেট করে দিয়ে চলে গেল। কিন্তু চাচার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল তখন, সকালে উঠে যখন তিনি দেখলেন তার গোলা পুরো খালি !! মেইন সুইচ বন্ধ করে সব চুরি করে নিয়েগেছে।
করিম চাচার মন খুব খারাপ। এমন সময় করিম চাচার ছেলে করিম চাচার জন্য একটি মোবাইল কিনে আনল, সাথে ইন্টারনেট কানেকশন সহ রবি সিম।
ইন্টারনেট থেকে দেখে দেখে চাচা একটু চালাক হলেন। এইবার “গোলায়” কারেন্টের লাইন দিয়ে রাখলেন, কারণ তিনি জানতেন যারা চুরি করে তারাই বিচার করে, কাজেই চোর ধরলেও কোন লাভ নাই, তাই যা করার হাতে নাতে চুরি করার সময় করতে হবে। আর এইবার কারেন্টের লাইন দিলেন সরাসরি মিটার থেকে, যাতে মেইন লাইন অফ করলেও ছাকা ঠিক ই লাগে!
দেশপ্রেমিকের আইডিয়া !! কাজে না লেগে পারেই না !! পরের প্রায় ২ বছর বেশ কয়েকজন চুরি করতে এসে ছাকা খেল, সাথে তারাও খেল যারা আগে চুরি করেছে! ভাবছেন কিভাবে? ওইযে তারা ভাবছিল চুরি করতে গিয়ে কিছু প্রমান ফেলে আসি নি তো!! ওই প্রমান গায়েব করতে গিয়ে বাঁশ!!
এইবার একদল চোর অনেক কষ্টে বিদ্যুৎ অফিস মেনেজ করে ফেললো। তারা যখন চুরি করতে আসে তখন বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দেয়, আর তারা বিদ্যুৎ অফ করে দেয়, ব্যাস মাল খালাস...
কিন্তু বিপত্তি সেখানেও। বিদ্যুৎ অফিস আরও ধান্দাবাজ।
যে বেশি টাকা দেয় তার কথা শুনে। একবার ও এমন হল দুই চোরের দল গোলার দুই দরজা দিয়ে যেই ভেতরে ঢুকল, অমনেই বিদ্যুৎ চলে এল। কি কাণ্ড!! পরে অবশ্য দু দলই বলেছিল তারা আসল চোর ধরতে গিয়েছিল...
নিজেদের মধ্যে ঝগড়ার কারনে চোরেরা একটা সমঝতায় আসলো। যারা গ্রাম “উন্নয়ন” কমিটি নির্বাচিত হবে পরবর্তী ৫ বছর তারাই করিম চাচার বাসায় চুরি করবে।
এই ভাবেই চলতে থেকে ৪ বছর।
এর পর আবার গ্রামের “উন্নয়ন” কমিটির নির্বাচন। হঠাৎ এক রাতে বাড়ির উঠানে ঝগড়ার আউয়াজ শুনে করিম চাচার ঘুম ভাঙ্গে। এক চোরের দল অন্য চোরের দলকে দোষারোপ করছে...
তোমাদের শুধু গোলার শস্য চুরি করার কথা ছিল, কিন্তু তোমরা তো করিম চাচার গোলার বাঁশ ও খুলে খুলে নিয়ে যাচ্ছ, তাহলে আগামী বছর করিম চাচা কিভাবে গোলায় শস্য রাখবে। আর উনি যদি গোলার শস্য রাখতে না পারেন তাহলে আমরা চুরি করবো কি করে... না না হতে পারে না, আমাদের এখনি তোমাদের টা থেকে ভাগ দিতে হবে...
... আরে যা যা... করিম চাচা নিজে ভোট দিয়ে আমাদের ৫ বছরের জন্য টাইম দিছে। যা ইচ্ছা তাই করুম, যা পারস করগা...
এমন সময় চাচা আর থাকতে না পেরে ঘর থেকে বের হলেন।
শত হলেও দেশপ্রেমিক মানুষ !! চাচা বের হয়ে বললেন—
“বাবারা আমার মনে হয় আগামীতে কে চুরি করবা এইটা নিয়ে তোমাদের দুজনের ই সংলাপে বসা উচিত। কেউ না কেউ তো চুরি করবাই... শুধু শুধু আমার অশান্তি করে আমার ঘুম নষ্ট কইরো না। “
করিম চাচা এখন প্রতি রাতে না ঘুমিয়ে বাড়ির উঠানে বসে থাকেন। না আপনি যা ভাবছেন টা না !! গোলা পাহারা দিতে না !! উঠান পাহারা দিতে, যাতে দুই চোরের দল ঝগড়া করে তার উঠানের পাশের মরিচ গাছ গুলো ভেঙে ফেলে!! গাছ ভাঙলে মরিচ কেনার টাকাও তো তাকেই যোগাড় করতে হবে !!!
আসলে আমরা সবাই করিম চাচা। হ্যাঁ, করিম চাচাই আমাদের সবার প্রতিনিধি...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।