আমাদের গ্রাম এর স্কুল এ একটা কথা খুব চালু ছিল, ছোট বেলায় যে অঙ্কে ভাল থাকে তাহলে নাকি তার বড় হয়ে ইঙ্গিনিয়ারিং পড়া সব থেকে উত্তম। আমি যোগ , বিয়োগ , গুণ, ভাগ পাড়তাম আর কি??? গ্রাম এর একটা ছেলে এই গুলা পারলে ই ধরে নেওয়া হয় যে ছেলে তো দারুন মেধাবী। আমার কপালেও অজ্ঞাত এই অপবাদ জুটল। বাবার চোখে ঝলমলে আলো, পোলারে তো ইঙ্গিনিয়ার বানামু। অঙ্কে ভালোর এমন ই দশা প্রথম চার সেমিস্টার ইঙ্গিনিয়ারিং এ এই সাবজেক্ট পড়ানো হয়, আমি সব গুলা হামাগুড়ি দিতে পাড় হইসি, আমার অভিজ্ঞতা এমন হইসে কেও যদি আমাকে হেটে হেটে চাঁদ এ যেতে বলে আমি পারব কিন্ত অঙ্কে পাস আমারে দাড়া হবে না।
গত চার সেমিস্টার এ আমি গোল্ডেন D পাইসি। মানে আমি যে একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখছি ওটা ই তো বেশী। আশরাফুলরে বাদ দেয় ধারাবাহিক ভাবে না খেলতে পারার কারনে আমিতো সব গুলায় D। এমন রেজাল্ট করতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হইসে।
অঙ্কে যে আমি ভাল করব না এইটা আগে ই বুঝা উচিত ছিল।
আমি যখন ক্লাস সেভেন এ পড়ি তখন আমার বাবা কি এক কাজে যেন বাইরে যায়। আর আমার উপর দায়িত্ব পড়ে বাজার করার। আমি ভাল ছেলে হলে ও মাঝে মাঝে ই বাবার পকেট থেকে কে জানি সামান্য কিছু টাকা এদিক সেদিক করত। আর কি গেলাম বাজারে , বাজার শেষ করে দেখি পকেটে আসে ৩০০ টাকার মত । এত টাকা !!! আমার বুদ্ধি তো আর এতো খারাপ না যে পুরা টাকা ফিরত দিবো , একটা বল কিনলাম , ৫০ টাকা সরিয়ে রাখলাম আর বাড়ি ফিরতে ফিরতে আইসক্রিম আর আমি যেহেতু ছোট ছিলাম তাই আমার সাথে আমার ১ বছর এর ছোট পাশের বাড়ির এক ছেলে গেসে।
আর তাই ও যাতে বাড়ি এসে আমার কর্ম না ফাস করে এই বাবদ ওরে ২০ টাকা দিয়ে হাত করলাম। মনের সুখে পকেটে ৫০ টাকা নিয়ে হাঁটতে নিজেকে অনেক বড় মাপের বুদ্ধিমান মনে হচ্ছিল। কিন্ত বাড়ি এসে যখন টাকা হিসাব দিতে গেলাম তখন তো পুরা ধরা। সব কিছুর দাম বাড়িয়ে বলে দেখি ৬০ টাকা হিসাবে গণ্ডগোল। পড়ে ধরে খেয়ে কান ধরে দুই ঘণ্টা দাড়িয়ে থাকলাম।
বাবার তখন ই বুঝা উচিত ছিল যে ছেলে বাজার থেকে মারা ৬০ টাকার হিসাব মিলাতে পারে না, ও তো জীবনে ও অঙ্কে পাস করবে না।
ক্লাস নাইন এ থাকতে অংক আমার কাছে বিভিসিকাময় অধ্যায় এর সূচনা করল। ভাল ভাল পরীক্ষা দিতাম কিন্ত এমন মার্ক পেতাম তা না বললে ও চলে। এতো কম পেতাম মাঝে মাঝে চিন্তা হত এই পচা স্কুলে ই এর পরব না। স্কুল ছাড়া আমাকে লাগে নাই, আমি অনেক বুদ্ধি করে একটা সিস্টেম বের করসি।
আমাদের স্কুল এ প্রগ্রেসিভ রিপোর্ট হারাই গেসে বললে নতুন আরেক টা দিত । আর আমি এই সুজুগ এর ই অপেক্ষায় ছিলাম। আমি প্রগ্রেসিভ রিপোর্ট হারাই গেসে বলে ১০০ টাকা দিয়ে নতুন একটা নিলাম। আগের টায় লাল দাগ পড়তে পড়তে অনেক খারাপ দেখাতো। আমি কি করতাম নতুন রিপোর্ট এ নিজের ইচ্ছে মত গ্রেড বসাতাম, বেশির ভাগ গ্রেড ই যে এ+ হত এটা বলার দরকার দেখি না।
এক বার gpa হিসাব করতে ভুল হয়ে গেসিল । আর এই জিনিস বাবা ধরে ফেলছিল সাথে সাথে বাবা স্কুল এ গিয়ে দেখে যে আমার রিপোর্ট আর স্যারের কাছে মার্ক মিলিয়ে দেখে আমার প্রগ্রেসিভ রিপোর্ট এ ৩ গুন কোনটায় ৪ গুন ও বেশী। আমি করতাম কি যেটা আসল তাতে নিজে নিজে সাইন করে জমা দিতাম,আর যেটা কিনেছি তাতে নিজের ইচ্ছে মত লিখে বাবা কে দেখাতাম। আর এই জিনিস আমি করসি দেখে বাবা আমার উপর কত ধারা আইনে মামলা করসে বুঝা ই যায়। বাবা তখন ও কি বুঝে নাই gpa হিসাব পারে নাই, ও যে পাস করসে তা ই তো বেশী।
মানুষের একটা স্বভাব হল সে যদি খারাপ ছাত্র হয় আর তার মত যদি আরও কিছু আশেপাশে থাকে তাহলে সে বেজায় খুশি হয় । আর আমাদের ও একটা গ্রুপ আছে,যারা অল টাইম টেনস টো জিরো পাই । আর নিজেদের সফলতায় নিজেরা ই মুগ্ধ হয়ে বলি এই বার পাস হল না, আগামীতে শিওর পাস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।