আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রুস্কাইয়া ব্লুদা-১০

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল! দি আর্মেনিয়ান রেডিও বা ‘ইরেভান রাদিও’র বক্তব্য ছিল -শ্রোতা জিজ্ঞেস কর আমাদেরকে তোমার যা জানতে ইচ্ছে করে,আমরা উত্তর দিব যা আমাদের মনে চায়’। প্রশ্ন এবং এই কল্পিত রেডিও থেকে উত্তর শুধু রাশিয়ায় নয় এমনকি রাশিয়া বাইরে দারুন জনপ্রিয় হয়। যাকে বলা হত 'রাদিও ইরেভান আনেগদুদ' বা 'ইরেভান বেতারের কৌতুক'! সত্যিকারের 'রেডিও আর্মেনিয়া' বা 'রেডিও ইরেভা'ন যা আর্মেনিয়ার রাজধানী ইরেভান থেকে প্রচারিত হয়। কিন্তু 'রেডিও ইরেভান আনেগদুদ'(ইরেভান বেতারের কৌতুক) সম্পূর্নরুপে কল্পনা প্রসুত। 'রেডিও আর্মেনিয়া' সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য রেডিও স্টেশন যেমন রেডিও মস্কো কিংবা রেডিও কিয়েভের মত একই রকম নিরস গৎবাধ অনুষ্ঠান কাটছাট ও সম্পাদিত খবর প্রচার করত।

কিন্তু কেন এই কৌতুকগুলোকে বলা হয় রেডিও ইরেভান জোকস্? কেন এই এই নির্দিষ্ট ফর্মের কৌতুকগুলোকে আর্মেনিয়ান জোকস হিসেবে প্রচারিত হয়েছে এর কোন সঠিক উত্তর কেউ জানেনা । রাশিয়াতে কেউ উল্টাপাল্টা বা বৈসাদৃশ্য কিছু করলে বা বললে বলা হয়’ Армянская загадка’আর্মানস্কাইয়া জ্বারাদকা’ বা আর্মেনীয় হেঁয়ালীপনা। হয়তো এই আর্মেনিয়ান হেঁয়ালীপনা থেকেই রেডিও আর্মেনিয়া জোকস নামকরন! উদাহরন হিসেবে বলতে হয়; দর্শক,এই দেখুন আরেকটা ওই যে দেয়ালটার একটা সবুজ রঙ্গের কি যেন আকা আছে সেটা আবার হাসছে! -ওটা একটা হেরিং মাছ । -হেরিং মাছ সবুজ কেন? -আমার হেরিং আমি আমি সবুজ এঁকেছি, আমার ইচ্ছে। আপনি জানেন আমি কি উল্লসিত – কি দারুন আঁকিয়ে আমি-আঃ -তা না হয় বুঝলাম।

কিন্তু মাছটা দেয়ালে ঝুলছে কেন? -আমি আমার হেরিং মাছ দেয়ালে ঝুলাব না কোথায় ঝুলাব সেটা আপনার কাছ থেকে জানতে হবে? -আজব ব্যাপার, ঝুলল না হয় দেয়ালে ওটা, তবে মাছ কি কখনো দাত কেঁলিয়ে হাসে? -আমি চিৎকার করে বললাম,তোমার মত গোমুর্খের সেটা বোঝার ক্ষমতা নেই-এইটা আমার আকার গুপ্ত রহস্য(আর্মেনিয়ান হেঁয়ালি)। এই চমৎকার জোকসগুলো অবশ্যই আর্মেনিয়ানদের মস্তিস্কপ্রসুত নয়। নির্দিষ্ট ভাবে বলা যায়-খোদ সমাজতান্ত্রিক দেশের বুদ্ধিমান,প্রতিভাবান, সর্বোপরি শিক্ষিত ক্রিয়েটিভ আর সেই সাথে কিছু ক্ষেত্রে কমিউনিজম বিরোধীরা জড়িত ছিল এর সাথে। রেডিও আমেনিয়ান বা রেডিও ইরাভান জোকস গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সব কমিউনিষ্ট দেশ গুলোতে বেশ সমাদৃত ছিল। সেই জোকসগুলো শুধু রাজনৈতিক নয়- আর্থ সামাজিক পারিবারিক , সম্পর্ক ভালবাসা, যৌনতা, কুকুর, বেড়াল সহ সব বিষয়ের উপরেই ছিল।

তবে সমাজতন্ত্রের পতন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার সাথে সাথে মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বুদ্ধিমান সেইসব ব্যক্তিদের তৈরি জোকসগুলোরও মৃত্যু ঘটে। এইসব এখন শুধু ইতিহাস। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পরে প্রায় হারিয়ে গেছে সেই কৌতুকগুলো। এখন ইন্টারনেট ঘাটলে মুলত রাজনৈতিক ও সামাজকেন্দ্রিক জোকসগুলো খুজে পাওয়া যায়।

প্রতিটা জোকস এর শুরুতে বলা হত(এখানে উল্লেখ করতে হয় যে নীচের সব রেডিও ইরেভান এনেগদোত’গুলো হুবহু অনুবাদ নয়। পাঠকের বোঝার সুবিধার্তে কিছু কিছু জোকস রুপান্তরিত হয়েছে-এ কথা স্বীকার করতে দ্বীধা নেই যে আমার অনুবাদের সামর্থও প্রশ্ন বিদ্ধ -তাই পাঠকের চোখে কোন ভুল ভ্রান্তি ধরা পড়লে শুধরে দিলে কৃতজ্ঞ হব। ) -‘দি আর্মেনিয়ান রেডিও- আমাদের জনৈক শ্রোতা জিজ্ঞেস করেছেন… সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির স্হায়ী বৈশিষ্ট কি? -আমাদের উত্তর: পণ্যের অস্থায়ী সল্পতা কিছু অন্যরকম প্রশ্ন ও উত্তর; ১)প্রশ্ন.একজন চরম আদর্শবান ও সৎ মানুষকে কি কেনা সম্ভব? উত্তর.না এটা কখনোই সম্ভব নয় তবে তাকে বিক্রি করা সম্ভব। ২)প্রশ্ন. এ্যারোটিক আর পর্ণ ছবির মধ্যে পার্থক্য কি? পার্থক্য খুবই সামান্য। ক্যামেরার ফোকাসিং এর সার্পনেসের উপর নির্ভর করে।

৩)প্রশ্ন. অনুমোদিত ও নিষিদ্ধ শব্দের মধ্যে পার্থক্য কি? উত্তর. যুক্তরাজ্যে যা অনুমোদিত তাই-অনুমোদিত। আর যা নিষিদ্ধ তাই-ই নিষিদ্ধ! আমেরিকাতে সবই অনুমোদিত- শুধু নিষিদ্ধ জিনিষগুলো বাদে। জার্মানীতে সবকিছুই নিষিদ্ধ- শুধু অনুমোদিত ব্যাপারগুলো বাদে। ফ্রান্সে সবকিছুই অনুমোদিত- এমনকি নিষিদ্ধ ব্যাপারগুলোও ইউএস এস আরে সবকিছুই নিষিদ্ধ- এমনকি অনুমোদিত ব্যাপারগুলোও। ৪)প্রশ্ন. এটা কি সত্যি কবি ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি আত্মহত্যা করেছেন? ঠিকই শুনেছেন তিনি আত্মহত্যাই করেছেন।

তার মরে যাওয়ার আগে তার শেষ কথা রেকর্ডকৃত অবস্থায় সংরক্ষিত আছে। তার শেষ কথা ছিল ’প্লিজ আমাকে গুলি কোরনা কমরেড। ‘ ৫)প্রশ্ন. বিশৃঙ্খলা কি? দুঃখিত শ্রোতা আমি আমাদের ‘জাতীয় অর্থনীতি’ নিয়ে কোন কথা বলতে চাইনা। ৬)প্রশ্ন এটা কি সত্যি যে সোভিয়েত ইউনিয়নে ঠিক আমেরিকার মত বাক স্বাধীনতা আছে? উত্তর .এক কথায় বলতে গেলে আছে। আপনি হোয়াইট হাউসের সামনে দাড়িয়ে রিগ্যানকে গালিগালাজ করেন আপনার কোন শাস্তি হবে না।

ঠিক তেমনি মস্কোর রেড স্কয়ারে দাড়িয়ে আরো উচ্চস্বরে রিগ্যানকে গালিগালাজ করেন আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি আপনার কোন শাস্তি হবে না। ৭) প্রশ্ন-অচেনা কোন এক ভদ্রলোক পাবে তোমার পাশে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে শুরু করে? উত্তর-অবিলম্বে তুমি তাকে সোভিয়েত বিরোধী প্রচারনা চালাতে বন্ধ করতে বলবে। ৮)প্রশ্ন-এটা কি সম্ভব সুইজারল্যান্ডে সমাজতন্ত্রের সুচনা করা? উত্তর-হ্যা সম্ভব -কিন্তু কেন? সুইজার‌ল্যান্ড কি তোমার বিশেষ কোন ক্ষতি করেছে? ৯)প্রশ্ন-রেড স্কয়ারে প্রেসিডেন্টের গাড়িতে যে গুলি করেছিল তার নিশানা কেন ব্যার্থ হল? উত্তর-তার পাশে দাড়ানো লোকটা সেই মুহুর্তে চেষ্টা করছিল বন্দুকটা কেড়ে নিতে আর চিৎকার করে বলছিল’প্লিজ আমাকে দাও গুলিটা আমি করব। ‘ ১০)প্রশ্ন-কি করা উচিৎ যদি ভদকা তোমার চাকরির সমস্যার কারন হয়ে দাড়ায়? উত্তর-খুব সোজা -চাকরিটা তাহলে ছেড়ে দাও। ১১)প্রশ্ন-লেনিন সাধারন জুতা পরত কিন্তু স্তালিন কেন বুট পরে? উত্তর-কেননা লেনিনের সময়ে রাশিয়া মাত্র গোড়ালি অব্দি বিষ্ঠায় ডুবে ছিল ।

১২)প্রশ্ন-সমাজতান্ত্রিক দেশে কাজের সময় সুচি কেমন? উত্তর-অন্য সবার মতই আট ঘন্টা দিনে। শুরু হয় সকাল আটটায় আর শেষ হয় রাত আটটায়। ১৩)‘দি আর্মেনিয়ান রেডিও- আমাদের জনৈক শ্রোতা জিজ্ঞেস করেছেন-আমাদের সরকার প্রধানেরা কেন চায়না কোন রুশ নভোচারি অতি দ্রুত চাঁদের মাটিতে পদার্পন করুক। আমাদের উত্তর-তারা যদি ফিরে আসতে আর না চায়? ১৪)আমাদের এক শ্রোতা জিজ্ঞেস করেছেন, খোদ জার্মনীতে বসে কি হিটলারের সমালোচনা করা যায়? আমরা উত্তরে বললাম,অবশ্যই সম্ভব। ঠিক যেইভাবে আমরা স্তালিনের সমালোচনা করি।

প্রথমেই তোমার শোয়ার ঘরের দরজা ভাল করে তালাবদ্ধ কর। তারপরে তিনচারখানা কম্বলের নীচে নিজেকে চালান করে দাওতারপরে মুখের উপরে দুইটা না তিনটে(দিলে ভাল হয়) বালিশ চাপা দিয়ে তোমার মনের যত কথা আছে ফিস ফিস করে বলে ফেল। তবে খেয়াল রেখ মিনিট পাঁচেকের বেশী হলে পরপারে ভেগে যাবার সম্ভাবনা আছে! ১৫)প্রশ্ন-কোন ধরনের চা ভাল- চাইনিজ না সোভিয়েত উৎপাদিত? উত্তর-দয়া করে দুই শক্তিধর দেশের মধ্যে গ্যাঞ্জাম না বাধিয়ে বসে বসে কফি খাও। ১৬)প্রশ্ন-আমাদের কেন দু-দুটো জাতীয় দৈনিক প্রয়োজন প্রাভদা(সত্য) ও ইজ্ভেতিয়া(সংবাদ)? উত্তর-কেননা ‘প্রাভদা’য় কোন সংবাদ নেই- আর ‘ইজ্ভেতিয়া’তে কোন সত্যি নেই। (এই কৌতুকটা সোভিয়েত ইউনিয়নে সব সময়ের জন্য বেশ জনপ্রিয় ছিল।

জাতীয় দৈনিক প্রাভদা আর ইজ্ভেতিয়া নিয়ে সবসময়েই মজা করত। তখনতো আর ইন্টারনেট ছিলনা-তবুও এইসব পত্রিকার প্রায় সব যে বুজরুকি সেটা তারা বুঝত বেশ ভাল করেই। তবুও পড়ত বাধ্য হয়ে আর সেইসব খবর নিয়ে মজা করত। ) ১৭)পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক বানিজ্যের মধ্যে এর পার্থক্য কি? পার্থক্য অতি সামান্য। পুঁজিবাদী বানিজ্য অর্থ ‘সবকিছু বিক্রি করা সম্ভব’ আর সমাজতান্ত্রিক বানিজ্য অর্থ ‘সবকিছুই ক্রয় করা সম্ভব।

১৮)কোন শব্দের প্রথম অক্ষর ‘প’ আছে যেটা কখনোই শেষ হয়না? উত্তর-পূনর্গঠন। перестройка(পেরেস্ত্রোইকা) ১৯)প্রশ্ন. কমিউনিষ্টদের প্রচারনা আর পুজিবাদীদের বিজ্ঞাপনের মধ্যে পার্থক্য কি? উত্তর. আমাদের জানা নেই। তবে ধারনা করছি দুটোর চরিত্র প্রায় ধারেকাছের। ২০)দি আর্মেনিয়ান রেডিও- আমাদের জনৈক শ্রোতা জিজ্ঞেস করেছেন. একটামাত্র মুরগী কিনে কি এক সপ্তাহ খাওয়া সম্ভব। আমাদের উত্তর.অবশ্যই সম্ভব।

মুরগীটা কিনবেন সোমবারে-আর রান্না করবেন রবিবারে। ২১)প্রশ্ন.পুঁজিবাদি রুপকথা আর ম্যাক্সিস্ট রুপকথার মধ্যে পার্থক্য কি? উত্তর.পুঁজিবাদি রুপকথার শুরুতে থাকে ‘কোন একদিন ছিল…। আর ম্যাক্সিস্ট রুপকথার শুরুতে থাকে’কোন একদিন হবে…। সুত্র .Anecdotesmile, armeniapedia,Wikipedia আগের পর্বের লিঙ্ক: Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.