আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি একটি শুয়োরের ন্যায় শিক্ষিত

গনতন্ত্রের শুদ্ধতা চাই আমার স্কুলজীবনের কিছু কথা- আমি তখন একেবারেই প্রারম্ভিক একটি বিদ্যালয়ে পড়ি, সেখানে একজন ড্রয়িং শিক্ষিকা ছিলেন, তিনি আমাদের পেঁপে আঁকানো শিখিয়েছিলেন কম্পাস বা মা এর চুড়ি ব্যাবহার করে। প্রথমে ওপরে ছোট্ট এক গোল্লা, তারপর নিচে একটু বড় আর একটা গোল্লা একে নিয়ে সেটাকে পেঁপে এর শেপ দিতে হবে। ছোটবেলায় আকাআকিতে কিছুটা ভালো ছিলাম, তাই আমার পেঁপে আঁকতে চুড়ি লাগতনা। ক্লাশে খালি হাতে পেঁপে আঁকাতে এবং তা ম্যাডাম এর পেঁপের চেয়ে সুন্দর হউয়াতে ম্যাডাম আমাকে মেরেছিলান। আমার বয়স তখন সাত বছর।

আমি সেদিন কিছুতেই বুঝে উঠতে পেরেছিলাম না আমি ক্যানমার খাচ্ছি, আমি সেদিন শুধু ম্যাডামের নিষ্ঠুরতায় অঝর ধারায় কেঁদেছিলাম। তাহলে কি আমি নিজের মত করে আঁকা বন্ধ করে দিব? কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হউয়ার পর একদিন পানি খেতে গেছি, টিউবওয়েল এ মুখ লাগিয়ে পরমসুখে পানি খাচ্ছি, হঠাত আমার পশ্চাদ্দেশ জলে উঠল এবং পঠাশ পঠাশ কয়েকটা শব্দ পেলাম। গলায় পানি পর্যন্ত আটকে গ্যাল, ফিরে দেখি এক শিক্ষক হাসতে হাসতে আমাকে পেটাচ্ছেন । সে আমাকে বলল ক্লাশ আওয়ার এ পানি খাইতে আসছিস ক্যান? আমি উত্তর দিতে পারিনি, কারন তখন আমার হতভম্ব ভাব কাটেনি। পানি খাওয়ার কোন ব্যাপারটা অন্যায় ছিল আমি তখনো সেটাই ধরতে পারিনি।

তাহলে কি স্কুলে আমরা পানি খাওয়া বা প্রস্রাব করা বন্ধ করে দিব? ক্লাশ ফোর এ একবার এক ম্যাডাম ডেকে বলেছিল এই কবিতা টা বল। আমি কবিতা টা খুব আবেগ কিয়ে আবৃত্তি করলাম। বতারবর ম্যাদাম আমাকে বললেন হাত পাত। আমি হাত পাতলাম। তারপর পটাশ পটাশ পটাশ।

আমি আবার হতভম্ব!! ম্যাডাম আমাকে বললেন, কবিতা মুখস্ত বলতে বলেছি, আবৃত্তি করতে বলিনি!! আমি কিছুতেই বুঝতে পারিনি কবিতা কিভাবে মুখস্ত বলে!! মা বাবা শিখিয়েছেন কবিতা আবৃত্তি করতে হয় আর ম্যাডাম শেখালেম মুখস্ত করতে হয়!! সেই মুখস্ত কবিতা পরীক্ষার খাতায় মুখস্ত লিখতে হয়। আর কবিতা পড়ে আমরা কি শিখলাম সেটাও একটা গাইড দেখে মুখস্ত করে লিখতে হয়। !! সেলুকাস, কবিতা কি বিচিত্র জিনিস!!! ইতিহাস পরার সময় অবাক হয়ে ভাবতাম এই তারিখগুল মনে রেখে আমি কি করব?? জান্তাম্না তারপরেও মুখস্ত করতাম। আমাদের প্রেমের নিদরশন তাজমহল পড়ানো হউএছিল অথচ ইতিহাস বই এ এটার উল্লেখ ছিলনা যে মমতাজ তার স্বামীর কত তম স্ত্রী ছিলেন!! এক শিক্ষক ক্লাশে ঢুকে সবার আগে আমার নাম ধরে দাড় করাইতেন এবং ইতিহাসের এসব তারিখ ধরতেন, যতক্ষন না আমি আটকাই ততক্ষন তিনি আমাকে পড়া ধরতে আমি আটকাইলে পিটাইতেন, আর যেদিন আটকাইতাম না সেদিন পাশের জনের কথা বলার অপরাধে আমি মার খাইতাম। আমার প্রতি তার এই আক্রশ ধরতে পারিনি অনেকদিন।

এক্সময় বুঝলাম আমার সব বন্ধু তার কাছে প্রাইভেট পড়ে আমি পড়িনা এটাই তার ক্ষোভ!!! সেলুকাস, শিক্ষক নাকি পিতার মত!!! ক্লাশ ফাইভে এক শিক্ষকের কাছে ইংরাজি পরতে গিয়েছিলাম, তিন মাস পড়ার পর পরীক্ষার আগে তিনি ব্যাচ এর সবাইকে পরীক্ষার মুল প্রশ্ন দিয়ে দিলেন। আমি সেদিন আবারো হতভম্ব হয়ে গেছিলাম!! অথচ তিনি আমাকে শিখিয়েছিলেন "অনেস্টি ইজ দা বেস্ট পলিসি" সেলুকাস তুমি কই!!!!! ক্লাশ ফাইভে আমি বৃত্তি পাইনি, বৃত্তি পরীক্ষার খাতায় আমি জেমস এর গান লিখে আসছিলাম। রেজাল্ট এর দিন বাবা মা এর মন খারাপ দেখে আমি বলে দিলাম, যে আমি উত্তর না লিখে জেমস এর গান লিখে আসছি। মা সেদিন মেরেছিলেন আমাকে। কিন্তু মা নিজেকে একবারো জিজ্ঞেস করেননি কেনো ক্লাশের ফার্স্ট বয় বৃত্তি পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে গান লিখে আসছে।

একবার স্কুলের হেডস্যার কে গিয়ে বলেছিলাম স্যার আমাদের লাইব্রেরী টা বন্ধ থাকে ওটা খোলার ব্যাবস্থা করা যায়না? উনি আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন য্যান উনি কোন কুৎসিত কীট দেখছেন!! ক্লাশ এইটে নতুন এক হেডস্যার আসলেন, তিনি স্কুলের খ্যালার মাঠ কে বাগানে রুপান্তর করলেন, আর যে কোন ছাত্রের মাঠে নামা নিষেধ করে দিলেন। আমাদের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গ্যাল। আমরা গ্রিল দেয়া বারান্দার ভেতরে দাঁড়িয়ে মাঠের ফুল দেখি। সেই সময় খুব ইচ্ছা করেছিল স্যার কে যেয়ে বলতে- 'স্যার এটা আমাদের খ্যালার মাঠ , আপনার ফুলশয্যার খরচ বাঁচানোর জায়গা না' কিন্তু বলা হয়নি!! সেরকম সাহসি হউয়া যে আমাদের সেখান হয়নি!! টেন এ প্র্যাক্টিকাল ক্লাশ এ যেয়ে বসে থাকতাম টিচার নিজেই জানতেন না তিনি কি বলছেন না বলছেন। !! শুধু বই থেকে খাতা লিখে রাখলেই হত!! এরপর নটুরডেম কলেজ এ আসলাম।

সেখানে এক শিক্ষক ফিজিক্স মুখস্ত করে এসে বোরড এ লিখে দিতেন, আমরা সেটা মুখস্ত করতাম। এক ম্যাডাম বলেছিলেন "আমার কাছে আট জন ভিকি এর একটা ব্যাচ আছে, তুমি সাত জন নটরডেমিয়ান নিয়ে আস, তোমাকে ফ্রী পরাবো"!! সেলুকাস, কি বিচিত্র ম্যাডাম আর কি বিচিত্র ভিকি!!! যাহোক কলেজের গন্ডি পার করেছি প্রায় ৬ বছর আগেই। সার্টিফিকেটে এ প্লাস গোল্ডেন এ প্লাস আছে। কিন্তু বর্তমানে এই সার্টিফিকেট গুলার মুল্যমান নিয়ে সংশয় দ্যাখা দিয়েছে। বহু হিসেব করে দেখলাম এগুলর মুল্য এক টাকা পঁচাত্তর পয়সা।

যা শুধই অই কাগজটুকুর দাম। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা আমাদের যা শেখায় তা পুরোটাই ভ্রান্ত এবং কল্পনা প্রসুত, এবং আমাদের অনেক শিক্ষক ই বিদ্যাপীঠের ঝাড়ুদাড় হউয়ার যগ্যতা রাখেনা। পুস্তকের শিক্ষা এবং বাস্তবতার যে দুরত্ত তা কিভাবে তইরি হয়েছে আমি জানিনা। তবে প্রণয়নকারীরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পাঠ্যবই তইরি করলে এমন হউয়া সম্ভব। আমরা এমন এক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছি যা আমাদের খোঁড়া এবং অন্ধ করে দিয়েছে।

যে বাচ্চাগুলা এখন এই এক টাকা পঁচাত্তর পয়সা দামের কাগুজে স্বীকৃতিটার পিছনে ছুটছে তাদের জন্য মায়া হয়। তারা কি শিখবে আর কোথায় যাবে? শোনো বাছারা, বিশ্বাস কর তোমরা যা শিখছ সব ভুল শিখছ, তোমাদের যে মেধা তা মুল্যায়ন করা বা তাকে জাজ করার খমতা বা যগ্যতা এই দুরমুরখ শিক্ষক, শিক্ষাব্যাবস্থা, সিস্টেম ও একটি কাগুজে ঈশ্বরের নাই। তোমাদের শেখানো হবে - -সদা সত্য কথা বলিবে - অনেস্টি ইজ দা বেস্ট পলিসি - ঘুষ দেওয়া বা নেওয়া উভয় জঘন্য অপরাধ -সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি কিন্তু তারা তোমাকে এটা শেখাবেনা যে এস এস সি এর সারটিফিকেট তোলার দিন পিয়ন কে ৫০ টাকা ঘুস দিতে হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.