"আমার ঘরে কোন এক পাখি/ বসত করে যায়/ ধরতে গেলে দেয়না ধরা/ করি কি উপায়/
আঁখির কোনে পাখির বাসা/ নীড়ে থাকে এই মোর আশা/ পাখি ফিরে যেন চায়/ আশা ছিল মনে মনে/ বাঁধবো বাসা ঘরের কোনে/ আমার আশার মুখে ছাই/ আমায় ছেড়ে পাখি যেন/ কখনো না যায়"
অনেকদিন হি্মিকে নিয়ে কিছু লিখি না ! এই কথাটা আমাকে মনে করিয়ে দিলো হিমি নিজেই । সবাই হিমিকে দেখতে চায় । হিমির সাথে কথা বলতে চায় । কিন্তু হিমির সাথে এখন আমারই যোগাযোগ নাই । যোগাযোগ না হওয়াই ভালো ।
বেশী মাখামাখি ভালো না । হিমিকে ছাড়া বেশ ভালোই তো আছি । ইতালীর একজন সাংবাদিক এবং লেখক ছিলেন, নাম- ওরিয়ানা ফাল্লাচি । এই ওরিয়ানা'র সাথে আমি হিমির খুব মিল খুঁজে পাই । এই লেখিকার জন্ম ১৯২৯ সালে এবং সম্ভবত ২০০৬ সালে তি্নি মারা যান ।
সময় সুযোগ পেলে আপনারা ওরিয়ানার বই গুলো পড়বেন । অনেক ভালো লাগবে আপনাদের । "Sometimes you never know how/ Strong you really are;/ Until being Strong is the only/ Choice you have ... ♥"
হিমি একদিন বিকেলে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল- বাবু, মানূষ গাছ নয় । গাছের চেয়ে মানূষের যন্ত্রনা অনেক বেশী । তোমার পাশে থাকলেই দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ি ।
আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু এখন তুমি আমার পাশে না থাকলে আমার কোনো দুঃখ নেই । যদিও সারাক্ষন অবচেতন মনে তোমারি কথা কথা ভাবি । চোখ ভিজে উঠে । আমি তোমাকে চাই না, শুধু তোমার কাছ থেকে একটা বাচ্চা চাই । এই বাচ্চা নিয়ে আমি দূরে কোথাও চলে যাবো ।
নিজের শরীরের ভেতর আরেকটি জীবন লালন করার মধ্যে একধরনের গর্ব আছে, গর্ব আছে একজনের ভেতরে দুজনকে অনিভব করার মধ্যে । আর কোনো দিন-ই তুমি জানতে চাইবে না- তোমার প্রতি অন্যায় করলাম, না তোমার জন্য ভালো একটা কাজ করলাম ।
আমি একটি সিগারেট ধরাতে ধরাতে হিমিকে বলেছিলাম- আমি এখনও বুঝি না ভালোবাসা কি ? মাঝে মাঝে মনে হয় এটি একটি বড় ধরনের তামাশা- যা মানূষকে বিভ্রান্ত করে দেয় । আসলে আমরা আজকাল সব কিছুতেই ভালোবাসা মিশিুতে দিয়ে- শরীর এবং আত্মার সাথে একধনের প্রতারনা করি । এখন, আমার "ভালোবাসা" শব্দটা শুনলেই মেজাজ গরম হয়ে যায় ।
আমি তোমাকে বা তুমি আমাকে ভালোবাসা কিনা জানি না । জানতে চাই না, জানলেই ঝামেলা । ( এরপর সেদিন হিমি রাগ করে উঠে চলে যায় !)
বৈশাখের এক ঝড়-তুফানের মধ্যরাতে হিমি আমাকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে, বলল- তোমার আমার জীবন বড় অদ্ভুত । আমার সব কিছু নির্ভর করে তোমার উপর । তোমার অসুস্থতা মানে আমার অসুস্থতা কিন্তু আমি ইচ্ছা করলেই তোমাকে দেখতে পাই না ।
দুই পরিচিত মানূষ একই পথে যাচ্ছি- কিন্তু একজন আরেকজন থেকে কত দূরে ! বাবু, গতরাতে আমার ভালো ঘুম হয়নি, তলপেটে খুব ব্যথা হচ্ছিল । আমি ছোট করে বললাম, বেবি- আমার খুব ঘুম পাচ্ছে- আসো ঘুমাই, এই বলেই আমি মোবাইল বন্ধ করে দিয়ে সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ি । আর কী আশ্চর্য গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম ।
সকালে ঘুম থেকে হিমির একটি লম্বা ম্যাসেজ পাই-" অনেক মানুষ আছে যারা মনে করে, নারী-পুরুষের সবচেয়ে বড় পাপ হলো- বিছানায় যাওয়া । কুমারিত্ব রক্ষা করাই কি বড় ধর্ম, বাবু ? ভূতের তো বাচ্চা হয় না, মানূষেরই হয় ।
আমি তোমার কাছ থেকে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই চাই না । দরকার নেই আমার শাড়ি-গাড়ি-গয়না । তোমার বুকে দিবে না আশ্রয় ? তুমি আমার থেকে অনেক ভালো জানো যে এ পৃথিবীতে কেউই অপরিহার্য নয় । যদি হোমার, রবীন্দ্রনাথ, এডিসন অথবা যীশু না জন্মাতেন তবুও এই পৃথিবী ঠিক এভাবেই চলত । আমাকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করো ।
তোমার মাঝেই খুঁজে পেতে চাই- সুখ- স্বাধীনতা এবং ভালোবাসা । "
আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে হিমিকে ফোন করে বললাম একটা গল্প শোনো- " একটা ছোট বাচ্চা ছেলে ছিল । ভালোবাসতো ম্যাগনোলিয়া গাছ । বাগানের ডান পাশে ছিল একটা ম্যাগনোলিয়া গাছ । বাগানের দিক মুখ করা এক বাড়ির জানালা দিয়ে ছেলেটি সব সময় ঐ ম্যাগনোলিয়া গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকত ।
ছেলেটা ছিল খুবই ছোট্র, গাছ দেখবার জন্য তাকে সব সময় চেয়ারের উপর দাঁড়াতে হতো । ছেলেটির মা যখনই ছেলেটিকে এই অবস্থায় দেখতেন তখনই 'পড়ে যাবে' বলে চিৎকার করে উঠতেন । তবুও ছেলেটা প্রতিদিন গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকত ।
গাছটা ছিল বিশাল । বড় বড় ডালপালার সাথে বড় বড় ফুল ।
ছোট্র বাচ্চা ছেলেটা দেখত- দিনের পর দিন ফুলগুলো ফুটত ধীরে ধীরে । সাদা থেকে এক সময় গাছটা হলুদ হয়ে যেত । কখন এসে একজন সাদা থাকতে-থাকতেই একতা ফুল নেবে -এই অপেক্ষাতেই ছেলেটির সময় কাটত । গাছটির আশে পাশে আর কোনো বাড়ি ছিল না । বাগানের পাশে একটা দেয়াল ছিল- সেই দেয়ালে এক ধোপা-মেয়ে কাপড় শুকাতে আসত ।
একদিন ঐ ধোপা মেয়ে ম্যাগনোলিয়া গাছের নিচে গিয়ে দাড়ালো । ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছিল- তার ফুল নেবারা ইচ্ছা । অনেকক্ষন মেয়েটি গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকল । অনেকক্ষন পর সেখানে একটি ছেলে আসলো । দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরল ।
তারপর চুমু খেলো ঠোঁটে অনেকক্ষন ধরে । তারপর ওরা শুয়ে পড়ল গাছটার নিচে । অনেকক্ষন শুয়ে থাকল । তারা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিল । খুব অবাক হলো সেই ছোট্র ছেলেটি ।
ছেলেটি বুঝতে পারল না তারা ফুল তোলা বাদ দিয়ে গাছের নিচে জড়াজড়ি করে ঘুমিয়ে পড়ল কেন ! বাচ্চা ছেলেটি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে থাকল ওরা কখন ওঠে তা দেখার জন্য । এর মধ্যেই সেখানে আরেক লোক এলো । ভীষণ রাগান্বিত । কিছুই বলব না সে । ঝাপিয়ে পড়ল ছেলেটার উপর ।
ছেলেটাকে খুব মারল । তারপর মেয়েটিকে খুব মেরে, খুব হালকা কিছুর মতন রাগান্বিত লোকটা মেয়েটিকে মাথার উপর উঠিয়ে ছুড়ে মারল ম্যাগনোলিয়া গাছের উপর । মেয়েটা গাছের উপর গিয়ে পড়ল । হাতে এসে পড়ল একটা ফুল । মনে হলো যেন- একটা ফুল ছিঁড়ে নিল ।
হাতে ফুল নিয়ে ওখানেই পড়ে থাকল চুপচাপ । ছোট্র বাচ্চা ছেলেটা ভয় পেয়ে ওর মাকে ডাকল । মা এসে বুঝালেন- গাছের উপর পড়ে থাকা মেয়েটী ইতিমধ্যেই মরে গেছে । এটি বোঝার পর থেকে ছোট্র ছেলেটির একটি গভীর বিশ্বাস জন্মালো যে, কেউ ফুল ছিঁড়লেই তাকে মরতে হয় । ( সেদিন গল্পটা শেষ করতে পারিনি, মোবাইলের চার্জ চলে গিয়েছিল ।
)
তোমার দুহাত মেলে দেখিনি কখনো
এখানে যে ফুটে আছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গোলাপ,
তোমার দুহাত মেলে দেখিনি কখনো
এখানে যে লেখা আছে হৃদয়ের গঢ় পঙক্তিগুলি।
ফুল ভালোবাসি বলে অহঙ্কাল করেছি বৃথাই
শিল্প ভালোবাসি বলে অনর্থক বড়োই করেছি,
মূর্খ আমি বুঝি নাই তোমার দুখানি হাত "
( এই লেখাটা ওরিয়ানা ফাল্লাচি'র "হাত বাড়িয়ে দাও" গল্পের ছায়া অবলম্বনে । ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।