অকর্মা, ভীতু, কাপুরুষ ১৭
আজ সকালে বাবু নিপার কাছ থেকে নিলুর দ্বিতীয় চিঠি পেয়েছে। নিপা বাবুর অবস্থা দেখে কেঁদে ফেলে। তার চোখ দুটি ভেতরে ঢুকে গেছে। শরীর প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। বাবু নিপার হাত থেকে চিঠি নেবার সময় দুঃখ করে বলেছিল
আমাকে দিয়ে প্রেম ট্রেম হবে না, আমি বোধহয় শ্রীঘ্রই মরে যাব।
ছি বাবু কি বলছিস তুই এসব ? তোর মত সাহসী ছেলে যদি এমন ভেঙ্গে পড়ে তাহলে চলে ?
বাবু নিলুর চিঠিটা পড়ে অনেকটা সাহস ফিরে পেল, সে লিখেছে,
আমার পাগল,
ভারবাসা নিও। তোমার চিঠি পেয়ে আমি কি যে অবাক হয়েছি তা বলার নয়। চিঠি এত সুন্দর হয় জানা ছিল না। তুমি আমাকে ঘন ঘন চিঠি দিবে। সপ্তাহে দুটি চিঠি না পেলে আমি ভিষন রাগ করব।
আমি রক্ত দিয়ে চিঠি লিখেছিলাম বলে তুমি রাগ করেছিলে, আমি শুধু রক্ত দিয়ে লিখে তোমর প্রতি আমার ভালবাসার গভীরতা প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। তুমি যখন রাগ করছ তখন আমি ক্ষমা প্রার্থী। রক্ত কেন আমি তোমর জন্য জীবনও দিতে পারি। বাবু তোমাকে ছাড়া আমি কিছুতেই বাচতে পারব না। তুমি কখনও আমাকে কষ্ট দিও না।
সবার কাছ থেকে কষ্ট পেলে তা সহ্য করার ক্ষমতা আমার আছে। কিন্তু তুমি কোন দিন কষ্ট দিলে তা সহ্য করার ক্ষমতা যে আমার থাকবে না। শীগ্রই উত্তর দিবে। তোমর মিষ্টি চিঠি পড়ে আমি আমার হৃদয় জুড়িয়ে নিতে চাই। আমি তোমাকে ভীষন ভালবাসি।
ভালবাসা দিয়েই শেষ করছি।
পূনশ্চত- তোমার প্লান আমার ভীষন পছন্দ হয়েছে। শুধু পছন্দ বললে ছোট করা হবে, এই প্লানের মধ্য দিয়ে তুমি আমার হৃদয়ে তোমার আসন আরো উঁচু তে করে নিলে।
তোমর নীল
বাবু চিন্তা করছিল নিলুর কথা, চিঠির কথা বারবার মনে পড়ছিল আর হাসছিল। ধ্যান ভেঙ্গে গেলে তার কাশিতে।
নতুন করে আবার মনে পড়ে গেল সে অসুস্থ্য। মনে হল সে বুঝি আর বাচবে না। কথাটি মনে পড়তেই বুকটা কেমন যেন করে উঠল।
ডাক্তার আজহার চৌধুরীর ওষুধ দশদিন খাবার পরও বাবুর কোনও প্রকার উন্নতি দেখা যাচেছ না। করিম সাহেবও ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেছেন।
আড়ালে তিনিও কাঁদছেন । বিকেলে ডাক্তার আজহার বলেছেন, আমার দ্বারা কিছু হবেনা, ওকে বিভাগীয় শহরে নিয়ে যান। আরো কিছু টেষ্ট করাতে হবে যা এখানে সম্ভব না,ভাল করে চেষ্টা করান গিয়ে, এখানে কিছু হবে না।
ডাক্তার সাহেবের একখা শুনার পর করিম সাহেব আরো ভেঙে পড়েছেন। তিনি ঠিক করেছেন আগামী পরশু বাবুকে নিয়ে রাজশাহী যাবেন।
পরদিন সকালে নিপা, রুপা সহ বাবুর সকল বন্ধুরা এল। তার সবাই বাবুর জন্য বিভিন্ন রকমের ফল নিয়ে এসেছে।
বাবু তার বন্ধুদের প্রচন্ড ভালবাসে। তাদের দেখে বাবু নিজেকে সামাল দিতে পারলনা । প্রচন্ড কান্নায় ভেঙে পড়ল।
তার আদর্শ , দক্ষতা, শিশু সূলভ আচরন সব মিলে বন্ধুরা এক কথায় তাকে নেতা মেনে নিয়েছিল। নেতার এ দূরাবস্থা দেখে তারা কেউ চুপ থাকতে পারল না। বিশেষ করে নিপা ও রুপা। রুপা কাল রাতে নানা বাড়ি থেকে ফিরেছে। প্রায় দেড় মাস পর বাবুকে দেখে সে প্রখমেই চমকে উছেছিল।
বাবুও তার বন্ধুদের কান্নার শব্দ শুনে বাবুর বাবা মা স্থির থাকতে পারলেন না। ছুটে আসলেন বাবুর ঘরে। দেখলেন সবাই মিলে বাবুকে জড়িয়ে ধরে ক্রমাগত কেঁদে যাচ্ছে। এ মর্মান্তিক দৃশ্য তারা সহ্য করতে পারলেন না। ছুটে বেড়িয়ে আসলেন ঘর থেকে ।
তাদের এক মাত্র ছেলেকে আর বোধ হয় বাঁচানো যাবে না।
করিম সাহেব অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করে স্ত্রীকে বললেন রাহেলা ওদের থামাওগে।
আর কিছু খেতে দাও। তিনি করে বাবুর ঘরে গিয়ে সবাইকে সান্তনা দেবার চেষ্ঠা করলেন। কিন্তু যতই কথা বলার চেষ্টা করছেন কথা যেন জড়িয়ে যাচ্ছে।
মনে হচ্ছে কেউ যেন তার কন্ঠ নালী চেপে ধরছে। সবাইকে বসতে বলে তিনি ছুটে ঘর থেকে বের হলেন।
তোরা সব, আমি একটা ছোট্ট কাজ সারি।
কাগজ ও কলম নিয়ে বাবুকে বসতে দেখেই সবাই বুঝলো সে কি করতে যাচ্ছে। তার শরীর অত্যন্ত দূর্বল হয়ে পড়ায় হাত সমানে কেঁপে যাচ্ছে।
লিখতে গিয়ে কলমটা ধরবার শক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছে।
হঠাৎ বাবু প্রচন্ড চিৎকার দিয়ে উঠে- ‘আল্লাহ, আমাকে এতটা দূর্বল করো না যেন নীলুকে লিখবার শক্তি হারিয়ে না ফেলি। ’
বাবুর এমন স্পর্শকাতর কথা বন্ধুদের বুকে সেল হয়ে বিঁধে। অনেক কষ্টে বাবু টেনে টেনে লিখা শুরু করে।
আমার নীল,
অনেক অনেক ভালবাসা নিও।
ভাল আছো জানি। কিভাবে জানলাম জান ? আমার ভালোবাসা যে সবসময় তোমার সাথে আছে। তাই তুমি ইচ্ছে করলেও খারাপ থাকতে পারবেনা। যদি কখনও কোন কারনে মন খারাপ হয় চোখ বন্ধ করবে দেখবে আমি তোমার পাশেই আছি, আমি পরম মমতায় তোমার সব কষ্ট নিয়ে নেব আমার মাঝে। আর একই কায়দায় তুমিও সবসময় আমার সাথে আছো তাই আমিও ইচ্ছে করলেই খারাপ থাকতে পারিনা।
তোমার চিঠির অপেক্ষা রইলাম।
তোমার পাগল
চিঠিটা সুন্দর করে ভাঁজ করে বাবু নিপার হাতে তুলে দিয়ে বলল, পারলে পোঁছে দিস। আর আমার জন্য তোরা সবাই দোয়া করিস যেন মরে না যায়। নিজের জন্য না হলেও নীলুর জন্য যে আমাকে বাঁচতেই হবে।
১৮
নীলু সব পেছনের বেনচে বসে বাবুর চিঠি পড়ছে।
এ নিয়ে পাঁচ বার হল । যতই পড়ছে ততই অবাক হচ্ছে। নীলুদের এখন ইংরেজী ক্লাস চলছে। ক্লাস নিচ্ছেন স্কুলের সব চেয়ে রাগী শিক্ষকদেও মধ্যে একজন।
স্যার যখন সেক্সপিয়র নিয়ে ব্যাস্ত নীলু তখন অন্য ভূবনে।
অতি সাবধানতা সত্বেও নীলু বিচক্ষন শিক্ষক নজরুল ইসলাম সাহেবের চোখ এড়াতে পারল না। স্যার পড়া থামিয়ে কিছুক্ষন নীলুর দিকে তাকিয়ে থাকলেন। ক্লাসের সবার চোখ স্যারের সাথে সাথে পেছনে চলে গেছে। নিপা , রুপা বসে আছে সামনের বেনচে। আর সবার দেখা দেখি পেছনে ফিরে তাদেও চোখ ছানাবড়া ।
রুপা আস্তে করে বলল,
এই সেরেছে ।
শুধু সারেনি একেবারে কম্প সাবাড় , ম্লান হেসে নিপা উত্তর দিল।
নজরুল ইসলাম সাহেব এগিয়ে গেলেন নীলুর দিকে ।
Stand up . স্যারের এই কর্কশ কন্ঠ নীলু শুনতে পেলনা। নজরুল ইসলাম সাহেব প্রচন্ড জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলেন ,
এই মেয়ে তুমি কথা শুনতে পাচ্ছ না ?
নীলু চমকে লাফ দিয়ে উঠে।
মনে মনে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় সে আবার নিজ মনে সান্তনা দেয়, কিছু হবেনা।
কি করছিলে ?
পড়ছিলাম স্যার ।
কি পড়ছিলে ?
চিঠি।
চিঠিত বুঝতে পারছি কিন্তু কার চিঠি ?
নীলু মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে।
কি হল জবাব দিচ্ছনা কেন ?
এটা আমার ব্যক্তিগত চিঠি স্যার।
কি ক্লাস ফাঁকি দিয়ে চিঠি পড়ছ আবার বড় বড় কথা ?
স্যার আপনি ইচ্ছা করলে ক্লাস ফাঁকি দেবার জন্য আমাকে শাস্তি দিতে পারেন।
নজরুল ইসলামের চোখ দুটি রাগে জ্বল জ্বল করে উঠল। প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বললেন , বলত এখন আমি কি পড়াচ্ছিলাম ,
নীলু মনে মনে এই ভয়টি করছিল। ব্লাক বোর্ডের দিকে তাকাতেই তার চোখ দুটি উজ্জল হয়ে উঠল। সে দেখল রুপা দ্রুত লিখে ফেলেছে সেক্সপিয়র সুতুরাং তার বুঝতে অসুবিধে হলনা আজকের আলোচনার বিষয়।
নীলু ছাত্রী হিসেবে খুব ভাল এছাড়া সেক্সপিয়র চ্যাপটারটি তার ভাল মতই পড়া আছে। সুতুরাং স্যার এবার সেখান থেকে যে প্রশ্নই করুননা কেন তার উত্তর সে দিতে পারবে। ও দিকে রুপাও লেখাটি ততক্ষনে মুছে ফেলেছে। এমন অসাধারন একটা ঘটনা সাধারন ছাত্রীদের পক্ষে হজম করা অসম্ভব হয়ে উঠল , তারা হাসি চেপে রাখতে পারলনা। নজরুল ইসলাম সাহেব সামনের দিকে ফিরে চশমাটিকে রাজকীয় ভাবে উপরে উঠালেন।
সময় নিয়ে এক এক করে সবার দিকে তাকালেন কিন্তু হাসির কারন উদ্ধার করতে পারলেননা। বুঝতে পারলেন পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে।
ধীরে ধীরে তিনি নিজের জায়গায় গিয়ে বসলেন। বসার ভাবটি এমন যেন নবাব সিরাজউদ্েদালা বাংলা বিহার উড়িষ্যার মসনদে আরোহন করলেন।
এই দাঁড়াও , হয়েছেটা কি ? সামনে বসা রুপাকে প্রশ্ন করলেন তিনি।
কিছু হয়নি স্যার।
তবে হাসছ কেন ?
হাসছিনাত স্যার।
কি বেয়াদব মেয়েরে বাবা ! শিক্ষকের সাখে চালাকি?
ক্লাসের সব চেয়ে ঠোঁট কাটা মেয়ে জরিনা যে সারা ক্লাসে মোটা জরি হিসেবে পরিচিত। জরি প্রথম থেকেই ঘটনাগুলি খুব আগ্রহের সাথে উপভোগ করছিল , এ পর্যায়ে এসে সে আর ঠিক থাকতে পারলনা। ফট করে হেড়ে গলায় বলে বসল, শিক্ষকের সাথে প্রেম করতে পারলে চালাকির কি দেখলেন , স্যার ?
Who . কে বলল ?
নজরুল সাহেব উত্তেজিত হয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন।
মোটা শরীরটা হেলে দুলে পেছনে গেলেন। পেছন বেনচে বসা নীলুকে জিজ্ঞাসা করলেন , তুমি বলেছ কথাটি ?
না স্যার।
যা বোঝা যাচ্ছে তুমিই পালের গোদা, সামনের বেনচে গিয়ে বস।
জ্বী স্যার। নীলু সামনেই বসে ছিল ।
শুধু বাবুর চিঠিটি পড়বার জন্য গিয়েছিল। শিক্ষকের নজর এড়াতে সাথে নিয়েছিল ইংরেজী বইখানা। বই নিয়ে সে তার জায়গায় ফিরে এল। নজরুল সাহেব এগিয়ে এসে নীলুর পাশে দাঁলেন, দাড়াও।
নীলু উঠে দাড়াল।
সেক্সপিয়রের একটা জনপ্রীয় গ্রন্থের নাম বল ?
স্যার রোমিও এন্ড জুলিয়েট।
তাদের সম্পর্ক কি ছিল?
তারা দুজন প্রেমিক প্রেমিকা ছিলেন। নীলুর এমন জবাবে ক্লাসে আবারও হাসির মেলা বসে যায়।
নজরুল সাহেব চিৎকার করে উঠেন , এতে হাসির কি আছে? জাননা তোমরা, ইতিহাস পড়নি, লাইলী - মজনু ,রোমিও জুলিয়েট , শিরি- ফরহাদ, রাধা - কৃষ্ন এদের নাম শোননি ? প্রেম করেছেন এরা। প্রেম তখন ছিল পবিত্র, মহৎ কিন্তু এখনকার কিছু প্রেমিক নামের ভন্ডের জন্য প্রেম আজ আমাদের কাছে কলংকময়।
সারা ক্লাসে পিন পতন নিরবতা শুধু নীলু মনে মনে বলল, স্যার দোয়া করবেন তাঁদের মত পবিত্রতার সাথে প্রেমকে যেন ধরে রাখতে পারি।
১৯
বিকেল পাঁচটা বেজে কিছুক্ষন। করিম সাহেব ছেলের রক্তের রিপোর্ট হাতে দি লেটেষ্ট ডায়াগষ্টিক সেন্টার থেকে বের হলেন। সকালেই তিনি বাবু কে নিয়ে রাজশাহী এসেছেন । রাজশাহী পৌঁছিয়ে প্রথমেই ডাক্তার এমদাদের সাথে দেখা করেছেন।
আজ কালকার ডাক্তাররা রোগীকে ভাল মত না দেখেই ঔষুধ লিখে দিয়ে টাকা গুনে নেন অথবা বিনা প্রয়োজনে চুক্তিভিত্তিক কোন ডায়াগষ্টিক সেন্টারে এক গাদা পরীক্ষা করতে পাঠিয়ে সেই ডায়াগষ্টিক সেন্টার থেকে কমিশন আদায় করেন। রোগী সেবার নামে এরা নাকি বৌ সেবার জন্যই টাকা কামান। কিন্তু ডাক্তার এমদাদ সাহেব ঐ সব কলংকময় ডাক্তারের চেয়ে সম্পুর্ন আলাদা। তিনি বাবুকে অনেক্ষন সময় নিয়ে দেখেছেন। এরপর ব্লাড টেষ্টের জন্য পাঠিয়েছেন কোন এক জায়গায়।
ব্লাড টেষ্ট করতে দিয়ে করিম সাহেব বাবুকে নিয়ে তার এক দু:সম্পর্কের বোনের বাসায় উঠেছেন।
পাঁচটায় রির্পোট দেবার কথা। করিম সাহেব পাঁচটা বাজার বেশ কিছুক্ষন আগেই বাসা থেকে বের হয়ে পড়লেন। রির্পোট নেবার সময় প্যাথলজি ডাক্তারের বিষন্য মুখ দেখে তিনি অত্যান্ত ঘাবড়ে গেলেন , ভাই খারাপ কিছু কি দেখতে পাচ্ছেন?
কিভাবে বলব ভাই, ডাক্তারকে দেখানগে। বেশ রাগের সাথে জবাব দিলেন তিনি।
তার এরুপ জবাবে করিম সাহেবের মনটা খারাপ হয়ে গেল, না জানি খারাপ কিছু নয়ত ?
অন্যমনষ্ক হয়ে তিনি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থেকে বের হয়ে এলোমেল ভাবে রাস্তা রাস্তা ঘোরা ঘুরি করলেন। ডাক্তার এমদাদ রাত আটটায় সময় দিয়েছেন। এখনো বেশ কিছুক্ষন সময় হাতে আছে। সময় কাটাবার জন্য তিনি কেদ্রেীয় উদ্যানে ঢুকে পড়লেন। সেখানে গিয়ে ছেলের জন্য মনটা আরো খারাপ হল, এখানে আসতে পেলে তার মনটা বুঝি ভাল হত।
বাদাম অয়ালার কাছ থেকে তিনি দুই জায়গায় বাদাম কিনলেন। এশটি ঠোংগা বাবুর জন্য পকেটে রেখে অন্যটি তিনি নিজে খুললেন। কিছুক্ষন পর আশ্চর্য ভাবে লক্ষ করলেন তিনি বাদাম ভাংছেন মুখে দিয়ে চিবুচ্ছেন কিনতু গিলতে পারছেননা, মুখে একগাদা বাদাম নিয়ে বসে আছেন। মুখ থেকে ও ঠোংগার সব বাদাম তিনি ফেলে দিলেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানেই তিনি বসে থাকলেন।
এরপর একটি মশজিদে মাগরিবের নামায পড়ে সাড়ে সাতটায় ডাক্তরের চেম্বারে হাজির হলেন। বাম দিকে একটি চেয়ারে বসে পড়লেন। সময় যেন কাটতে চায়না। বার বার ঘড়ি দেখতে লাগলেন। একসময় নিজ মনে ঘড়ির উপর রেগে গেলেন, না জানি এ যন্ত্রটি আবিষ্কার না হলেই বুঝি ভাল হত ! অপেক্ষাকে পরাজিত করে অবশেষে তার ডাক এল।
উদ্বগ্ন মনে তিনি ডাক্তারের ঠিক সামনের চেয়ারটিতে গিয়ে বসলেন।
হাঁ, আপনার যেন কি সমস্যা ?
জ্বী আমার না, ছেলের।
ও মনে পড়েছে, রিপোর্টগুলি দেখি।
করিম সাহেব রিপোর্ট গুলি এগিয়ে দিলেন। ডাক্তার সাহেব অনেক্ষন ধরে কাগজটির দিকে চেয়ে থাকলেন।
এক সময় তার কপালে ভাঁজ পড়তে দেখে করিম সাহেব আর বসে থাকতে পারলেননা, কি হয়েছে ?
ডাক্তার এমদাদ রিপোর্ট গুলি টেবিলের উপর নামিয়ে রাখলেন। বসুন।
করিম সাহেব চতুর লোক, তার বুঝে ফেলতে অসুবিধা হয়না খারাপ কিছু একট হয়েছে। তিনি ডাক্তার সাহেবের হাত চেপে ধরলেন, ডাক্তার সাহেব বাবু আমার এক মাত্র ছেলে তার খারাপ কিছু হলে আমি শেষ হয়ে যাব।
শান্ত হন।
বাঁচা মরা সব আল্লাহর হাতে।
এমদাদ সাহেব করিম সাহেবের পেছনে এসে তার ঘাড়ে হাত রেখে বললেন ,দেখুন ভাগ্যে যা থাকবে তাত ঘটবে, এই নিয়ম।
কিছুক্ষন থেমে আবারো শুরু করলেন, আপনার ছেলের রক্তে ক্যানসারের ভাইরাস পাওয়া গেছে।
জ্বী.. ডাক্তার .. ..? ! করিম সাহেব চেয়ার থেকে পড়ে যান।
ডাক্তার সাহেব নাড়ি পরীক্ষা করে দেখলেন তিনি জ্ঞান হারিয়েছেন।
২০
দুদিন আগে করিম সাহেব বাবু কে নিয়ে ফিরেছেন। বাবু বোকা ছিল না কোনদিনই। যদিও তাকে তার অসুখের কথা জানান হয়নি তবুও সে ধরে ফেলেছে খারাপ একটা কিছু তার হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মাকে একবার বলে বসল, মা আমার কি হয়েছে, আমি কি মরে যাব মা? মা তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। কারিম সাহেব কয় একদিন ধরে অফিস যাচ্ছেন না,প্রায় সারাক্ষনই শুয়ে শুয়ে কাটাচ্ছেন।
এ কদিন বাবু ছাড়া অন্যকারো জন্য রান্নাও হয়নি। হঠাৎ আজ নীলুকে দেখার জন্য প্রচন্ড ইচ্ছে হচ্ছে, যদিও কিছুই করবার নেই কেননা স্কুল বন্ধ। শার্ট প্যান্ট পরে বাবু মার কাছে গিয়ে বলল, মা আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।
না বাবা বাইরে যেতে হবেনা।
ওকে যেতে দাও, পেছন থেকে বললেন করিম সাহেব।
ধন্যবাদ বাবা, বাবু এগুতেই করিম সাহেব ডেকে ৫০ টাকার একটি নোট বাড়িয়ে দিলেন, রিক্সায় যেও।
রিক্সায় উঠে বাবু কোথায় যাবে কিছুই বুঝতে পারল না। অনেকটা আনমনা হয়ে ভাবতে লাগল।
এই বাবু । পেছনে ফিরে দেখল ইকবাল রিক্সার পেছন পেছন দৌড়িয়ে আসছে।
কি ব্যাপার দোড়াচ্ছিস কেন? কোন জবাব না দিয়ে সে চলন্ত রিক্সায় লাফ দিয়ে উঠে বসল,
শালা খুব ভদ্র হয়ে গেছিস মনে হচ্ছে তা যাচ্ছিস কোথায়?
এমনি শহরটা শেষ বারের ঘুরে দেখছি।
হঠাৎ ইকবালের বাবুর অসুখের কথা মনে পড়ল। বুকের মধ্যটা কেমন যেন করে উঠল তার। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বলল, তুই শালা বেশী চিন্তা করিস। তা ডাক্তার কি বলল?
মনে হয় বাঁচব না।
পাগলের মত কি যা তা বকছিস?
হ্যাঁ রে, আমাকে কেও কিছু বলছেনা তবে সবাই কে দেখে তাই মনে হচ্ছে। ইকবালেরও খটকা লাগল, চাচা চাচি তো সহজে ভেঙ্গে পড়ার মানুষ নন। ইকবাল ও বাবু দুজনেই চুপ চাপ হঠাৎ বাবুর মনে পড়ল তার বাবার ডায়রি লেখার অভ্যেসের কথা।
দীর্ঘ দিন ধরে করিম সাহেব শত ঝামেলা থাকলেও ডায়রিতে সারা দিনের কর্মকান্ড না লিখে শুবেন না। রিক্সাঅয়ালা ভাই রিক্সা ঘোরান।
রিক্সাঅয়ালা কিছুটা অবাক হয়ে দেখে রিক্সা ঘুরাল। ইকবাল নাম। ইকবাল বাবুর কান্ড দেখে অবাক, শরীরের সাথে মাথাটিও কি গেছে নাকি?
না মাথা ঠিক আছে তুই নাম আমি বাড়ি যাব।
দরজা খুলে দিলেন বাবুর মা, কিরে শরীর খারাপ নয়ত ? এত জলদি ফিরলি যে ?
খুব ব্যস্ত হয়ে তিনি বাবুর কপালে হাত দিলেন।
না মা সে রকম কিছু না, বাবা কোথায়?
এইত বাইরে গেলেন।
যাক সুযোগটা ভালমতই পেয়েছি, বাবু মনে মনে খুশি হল। মাকে নিজের ঘরের কথা বলে সে বাবার ঘরে গিয়ে ঢুকল। দরজা থেকেই টেবিলের উপর সবুজ রঙের ডায়রিটা দেখতে পেল। ডায়রিটি খুলতে গিয়ে বাবুর শরীর কাঁপতে লাগল। একবার ভাবল পড়বে কিনা, কিন্তু কৌতুহলও মানছেনা।
শেষ পর্যন্ত ধীরে ধীরে কাঁপা হাতে পাতা উল্টাতে লাগল। ডায়রিটি রেখে পেছনে ফিরতে বাবু দেখল, দরজায় মা দাঁড়িয়ে। মা কে দেখেই সে হু হু কেও কেঁদে উঠল,
মা এই সুন্দও পৃথিবীটা কে আমি বড় ভালবাসি তারপরও এ পৃথিবী ছেড়ে যেতে যত না কষ্ট হবে তার চেয়ে অনেক বেশী কষ্ট হবে নীলুকে ছেড়ে যেতে।
এ কি বলছিস বাবু?
হ্যাঁ মা জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি দাড়িয়ে কিভাবে মিথ্যা বলব ? আমি তাকে খুব ভালবাসি মা।
মিসেস রাহেলা ভেবে রেখেছিলেন বাবু ও নীলু বড় হলে এ ব্যাপারে ইমতিয়াজ সাহেবের সাথে আলাপ করবেন।
ছেলের কথা শোনার মত অবস্থা আর তার রইল না , ছুটে ঘর থেকে বের হয়ে এলেন। বাবার ঘর থেকে বাবু নিজের ঘরে ঢুকে বিছানায় ঝাপিয়ে পড়ে বালিশে মুখ গুজে ডুগরে কেঁদে উঠল। অতীতের সোনালী সব ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠল। মাঝে মধ্যেই বন্ধুরা মিলে পিকনিকে যেত। সবাই মিলে সাইকেলে চড়ে চলে যেত বহু দুরে।
নীলুর কথা মনে হতেই সে আরো জোরে কেঁদে উঠল। কান্না জড়ান কন্ঠে ফিস ফিস কেও বলল,
নীলু, আমাকে ক্ষমা কোর, আমি তোমাকে ঠকিয়েছি। কেন যে এমন মায়ার বন্ধনে জড়াতে গিয়েছিলাম, নিজেই নিজের উপর ধিক্কার দিতে লাগল। দরজা খোলার শব্দে চেয়ে দেখল করিম সাহেব ঢুকছেন।
বাবা ।
বাবু তুমি কোন চিন্তা কোর না। আমি তোমাকে বিদেশে নিয়ে যাব, দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে। বাবার বুকে মাথা রেখে সে আবারো কেঁদে উঠল।
ইকবাল বাবুর সেই অবস্থা দেখে চুপ করে থাকতে পারেনি। বাবু তাকে নামিয়ে দেয়ার পর সে সেখান থেকে বাড়ি যেয়ে সাইকেল নিয়ে অন্য সব বন্ধুদের ব্যাপারটি জানায় এবং পরদিন সকাল নয়টায় বাবুদের বাসায় আসতে বলে।
কথামত সবাই একসাথে বাবুর ঘরে ঢুকে দেখল, সে শুয়ে আছে। এতদিন পর সবাইকে এক সাথে পেয়ে বাবু খুব খুশি হয়। সবার সাথে এক এক করে হাত মেলায়। বাবুর আচরনে সবাই অবাক। সবার রাগ গিয়ে পড়ে ইকবালের উপর।
কে বলেছে বাবু অসুস্থ ? এতো তাদেও পূর্বের বাবু।
তোরা কে কেমন আছিস ঝটপট বলে ফেল, একটা স্কেল এক এক করে সবার মুখের দিকে বাড়িয়ে ধরে।
ফাজলামি ছাড়, শরীর কেমন আছে বল? বলল কামাল।
কেনরে খারাপ কিছু দেখছিস নাকি?
নিপা বলল, ডাক্তার কি বলছে, কেসটা কি?
সাথে সাথে বাবুর মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেল, এক দোয়াত কালি কেও যেন তার মুখে ছুঁড়ে মেরেছে। সবাই আশ্চর্য হয়ে দেখল আরেক বাবুকে।
বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে বাবু একটু সহজ হবার চেষ্টা করল,
আমি জানি তোরা আমাকে প্রচন্ড ভালবাসিস। আমার দুঃক্ষে তোরাই বেশী দুঃখ পাশ এও আমি জানি তারপরও সত্য সব সময় সত্য, বাবুর গলাটা ধরে এল। বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে নিপার দিকে তাকিয়ে বলল,
আমার অসুখটা কি জানতে চায়ছিলি না? আমার ব্লাড ক্যানসার হয়েছে। নিপা চোখ বড় বড় করে বাবুর দিকে তাকাল,
মজা করছিস তুই।
মজা করছি না, তোরা কি রিপোর্ট দেখতে চাস?
সবাই বুঝল বাবু মজা করছে না।
ঘরে যেন বোমা মারা হয়েছে। চারদিকে সুনসান রিরবতা। বাবু টেবিলের উপর মাথা নিচু করে বসে আছে। কান্নার শব্দে সে মাথা তুলল। সবাই কাঁদছে।
কেও শব্দ করে কারো আবার শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। টেবিল থেকে নেমে বাবু বিছানায় বসে থাকা বন্ধুদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল,
কাঁদছিস কেন তোরা? আরে গাধা এটাই বাস্তব, তোরা দেখছিস না আমি বাস্তব কে মেনে নিয়েছি। তবে নীলুর কথা মনে এলেই শুধু কান্না আসে, হু হু করে বাবু কেঁদে ফেলল।
তার কান্না দেখে অন্যরাও ডুগরে কেঁদে উঠল। আজ তাদের কে শান্তনা দিতে কেও এলনা।
করিম সাহেব গেছেন ঢাকা, ভিসার ব্যাবস্থা করতে। রাহেলা বেগমের শরীর খারাপ, তিনি শুয়ে আছেন। বাবু আবারও সবাই কে থামাল,
আমার কাছে তোদের একটা অয়াদা করতে হবে। বল রাখবি কিনা ?
তুই আমাদের এত কিছু দিয়েছিস আর তোর একটা কথা রাখবনা, বল কি কথা ?
ধন্যবাদ কামাল, তোদের বিশ্বাসের কথায় ভাল লাগল। শোন, আমার অসুখের কথা তোরা নীলুকে আমি বেঁচে থাকতে বলবি না।
ও খুব কষ্ট পাবে। তার চেয়ে ভাল আমি ওকে অন্য ভাবে ম্যানেজ করব।
তোর কথা আমরা মেনে নিলাম।
ধন্যবাদ রুপা, তোদের উপর আমার এ বিশ্বাস ছিল। তোরা এখন আয়, আমি একটু একা থাকতে চাই।
নিপা ও রুপা তোরা কাল একটু আসিস। একে একে সবাই বাবুকে জড়িয়ে ধরল,
তুই কোন চিন্তা করিস না। আমরা মাঝে মধ্যেই আসব।
হ্যাঁরে মিতুল তোদের নিয়েইতো আমার শাহস।
ওরা যাবার পর বাবু দরজা লাগিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল।
পাশ ফেরবার সময় লক্ষ করল বালিস সম্পুর্ন ভিজে গেছে। ছাদের দিকে চেয়ে চেয়ে অনেক্ষন ভাবল, কি করে নীলু কে ফেরান যায়।
নীলু
আশা করি ভাল আছ। সত্য মিথ্যর বিভেদে বিদ্ধ আমি বেশ ক’দিন থেকেই ভাবছিলাম , কি করব ? শেষ পর্যন্ত সত্যরই জয় হল। আর সেই সত্য জানাতে আজ তোমাকে লিখতে বসেছি।
সব সত্য সব সময় সবার কাছে সুখকর হয়না। হয়ত এ সত্যটিও তোমার কাছে সুখকর হবেনা। তারপরও সত্য সত্যই। তোমাকে যে কথা টি জানার জন্য এত কথা লিখলাম সে কথাটি কিন্তু খুব ছোট্ট-আমি তোমাকে ভালবাসিনা। কারো সাথে বাজি ধরে অভিনয় করেছিলাম মাত্র।
আমাকে ভুলে যাও।
বাবু চিঠিটি শেষ বারের মত পড়ে একটা সাদা খামে ঢুকাল। কান্নায় তার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়ছে, নীলু পারলে ক্ষমা কোর। সত্যিকারের ভালবাসা আমাদের মধ্যে যদি হয়ে থাকে কোনদিন তবে আমাদের মিলন একদিন হবেই আর তা মৃত্যুর অগেই হোক অথবা পরে।
বাবু দরজাটা খুলতো,বাথরুম থেকে রাহেলা বেগম চিৎকার করেন।
দরজা খুলে বাবু দেখে রকি দাড়িয়ে আছে।
একি বাবু! শরীরের একি অবস্থা তোমার, তুমি ঠিক আছতো?
জ্বী ভাইয়া, ঠিক আছি,ভেতরে আসুন।
রকি কিছুতেই সেই বাবু ও এই বাবুকে মেলাতে পারলেননা,
খালু আছেন বাসায়?
জ্বী, বসুন আমি আপনার কথা বলছি।
করিম সাহেব ও রাহেলা বেগম এক সাথে বসার ঘরে
ঢুকলেন। রকি দাড়িয়ে সালাম দিতে গিয়ে চমকে উঠল, একি খালাম্মা আপনাদের সবাইকে এমন বিদ্ধস্ত লাগছে কেন, কিছু হয়েছে?
হ্যাঁ বাবা একটা খারাপ খবর আছে, চেপে রাখা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন রাহেলা বেগম।
তা তোমাদের খবর কি, সবাই ভালতো?
জ্বী খালাম্মা তবে রেবাকে নিয়ে একটু ঝামেলা চলছে। আর ওর কথা জানাতেই মা এখানে পাঠাল।
ঝামেলা ! এইতো বিয়ে হল খুলে বলতো ?
ওর স্বামী যৌতুকের জন্য মাঝে মধ্যেই খুব টরচার করছে।
বিয়েতে এত কিছু দেবার পরও যৌতুক চায়,শাহস কত। চায় কি?
খালাম্মা ও গাড়ি চাচ্ছে।
গাড়ি! এটাতো সম্ভব না।
জ্বী খালু, বাবা ম্যাজিষ্ট্রেট জামায় পেয়ে কিযে খুশি হয়েছিলেন, এবং খুশি হয়েই তিনি অনেক কিছু দিয়েছেন। এখন এসব শুনে তিনি একদম ভেঙ্গে পড়েছেন। রেবাকে ওর বর আমাদের এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে আর বলেছে, সাত দিনের মধ্যে গাড়ি নিয়ে যেতে না পারলে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবে।
ছি, এরকম উচ্চ শিক্ষিত একজন লোক কিভাবে এমন পশু হতে পারে ! ভাবতেই করিম সাহেব শিহরে উঠলেন।
রকি আমরা খুব খুশি হয়েছি বিপদের সময় আপন ভেবে পরামর্শ নিতে এসেছ এজন্যে কিন্তু বাবা আমরাও যে মহা বিপদের মধ্যে আছি।
হ্যাঁ আপনাদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কি হয়েছে খালাম্মা?
রাহেলা বেগম হঠাৎ কেঁদে উঠলেন, বাবু খুব অসুস্থ ।
করিম সাহেবের মত লোককে চোখ মুছছেন দেখে রকি খুব অবাক হল। খারাপ কিছু হয়েছে খালাম্মা?
উচ্চ কন্ঠে কান্নার মধ্যে রকি কেবল শুনল, ব্লাড ক্যানসার !
২১
ভেতরে ঢুকবার সময় স্কুল গেটে নীলুর সাথে নিপা, রুপার দেখা হল। নীলু প্রথমে ওদের দেখল।
স্কুল ড্রেসের সাদা সালোয়ার কামিজে ভেজা চুলে নীলুকে আজ আরো চমৎকার লাগছে। নীলুকে দেখে নিপার হঠাৎ প্রচন্ড দুঃখ হল। সাদা পেশাকে আজ নীলুকে তার বিধবার মত লাগছে বলে মনে হল
কেমন আছিস নীলু?
ভাল, তোরা ?
আমরাও ভাল আছি।
বাবু কেমন আছেরে, কদিন থেকে কোন খবর নেয়?
নিপা ও রুপা একে অপরের দিকে তাকিয়ে রুপা আস্তে করে বলল, ভাল। নীলু আশ্চর্য হয়ে চাইল , তোরা কি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছিস ?
কই নাতো ? একটু হাসার চেষ্টা করল নিপা।
তোদের দেখে কিন্তু তাই মনে হচ্ছে।
ক্লাসে চল, দেরী হয়ে যাচ্ছে।
নীলু রুপার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, চল।
তৃতীয় বেনচে তিনজন পাশাপঅশি বসল।
জানিস নিপা, রুপা আজকের এই দিন আমার কাছে আজীবন স্মরনীয় হয়ে থাকবে কারন এই দিনে বাবুর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল।
এত পুরোনো কথাও তুই মনে রেখেছিস ? বলল রুপা।
কি বলিস তুই , বাবুর কথা আমি মনে রাখব না ? তোদের আমি আজ খাওয়াবো, কি খাবি বল ?
তোর প্রিয় দিনে তোর যা ইচ্ছা তাই খাওয়াবি।
হেঁয়ালী ছাড় তো রুপা, নিপা তুই বল।
রুপাতো ঠিক বলেছে।
ঠিক আছে স্কুল ছুটির পর তোরা আমার সাথে বাসায় যাবি।
ঠিক আছে ম্যাডাম।
এসেম্বলীর ঘন্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই তারা উঠে দাঁড়াল। এসেম্বলীর শেষে ক্লাসে ফিরে এল। শুরু হল ক্লাস। একটা, দুটা, তিনটি করে একটার পর একটা ক্লাস হতে লাগল।
ক্লাসের সবাই শিক্ষকের লেকচার শুনছে। কেবল মন নেই তিনজনের। তিনজন হচ্ছে নীলু, রুপা ও নিপা। তারা বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। কখন ছুটির ঘন্টা বাজবে ! একটা ক্লাস শেষ হতে যেন একযুগ লেগে যাচ্ছে।
অবশেষে সময়কেও তাদের কাছে হার মানতে হল।
তিনজন একসাথে নিলূদের বাড়ি আসল।
তোরা বস আমি আসছি। নীলু ফ্রিজ থেকে মিষ্টি, কেক তার প্রিয় খাবার পুডিং ইত্যাদি নিয়ে এল।
শুরু কর।
নিপা ও রুপা উঠিয়ে নিল।
তোরা দৈ খাবি ? ফ্রিজে আছে।
না রে এমনিতে ঠান্ডা লেগে আছে।
কিছুক্ষন পর তারা উঠে দাঁড়াল আসিরে নীলু।
ঠিক আছে আয়, আজ গল্প করতে একদম ভাললাগছেনা।
ও হ্যাঁ বাবু তোকে একটা চিঠি দিয়েছে, ব্যাগ থেকে চিঠিটি বের করে নিপা নিলুর দিকে এগিয়ে দিল।
বাবু চিঠি দিয়েছে আগে বলতো ।
ভুলে গিয়েছিলাম ভাই, মাফ করে দে, আসল কথাটি এড়িয়ে গেল সে।
নিলু তাদের গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলো।
নিপা রুপা এ বাড়িতে এলে তাদের পৌছে দেবার দায়িত্ব নিলুর।
সে কোন সময় তাদের গাড়ি ছাড়া যেতে দেয়নি। নিজের রুমে এসে নিলু দরজা বন্ধ করে শুয়ে খামটি বের করলো। সাদা খাম দেখেয় হোচট খেল সে, বাবু সব সময় তাকে নীল খামে চিঠি দেয়। প্রচন্ড অস্থিরতা নিয়ে নিলু চিঠি পড়া শুরু করল। কিছু অংশ পড়ার পরই চিঠিটি তার হাত খুলে পড়ল, মনে হল নিজের ঘরটি যেন অচেনা কোন জায়গা।
এত ঘুরছে কেন চারপাশ.......এর পর আর কিছু মনে নেয় তার।
চলবে_________________________________ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।