অকর্মা, ভীতু, কাপুরুষ ভূমিকাঃ- আমাদের গ্রাম অঞ্চলে একটা কথার প্রচলন আছে, ছেলের চাইতে ছেলের গু ভারি।
ভূমিকা লিখতে গিয়ে আমার নিজেকে তাই মনে হচ্ছে কারন ভূমিকা দিয়ে শুরু করবার মতো মানুষ আমি অন্ততো নই তারপরো দুটি কথা না বললেই না।
পাশাপাশি লিখাটা আমি শুরু করি তখন আমি দশম শ্রেনীর ছাত্র। লিখাটা এক তৃতীয়াংশ বাকী রেখেই রণ ভংগো দেয়। ছন্ন ছাড়া মন...... ১৯৯৬ সালে এইচ এস সি ১ম বর্ষে পড়বার সময় বন্ধু রানার অনুপ্রেরনায় লিখাটা শেষ করি।
অনেকের কাছে এটি একটি কাঁচা হাতের লিখা মনে হতে পারে, আমার নিজেরো কিছু কিছু জায়গায় তাই মনে হয় তবে ইচ্ছে করেই তা সংশোধনে হাত দিয়নি কারন দশম শ্রেনীর এক ছাত্রের চিন্তা ভাবনা বা স্বপ্নকে হত্যা করতে ইচ্ছে হয়নি।
বর্তমানে আমি আপনাদের সু-চিন্তিত মতামত আশা করছি কারন লিখাটার কাঁচা দিক গুলি মজবুত করে সামনে একুশে বই মেলায় লেখাটি প্রকাশের ইচ্ছে আছে___ফাউজুল কবির রনি
পাশাপাশি
১
এগারটা বিশ মিনিট। ইংরেজী ক্লাস। বই হাতে ক্লাসরুমে প্রবেশ করলেন স্যার। ছাত্ররা সবাই দাড়িয়ে তাঁকে সম্মান করল।
সকল ছাত্র আজ দারুন উদ্বিগ্ন। কারন, যিনি এইমাত্র ক্লাসে প্রবেশ করলেন, তিনি স্কুলে আজই জয়েন্ট করেছেন। এর আগের ক্লাসে নবম শ্রেণীতে এক ছেলেকে নাকি তিনি তক্তা বানিয়ে ফেলেছেন। এক কান দুই কান হতে হতে সমস্ত স্কুলে খবরটি প্রচার হয়ে গিয়েছে মুহুর্তে।
জনাব রইসুদ্দিন যেখানে যান, সেখানেই কিছু দিনের মধ্যে তার নাম হয়ে যায় রইসুদ্দিন স্যার থেকে রাগি স্যার ।
আর মাত্র কয়েক বছর চাকুরী আছে। তিনি যেখানেই যান যত দিনই থাকেন না কেন, ততদিন ছাত্রদের ঘুম হারাম করে ফেলেন, অন্তত তার বিষয় এর জন্য। এসব খবর ছাত্ররা জেনে ফেলেছে তাঁর জয়েন্ট করবার পূর্বেই।
এসব কিছু জেনে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত সকল ছাত্র প্রচন্ড সন্ত্রস্ত। তাও আবার নবম শ্রেণীর ঘটনা . . . সব মিলিয়ে তারা দারুন চিন্তিত।
চিন্তা নাই শুধু দশম শ্রেণীর ছাত্রদের। কারণ, বাবু . . . .। বাবু থাকতে তাদের চিন্তাইবা কি আছে ? মানুষকে প্রবাবিত করার আশ্চর্য ক্ষমতা বাবুর মধ্যে আছে। যার প্রমান, তাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক ব্যাতিত অন্যান্য প্রায় ২৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। প্রচন্ড হাসি খুশি ছেলে এই বাবু যাকে কেউ কোনদিন রাগ করতে দেখেনি।
সুদর্শন মেধাবী বুদ্ধিমান সৎ বলে স্কুলে একনামে পরিচিত সে। অবসরে সবাইকে গল্প কৌতুক শুনিয়ে সে কত মজা পায় তার কোন শেষ নেই। তাই বলে যে সে একজন ভাড় তাও না। একজন প্রচন্ড ব্যক্তিত্বসম্পন্ন তরুন হিসেবে পাশের গার্লস স্কুলেও সে পারচিত।
স্যার ঘরে কিছুক্ষন পায়চারী করলেন।
তারপর ছাত্রদের দিকে ফিরলেন ,বস ...
ছাত্ররা সবাই বসে পড়ল।
আমি মোঃ রইসুদ্দিন, ইংরেজী পড়াই। তাই বলে তোমরা মনে করোনা ইংরেজী ছাড়া আমি কিছুই বুঝিনা। আমি প্রয়োজনে বাংলা এমনকি অংকের ক্লাসও নেয়।
নিজের সম্পর্কে তিনি বেশ একটু বড়সড় ভাষন দিয়ে ফেললেন।
ছাত্ররা দোয়া করতে লাগলো তার ভাষন যেন আরো দীর্ঘায়িত হয়। তাহলে সময়ের অপচয় হবে। ঝাড়া দশ মিনিট পর হঠাৎ করে থামলেন তিনি,
এই দাড়াও ...
প্রথম বেঞ্চের সব ডানদিকে বসা এক ছাত্রকে দাঁড় করালেন। ছেলেটির মুখ থেকে রক্ত সরে গেল।
বলতো Sentence কাকে বলে ?
তিনি ছেলেটিকে মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে চিৎকার করে উঠলেন
কি হলো ?
পারবো না স্যার।
পারবো না বলতে লজ্জা হলো না ? দাড়িয়ে থাক হারামজাদা।
তুমি থেকে তুই। বাবু মনে মনে একটু ঘাবড়ে গেল। কপাল বুঝি আজ খারাপই আছে।
কে পারিস দাড়া ?
ভয়ে কেউ বলতে চাচ্ছেনা।
বাবু বসে ছিল প্রথম বেঞ্চের বাম দিকে। স্যার তাকে বললেন
দাড়া।
বাবু দাড়াতে স্যার বললেন, কান ধরে দাড়া।
কেন স্যার ... ... কেউ পারেনি, শুধু আমি কেন কান ধরে দাড়াবো ?
হারামজাদা আমার মুখের উপর কথা !
রাগে রইসুদ্দিন স্যার কাপতে লাগলেন। ক্লাসের সবাই ভাবলো আজ বাবুর বারোটা না বাজিয়ে স্যার ছাড়বেন না।
কিন্তু স্যার সেরকম কিছুই করলেন না। হয়ত বাবুর গভীর চোখ দুটোই তার রাগ অনেকটা কমিয়ে দিল। কিছুটা নরম হলেন তিনি।
নাম কি ?
স্যার সম্রাট।
ভালো নাম ?
একটাই না স্যার।
বসো, এমন সময় ঘন্টা পড়লো। তিনি বেড়িয়ে গেলেন। ছাত্ররা সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচলো। তারা মনে করলো নতুন স্যারকেও বাবু পটিয়ে ফেলেছে। কিন্তু কিছুক্ষন পর যখন হেড স্যার সম্রাটকে ডেকে পাঠালেন, তখন বাধলো ঝামেলা।
কেননা ক্লাসে সম্রাট নামে কোন ছাত্র নেই। সবাই বুঝলো বাবুকেই ডেকে পাঠানো হয়েছে। বাবুও বুঝলো ব্যাপারটি। তাই সে দপ্তরীর পিছু পিছু অফিসে গিয়ে হাজির হলো।
প্রধান শিক্ষক অত্যন্ত কড়া ধরণের লোক।
স্কুলের প্রতিটি ছাত্র তাকে জমের মতো ভয় করে। বিশাল এক সেক্রেটরীয়েট টেবিলের সামনে বসে থাকা প্রচন্ড মোটা, টেকো মাথাওয়ালা এই স্যারকে দেখেই বাবুর হাসি পেল, হেড স্যারের টেবিলটির ঠিক সামনের চেয়ারে সহকারী প্রধান শিক্ষক আতাহার আলী বসে আছেন, যিনি বাবুকে খুব পছন্দ করেন। তার পাশের চেয়ারটিতে রইসুদ্দিন স্যার।
বাবু প্রধান শিক্ষকের দিকে এগিয়ে গেল।
নাম কি ?
প্রধান শিক্ষক সাহেবের শরীরের সাথে গলার গলার স্বরটা একদম ম্যাচ করেনি।
কেমন জানি বাচ্চাদের মতো গলার চি চি শব্দ শুনেই হাসি পায়।
স্যার,‘বাবু’।
রইসুদ্দিন স্যার চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে দাড়িয়ে ছিলেন বাবুর পাশে। তিনি কান ধরে কষে বাবুর গালে একটি চড় বসিয়ে দিলেন।
মিথ্যে কথা আমার একদম সহ্য হয়না , আমার সাথে চালাকি একবার সম্রাট, একবার বাবু।
বাবু শুধু এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো। চড় খেয়েই উহ্ করে একটি শব্দ করে সে মাথা চেপে ধরে শুয়ে পড়লো। এবং এমন ভাব করতে লাগলো যেন খারাপ কিছু একটা হয়ে গেছে।
স্যারেরা বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক সাহেব খুব নার্ভাস ধরনের মানুষ তিনি খুব ভয় পেয়ে গেলেন।
এই মদন পানি আন্, ছিঃ ছিঃ কি করলেন রইস সাহেব ? এই কাদের এর বন্ধু-বান্ধব কে আছে গিয়ে ডেকে আন্।
আর এই নে দশ টাকা দুইটা মিষ্টি নিয়ে আয় ।
মিষ্টির কথা কানে যেতেই বাবু একটু ঠোঁট বাঁকা করে হাসি দিলো। এবং রইসুদ্দিন স্যারের চোখে তা এড়ালো না। তিনি বুঝে ফেললেন বাবুর অভিনয়। ডাকলেন,
মদন।
জ্বী স্যার।
ওর প্যান্টের হুক গুলি খুলে দেতো ভেতরে একটু বাতাস যাক ।
মদন হুকটি খুলে দিল। হুক খোলা হলে বললেন
জীপারটি একটু নামিয়ে দে পেটটাও একটু আলগা হোক । মদন যেই জীপরে হাত দিতে যাবে, ঠিক তখনই বাবু লাফ দিয়ে উঠে বসলো।
স্যার দেখলেন ব্যাটা কতো বড় ফাজিল। এতক্ষন জ্ঞান হারাবার অভিনয় করছিল।
বটে ... ..., মদন বাঁশ !
বাঁশ হলো তাঁর প্রিয় বারমিজ বেতের লাঠি, যা প্রত্যহ সরিষার তেল দিয়ে মালিশ করা হয়। মদন বাঁশ নিয়ে দৌড়ে এসে প্রধান শিক্ষকের হাতে দিলো। তিনি তা নিয়ে বাবুর দিকে এগিয়ে গেলেন।
শিক্ষরের সাথে ফাজলামু হচ্ছে।
বাবু বাচার জন্য শেষ একটা চান্স কাজে লাগাতে চেষ্টা করল, সে জানে অংকের উপর স্যারের দারুন আগ্রহ। তাকে অংক বিষয়ক কিছু প্রম্নশ্ন করলে তিনি খুব আগ্রহ নিয়ে শুনেন এবং উত্তর দেন কোন কারনে উত্তর সাথে সাথে না পারলেও যতক্ষনতা সমাধান করতে না পারেন ততোক্ষন তার সব বন্ধ। বাবু সেই সুযোগটি নিল। চটপট বললো,
আচ্ছা স্যার দুই আর দুই কখন পাঁচ হয় ?
মানে ?
মানে স্যার দুই আর দুই পাঁচ হয় কখন?
স্যার লাঠিটা নিচু করে বাবুর চোখের দিকে প্রায় মিনিট খানেক তাকিয়ে থাকলেন।
তারপর লাঠিটা টেবিলের উপর রেখে তার চেয়ারে বসে চিন্তা মগ্ন হলেন।
স্যার আমি না হয় উত্তরটা পরে এসে জেনে যাবো। সে স্যারের জবাবের কোন অপেক্ষা না করে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজার কাছে দেখলো কাদের মিষ্টি হাতে ঢুকছে। সে মিষ্টি দুটো তার হাত থেকে নিয়ে টপাটপ গিলে ফেললো।
রইসুদ্দিন স্যার ও আতাহার স্যার ফ্যাল ফ্যাল করে দরজার দিকে চেয়ে থাকলেন।
চলবে___________________________________________________________________________________________________________________ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।