ভালবাসি
আরো ছয়টি বেসরকারি ব্যাংক অনুমোদন পেয়েছে, যার সবগুলোর সঙ্গেই সরকারি দলের নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
রোববার গভর্নর আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, ঢাকার বাইরে অধিকাংশ শাখা স্থাপনের শর্ত দিয়ে নতুন ছয়টি বেসরকারি ব্যাংককে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক চাপে এই ব্যাংকগুলো অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে বলে আগেই জোরেশোরে কথা ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বলেন, নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছা।
তবে ব্যাংক অনুমোদনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ‘বিবেচনার’ বিষয়টি অস্বীকার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নতুন অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলো হচ্ছে- ইউনিয়ন ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ও মেঘনা ব্যাংক।
ইউনিয়ন ব্যাংকের সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমের খবর। তবে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রয়েছে শহিদুল আলমের। ব্যাংকটির উদ্যোক্তার তালিকায় রয়েছেন গোলাম মসি, যিনি জাতীয় পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
ঢাকা-১২ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপসের মধুমতি ব্যাংকে চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রয়েছে হুমায়ুন কবীরের।
ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আয়কর উপদেষ্টা এম মনিরুজ্জামান খন্দকার মিডল্যান্ড ব্যাংকের প্রস্তাবক।
সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন। উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা আব্দুল মান্নান চৌধুরী।
মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (রংপুর-৫) এইচ এন আশিকুর রহমান। আর পরিচালকের তালিকায় রয়েছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য (ঢাকা-৩) নসরুল হামিদ।
গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় শর্ত সাপেক্ষে প্রবাসে বসবাসরত উদ্যোক্তাদের তিনটি এনআরবি ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হয়।
ব্যাংক তিনটি হলো- এনআরবি লিমিটেড (উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী নিজাম চৌধুরী), এনআরবি কমার্স ব্যাংক (উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ফরাসত আলী) ও এনআরবি লিমিটেড (উদ্যোক্তা যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ইকবাল আহমেদ)।
অনুমোদিত ব্যাংকগুলোর দুটির নাম এক হওয়ায় দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরে নাম ঠিক করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
সেদিন বেসরকারি ব্যাংকের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও অনুমোদনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তের আগে বৈঠক মুলতবি হয়। ওই মুলতবি বৈঠকটিই রোববার হয়েছে।
নতুন ব্যাংক অনুমোদন রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়েছে কি না- প্রশ্ন করা হলে ডেপুটি গভর্নর সুর চৌধুরী বলেন, “যাদের ব্যাংক অনুমোদন পেয়েছে, তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আবেদনগুলো পুঙ্খনাপুঙ্খ যাচাই করেই ছয়টিকে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করেনি।
”
নতুন ব্যাংকগুলোকে কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডেপুটি গভর্নর। এগুলো হল- ছয় মাসের মধ্যে বাণিজ্য পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেওয়া, পরিশোধিত মূলধন হিসেবে ৪০০ কোটি টাকা কার্যক্রম শুরুর আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেওয়া দিতে হবে।
পরিশোধিত মূলধনের অর্থ সাদা হতে হবে এবং নতুন ব্যাংকের শাখাগুলোর অধিকাংশই ঢাকার বাইরে স্থাপন করতে হবে বলে সুর চৌধুরী জানান। ঢাকার বাইরে প্রধান কার্যালয় স্থাপন উৎসাহিত করা হবে বলে জানান তিনি।
নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতে যথাযথ প্রক্রিয়া ও শর্ত মেনে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে অফেরতযোগ্য ১০ লাখ টাকার জামানতসহ আবেদন করতে বলা হয় আগ্রহীদের।
আবেদন করার ক্ষেত্রে- ৪০০ কোটি টাকার মূলধন, একজন উদ্যোক্তার ১০ শতাংশ শেয়ারের অধিকারী হওয়া, গত ৫ বছরে খেলাপি থাকলে বা এ বিষয়ে মামলা চললে তার আবেদন বিবেচনায় না নেওয়া, পরিচালনা পর্ষদে সর্বাধিক ১৩ সদস্য রাখা, উদ্যোক্তার আয়কর বিবরণীতে প্রদর্শিত সম্পদ থেকে ব্যাংকের মূলধন সরবরাহ, উদ্যোক্তা বা পরিচালকের সততা ও যোগ্যতা যাচাইসহ বেশ কিছু শর্ত বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মোট ৩৭টি আবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা পড়ে, যার মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে ১৬টি আবেদন বিবেচনার জন্য রাখা হয়।
প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ঘুরে সেই তালিকা আরো যাছাই-বাছাইয়ের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়। সেখান থেকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।
সেই তালিকার ভিত্তিতেই নতুন ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
বর্তমানে দেশে কার্যরত ব্যাংকের সংখ্যা ৪৮টি, এর মধ্যে বেসরকারি ৩০টি। ৩০টির সঙ্গে এখন যোগ হলো ছয়টি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।