বেকার নতুন ১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দিতে যাচ্ছে সরকার। এক বছরের বেশি সময় ধরে ৯২টি আবেদন পর্যালোচনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ১০টি নাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। চলতি সপ্তাহে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে।
ঢাকায় দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
এর একটি হচ্ছে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি। অপরটি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাংসদ মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। ঢাকা মহানগরের মোট ২১টি আবেদন থেকে এ দুটি নির্বাচন করা হয়েছে।
সূত্রমতে, ঢাকা শহরে এ মুহূর্তে ৪৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তাই নতুন করে ঢাকা মহানগরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন একমত হয়েছে।
খুলনায় সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের নামে আবেদন করা নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি অনুমতি পেতে যাচ্ছে।
সিলেটের গোলাপগঞ্জে অনুমতি পেতে যাচ্ছে নর্থইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়। এর মূল উদ্যোক্তা ডা. আফজাল মিয়া। শরীয়তপুরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি পাচ্ছে জয়নুল হক সিকদারের নামে আবেদন করা জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
চুয়াডাঙ্গায় ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
এর মূল উদ্যোক্তা মুক্তিযোদ্ধা মো. সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার।
রাজশাহীতে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এর একটি হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল খালেকের স্ত্রী রাশেদা খালেকের নামে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা জড়িত আছেন।
অপরটি হচ্ছে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।
মূল উদ্যোক্তা হাফিজুর রহমান খান হলেও এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার ও পরোক্ষভাবে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শেখর।
শিক্ষানগর রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ১৪টি আবেদন জমা পড়লেও মাত্র দুটি নির্বাচিত করায় যোগ্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্র জানায়, স্থায়ী ক্যাম্পাস করে এবং সব শর্ত পূরণ করে অপেক্ষা করা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহীতে অনুমতি পায়নি। এর কারণ হিসেবে ওই সূত্রের দাবি হচ্ছে, শিক্ষানগরে একটিও বৈধ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় প্রভাবশালী একটি মহল একদিকে সব শর্ত পূরণ না করেও অনুমতি নেওয়ার চেষ্টা করেছে, অন্যদিকে অন্যদের অনুমতি ঠেকানোর চেষ্টা করে তারা সফল হয়েছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে একটি করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অনুমোদন সম্পর্কে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, চূড়ান্ত হওয়ার আগে তিনি এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে রাজি নন। কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করা হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, এটা চলমান প্রক্রিয়া। সংখ্যার প্রসঙ্গ এড়িয়ে তিনি বলেন, খুব শিগগির তালিকা প্রকাশ করা হবে।
শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, চূড়ান্ত হওয়ার আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না
এদেশে শিক্ষার যে বানিজ্যিকীকরন হয়েছে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় তার আরো প্রমান ঢালাওভাবে এ রকম বিশ্ববিদ্যালয় খোলার অনুমোদন দেওয়া। যে দেশে এখনো ৩৫% মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে, বেকারের সংখ্যা অগুনতি অথচ কর্মসংস্থানের কোন পরিকল্পনা নেই, সেখানে পাইকারী হারে বাসাবাড়ী, দোকানপাট ও ব্যস্ত সড়কের উপর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার অনুমোদন দেবার বিষয়টি কেবল শিক্ষার নামে ভয়াবহ বানিজ্য ও সেই সাথে বেকার তৈরীর কারখানা খোলার বিষয়টি খুবই তাতপর্যপুর্ন।
অথচ দেশে টেকনিক্যাল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এমন পর্যাপ্ত নেই যে উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরী করা যাবে। শিক্ষাক্ষেত্রে আসলে হচ্ছেটা কি?
প্রয়োজনের সম্ভাব্যতা যাচাই-বাচাই করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দিলে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। ইতিপূর্বের স্থাপিত ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মা্ত্র ১১ থেকে ১৫টি নিজস্ব ক্যাম্পাসের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানা যায়। তবে সেগুলোর মান ও আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে প্রশ্ন না তোলাই ভাল। অপর দিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদানুযায়ী আমাদের দেশে কি ধরণের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযোগীতা আছে তা সক্রিয় ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত।
আমাদের মত পৃথিবীর কোথাও ঢালাও ভাবে সকলকে তথাকথিত উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রবণতা আছে কিনা তাও ভেবে দেখা দরকার। বর্তমান বিশ্বে ভোকেশনার, কারিগরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুরুত্ত্ব সর্বজনবিদিত। আমাদেরকেও সেদিকে ধাবিত হওয়া উচিত। নাহলে জাতি যে তিমিরে আছে, সে তিমিরেই থেকে যাবে !
নিজেদের ব্যাংক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়......ভালোই তো। ক্ষমতায় না আসতে পারলেও চিন্তা নেই।
এখন মনে পড়ে যায় বিএনপি- জামা'ত জোট সরকারের দুই বছর পূর্ণ না হতেই (২০০২ এর নভেম্বর নাগাত) ২৪ মাসে ৩২ টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়েছিল। যার অধিকাংশই ঢাকায় এ না করে বাংলাদেশটাকে ভাগ করে একপাশ আওমীলীগ আর একপাশ বিএনপি বিশ্ববিদ্যালয় করা উৎচিত । ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।