আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আঁতেল শনাক্তকরণের সহজ ও দ্রুততম তরিকা

এখানে পেতে পারেন নতুন ফুটবল নিউজ আপডেট আর কিছু ফান পোস্টের সাথে সিরিয়াস উপন্যাস । আঁতেল একটি নামবাচক শব্দ যার ক্রিয়ারুপ হলো আঁতলামি। যে ব্যক্তি সারাদিন পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, যার ঘুম-খাওয়া-বিনোদন সবকিছু পরিচালিত হয় বইপুস্তকের চিন্তায় মগ্ন থেকে, এমনকি পরীক্ষা চলাকালীন সময়টাতে প্রকৃতির ডাকে সারা দিয়ে টাট্টিখানায় গমনের সময়েও যার হাতে লেকচার,নোট,বই ইত্যাদি দেখা যায় তাকে নিত্য বাংলায় ‘আঁতেল’ বলে। আঁতেলের চেহারায় সবসময় গুরুগম্ভীর একটি ভাব থাকে। দেখলে মনে হবে দুনিয়াদারী নিয়ে চিন্তা করতে করতে সে অতিষ্ঠ।

মাঝে মাঝে মনে হবে যে প্রধানমন্ত্রী,রাষ্ট্রপতির চেয়েও তার চিন্তা বেশী। আঁতেল EARLY TO BED & EARLY TO RISE মতবাদে প্রবলভাবে বিশ্বাসী। ঘুম থেকে ওঠেই সে বই নিয়ে পড়তে বসে। কারণ অন্যান্য সময়(বিকেল,সন্ধ্যা,রাত) রুমে বন্ধুদের আনাগোনা বেশী থাকায় পড়ালেখায় মনোনিবেশ করতে তার ভীষণ সমস্যা হয়। পড়াশোনার নির্বিঘ্ন পরিবেশের জন্য তার এই ‘আমি হবো সকাল বেলার পাখি, সবার আগে কুসুমবাগে উঠবো আমি ডাকি’ চরণদ্বয় অনুসরণ করা।

ক্লাস হচ্ছে একজন আঁতেলের আঁতলামি দেখার সর্বোকৃষ্ট স্থান। ক্লাসে তার জ্ঞানপিপাসু মন থেকে নিঃসৃত হতে থাকে একের পর এক প্রশ্ন। আর সেই প্রশ্নগুলো তীরের মতো ধেয়ে যায় প্রফেসর আর লেকচারারদের দিকে। কখনো কখনো তার প্রশ্নগুলো এমনি জটিল হয় যে, তার সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে শিক্ষকদের পর্যন্ত ঘাম ছুটে যায়। প্রায় সময়ই দেখা যায় ক্লাসের জন্য বরাদ্দকৃত সময় পার হওয়ার পরও আঁতেলদের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে উদগীরণ হওয়া প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে স্যাররা ১৫ মিনিট বেশী ক্লাস নিচ্ছেন, তবে সাধারণ ছাত্রদের মস্তিষ্কে অগ্নুৎপাত ঘটে তখনই যখন সেই প্রশ্নের উত্তর পেয়েও আঁতেল ক্ষান্ত হয় না।

উলটো আরো দু’একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে বসে। এরকম পরিস্থিতিতে অন্যান্য ছাত্রদের অবস্থা যে কি হয় তা একমাত্র ভুক্তভোগী ছাত্র ছাড়া কেউ বুঝবে না। গ্রুপ স্টাডির সময় আঁতেলের উপস্থিতি শিক্ষার পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কারণ যখন সবাই মিলে একজনের কাছ থেকে কোনো একটা বিষয় বুঝার জন্য গভীরভাবে মনোযোগ দেয়, ঠিক তখনই আঁতেল ছেলেটা ঘাঁড়তেড়ামি শুরু করে। তাকে সেই বিষয়টি বুঝানোর শত চেষ্টা করেও লাভ নাই, কারণ সে ইতিমধ্যে নিজেকে বিদ্যাসাগর বা আইনষ্টাইন লেভেলের একজন হিসেবে ভেবে নিয়েছে।

তাই সে যা যুক্তি দেবে সেটা অকাট্য, তার যুক্তির উপর অন্য কেউ যুক্তি দিলে সেটা রীতিমতো মহাপাপ হিসেবে তার কাছে বিবেচিত হবে। অবশ্য নিজেকে আইনষ্টাইন মনে করলেও সে অন্যের কাছ থেকে জ্ঞান চুরি করে নিতে বেশ পারদর্শী। AUTOVACATION একজন আঁতেলের কাছে সবচেয়ে বড় দুশমন। সবাই যখন অটো নেয়ার ধান্দায় থাকবে, তখন সে ব্যস্ত থাকবে কিভাবে সে অটোকে ভন্ডুল করে দেয়া যায়। অটোভ্যাকেশনের ষড়যন্ত্র ভন্ডুল করে দেয়ার জন্য সে অন্যান্য আঁতেল বন্ধুদের নিয়ে সিডিএসে বা ক্যাফেটেরিয়ায় আলোচনা সভা শুরু করে দেয়।

আর তার সে পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে দুঃখে কষ্টে সে ডিউয়ের বোতলে অনবরত চুমুক দিতে থাকে। খুব বেশী কষ্ট পেলে অকারণে আইইউটির আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন মোখলেছের সাথে ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে দিতেও সে পিছপা হয় না। একজন আঁতেল অকারণে কোনো স্যারের একদিনের লেকচারও miss দিতে চায় না। যদি বাই চান্স লেকচার মিস হয়ে যায়, তাইলে ঐদিন সে রীতিমতো সুনামি ঘটিয়ে দিতে পারে। টিভিতে কোনো জমজমাট খেলা চলতে থাকলে সাধারণত টিভি সেন্টারে সকল ছাত্রদের আনাগোনা দেখা যায়।

কিন্তু আঁতেল আসবে না। আঁতলামি তাকে করতেই হবে। আঁতেল আবার খুব শেয়ানা। সে খেলার ঠিক শেষ মুহূর্তে টিভি সেন্টারে প্রবেশ করে আর খেলা শেষের পর ভাব নেয় যেন সে পুরো খেলা দেখেছে। নিজের প্রিয় দল যদি জয় লাভ করে তাহলে সে রীতিমতো ‘চিকনী চামেলী’ ড্যান্স দেয়া শুরু করে দেয়।

আঁতেলের আরেকটি চরম বদভ্যাস হলো, যে বিষয়ে সে জানে না সে বিষয়েও সে তার পান্ডিত্য জাহির করতে চায়। যেমন, কয়েকদিন আগে শচীন তার শততম সেঞ্চুরী অর্জন করে। চারিদেকে সবাই যখন শচীনের প্রশংসায় ব্যস্ত, তখন সে মাঝখান থেকে বলে ওঠবে , “আরে ব্যাটা, শচীন তো আধুনিক যুগের রোনাল্ডো। ১০০টা গোল কি তার কাছে কোনো ব্যাপার??তোরা কি কস না কস বুঝি না। তয় আজকের ম্যাচের গোলপোষ্ট মনে হয় একটু বড় আছিলো, তাই হালায় আজকে বেশি গোল দিছে” বলে গ্রামের মুড়োলের মতো পায়ের উপর পা তুলে পাশের জনের পিঠে সজোরে এক চাপড় দেয়।

ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের সময় তাকে প্রায়ই সময় মামাদের সাথে কথা কাটাকাটি করতে দেখা যায়। কারণ (১) মামা মাংস না দিয়ে চর্বি দিছে (২) মামা ঝোল কম দিছে। আঁতেল সাধারণত মাথার চুল বিছিয়ে রাখতে পছন্দ করে। তবে আধুনিক কালের আঁতেলদের মাঝে ফ্যাশন সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা এই সংস্কৃতি থেকে কিছুটা হলেও বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। পুনশ্চঃ লাইব্রেরীতে গেলেই কিন্তু মানুষ আঁতেল হয়ে যায় না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।