আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আঁতেল

ওইভাবে যাচাই বাছাই করে নিজেকে দেখি নাই

এটাই আমার প্রথম ব্লগে লেখা। আমাদের জিকসেস ভাই এর ব্লগ দিয়া আমার ব্লগ পড়া শুরু, এখনও প্রক্রিয়া চলমান। ভাবলাম নিজের কিছু কথা দিয়া শুরু করি। দেখি এ মেধাবী ব্লগারদের ভিড়ে কয়দিন টিক্কা খাইতে পারি। "আঁতেল" শব্দের সাথে পরিচয় নাই এটা মেনে না নেওয়ার মত বেয়াদবি।

স্কুল,কলেজ, ইউনিভার্সিটি সব জায়গায় এই নাম খানা শুনতে পাওয়া যায়। কারো নামের আগে ,কারও নামের পরে...। আতলামির ক্রমধারা ও আছে-- স্কুল এ থাকে সবচে বেশী সংখ্যক আঁতেল,সেটা বাপের ঝারি হোক, শিক্ষক এর প্যাঁদানিই হোক বা জন্মসূত্রে প্রাপ্তই হোক, এদের স্কুল এ সবচে বেশী পাওয়া যায়। আঁতেল প্রাপ্যতার দিক থেকে স্কুল এ যে প্রথম এটা নিয়া আমার বন্ধু মহলে খুব দ্বিমত হয়নাই। কলেজে ঊঠে বিড়ির প্রতি আর কম্বাইন্ড ব্যাচ এ সুন্দরী সহপাঠীর প্রতি ভালোবাসা এতই বাড়ে যে আঁতলামীর সাথে ব্রেক আপ করে জাপায় পরে।

৪টা সময় পড়া শুরু হইলেও ৩ ঘটিকাতেই আমাদের অনেক বন্ধুদের ফিটিং মারতে দেখা যাইত। মেজাজ টা তখনই উঠত যখন আঁতেলগুলা লাফাইয়া লাফাইয়া বয়েজ আর গার্লস এর আলাদা ব্যাচ করতে মোটা চশমার ফাক দিয়া জ্বলজ্বলে চোখ দেখাইত। এথেকেই শুরু আঁতেলদের বাম্বোও মারা। ওহহহহো আরেকটা কেস আসে... তা হল আমাদের দেখাইয়া দেখাইয়া আমাদের ফিটিং করা পিস গুলা ভাগাইয়া নোট এর প্রলোভন দেখাইয়া একান্তে পড়া বুঝাইত... কি আর বলব মুর্দা পীর খাড়া করা গালি দিতে মুঞ্চায়। এদিকে আমাদের মহৎপ্রাণ শিক্ষকরা এদের এ আদরে ভরে রাখত।

আমার নিজের এক অভিজ্ঞতার কথা বলি- আমি ঢাকা কলেজের এক টিচার এর কাছে পদার্থবিজ্ঞান পরতাম। আমাদের এক জোড়া আতেল বন্ধু এসে উনার সাথে কথা বলে গিয়েছিল, আর কিছু ফুলাইয়া গেসিল। আমার টিচার ত প্রায়ই বলত অরা আজকে সকালে আসবে পড়তে ,তারা ত আর আসে না। পরে জানা গেল তারা রানা স্যার এর কাছে পড়তে গেছে। প্রত্যেক পরীক্ষার পর তারা স্যারকে ফোন দিয়া বলত তারা আসতেছে কিন্তু তাদের র দেখা যায় নাই।

স্যার বিষণ্ণ বদনে পড়াইতেন । আমরা এই ঘটনার নাম দিলাম "স্যার এর ছ্যাঁক খাওয়া" । এই দুইটা আঁতেল এর জন্য স্যার বহুবার ছ্যাঁক খাইছে। এইচ.এস.সি র দুই বছরে এদের দুইজনকে স্যার এর বাসার পাশে আর দেখা যায় নাই। যাইই হোক আর নাইই হোক এদের খোঁজ খবর বাসা পর্যন্ত পৌঁছানো মানে আরেক জ্বালা।

"দেখ তোমার অমুক বন্ধু তমুক পরীক্ষার আগে ৩ দিন ঘুমায় নাই,আর তুমি এখন গেম খেল!!!"- পিতা মাতার ভদ্র ভাষার কানমলা। এত বুইরা হইলাম, কইদিন আগে একটা আঁতেল বন্ধুকে অনেক সাহস কইরা বাসায় নিসিলাম। অই বজ্জাৎ আমার আম্মার মাথা ধুলাই কইরা দিসে। সেই আঁতেল বন্ধুর গুণমুগ্ধ আমার মাতাজি নিয়মিত আমাকে পলিস করতেছেন। আঁতেলদের নির্যাতন বেড়েই যাচ্ছে দিন কে দিন।

এত কষ্টে কপি মারা রিপোর্ট এর ভুল বের করেই খান্ত হয় না, উচ্চমার্গীয় রিপোর্ট লিখা আমাদের গ্রেড কমাইতেও অগ্রণী ভূমিকা রাখতেসে। বন্ধুরা কিছুদিন আগে আমাদের এক আঁতেল বন্ধুর কাহিনি শুনলাম। তার বাবা তাকে অনেক ছোট রেখেই মারা গেছে। সহায় সম্পত্তি যা আছে তা দিয়া কোন কিছুই করা যায় না। ছেলেটা আমাদের থেকে বয়সের দিক থেকেও অগ্রণী।

বুঝা যায় মাঝে বেশ গ্যাপ গেছে। ছেলেটার ৪/৫ টা প্রাইভেট পড়াইয়া নিজের খরচ আর পাশাপাশি পুরাটা সংসার টানতে হচ্ছে। ক্লাস অটো হবে শুনলে সে চিল্লায় ,আমরাও তাকে গালিগালাজ করি। আজকে অনেক দিন পর মনে হইল সে যে আঁতেল সে উপরের বর্ণিত কোন গ্রুপেই পরে না। ভাগ্য তাকে আঁতেল বানাইছে।

সে জানে তার পাস করাটা খুব দরকার, খুবই। করুক না হয় এক আধটু আতলামি...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।