আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইএসআই’র টাকা, প্রথম আলোর দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীর মিথ্যাচার

আইএসআই’র টাকা, প্রথম আলোর দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীর মিথ্যাচার : চরম মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বিএনপিকে টাকা দিয়েছিল বলে প্রথম আলো যে খবর ছেপেছে—তা ছিল ডাহা মিথ্যা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রথম আলোসহ বাংলাদেশের কয়েকটি পত্রিকা বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে এ সংক্রান্ত যেসব খবর ছেপেছে, তার সবগুলোর উত্সই ওই দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী। অথচ পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টে এ সংকান্ত একটি মামলার শুনানির বিস্তারিত সংবাদ দেশটির সব গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও সেখানে বিএনপির নাম-নিশানা পর্যন্ত নেই। ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রিত খালিজ টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপিকে ৫ কোটি রুপি দিয়েছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও বায়বীয়। এ তথ্য পাকিস্তানের কোনো পত্রপত্রিকা কিংবা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। এমনকি নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত ভারতের প্রধান কোনো পত্রিকাতেও এ খবর প্রকাশিত হয়নি। ডেইলি মেইল-এর ভারতীয় অনলাইন সংস্করণ, সাপ্তাহিক ইন্ডিয়া টুডে এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’র রিপোর্টে যে তথ্যসূত্রের উল্লেখ করা হয়েছে, তার সবগুলোই দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীর কাল্পনিক লেখা। পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট পরিচালিত আলোচিত মামলার কার্যবিবরণী পাকিস্তানের পত্রপত্রিকা ও প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ডন ও দ্য নিউজ-এ ছাপা হয়েছে।

আইএসআই’র সাবেক প্রধান আসাদ দুররানির যে বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে—তার কোথাও বাংলাদেশে বিএনপিকে টাকা দেয়ার কথা উল্লেখ নেই। অথচ দুবাই থেকে প্রকাশিত খালিজ টাইমস এবং পরে ব্রিটেনের পত্রিকা ডেইলি মেইল অনলাইনের ভারতীয় সংস্করণে এ তথ্য চালিয়ে দেয়া হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রিপোর্টটি গত ৩ মার্চ সর্বপ্রথম খালিজ টাইমস-এর অনলাইন সংস্করণে ছাপা হয়। রিপোর্টটি পাঠিয়েছের প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী, যিনি খালিজ টাইমস-এরও প্রতিনিধি। এর পরদিন ৪ মার্চ একই রিপোর্ট ঢাকার প্রথম আলো ছাপে।

পরে একই রিপোর্ট আবার ডেইলি মেইল-এর ভারতীয় অনলাইন সংস্করণে প্রকাশ করা হয়। এই রিপোর্টটিও লিখেছেন দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী। ইন্ডিয়া টুডেতেও তিনি বাংলাদেশ বিষয়ে লিখে থাকেন। বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রিত বাসস ইন্ডিয়া টুডের ওই রিপোর্টটি হুবহু প্রচার করেছে। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, একই ব্যক্তির রিপোর্ট হওয়া সত্ত্বেও টাকার অঙ্ক উল্লেখকালে কোথাও ৫ কোটি, আবার কোথাও ৫০ কোটি উল্লেখ করা হয়েছে।

নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত ভারতের প্রধান সংবাদপত্র দ্য হিন্দু, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হিন্দুস্তান টাইম-এ বিএনপিকে আইএসআই টাকা দিয়েছে—এমন কোনো খবর নেই। আইএসআই’র সাবেক প্রধান আসাদ দুররানির আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার খবর প্রকাশ করেছে হিন্দুস্তান টাইমস। যার শিরোনাম—আইএসআই ইনভল্বড ইন অ্যাক্টিভিটিস আউটসাইড ম্যানডেট : পাক সুপ্রিমকোর্ট। এ খবরেও বিএনপিকে আইএসআই টাকা দিয়েছে—এমন কোনো তথ্য নেই। সহযোগী দৈনিক নয়া দিগন্ত’র পক্ষ থেকে বার্তা সংস্থা এপির পাকিস্তানের সংবাদদাতা বাবর ডোগারের কাছে বিএনপিকে আইএসআই’র টাকা দেয়া সংক্রান্ত আসাদ দুররানির সাক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য আদালতে দুররানি উল্লেখ করেননি।

সোনার বাংলাদেশ নামে জনপ্রিয় একটি ব্লগে একজন ব্লগার লিখেছেন, ‘৩ মার্চ খালিজ টাইম-এ ৫ কোটি রুপির কথা বলা হলেও ডেইলি মেইল-এ দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী খালিজ টাইমের রেফারেন্স দিয়ে তাকে ৫০ কোটি বানিয়ে দিল! আরও মজার কথা হলো, তার পুরো নাম দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী হলেও এখানে পরিচয় দিয়েছেন দীপাঞ্জন রায় হিসেবে। চৌধুরী বাদ। কিন্তু ডেইলি মেইল-এর আর্কাইভ ও মি. চৌধুরীর বায়োডাটা থেকে জানা যায়, তিনিই আসলে দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী। ’এর প্রমাণও হাজির করেছেন ওই ব্লগার। ওই ব্লগার আরও লিখেছেন—‘এমনকি বাসস মাছি মারা কেরানির মতো ৫০ মিলিয়ন রুপিকে করে দিল ৫০ কোটি রুপি! আগেই প্রমাণিত হয়েছে ডেইলি মেইল, ইন্ডিয়া টুডে নিউজের উত্স একই ব্যক্তি দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী।

আবার ইন্ডিয়া টুডেই বাসসের সোর্স। ওই ব্লগার আরও লিখেছেন ‘প্রথম আলো মূলত বাংলাদেশে প্রথম নিউজটি প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে দীপাঞ্জনই খবরটির সরবরাহকারী ও তাদের প্রতিনিধি হওয়াতে নিউজটা আগেই পেয়ে যায়। প্রথম আলো নিউজটা বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য তাদের দিল্লি প্রতিনিধিকে দিয়ে প্রথমে খালিজ টাইম-এ প্রকাশ করল। তার পরদিন দিল নিজের পত্রিকায়।

’ দুবাই থেকে প্রকাশিত খালিজ টাইমস পরিচালিত হয় ভারতীয় সাংবাদিকদের দিয়ে। দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী ডেইলি মেইল ও ইন্ডিয়া টুডেতে তার নাম কিছুটা কাটছাঁট করে লিখেছেন। ডেইলি মেইল-এ নামের শেষে চৌধুরী উল্লেখ করেননি কিন্তু আর্কাইভে তার অন্য রিপোর্টে চৌধুরী পরিচিতি রয়েছে। দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীর পরিচিতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। তিনি ভারতীয় পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে লেখালেখি করেন।

সাউথ এশিয়ান ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ইয়ারবুকে তার বাংলাদেশ সংক্রান্ত লেখা আছে। উল্লেখ্য, দীপাঞ্জন রায়ের এ খবরটি এমন সময় প্রচার করা হয় যখন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া কিছুদিন আগে লন্ডনের প্রভাবশালী সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর রিপোর্টে বলা হয়, বিগত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে পরামর্শ ও বস্তা বস্তা টাকা দিয়েছিল ভারত। কে এই দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী : কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী এই বাঙালি সাংবাদিক বাংলাদেশের পত্রিকা প্রথম আলোর দিল্লি প্রতিনিধি। চরম বাংলাদেশবিরোধী লেখক হিরন্ময় কার্লেকার তার বই Bangladesh : Next Afganistan? ভূমিকায় অনেকেই তাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।

তার মধ্যে শাহরিয়ার কবির ও দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী অন্যতম। কার্লেকার তার বইয়ে মি. চৌধুরীকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ বিষয়ক এক্সপার্ট হিসেবে। দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন : ‘তিনি ডেইলি মেইল (Daily Mail Online) ও কুয়েতভিত্তিক সংবাদ সংস্থা কুনার (কটঘঅ) দিল্লি প্রতিনিধি। তার আগ্রহের মধ্যে শেখ হাসিনা প্রধান। ’ তথ্যসুত্রঃ Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.