ভালবাসি
দুটি আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থার বাংলাদেশ বিষয়ে ইতিবাচক মূল্যায়নের পরও বৈদেশিক বাণিজ্যিক ঋণ ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে সাফল্য নেই। ফলে কাজে লাগছে না তাদের ক্রেডিট রেটিং। এ জন্য নিয়মকানুনের জটিলতা আর ব্যাংকিং খাতের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। সূত্র মতে, দুই বছর ধরে আন্তর্জাতিক ঋণ সক্ষমতার ইতিবাচক মূল্যায়ন কাজে লাগাতে পারলে ডলারের ওপর চাপ কমত। অপর দিকে টাকারও এভাবে অবমূল্যায়ন হতো না।
আর বিদেশ থেকে ডলারে বেশি মাত্রায় বাণিজ্যিক ঋণ নেয়ার ঝুঁকিও রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বিশ্ব আর্থিক মন্দাও এ জন্য দায়ী বলে মনে করেন তারা। জানা গেছে, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তা এসেছে নাম মাত্র। এদিকে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের প্রবৃদ্ধি নভেম্বর থেকে কমতে শুরু করে। তবে ডলারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় প্রবাসীরা তাদের জমানো ডলার দেশে পাঠাতে থাকেন।
এতে জানুয়ারি থেকে ফের প্রবাসী আয় বাড়তে শুরু করেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ বৃদ্ধি সাময়িক। তাদের মতে প্রবাসী আয়ে আবার ধস নামবে। এদিকে রপ্তানি আয় যেটুকু বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে আমদানি ব্যয়। বিদ্যুৎ খাতের জন্য জ্বালানি তেল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ব্যয় মেটাতে বেশি ডলার ব্যয় হয়েছে।
এসব কারণে ডলারের সরবরাহের তুলনায় ব্যয় বেড়েছে। আর ডলারের এ বাড়তি চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংক নতুন এলসি খোলা বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি সরকারি ব্যাংকও এ থেকে বাদ নেই। ডলারের সঙ্কটের কারণে ক্রমে কমছে টাকার মান।
২০১০ সালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি'স ও এসঅ্যান্ডপি বাংলাদেশের ঋণ সক্ষমতার পরিমাপ (ক্রেডিট রেটিং) করেছে। এতে ঋণ নেয়ার যোগ্যতার মাপকাঠিতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশকে স্থান দেয়া হয়েছে। এ বছরও মুডির রেটিংয়ে বাংলাদেশ বিএ-৩ আর এসঅ্যান্ডপির রেটিংয়ে বিবি পেয়েছে। এসব রেটিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান শ্রীলংকা ও ভিয়েতনামের সমপর্যায়ে, আর পাকিস্তানের চেয়ে ওপরে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট (বিওআই) সূত্র জানায়, মুডি'স ও এসঅ্যান্ডপি'র রেটিং বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
কোনো দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি নিয়ে এদের রেটিংয়ের ওপর নির্ভর করে বিদেশি বিনিয়োগ। ২০১০ সালের আগে বাংলাদেশে এ ধরনের রেটিং ছিল না। ফলে আন্তর্জাতিক লেনদেন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থার সঙ্কট ছিল। গত দুই বছর ধরে মুডি'স ও এসঅ্যান্ডপি বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে ইতিবাচক রেটিং দিয়ে যাচ্ছে। এসব রেটিংকে কাজে লাগিয়ে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিতে পারলে দেশে ডলারের ওপর চাপ কমানো যেত।
আর পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আনা সম্ভব হলে দেশে ডলারের সরবরাহ বাড়ত। পরপর দুই বার একই ধরনের ভালো রেটিংয়ের পর বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যাংক লেনদেনে ব্যবসায়ীদের কিছুটা সুবিধা হয়েছে। কিন্তু বৈদেশিক সূত্র থেকে বাণিজ্যিক ঋণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। এ জন্য বিশ্ব আর্থিক সঙ্কটের পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সুদের হার বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার্ড রেটের (লাইবর) চেয়ে ৪ শতাংশের বেশি সুদে বিদেশ থেকে অর্থ ধার করা যাবে না। এক বছর আগে লাইবর রেট ছিল ০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ডিসেম্বর শেষে বছরমেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে এ হার ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এ হার বেড়ে দাড়িয়েছে ১ দশমিক ১২ শতাংশে। দেশের বাইরে থেকে ঋণ নিতে হলে প্রকল্প সুনির্দিষ্ট করে বিওআইয়ের কাছে প্রস্তাব জমা দিতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে একটি কমিটি সেসব প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিয়ে থাকেন। বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। এ ধরনের ঋণের অন্তর্নিহিত ঝুকির ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে এশিয়ান ক্রাইসিসের একটা বড় কারণ ছিল বিদেশের অর্থবাজার থেকে বেসরকারি খাতের ঋণ। স্থানীয় ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ধার করা বিদেশি অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছিল চেইন শপ, রিয়েল এস্টেট আর পুঁজিবাজারে। একসময় এসব খাতে মন্দা দেখা দিলে ঋণ পরিশোধের চাপ আসে একসঙ্গে, যা সামাল দিতে গিয়ে বিপর্যয় নেমে আসে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আর্থিক বাজারে।
পরের বছর বেশির ভাগ দেশেই ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। গত এক বছরে ডলারের দাম ১০ টাকা বেড়ে চলতি সপ্তাহে ৮১ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বেশি দাম দিয়েও ব্যাংকগুলোতে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ায় বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষায় উদ্বেগ বাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লে আগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হতো।
এ কারণে ২০০৩ সাল থেকে বিনিময় হারের নিয়ন্ত্রণ উঠে গেলেও টাকার বিপরীতে ডলারের মান গত বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থিতিশীল ছিল। এখন বৈদেশিক মুদ্রাবাজার থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে টাকার অবমূল্যায়ন থামছে না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।