আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেজে ওঠো ঘন্টা----

ফিরে গেলাম দশ বছর আগে। বগুড়া জিলা স্কুল। যেখানে আমার বেড়ে ওঠা আর ছেলেমানুষি ছেলেখেলায় মেতে পার করেছি অনেক বছর। ফিরে গেলাম আমার পুরোনো স্কুলে; আমাকে টেনে নিয়ে গেলো সেই খুব আপন স্কুলের ঘন্টাটা। মনে পড়ে, প্রথম যেদিন স্কুলে গিয়েছিলাম খুব অবাক হয়েছিলাম এই ঘন্টাটা দেখে।

ভাবছিলাম-‘ এ আবার কি রে বাবা ’? খুব অদ্ভুত এর আকার। কোন চাকার কাঠামো নিয়ে বানানো ছিলো ঘন্টাটা। আওয়াজও ছিলো খুবই ধাতব কর্কষ। যেখানে স্কুলের ঘন্টারা মেয়ে মানুষের মতো সুরেলা ঢং ঢং করে বাজতো সেখানে আমাদের এই ঘন্টাটা ছিলো কোন বর্বর পুরুষের মতো। ঘন্টার মাঝখানটা ফাঁকা আর সেই ফাঁকা দিয়ে দেখা যেতো অবারিত মাঠ আর আমাদের দাপিয়ে বেড়ানোর উপলক্ষ।

অনেকটা দিন পার করেছি এই স্কুলে আর প্রতিদিনই ঘন্টাটা ছিলো আমাদের সবার সঙ্গী। কখনো সে জোর করে ঢুকিয়ে দিতো ক্লাশরুমে আবার কখনো আমাদের দাঁড় করিয়ে দিতো আসেম্বলীর লাইনে। মনে পড়ছে আমাদের সেই দিনের কথা যখন সে বেজে উঠতো আমাদের পরীক্ষার ঘন্টায় আর মনে করিয়ে দিতো-“ কল্লোল, জোরে লিখো; সময় তো আর বেশি নাই ”। আমাদের পরীক্ষা যুদ্ধের সেই দিনগুলোতে পরিক্ষীত বন্ধু হয়ে সে আমাদের পাশে ছিলো। আমি জানি সবার স্কুলের ঘন্টাই তাকে স্মৃতিকাতর করে দিতে পারে যদি কখনো সে ভাবতে পারে নিজের মত করে।

এই ঘন্টা আমাদের দিয়েছলো শৃংখলা; আমাদের সময়গুলোকে সুন্দর করে ভাগ করেছিলো এই ঘন্টারাই। কখনো ফেলেছিলো কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। কখনো দাঁড় করিয়েছিলো ভয়ংকর বেতের মুখোমুখি। কখনোবা ঠিক আমার সামনে এসে বেজে উঠেই বাঁচিয়ে দিয়েছিলো আমাকে বেতের বাড়ি থেকে। আর ছুটি???? সে আর কি বলবো! দুপুর রোদে ক্লাশের পর সেইতো ছিলো আমাদের বাড়ি যাবার পাসপোর্ট।

প্রতি বৃহস্পতিবারে সেইতো ছিলো আমাদের ক্রিকেট পিচ দখলের কাউন্টডাউন টাইমার। আমাদের সিঁড়ীতে হুড়োহুড়ি করে নামা আর টিফিনের পর ক্লাশে আসার একমাত্র নীরব বন্ধু তো সেই। সেই আমাদের ভাতঘুম ভাঙ্গাতো আর বিদায়ের সময় নির্বাক চেয়ে বলতো- “ ভালো থেকো, কাল আবার দেখা হবে বন্ধু ”। ২০০৩। ঘন্টাটা একেবারে বিদায় জানিয়ে দিয়েছিলো আমাদের।

জানিনা সেদিন সে কেঁদেছিলো কিনা! আমরা যখন আমাদের সাফল্যে আত্নহারা, জানিনা আমাদের গর্বে সেও বেজে উঠেতে চেয়েছিলো কিনা নিজে নিজেই! হয়তোবা মনে মনে বলেছিলো-“ আমাকে ভুলোনা বন্ধু ”। ভুলিনি। ভুলিনি বলেই একবার দেখেই চলে গিয়েছি সেই পুরোনো দিনে যখন এই ঘন্টার অর্ধেক বুক জুড়ে ছিলো সবুজ মাঠ আর বাঁকি অর্ধেক জুড়ে ছিলো বিশাল আকাশ। হুট করে বড় হয়ে যাওয়ার এইসব অপ্রয়োজনীয় দিনে যখন আমার দিন কাটে সময়ের অপচয় আর তথাকথিত সিসটেমের সিস্টেম লসে, তখন বার বার মনে হয় তুমি বেজে ওঠো ঘন্টা সেই পুরনো দিনের মতো। আমাকে আটকে রাখো কোন আনন্দ-ভয় মাখা ক্লাশরুমে; আমাকে দাঁড় করিয়ে দাও কোন ভয়ংকর বেতের সামনে; আমাকে দিন শেষে এনে দাও কিছু নিখাদ মুক্তির আনন্দ।

তুমি বেজে উঠে জানিয়ে দাও গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কি। তুমি খালি করে দাও লোকাল বাসগুলো সেই লোকগুলোর জন্য যারা আধাঘন্টা ধ’রে দাঁড়িয়ে আছে শাহবাগ বা ফার্মগেটে। শেষবেলায় তুমি কলিংবেল হউ- বেজে উঠে দূর করো প্রিয়জনের অপেক্ষা, দুঃশ্চিন্তা আর উদ্বেগ। বেজে ওঠো……। ।

বেজে ওঠো ঘন্টা----- ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.