আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুজনে.....

তপ্ত মরু অবিরত ফোটায় ধূসর ফুল .... ভয় ঢেকে রাখে সত্যকে আলো আধারির আবরণে ...তবু আমি পথিক পথ চলি স্বপ্নের হাত ধরে ....অনন্তের পথে ... পথের শেষ দেখার আশায় .. পড়ন্ত বিকেল আকাশটা লালচে হয়ে আসছে । বিরক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে ছেলেটার । এত বকবক মানুষ করতে পারে ! একটা অনুষ্ঠানে বসে ছিল ও, যখন চিন্তা করছে মাত্র,বাসায় ফিরে যাবে, উঠে দাঁড়াল দরজার দিকে । কয়েক পা গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল-সময় যেন স্থির,যুক্তি যেন অচল ! অনন্য বিমুগ্ধতায় একজনের দিকে তাকিয়ে আছে ছেলেটা ... সেই একজন যার স্পর্শে এসেছিল সাদা কালো জীবনে রঙিন ছন্দ ... বেশ খানিকটা সময় মেয়েটাকে খেয়াল করছে ছেলেটা । মাত্রাতিরিক্ত উচ্ছলতা নেই,আবার গুরুগম্ভীর নীরবতা ও নেই .. তবু এক অদ্ভুত মায়াময় সৌন্দর্যের ঘোরে মোহাচ্ছন্ন হয়ে যায় ছেলেটা ।

ঘোর কাটতেই ছেলেটা এগিয়ে যায় মেয়েটার দিকে । এ কথা সে কথা এর পর মেয়েটার ফোন নাম্বার চায় ছেলেটা । মেয়েটার সোজা সাপটা জবাব - "দেয়া যাবে না !" পরে অনেক শপথ আর অনেক শর্তে পাওয়া গেল । তবে মেয়েটা বা ছেলেটা কারোরই ধারণা ছিল না , একদিন এই নিষ্প্রাণ পড়ন্ত বিকেলটাই তাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় হয়ে ধরা দেবে । এরপর,প্রথম বসন্ত এর বিদায়বেলা যখন সমাগত,তখন তারা দুজন অনুভব করতে শুরু করে বন্ধুত্ব এর চেয়ে ও বড় একটা বাঁধনে বাঁধা পড়ে গেছে ওরা দুজনে ।

" প্রেম ?" -তখন এই প্রশ্নে দুজনের একই উত্তর হত, 'না'. ছেলেটার সামান্য জ্বর এর কথা শুনেও মেয়েটার গলার স্বরে কাঁপন,মেয়েটার সামান্য মন খারাপ এ ছেলেটার বুকের মাঝে কোথায় যেন একটু কেমন করে ওঠা..একদিন কোন একটা কারণে অনেক কষ্ট নিয়ে কথা বলার সময় ছেলেটা কেঁদে ফেলে ,তবে কান্না দীর্ঘস্থায়ী হয়নি,যখন শুনল মেয়েটার গলা ও ধরে এসেছে .. আরেকদিন মেয়েটার অশ্রুপাতের সময় ছেলেটা সান্তনা দেয়,সমব্যাথী হয়..মোট কথা আবেগ আর মায়ার এক অন্য সোপান এ পৌঁছে যায় ওরা তবে তখনো ভালবাসা বহুদূর.. ছেলেটার হঠাত্‍ যেন কেমন লাগে -কেমন একটা সুখী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা... কল্পনা আর স্বপ্নের মায়া কিন্তু তাকে বিচ্যুত করেনি বাস্তবতা থেকে... তবে এই দুইজনের অনেক গুলো জায়গায় অনেক মিল... মেয়েটা তথাকথিত বয়ফ্রেন্ড তত্ত্বে বিশ্বাস করে না ; আর ছেলেটা শুধু সৌন্দর্যের পূজারী নয় ! ভালবাসার মানুষের মানসিকতা কেমন,তাও সমান গুরুত্বপূর্ণ তার কাছে . তবে,বিধাতা বোধহয় মুচকি হেসেছিলেন .. কারণ ছেলেটা বা মেয়েটা কেউই পাশ্চাত্যের অনুকরণে বিশ্বাস করে না;শালীনতার পূজারী দুইজনেই । ভালবাসার মানুষটার পরিবারের প্রতিটি মানুষকে নিজের পরিবারের মত ভালবাসতে তারা প্রতিজ্ঞ ; রক্ষনশীল মনোভাব দুজনের ই; সব কিছু মিলিয়ে চাঁদের হাট !! এত মিল,তবু একটা জায়গায়ই সমস্যা -কেউ ই বলে না ,"ভালোবাসি" ! একের পর এক বসন্ত যায় .. ছেলেটার কথা আচার আচরণে যেন কেমন এক মুগ্ধতা ঘিরে রাখে মেয়েটাকে ; আর ছেলেটা তন্ময় হয়ে শোনে মেয়েটার সরল বাক্যালাপ,মুগ্ধ হয়ে শোনে সেই হাসি,আনমনা হয়ে যায় সেই মায়াভরা চোখের চাহনিতে ... দেখা হয় দুজনার.. অবাক হয় না ওরা,খুব কাছের বন্ধুর মতই কথা বলে । সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে কিন্তু তারপরও বলা হয়ে ওঠে না,"ভালোবাসি". ছেলেটা বলে না ,ভয়ে,যদি জবাব 'না' হয় ... এদিকে মেয়ে নিশ্চুপ ,"ও যখন ভাল মনে করবে তখন ই বলবে".. ছেলেটার এক বন্ধু একদিন মেয়েটাকে প্রশ্ন করে,"আপনার কি মনে হয় আপনার জন্য ও পারফেক্ট ? যদি ওর চেয়েও ভাল ছেলে আপনাকে প্রপোজ করে?" "ওর চেয়ে ভাল ? সম্ভব ?" মেয়েটার মুখে সেই মিষ্টি হাসি.. দিন চলে যায়, এদিকে মেয়েটাকে ক্রমাগত প্রেম নিবেদন করে চলে চিরায়ত বাংলার কতিপয় প্রেমিক পুরুষ ! মেয়েটা ছেলেটাকে সব বলে . ছেলেটা মুচকি হেসে বলে,"তা তুমি কি বললে ?" মেয়েটা বলে,"যা বলা উচিত ,না ! " এভাবে লুকোচুরি প্রেম চলে, বোঝে দুজনই- কিন্তু বলে না একজনও ! কথা বা ফেসবুকে ইমেইল পাঠানো চলতে থাকে । এদিকে ছেলেটার এক মেয়ে বন্ধুর হঠাত্‍ করে ছেলেটার প্রতি আবেগময় অনুভূতির উদ্রেক হয় ! অথচ ছেলেটা মেয়েটাকে বুঝিয়ে দেয় ,তার কাছে "বন্ধুত্ব" শব্দটার মুল্য আছে । "বন্ধু হিসেবে তুই ভালো কিন্তু আমার পক্ষে, তোকে, ভালবাসা ?" অসম্ভব ! বিধাতা তো আমার ভালবাসা ধারণ করার সামর্থ্য একজনকেই দিয়েছে " -"দেখ গিয়ে তোর সেই রাজকন্যা আরো কতজনের সাথে..." "আর একটা বাজে কথা বললে..." রাগে কাপতে থাকে অসম্ভব ঠান্ডা মাথার ছেলেটা .. -"যদি ও তোকে ধোঁকা দেয় ?" "আমাকে ধোঁকা দেবে ও ?? তাহলে দুনিয়ায় আমার জন্য ভালবাসা বলে কিছু নেই... আর কথা আসে না সেই বন্ধুর মুখে . শুধু মন থেকে ঘ্রণা করে চলে সেই মেয়েটাকে ...কেন,নিজেও হয়তো জানে না... পরিচয়ের প্রথম বসন্তের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ছেলেটা আর মেয়েটা নিজেদের মাঝে সব কিছু ভাগাভাগি করত ।

কম্রশ তারা জানতে পারে অতীত, বর্তমান সব । ছেলেটা বুঝতে পারে,ফিরে যাওয়ার পথ নেই-থাকলেও যেতে চায় না সে ... বেশকিছুদিন ধরে আকারে ইঙ্গিতে ছেলেটা মেয়েটাকে বোঝাতে চেয়েছে,ছেলেটা ঝুঁকি নিতে চায়.. কিন্তু সেই ঝুঁকি সে জীবনে একবার নেবে... ঝুঁকি টা হল সেই কথাগুলো বলা- যার উত্তর শুধু "হ্যা" বা "না" -হতে পারে । আর হয়তো সেই কথাটা শোনার জন্যে মেয়েটাও অপেক্ষা করছে ... ছেলেটা মেয়েটাকে অনেএএএএক বেশি ভালবাসে করে মেয়েটার লাজুক মায়াময় সরলতা ,স্নিগ্ধতা । তাই ও জানে , মেয়েটার পক্ষে ঝুঁকিটা নেওয়ার আশা করা- দুরাশা ! "ও আসলে বেশি লাজুক !" অনেক বার চিন্তা করে মেয়েটাকে ফোন করে ছেলেটা , এরপর ? চিরাচরিত প্রেম নিবেদনের বুলি ? -ও পথ মাড়ায়নি ছেলেটা... "হাটু গেঁড়ে বসে প্রপোজ করা আমার দ্বারা হবে না ...দেখো, দুনিয়া ঘুরে একশ এক টা নীল পদ্ম এনে দেওয়ার মিথ্যে শপথ করতে পারবো না...আকাশের চাঁদ তারা দিয়ে তোমার পায়ের নিচে স্বর্গলোকের বাগান করার মত মিথ্যে কথা বলতে পারব না...শুধু এটুকু বলতে পারি, আমার আবেগ ভালবাসায় এতটুকু মিথ্যে নেই... এখন বাকিটা তোমার কাছে .." মেয়েটা নিশ্চুপ || অসহ্য এক নীরবতা ... সেই নীরবতা ভেঙে যেন ছেলেটার প্রত্যাশিত প্রাণ সন্জীবনী সুধা পেল ছেলেটা ... "i love you"-মেয়েটা শুধু এটুকু বলতে পারে ... মনের চোখ দিয়ে ছেলেটা দেখে ,মায়াভরা মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে ... আর কিছু বলে না কেউ... একটু আগের অসহ্য নীরবতা পরিনত হয় অন্য রকম ভাল লাগার এক অনুভূতিতে ... ফোন এ কথা শেষ হয় জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় মেয়েটা চিন্তা করে, "আমি সত্যি ...." লাজুক মিষ্টি মেয়েটার নিজের কাছেই কেমন লজ্জা লাগে.... অদ্ভুত এক ভাল লাগায় শিহরিত হয় দুজনেই... বুঝতে পারে -ভুল করেনি কেউই- এরপরেও ওদের কথাবার্তায় পরিবর্তন আসেনি,শুধু পরিবর্তন এসেছে অনুভবে এক অন্য রকম ভাল লাগায় ... "আমি প্রথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান গার্লফ্রেণ্ড"-মেয়েটা বলে, "কেন কেন ? "-মুচকি হাসিতে জানতে চায় ছেলেটা ... "কারণ টা 'তুমি' এবং সেটা তুমিই ভালো জানো " "ও আচ্ছা ! আমিও প্রথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান বয়ফ্রেণ্ড ... কারণ তোমার মুখ থেকে না শুনতে হয়নি...আর সবচেয়ে দুর্ভাগ্যবান বয়ফ্রেণ্ড সেই বেচারা যে তোমার 'না' শুনে এখন আরেকজনকে প্রাণ প্রতিমা মানে...." হাসি আর কথায় দিন কেটে যায়... এপ্লাইড ফিজিক্স আর জটিল যৌগ নিয়ে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে স্বর্গসুখ খুঁজে পায় ওরা এমন হাসি ঠাট্টায়... ছেলেটা বুঝতে পারে ... কতটুকু সৌভাগ্যবান সে, এমন একজনকে সাথে পেয়ে, যার আকাশ ছোঁয়া উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই ... যে অন্য সবার চেয়ে আলাদা... যার হাতে হাত রেখে ব্রষ্টি তে ভিজে পাওয়া যায় ভালবাসার আদি সুঘ্রাণ... এভাবে চলতে থাকে দিন... "তুমি আমাকে কতটুকু ভালবাসো ?"- এই টাইপ ওজন মাপামাপি ওরা করে না...প্রিয়জনকে খুশি করতে হাজারটা মিথ্যে বলে না... কারণ এমনিতেই যে ওরা অনেএএএএক সুখী.... বিধাতা ওদের অনেএএএএক সুখী করেছেন, সত্য আবেগ দিয়েই... পরবতীঁতে দেখা হল , ছেলেটার মুখে সেই একই হাসি ... মেয়েটা চুপ করে আছে | ছেলেটা এগিয়ে যায়, মেয়েটার একটা হাত নিজের হাতে নেয়... মেয়েটা মাথা নিচু করে থাকে... ছেলেটা একনাগারে বলে যায়,"আমার প্রপোজ করাটা ভাল হয় নাই...জানি...আর কোনদিক তো কাওকে প্রপোজ করার দরকার নাই তাই আর improvement দরকার নাই ..." মেয়েটার মুখে একটা হাসি দেখে ছেলেটা... হেসে ফেলে সেও ... সেই সময় ঐ দুজনের হাতে হাত.. ছেলেটা মাথা উচু করতে বলে মেয়েটাকে... মেয়েটা মাথা উচু করে ... বাইরে তখন বসন্ত আসি আসি করছে... এক অন্য রকম স্বপ্নিল আলোয় ভাসছে চারিদিক ... সেই আলো বা বসন্তের সুঘ্রান,কোনটাই যেন প্রভাব ফেলে না ঐ দুজনের ওপর... ভালবাসার আলো যে আরো স্বপ্নিল, সত্যিকার আবেগ যে আরো সুগন্ধের আধার ... ...................... ...................... ...................... বালুকাবেলায় নীল পাড়ের সাদা শাড়ি পড়ে সমুদ্রজলে পা ভেজায় মেয়েটা.... মেয়েটার লাজুক উচ্ছ্বাস দেখে নীল পান্জাবী পড়া ছেলেটার মুখে সেই একটুখানি হাসি... জ্যোত্‍স্নার আলোয় প্লাবিত চারদিক,হাতে হাত রেখে বালুকাবেলায় হেঁটে যায় দুজন... স্বপ্ন না সত্যি জানার ব্যার্থ চেষ্টা করে না কেউ, মায়াভরা ভালবাসার সার্থকতা তো এখানেই - যা ছাড়িয়ে যায় সব কষ্ট,ব্যথা আর সন্দেহ... যেখানে শুধুই একটাই অনুভব -ভালবাসা- >পুনশ্চ : সেই ছেলেটি এবং মেয়েটির ভালবাসা আলো ছড়িয়েছে আরো অনেক বসন্ত... সুগ্রান ছড়িয়েছে আরো অনেক বেশি ... টিকে আছে সেই সম্পর্ক ঈর্ষণীয় আনন্দের উত্‍স হয়ে ... >উত্‍সর্গ : যারা সত্যিকার অর্থে ভালবাসে ...ভালবাসতে জানে.... >শেষকথা : ভালবাসা শুধু কষ্ট দেয় ,কথা টা মিথ্যা ... এই দুইজনের বেলায় তো শুধু সুখময় বার্তার আবাহন এই ভালবাসা... আসুন,ভালবাসি নিজের সবটুকু আবেগ দিয়ে...এটা বোঝার পর ,আসলেই সে কি আপনার জন্য কিনা .. ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।