ক্রিকেটারই তাঁর আসল পরিচয়। কিন্তু ঝোঁক নেই কোন দিকে! ফ্যাশন, হেয়ারকাট থেকে শুরু করে হুটহাট গাড়ির মডেল বদলানো—অন্য ক্রিকেটারদের থেকে সবকিছুতেই আলাদা শাহাদাত হোসেন। ইদানীং আগ্রহী হয়ে উঠেছেন রুপালি জগৎ নিয়েও। জাতীয় দলের এই পেসারের সঙ্গে তাঁর মাঠের বাইরের জগৎ নিয়ে কথা বলেছেন তারেক মাহমুদ
প্রশ্ন প্রেম-ট্রেম কেমন চলছে?
শাহাদাত হোসেন রাজীব কী? প্রেম-ভালোবাসা...না, এখন আর প্রেম-ভালোবাসায় নেই। কেউ নেই এখন।
আগে তো করতেন...
হ্যাঁ, আগে করতাম। এখন করি না।
বলেন কি! কিন্তু আপনি তো প্লে বয়...
করি না আর কি...। যারা ছিল তারা এখন আর কেউ নেই।
বিয়ে করবেন কবে?
এখনো জানি না।
বাসা থেকে যখন দেবে (বিয়ে) তখনই...।
বাসার পছন্দে বিয়ে করবেন! নিজের পছন্দ নেই?
অবশ্যই নিজের পছন্দ থাকবে। তবে ওরকম মেয়ে এখনো পাইনি। যদি পাই চিন্তাভাবনা করব।
কী ধরনের মেয়ে পছন্দ?
কী বলব! এটা সিচুয়েশন হলে বুঝতে পারব।
তার পরও হয় না...অনেকে লম্বা চুল পছন্দ করে। বা দেখতে ফরসা...
ডেফিনেটলি ফরসা হতেই হবে। সবচেয়ে বড় কথা, চামড়া ফরসা থাকলেই হয় না। দেখতে সুন্দর লাগতে হবে। লম্বা লাগবে, আর কিউট লাগবে অনেক।
হ্যাঁ, লম্বা হওয়াটা খুবই জরুরি। আপনিও তো অনেক লম্বা...
আমি ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি। এখন মনে হয় আরও বেড়েছি।
৬ ফুট ৩ ইঞ্চি ছেলের জন্য মেয়ে পাওয়া তো কঠিন। মানে কাছাকাছি উচ্চতার কাউকে তো লাগবে...
৬ ফুট ৩ ইঞ্চি তো আর লাগবে না।
৫ ফুট ৬-৭ যথেষ্ট।
৫ ফুট ৬-৭ ইঞ্চি পাওয়াও তো কঠিন বাংলাদেশে...
এটাই কথা। তাই বলে আবার বিদেশি বিয়ে করব না..।
আপনার মেয়ে ভক্ত তো প্রচুর...
এখন কী অবস্থা জানি না। লেটেস্ট খোঁজ নিইনি।
আগে ছিল অনেক। যখন দলে ছিলাম, ফ্যানের অভাব ছিল না। অবশ্য আল্লাহর রহমতে এখনো খারাপ না, ভালো। অনেকে ফোন-টোন করে।
শুধু ফোন করে, নাকি দেখা-সাক্ষাৎও হয়?
না না, ফোনই করে...হা হা হা।
ওটা বলা যাবে না।
মোট কয়টা প্রেম করেছেন?
প্রেম করছি...উমম...করেছি ভাই । প্রেম করছি কয়টা...উমম...দুইটা দুইটা, হ্যাঁ দুইটা।
তারা এখন যোগাযোগ করে না?
যোগাযোগ করে না। ব্যস্ত তো।
আমরা সবাই ব্যস্ত।
মেয়েরা আপনাকে এত পছন্দ করে কেন?
এটা আমি তো জানি না...হা হা হা। সবচেয়ে বড় কথা স্মার্টনেস। এটা অনেকের মধ্যেই নেই, আমার আছে। স্মার্টনেস জানেন তো? মানে পোশাক-আশাক, চালচলন।
হাইটটা অনেক ইম্পর্টেন্ট। সবার স্মার্টনেস হাইটের জন্যই হয়। আমার মতো যাঁরা লম্বা, তাঁরা দেখবেন অনেক সময় গুজা (কুঁজো) হয়ে হাঁটে। এ রকম আমার মধ্যে নেই। স্মার্ট হওয়ার জন্য যা দরকার ওটা আমার মধ্যে আছে।
স্মার্ট থাকার জন্য নিজে কোনো চেষ্টা করেন নাকি প্রকৃতি প্রদত্ত?
সে রকম চেষ্টা কোনো কিছু নেই। ভালো ড্রেস পরা, ভালোভাবে হাঁটা, মানুষের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলা—এসবই। যেমন ধরেন, ব্রেট লি কেমন? ব্রেট লি খুব মিশুক, স্মার্ট না? আমি সব সময় ব্রেট লি, শোয়েব ওদের ফলো করি। ওরা কীভাবে হাঁটে, কথা বলে। এ ছাড়া আর কোনো কিছু নেই।
আমার নজর সব সময় ওপরের দিকে ছিল। এখনো তাই আছে।
এমনিতেও তো আপনি খুব ফ্যাশনেবল। পোশাকে, জুতা-স্যান্ডেলে...
হ্যাঁ, এগুলোর দিকে আমার খেয়াল আছে। গাড়ির দিকেও...।
এ পর্যন্ত কয়টা গাড়ি বদলেছেন?
চারটা। এখন আছে ল্যাক্সাস। প্রথম ছিল হানড্রেড ফাইভ, টয়োটা।
গার্লফ্রেন্ডদের খুব গাড়িতে ঘোরান নিশ্চয়ই...
ঘুরাব না কেন! তা তো ঘুরাই-ই। তবে এখন আর ঘুরাই না।
আগে ঘুরাতাম। এখন তো আমি একা। নিজে নিজেই ঘুরি।
আপনি এত স্মার্ট। কখনো মনে হয় না ক্রিকেট না খেলে সিনেমার নায়ক হলে ভালো করতেন?
হা হা হা।
এতক্ষণে সত্যি কথা বলছেন। ঠিক আজকেই আমি এটা চিন্তা করছিলাম। বাসায় থেকে থেকে একটু ফরসা হয়ে গেছি। সে দিন কলাবাগান ক্লাবে চুক্তি করতে গেছি। এক বড়ভাই বলছিলেন, কী খবর? তোকে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে।
সিনেমা-টিনেমা কর বেটা। তুই গেলে তো সাকিব খানও পারবে না তোর সঙ্গে। আরেকজন বলল, উনি তো কথাটা খারাপ বলেনি। নায়ক সাকিব খান কিন্তু ইচ্ছা করলেই ক্রিকেট খেলতে পারবে না। কিন্তু তুমি খেলোয়াড় হলেও সিনেমা করতে পারবে।
তুমি সিনেমা করলে সবাই একবার না একবার সিনেমা দেখতে যাবেই। আমিও ভেবে দেখলাম, এতে তো সিনেমার পরিচালকেরও অনেক লাভ। তখন বললাম ঠিক আছে।
আপনার তাহলে নায়ক হওয়ার ইচ্ছা আছে...
হ্যাঁ, ইচ্ছা আছে নায়ক হওয়ার। সত্যি কথা।
নাটক-ফাটক-মডেলিং করে লাভ নেই। একটা সিনেমা করলে পরিচালকও ভালো টাকা কামাতে পারবে, আমারও পরিচিতি বাড়বে। সবাই বলবে শাহাদাত কি মুভি করছে, দেখে আসি।
অ্যাকশন নায়ক হতে চান না রোমান্টিক নায়ক?
অ্যাকশন না, রোমান্টিক। আমি সব সময় শাহরুখ খানকে পছন্দ করি।
আমার ফেবারিট নায়ক। আমি শাহরুখের মতো হতে চাই। অ্যাকশন তো থাকবেই, তবে রোমান্টিকটা বেশি থাকবে।
নায়িকা হিসেবে কাকে পছন্দ?
বাইরের ধরলে প্রীতি...প্রীতি, প্রীতি জিনতাকে আমার খুব পছন্দ। তবে বাংলাদেশে আমার কোনো পছন্দের নায়িকা নেই।
বিন্দুকে ভালো লাগে। কিন্তু ও তো নায়িকা না, মডেল।
কোনো পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে?
দু-একজনকে চিনি। টুকটাক এফডিসিতে যাই। অনেকে বলেছেন, সিনেমা করলে যোগাযোগ করতে।
সিনেমা হিট হলে খেলা কি ছেড়ে দেবেন?
না না না। এটা ভুল কথা। তিন-চার মাস যখন ফ্রি থাকব তখন একটা মুভি করব। তবে ক্রিকেট ছাড়ব না।
প্রথম সিনেমায় নায়িকা হিসেবে কাকে চাইবেন?
হা হা হা।
বাংলাদেশি নায়িকাদের আমার পছন্দ না। সিরিয়াসলি। যেগুলো আছে সব মোটা মোটা। এগুলার একটাকেও আমার ভালো লাগে না। আমি মডেলদের মধ্যে থেকে নায়িকা বেছে নেব।
মডেলদের মধ্যে সুন্দর সুন্দর লম্বা মেয়ে আছে।
সিনেমার লাইনে তো অনেক সময় স্ক্যান্ডাল ছড়ায়...
না, ওগুলো হবে না। সিনেমা তো আমার পেশা না। হয়তো বা শখে দু-একটা করলাম। মুভি করলেও আমি রেগুলার করব না।
হঠাৎ হঠাৎ করব। ওটাই ভালো।
ক্রিকেটার হয়ে যেটুকু সফল, নায়ক হলে কি আরও বেশি সম্ভাবনা ছিল?
এটা আমি জানি না। ক্রিকেটার হয়েছি বলেই এ কথাগুলো বলতে পারছি। ক্রিকেটার না হলে মানুষ আমাকে চিনতেই পারত না।
আমার লুক এ রকম থাকত না।
সিনেমার নায়ক আর ক্রিকেটারের মধ্যে পার্থক্য কী?
ফিল্ম জগৎ তো ফিল্ম জগৎ, আর আমরা ক্রিকেটারেরা ক্রিকেটার। ওরা ব্যস্ত থাকে শুটিং নিয়ে। আমরা ব্যস্ত থাকি খেলা নিয়ে। পার্থক্য তো অবশ্যই আছে।
আমি মনে করি, একজন ক্রিকেটারের যে জীবন, ফিল্ম জগতে এ রকম মজার জীবন নেই। আমরা খেলতে গেলেও ঘুরি, মজা করি। ওরা একটা জায়গায় বন্দী থাকে। আমি মনে করি, ফিল্মের নায়কের চেয়ে এটার মূল্য অনেক বেশি।
মৌলিক একটা পার্থক্য তো আমরাও দেখি, তারা মেকআপ নিয়ে তারকা।
আপনারা মেকআপ ছাড়া তারকা...
এটাই হলো কথা। এটাই মানুষ দেখতে চায় বেশি করে। আফ্রিদিকে সবাই পছন্দ করে কেন? কারণ ও মেকআপ করে না। যেটা তার ভালো লাগে ওটাই। ফিল্মে অনেক সময় পাউডার-পুওডার দিয়ে কালো লোককে ফরসা করে ফেলে।
আমাদের মধ্যে ওসব কিছু নেই। মাশরাফি ভাই, আমি—আমাদের আল্লাহর রহমতে ওরকম কিছু লাগাতে হয় না। আল্লাহ যা দিয়েছেন, লাখ লাখ শুকরিয়া। বাংলাদেশে অনেক ফিল্ম স্টারের এ রকম নেই, সত্যি কথা। চামড়া সাদা হলে তো আর সব হয় না।
নায়ক হওয়ার জন্য আপনার সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট কোনটা?
আমার হাইটটা অনেক ইম্পরটেন্ট। চেহারাও আল্লাহর রহমতে ভালো।
প্রায়ই দেখি শেভ না করে অনেক দিন থাকেন। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি নিয়ে ঘোরেন। রহস্য কী?
রহস্য কিছুই না।
দাড়ির ব্যাপারে আসলে আমার শহীদ আফ্রিদিকে বেশি ভালো লাগে। আমার দাড়িও ওরকমই। প্লেয়াররা সবাই বলে দাড়ি থাকলে আমাকে আফ্রিদি আফ্রিদি লাগে। বিদেশে গেলেও দাড়ি থাকলে কেউ বলে না যে আমি বাংলাদেশি। বলে পাকিস্তানি।
তো আমার দাড়ি সুন্দর দেখে আমি দাড়িটা রাখি। এ ছাড়া আর কোনো ইয়ে নেই।
কোনো মেয়ে কি কখনো বলেছে আপনাকে দাড়ি রাখলে সুন্দর লাগে?
অনেকে অনেক কিছু বলেছে। দাড়িতে অনেক ভালো লাগে। ওরা বলে, তুমি যা করো সেটাই ভালো লাগে।
শেভ করলে ভালো লাগে, দাড়ি রাখলেও ভালো লাগে। তবে সমস্যা হলো যেদিন শেভ করি, সে দিন আমাকে মুরগি মুরগি লাগে। এ জন্য দাড়িই ভালো।
তো এখন যে বান্ধবীবিহীন অবস্থায় আছেন। এভাবে কয় দিন?
দেখি, আল্লাহর রহমতে কয় দিন থাকি।
আপনি যখন ইন্টারভিউটা ছাপবেন সবাই আসবে, সমস্যা নেই। হা হা হা। সবাই জানবে রাজীব খালি আছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।