আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই! অনেক আগে পেপারে দেখলাম বায়তুল মোকাররমের সু-শিক্ষিত খতিব সাহেব মোনাজাত পড়াইতেছেন কুন জায়গায় কুন মেশিন বসাইছে যার জন্য পুরা দুনিয়া নাকি ঐদিনই ধ্বংস হবে। আজব কাহিনী, সেই খতিবের নাম আমার মনে নাই, তয় সামনে পাইলে দুইটা থাপড়া দিয়া জিগাইতাম পড়াশুনার প্রতি এগো এতো অনীহা কেন!
আমরা মাঝে মাঝেই লার্জ হেড্রন কোলাইডার নিয়া বিস্ময় প্রকাশ করি এমনকি অনেক শিক্ষিত মানুষও আফসোস করে আমাগো দেশে এমন মেশিন বসায় না কেন?
আমি আসলেই ভাবি। সত্য একখান কথা কই ২০০০ সালের আগ পর্যন্তও কিন্তু আমাদের ঘরে ঘরে এমন মেশিন ছিলো যা দিয়া আমরা খুব স হজেই এই কোলাইডার বা এক্সিলারেটর বানাইতে পারতাম। জিনিস খান কিছু না, ঘরে ঘরে যেসব ভুটকা ভুটকা টিভি আছিলো সেগুলার ঐ টিউবের ভিতর একটা কইরা ইলেক্ট্রন গান থাকে।
ওর পজিটিভ নেগেটিভ পোলারিটি ঠিক রাইখা আর বাজারে ট্রান্সফরমারের কয়েল দিয়া বিশাল একখান এক্সিলারেটর বানাইবার পারি। তয় ইলেক্ট্রিনিক্স আর পাওয়ার নিয়া আমাগো দৈনতা সর্বদা। তাই আপনেরে আমি যদি এক্সিলারেটরের মডেল দিয়া দেই, অন্তত হাইলি সেন্সিটিভ সেন্সর আর মিজারমেন্ট ইনস্ট্রুমেন্ট ডিজাইনের অভাবে মুখ থুবড়াই পড়বে!
যাই হোউক, আজকা একখান টেকনোলজি নিয়া আলোচনা করি। বিদ্যুৎ সমস্যা আমাগো দৈনন্দিন সমস্যা আর এই সমস্যা মিটানোর জন্য অনেক টেকনোলজি আছে। কিন্তু আমরা আসলে টেকনোলজি কিনি, তাই কিনার সময় টেকনোলজীর নামে বিষ কিনি না মধু কিনি সেটা মনে হয় পরে আমরা সবাই বুঝতে পারি!
আমি আসলে পারমানবিক রিএক্টরের নতুন একখান ডিজাইন নিয়া কথা কমু।
আসলে ডিজাইন জিনিসটা ভালা লাগে যদিও আমি ভালা ডিজাইন করবার পারি না। টেকনোলজীর নাম হইলো ADS মানে এক্সিলারেটর ড্রাইভেন সিস্টেম।
ব্যাপারটা নিয়া কেনো বাতচিত করুম সেইটা নিয়া কথা কই। আমরা জানি নিউক্লিয়ার টেকনোলজীতে রিএক্টরে ইউরেনিয়াম ব্যাব হারের পর যেসব বর্জ্য পাই সেগুলো খুবই রেডিওএক্টিভ। এটা যদি মাটিতে পুতে ফেলেন তাহলে পুরোটা ক্ষয় হয়ে নিরাপদে পদার্থে রূপান্তরিত হতে ১০ হাজার থেকে ১ লক্ষ বছর পর্যন্ত যেতে পারে।
তাই একে যেখানে রাখা হয় সেখানে মাটির নীচে ইনফোর্সড কনক্রিটের উপর লিডের আস্তরন সহ নানা বস্তুর প্রলেপ দিয়ে একটা চ্যাম্বারের মধ্যে রাখা হয়। নাহলে এই তেজস্ক্রিয়তা দুর দূরান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে যাবে। ঘরে ঘরে রেডনের তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বেরে যাবে, খাবারের মধ্যে সিজিয়াম পাওয়া যাবে খুব বেশী পরিমানে।
২৫ পেরোনোর আগেই বার্ধক্য জনিত রোগ থেকে লিউকেমিয়া আরও অন্যান্য অষুখ হতে পারে। এমনকি নবজাতক শিশুর মধ্যে প্রবল ভাবে মিউটেশনের কারনে, হিজড়া, অথবা অঙ্গহানী অথবা জোড়া বাচ্চা অথবা নানা জটিলতার বাচ্চা পয়দা হবে!
আরও একটা কারন আছে।
এই যে কিছুদিন আগে ফুকুশিমায় যেই আকাম ঘইটা গেলো। ধরেন নিউক্লিয়ার রিএকশন করনের পর সেইটা কন্ট্রোল করতে হয় নাইলে এইটা আবার এটম বোমার মতো বিষ্ফোরন ঘটাইবো। কিন্তু এই টেকনোলজীটা এই স্বতঃস্ফূর্ত বিক্রিয়াটারে ধ্বজভঙ্গ কইরা দেয়! ফলে আর দুর্ঘটনার ভয় নাই!
সমস্যা হইলো আমাদের নেতারা এসব নিয়ে ভাবে না কারন তাদের সন্তানেরা দেশের বাইরে পয়দা হয় ঐখানকার হাওয়া বাতাস খায়, কি মজা তাগো! আবার তাগো হাটের চড় থাপ্পড় খাওয়ার জন্য আপনে আমি তাদের ভোট দেই!
যাই হোউক টেকনোলজী নিয়া আসি।
এখন একটু চোখ বুইজা ক্লাস নাইন টেনের সায়েন্সের বইতে ফিশন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে কি পড়ছিলেন মনে কইরা দেখেন! রিএক্ট্ররের ভিতর আপনে ডান্ডায় ডান্ডায় ইুউরেনিয়াম ভরেন, তারপর নিউট্রন দিয়া ঠুয়া মারতে থাকেন। ইুউরেনিয়াম ২৩৫ ভাগ হইয়া অপেক্ষাকৃত হালকা নিউক্লিয়া বিশিষ্ট অনুতে ভাগ হইয়া যায় আর লগে একটা নিউট্রন স হ প্রচুর পরিমান তাপ আর গামা রশ্মি বিকিরন করে।
এরকম কইরা রিএকশন চলতে থাকে, আর যতক্ষন না ইউরেনিয়ামের ডান্ডা শেষ না হয় ততক্ষন উৎপন্ন নিউট্রন গুতাগুতি কইরা প্রচুর পরিমান তাপশক্তি উৎপন্ন করে। এইটারে বলা ক্রিটিক্যাল কন্ডিশন।
এই তাপ পানির ডিব্বার পানিরে দুরত বাষ্প বানাইয়া কমপ্রেসারের ভিতর দিয়া গিয়া প্রচুর চাপে টারবাইনের প্রপেলারে গুতাইতে থাকে। ফলে প্রপেলার ঘুরা শুরু করবো পাগলা ঘোরার মতো আর প্রপেলারের সাথে থাকা জেনারেটরের রোটরও ঘুরা শুরু করবো ফলে বিদ্যূৎ উৎপন্ন হওন ছাড়া আর গতি থাকবো না! পরে সেইটা সাবষ্টেশন দিয়া বিভিন্ন জায়গায় ভাগ হইয়া যায় আর আপনের আমার ঘরে বাত্তী না জ্বললেও ফেসবুক চালানীর লিগা ল্যাপি অন থাকে!
কিন্তু কথা হইলো আমরা যদি এই রিএকশন নিয়ন্ত্রন না করি তাইলে সেটা একখান নিউক্লিয়ার বিষ্ফোরন ঘটাইবো! তাই এটা নিয়ন্ত্রন করার জন্য মডারেটর রড ব্যাবহার করা হয়।
যাই হোউক কথা এইটা না, কথা হইলো এই যে রিএক্টরের ইউরেনিয়াম ভাংলে যেসব বর্জ্য পাওয়া যায় এগুলা খুবই তেজস্ক্রিয় থাকে।
ঐগুলার ক্ষয়িষ্ঞু কাল রিএক্টরের জ্বালানী ব্যাবস্হাপনার উপর নির্ভর করে। খুব ভালো করে রিএক্টর ডিজাইন করলেও যে জ্বালানী পাওয়া যায় সেটার ক্ষয়িষ্ঞু কাল থাকে ১০০০০ বছর। তার মানে ১০ হাজার বছর ধরে এটা মাটির নীচে তেজষ্ক্রিয়তা ছড়াতে থাকবে। আর যেহেতু আমরা নিজেরা মাথা খাটাইয়া কোনো আইসোটোপ কি কাজে ব্যাব হার করে সেটা জানি না (যদিও বাংলাদেশ পরমানু কমিশন এসব আইসোটোপ দিয়া কৃষিকাজের জন্য খুবই সংবেদনশীল বীজ গবেষনায় তারা ব্যাব হার করে) সেহেতু এটা রাশিয়ারে ফেরত দেয়ার আশায়ও কিছু দিন বোগলে রাইখা দিতে হবে!
কিন্তু এটার জন্য এই এডিএস টেকনোলজী বেশ কার্যকর। আগে শুনি এটা কিভাবে কাজ করে।
এটার জন্য রিএক্টরের ডিজাইনে একটা প্রোটন এক্সিলারেটর ব্যাবহার করা হয়। এই প্রোটন এক্সিলারেটর ১ থেকে ২ বিলিয়ন ইলেক্ট্রনভোল্ট এনার্জীর বীম নির্গত করবে যেটা সোজা গিয়া পড়বে রিএক্টরের ইউরেনিয়াম ২৩৫ কোরের সাথে ভারী মেটালের উপর। প্রত্যেকটা প্রোটন কনা টার্গেটের উপর পইড়া আরও ৩০ টা নিউট্রনের নির্গমন করাইবো। এরপর প্রোটন বীম বন্ধ কইরা দাও, এবং এই প্রসেস খান বন্ধ হইয়া যাইবো। এরকম কইরা হুট কইরা বন্ধ কইরা দিলে রিএক্টর নিজে নিজে চেইন রিএকশন চালাইতে অক্ষম হইয়া যায়।
এই কন্ডিশন রে বলে সাব ক্রিটিক্যাল!
এই এডিএস টেকনোলজী এই থিওরীতেই কাজ করে। এই সবক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে অতিরিক্ত নিউট্রন গুলো তখন রিএক্টরের ভিতর থাকা যেসব বর্জ্য তৈরী হয় ওগুলোকে আরও ভাংতে থাকে। ফলে এগুলার আয়ু কইমা যায়।
সাধারনত এসব বর্জ্যের আয়ু থাকতো ১০ হাজার থেকে ৩ লক্ষ বছর সেখানে এই টেকনোলজী ব্যাব হার করে এর বয়স করে ফেলা হয় মাত্র ৫০০ বছরে!
তয় সমস্যা হইলো এই এক্সিলারেটরের অনেক দাম আছে! কয়েক মিলিয়ন ডলার এইটার পিছনে চইলা যাবে!
সাধারনত ৯৪.৫% ইউুরেনিয়াম আর ১% প্লুটোনিয়াম মিশ্রনের জ্বালানি দিয়ে বানিজ্যিক কাজে ব্যাবহ্রত একটা রিএক্টর তিন বছরের মতো চলতে পারে। পরে সেখান থেকে বর্জ্য বা ব্যাবহ্রত জ্বালানী বের করে এনে পুতে ফেলা হয়।
তার আগে এখান থেকে বেচে থাকা অবশিষ্ট ইউরেনিয়াম, নেপচুনিয়াম আর প্লুটোনিয়াম রাসায়নিক ভাবে আলাদা করে আবারও জ্বালানী হিসেবে পুনরায় ব্যাব হার করা হয় আর বাকী যা থাকে তাতে মূলত আমেরিসিয়াম আর কুরিয়াম থাকে। এডিএস টেকনোলজীতে এই আমেরিসিয়াম আর কুরিয়ামকে আরও ভেঙ্গে ফেলা হয়। এর মধ্যে কুরিয়াম হলো সবচেয়ে বেশী তেজর্ক্রিয় পদার্থ আর আমেরিসিয়াম হলো সবচেয়ে বেশী পরিমান থাকা পদার্থ যার ক্ষয়ের সময় ১০০০০ বছর।
তবে এই টেকনোলজীকে আরও দক্ষভাবে কাজে লাগানোর জন্য অনেকে আবার ভাবতেছে ইউরেনিয়ামের বদলে থোরিয়াম ব্যাব হার করলে। অনেকেই থর নামের হলিউড মুভিটা দেখছেন।
থর হইলো একজন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান গড যার নামের সাথে মিল রাইখাই নরওয়েজীয়ান বিজ্ঞানীরা এই মৌলিক পদার্থে নাম রাখছে থোরিয়াম।
থোরিয়াম২৩২ ব্যাব হার করার সুবিধা হলো:
১) এটা ইউরেনিয়ামের মতো এতো দুর্লভ না!
২) রিএক্টর বন্ধ করলেই চেইন রিএকশন বন্ধ, তাই কোনো দুর্ঘটনার প্রশ্নই আসে না।
৩) এই জ্বালানী ব্যাবহার করে যে বর্জ্য উৎপন্ন হয় সেগুলোর আয়ূষ্কাল ইউরেনিয়ামের ২৩৫ এর চেয়ে কম!
৪) ধরেন কোনো দিন আমরা নিউক্লিয়ার অস্ত্র বানাতে গেলাম তখন ফিসিবল ফুয়েল যদি আমরা বাইর করতে যাই খুব স হজে বের করা যাইবো!
৫) ভারত হইলো এর উপর সবচেয়ে বড় গবেষনাকারী দেশ। চায়না কেবল আগানো শুরু করছে! তো দাদাগো পাচাটলে কিছু থোরিয়াম মাগনা পাওয়া যাইতে পারে!
বেলজিয়ামের মিরফা প্রজেক্ট
মিরফা প্রজেক্ট হইলো এই হাইব্রিড রিএক্টরের বানানোর জন্য পয়লা দেশ যারা মূলত একখান ৬০০ মিলিয়ন ইলেক্ট্রন ভোল্টের প্রোটন বীম সাপ্লাই দেওনের জন্য প্রোটন গান বসাইতে আছে যার সাথে থাকবো একটা ভারী ধাতব টার্গেট আর একটা নিউক্লিয়ার কোর। ২০২৩ সালে এইটা চালু হবে!
ফটুক দেখেন রিএক্টরের!
এই টেকনোলজী বসানো নিয়া অনেকেই পায়চারা করতেছে! জানি না আমরা কবে করমু!
সূত্র:
উইকি ১
উইকি ২ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।