আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রণয় বা পরিণাম

পশুরা পালায়, মানুষ রুখে দাঁড়ায়....... মধ্য রাতের আর বেশী দেরি নেই। রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছি। হাতে এক বিন্দু আগুন। কিছুক্ষণ পর পর আগুনে টান দিচ্ছি। এদিকে রাস্তা পুরো জনশূন্য।

কেবল কিছু কুকুর ঘুরাঘুরি করছে। আমার হাতে একটা ব্যাগ। পরিকল্পনা ছিল ফাঁকা রাস্তা পেতেই কোথাও ছুড়ে ফেলে দেব ব্যাগটা। অনেকক্ষণ হয়ে গেল। কেন জানি এখনও ব্যাগটা ফেলা হয় নি।

ফেলে দিতে নিলেই কেবল মনে হচ্ছে সাথে থাক না আরও কিছুক্ষণ। আমি বরাবরের মতই সম্পূর্ণ শান্ত। উত্তেজনা বা বিষন্বতার মুহূর্তগুলোতে কেন জানি আমার স্নায়ুগুলো একদম শিথিল হয়ে যায়। বিপদে বা উত্তেজনায় এরকম শান্ত থাকার কারণেই হয়তোবা সাদিয়ার নজরে পড়ে ছিলাম আমি। বছর দুই আগের কথা।

সাদিয়া সেধে নিজেই এসেছিল আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে। আমারও ভালো লেগে যায় মেয়েটিকে। এরপর বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা। ভালোবাসা থেকে আরও কাছে আসা। একান্ত কিছু সময় কাটানো।

এভাবেই চলছিল আমাদের জীবন। এর মধ্য সাদিয়া একদিন আমাকে অবাক করে দিয়ে জানালো আমি বাবা হতে যাচ্ছি। ওর মায়াবী চেহারা আনন্দে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আমি ঠিক এখনকার মতই শান্ত ছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না ভুলটা কোথায় হয়েছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই যা ভাবছিলাম তাই হল। সাদিয়া বলল, ওকে আজই বিয়ে করতে হবে। আমার কাছ থেকে কোন জবাব না পেয়ে ও কেমন যেন কুঁকড়ে গেল। বলল, "তাহলে কি সবই অভিনয় ছিল? তুমি আমাকে কখনও ভালোবাসো নি? কখনও বিয়ে করতে চাও নি?" আমি বললাম, “আমি তোমায় ভালোবাসি এবং বিয়েও করব, তবে আজ না। লেখাপড়া শেষে যেদিন নিজের পায়ে ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারব সেদিনই আমি তোমায় বিয়ে কবর সাদিয়া।

এর আগে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা একসাথে তিনটি জীবনকে নরকে পরিণত করার কোন মানে হয় না। “ ও কেঁদে দিয়ে বলে ছিল, "এখন আমার কি হবে? আমি যে কাউকে মুখ দেখাতে পারব না। নিজেকে শেষ করে দেওয়া ছাড়া আমার কাছে যে আর কোন পথ খোলা রইল না। " আমি বললাম "তোমার নিজেকে শেষ করতে হবে না সাদিয়া।

তবে..." তবে বলতেই বলে উঠেছিল ও, "তবে তবে কি?" ওর কণ্ঠে একই সঙ্গে আশা ও আশঙ্খা টের পেয়েছিলাম সেদিন। বললাম, "আমাদের ওকে শেষ করে ফেলতে হবে সাদিয়া। এছাড়া আর কোন পথ নেই। " "তুমি আমাকে আমার সন্তানকে খুন করতে বলছ? তুমি কি মানুষ?" অঝোরে কাঁদছিল ও। অনেক বাকবিতণ্ডার পর রাজি করিয়েছিলাম ওকে।

যা ফলাফল এখন আমার হাতের ব্যাগের মধ্যে। এর কিছু দিন পর, আজ ঘণ্টা দুয়েক আগে আমরা আমাদের সন্তানকে খুন করেছি। সাদিয়াকে ওর এক বান্ধবীর বাড়িতে রেখে আমি এসেছি মাংস খন্ডটাকে আস্তা কুড়ে ফেলে যেতে। ভাবতে ভাবতে অনেক দূর চলে এসেছি। আর দেরি করা যায় না।

সামনে একটা ডাস্টবিন দেখা যাচ্ছে। আসে পাশে কিছু কুকুর ময়লা খুড়ে খাচ্ছে। আমি ডাস্টবিনের কাছে গিয়ে হাতের ব্যাগটা ছুড়ে মারলাম ওর ভেতর। ডাস্টবিনের গায়ে বাড়ি খেয়ে ব্যাগটা বাইরেই পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে কিছু কুকুর হামলে পড়ল এর উপর।

আমার সন্তানের উপর। । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।