বর্তমানে পৃথিবীতে নয়, শুধুমাত্র আমাদের সুজলা সুফলা বাংলাদেশে এক আলোচিত- সমালোচিত থেকে একদম চিৎ করে দেয়া শব্দ হচ্ছে "ব্লগার!" ব্লগার আর ব্লগিং এখন "মূর্তিমান" আতঙ্ক নয়, এক "শক্তিমান" আতঙ্কের নাম! "বাবা, তুমি কি করো?" "জি মানে টুকটাক ব্লগে লিখি!" এই উত্তর শুনার পড় মানুষ এমনভাবে তাকায় যেন আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের কিডনি বিক্রি করি! তাও মৃত মানুষের কিডনি না, আমি যেন জোর করে জীবিত মানুষের শরীর থেকে কিডনি ছিনিয়ে নিয়ে বিক্রি করি! যাই হোক, ব্লগার শব্দটা যেভাবে আতঙ্ক ছরাছছে মানুষের মনে, তাতে ভবিষ্যতে কি ধরনের অবস্থা হতে পারে তা চিন্তা করেই আমার এই লিখা--- ১. ভবিষ্যতে বিজ্ঞাপনের ভাষা পরিবর্তন হবে- ছেলের ৯৯% ভাল, শুধুমাত্র টুকটাক ব্লগিং করে আরকি! আধুনিক ছেলে তো! ঘটকের মুখে এতটুকু শুনেই মেয়ের বাবা মা খুব সম্ভবত মূর্ছা যাবেন! ২. মায়েরা ছোট বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানোর সময় বলবেন " জলদি ঘুমাও, তানাহলে ব্লগার সাকিব এসে তোমাদের হাউ মাউ করে গিলে খাবে! " যদিও সত্য কথা হল, ভাত আমি এখনও সরাসরি গিলতে পারি না, পানি লাগে! সেখানে মানুষ গিলি ক্যামনে? ৩. ছোটবেলায় বাবা মারা বলতেন- জঙ্গলে বা ওইখানে যেও না, ভূত জিন আছে! এখন থেকে বলবেন- জঙ্গলে যাবি না খবরদার! ওইখানে ব্লগারদের আড্ডা হয় সন্ধার পর! ভয়াল, কুৎসিত- এক এক জন ব্লগার! ৪. এরপরেও যদি ছেলেমেয়েদের আটকানো না যায়, লুকিয়ে লুকিয়ে তারা যদি ব্লগিং এর মত খারাপ কাজ (!?!?) করতেই থাকে এবং একদিন পাশের বাসার অ্যান্টি বাসায় এসে বলে " ভাবি , ভাবসিলাম আপনার ছেলেটা ভাল! জানেন সে কি করে? লুকিয়ে লুকিয়ে ব্লগিং করে! ছিঃ ছিঃ ভাবি! আপনার ছেলে এমন হবে, এমনটা ভাবিনি!" এই শুনে আমাদের সকলের ইমোশনাল মায়েরা বলবেন " তুই এই কাজ করতে পারলি বাবা? পারলি বাবা মার মুখে এভাবে চুলকানি থুক্কু চুনকালি দিতে? এ জন্য তোকে খাইয়ে পড়িয়ে মানুষ করেছিলাম- এই দিন দেখার জন্য? ও খোদা- এই দৃশ্য দেখার আগে আমার মরন হল না কেন?!?!? কেন? কেন ? কেন? ( হিন্দি সিরিয়ালের রিপিটেশন হবে !) এই সময় কপাল খারাপ হলে যদি পিতা মহোদয় অফিস থেকে আসেন আর ইমোশনাল মা চিৎকার করে বলেন " ওগো শুনছো! কি করেছে আমাদের খোকা! যাকে নিয়ে তোমার এত আশা ভরসা, সে কিনা ব্লগিং করেছে!" বাবা হয়ত আরও ইমোশনাল হয়ে বুকের বাম পাশে হাত রেখে অতি কষ্টে চি চি করতে করতে বলবেন " কি?!?!? তুই এই কাজ করতে পারলি??!? এর চেয়ে তুই যদি সারারাত মদ খেয়ে বাড়ি ফিরতি, তাহলেও আমি অত কষ্ট পেতাম না! বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে! আমি তোকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলাম! আমাম সম্পত্তিতে তোর কোন অংশ থাকবে না! ইদ্রিসের মা! তুমি ইদ্রিসকে চলে যেতে বল..! আমি আর ওর মুখ দেখতে চাই না! " এই শুনে ছেলের প্রস্থানে উদ্যোগ, পিছন থেকে হয়ত মায়ের ডাক " খোকা!!! যাসনে! ফিরে আয়!" নাহ.! আর ভাবতে পারছি না আমি সেই দৃশ্য! ৫. বাংলা সিনেমায় ও এই ব্লগ নিয়ে চেঞ্জ আসবে অবশ্যই! ছবির নাম "রাজু কেন সন্ত্রাসী" এর বদলে ছবির নাম "রাজু কেন ব্লগার" হবে! ছবির সংলাপে নায়ক বলবেন " পৃথিবীতে কেও নিজের ইচ্ছায় বা জন্ম থেকে ব্লগার হয় না! আমি কি নিজের ইচ্ছা ব্লগার হয়েছি? আমাকে ব্লগার বানিয়েছে এই নষ্ট সমাজ! সব ই নষ্ট সমাজের দোষ!" এই বলে হাউ মাউ করে কাঁদতে কাঁদতে নায়িকার কাঁধে আস্তে করে মাথা রাখার সিন! ৬. সংলাপে আরও অনেক পরিবর্তন আসবে " চৌধুরী সাহেব! আমরা ব্লগার হতে পারি, কিন্তু আমাদেরও মান সম্মান আছে!" কিংবা চৌধুরী সাহেবের সংলাপ " সামান্য ব্লগার হয়ে তুমি আমার মেয়ের দিকে হাত বাড়াও! এত বড় হাত তোমার! ব্লগ লিখতে লিখতে হাত বেশি লম্বা হয়ে গেছে তাই না সুলেমান? " লাস্টের সিনে পুলিশ এসে যখন বলে " আইনের হাত অনেক লম্বা" এখন থেকে কি সেখানে বলবে " ব্লগারের হাত অনেক লম্বা!?!?" ৭. অবস্থা হয়ত এত খারাপ হতেও পারে যে মেয়েরা ব্লগার ছেলেদের দিকে আর ফিরেও তাকাবে না! দুই বান্ধবী গল্প করছে - " এই ওই ছেলেটাকে দেখেছিস? "কোন ছেলেটা?" "আরে ঐযে! চেক শার্ট আর জিন্স পড়া! আমার দিকে কীভাবে ডেব ডেব করে তাকিয়ে আছে দেখেছিস! আল্লাহ্ ছেলেটা কি সুইট দেখতে! এই চলনা একটু কথা বলে আসি! " "আরে করছিস কি?!?!? ওই ছেলের পরিচয় জানিস? ও তো ব্লগার!" " নাআআআআআআ!>!?!!? এ তুই কি শোনালি? ও খোদা, আমাকে তুমি উঠিয়ে নাও! এর চেয়ে একটা প্লেবয় হলেও ভাল হত! কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্লগার!?!? " "কাঁদিস না বান্ধবি! শিট হেপেন্স!" জানিনা আর কি কি হতে পারে! এবার কিছু সিরিয়াস কথা বলি, একান্ত নিজের অভিমত, কোন আস্তিক নাস্তিক ক্যাচালে যেতে চাছছি না, যার যার বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়ে সে সে থাকুন, ধর্মান্ধদের দেখতে পারি না, অনর্থক ধর্মকে গালি গালাজ করা ( যুক্তি তর্কে না গিয়ে) ধর্মবিদ্বেষীদেরও ভাল্লাগে না! কিন্তু যেটা বিশ্বাস করি, লিখার বিপরীতে লিখা আসবে, যুক্তির বিপরীতে যুক্তি আসবে! সে আপনার আদর্শের বিপক্ষে একটা বই লিখসে বা সামুতে একটা পোস্ট দিসে? আপনি আপনার আদর্শের পক্ষে ১০ টা বই বা সামুতে ১০০ টা পোস্ট দেন! মানা করছে কে? আর যারা ধর্মকে অনর্থক গালাগালি করেন তারা আমি জানি ব্লগ ফেসবুকের শুরু থেকেই করেন, এতদিন এদের কিছু না বলে এখন তাদের গ্রেপ্তার করার মানে আশা করি বুঝিয়ে বলতে হবে না! সরকারের বিরুদ্ধে যেই লিখবেন, তাকেই সরকার নানা অজুহাতে গ্রেপ্তার করবেন- মানে কোন ধরনের সমালোচনা করা যাবে না! এটাকি মগের মুল্লক নাকি ভাই? সরকার পাদ দিলেও কি "অসাম হইসে" বইলা বিকট চিৎকার দিতে হবে? ভবিষ্যতে যে কি হবে, আল্লাহ্ জানেন! জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক, সৃষ্টিকর্তা সকলের উপর রহমত নাযিল করুন, মানুষ তার বাক স্বাধীনতা নিয়ে বেঁচে থাকুক লিখার বিপরীতে লিখা আসুক, যুক্তির বিপরীতে যুক্তি আসুক, আমাদের আদর্শে যত মতভেদই থাক, দিন শেষে আমরা ব্লগাররা যেন এক থাকি, আমাদের ওয়ান অ্যান্ড অনলি পরিচয় যাতে একটাই হয় " আমরা মানুষ!" হ্যাপি ব্লগিং গাইজ! আঙ্গুলের ব্যায়াম চলতেই থাকুক
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।