আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খুঁজে দেখুন তো......আপনার নামটি আছে কি না

লোকালয়ে মোর আলয়, তবু বাস করি অন্যলোকে চলতি পখে অনেক অদ্ভুত জিনিস আমাদের চোখে পড়ে। কখনও হয়তো আমরা ফিরে তাকাই না, কখনও দু-এক মিনিট দাঁড়িয়ে মজা দেখি, আবার চলা শুরু করি মজাদার অনুভূতির রেশটুকু নিয়ে। আবার কখনও হাতে জমা থাকে পৃথিবীর ব্যস্ততম মানুষগুলোর চুরি যাওয়া যত সময়। তখন মজার কিছু দেখলে নিজেও তার অংশ হয়ে যাই। সেদিন আমি ছিলাম মহাধনী (সময় অমূল্য ধন, সেই হিসাবে আরকি )।

ক্যাম্পাসে চক্কর দিচ্ছিলাম অকারণে। একটু পরেই আমার আজাইরা ঘুরাঘুরি সার্থক হল। ভিসি চত্বরের সামনে দেখা পেলাম এক ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টারের(বিচিত্র চরিত্র)। আমি তার নাম দিয়েছি "অক্ষর মানব"। অক্ষর মানবের সামনে ফুটপাতে সাজানো সারি সারি মানুষের নাম।

যে কেউ চলতে চলতে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে এই অপূর্ব বর্ণসজ্জা বা বর্ণশয্যার উপর। সন্ধানী চোখে খুঁজে দেখছে নিজের নামটি অথবা কোনও প্রিয়জনের নাম। কারো কারো হয়তো নাম দেখে অতীতের অনেকগুলো হারিয়ে যাওয়া মুখ মনের পর্দায় উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। ছেলেবেলার বন্ধু, শত্রু, পাশের বাড়ির মেয়েটি, মৃত কোনও আত্মীয়, স্বজন কেউ, বর্তমান সহপাঠী.............................................. একেকটা নাম যেন এক একটা জীবন্ত মানব/মানবী হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়। করে দেয় নস্টালজিক।

দেখুন ছবিগুলো- আমি নিশ্চিত, আপনিও কাউকে খুঁজছেন........ তবে আমার মনে হয় প্রত্যেকেই প্রথমে খোজেঁ তার নাম, এরপর তার মায়ের নাম, তারপর প্রেমিক/প্রেমিকা, বন্ধু, ভাইবোন, রুমমেট ইত্যাদি.........জানি না, এটা ঠিক কিনা। আপনার কী মনে হয়? আমি আর আমার সঙ্গী বন্ধু মিলে একটা মজার খেলা খেললাম। এই নামগুলোর মাঝে কতজনকে আমরা চিনি। দেখা গেল প্রায় সব্বাই আমাদের পরিচিত। তবে দুঃখের কথা, আমাদের দুজনার কারোরই নাম তাতে ছিল না।

এবার আসল মানুষটার কথা বলি। মানুষের নাম বেচে ভাত খাওয়া এই মানুষটির সাথে আমার কথোপকথন নিম্নের মত হুবহু (এই ফাঁকে রিপোর্টটারের ভাবটা নিলাম ) : চাচা আপনার নাম কী? -আমার নাম আবু কালাম আসাদ। বাড়ি? -যশোর জেলায়। আপনার মাথায় এই আইডিয়াটা কীভাবে আসল? মানে আপনি কী মনে করে এই জিনিসটা করলেন? -অনেকদিন যাবত আমি এই ব্যবসা করি। প্রায় ৮/৯ বছর ধরে ব্যবসাটা করি।

এই ব্যবসার মধ্যে আগে বেচতাম ওই যে সিনারী, কলমা, এই কাঠের মধ্যেই, নামাজ বেহেস্তর চাবি, এইগুলা থাকত, লাভ(এল ও ভি ই), তা ওটা করতে করতে করতে করতে ভাবলাম যে এটার পরিবর্তে একটা নাম, মানুষের নাম হোউক, করার একটা উদ্যেগ নিলাম। এই নামগুলা আপনি কীভাবে সিলেক্ট/বাছাই করলেন যে, কী কী নাম বানাবেন? -এই নামগুলা সেলেক্ট করলাম যে যেসব জায়গায় দোকান নিয়ে বসি, তা মধ্যে নাম চায়। এই নাম দেন, একেবারে এই রকম, তো এরকম করতে করতে মাথায় আইডিয়া আসল যে এটা যদি করি, এই উদ্যেগটা যদি নেই, তাহলে এই নামগুলা পড়বে আরকি। মানে এই নামগুলাই আপনার কাছে বেশি আসছে এই পর্যন্ত? -না না। নাম এগুলা সব আমি নিজের উদ্যেগে করছি আরকি।

মানে একেকজন, আপনি আইসা বললেন, এই নামটা নাই? আমার ওইটা মাথায় ঢুইকা রইল যে এইগুলা নাম চায়। তারপর আপনি বাসায় যেয়ে ওইটা তৈরী করলেন..... -হ্যাঁ। বাসায় যায়ে আবার আমি ওইটা ডিজাইন করি আরকি। আচ্ছা। আপনার এইভাবে বিক্রি কেমন হচ্ছে? -হয়।

দৈনিক এইখানে সাতশ আষ্টশ টাকা দৈনিক। আর মেলায় তো আপনার যায়া ভাল বিক্রি হয়। সব অক্ষর আপনি নিজেই বানান। তার মানে আপনি লেখাপড়া শিখেছেন? -লেখাপড়া ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত করছি আরকি। এখানে দেখতে পাচ্ছি বাংলা, ইংলিশ, আরবী নাম.......তিনটা ভাষাই আপনি জানেন? -হ্যাঁ, ইংরেজী, বাংলা, বাংলা স্বরবর্ন্, ব্যঞ্জনবর্ন, আরবী কলেমা সবই হয়।

সেট নাই তো ওইটার, সেজন্য ওটা ভিতরে রাইখা দিছি। আপনাকে যদি কেউ বলে, তাৎক্ষণিকভাবে আপনি কি তৈরী করে দিতে পারেন? -না, তাৎক্ষণিকভাবে এইটা পারি যেমন ধরেন, লেখা আছে মনিরা, মনির করা যাবে 'আ'কারটা ফালায়ে। যেরকম মাসুমা আছে, 'আ'কারটা ফালাইলে মাসুম হবে। মানে যন্ত্রপাতি আপনার কাছে সব থাকে? -এই হেক্সো বেলেড নিয়া বসি আরকি। যেটা চায় আরকি ওটা কাইটা 'আ'কার ফালাই।

আপনার নাম এইখানে আছে চাচা? -.....ছিল। বিক্রি হয়া গেছে। অনেক ধন্যবাদ চাচামিয়া। কত বিচিত্র মানুষ! কত বিচিত্র তার কাজকর্ম! বিচিত্র বিচিত্র একটা ভাব নিয়ে বিদায় নিলাম এই অক্ষর কারিগরের কাছ থেকে। আর যাবার আগে আমার আর আম্মুর নামটা(জ্যোতি) জানিয়ে আসতে ভুলিনি যেন পরবর্তীতে হাজারো নামের মিছিলে আমরাও ঠাঁই পাই।

কেমন লাগল অক্ষর মানবের কীর্তি? হয়তো আপনার সাথেও দেখা হয়ে যেতে পারে। তখন প্রিয় মানুষের নামটি কিনে তাকে চমক উপহার দিতে ভুলবেন না কিন্তু! আমার পোস্ট শেষ আরকি ------------------------------------------------------------ আপডেট: আজ(৩তারিখ, ভাষা শহীদের মাস) স্বপ্নপুরীতে গিয়ে এ ধরণের আরও অনেক শিল্পকর্ম খুঁজে পেলাম: কাঠের উপর গ্লিটারের প্রলেপ দেওয়া: যারা নিজেদের নাম খুঁজে না পেয়ে গোমড়া মুখের ইমো দিয়েছিলেন, তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ- আবারো বাইছ্যা লন: খুঁইজ্যা লন.........: আর সব শেষে আমারটা! স্বপ্নপুরীতে যেয়ে আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে (শূধূ একটা আ'কারের বাহূল্য রইল, এই আরকি!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।