প্রবাসী
ভারতীয় পন্য বর্জনের শ্লোগান ইদানীং খুব বেশী আলোচিত হচ্ছে। যে কারনে এ প্রসংগ আলোচনাতে আসছে তা হল চাপাইনবাবগঞ্জের হাবিবুর রহমানের উপর ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স বা বি এস এফ এর অকথ্য অত্যাচার।
প্রথমেই আমরা দেখি কি কি ভারতীয় পন্য আমরা ব্যবহার করি। সবেচে বেশী আমদানী হয় তুলা , সূতা বা কাপড়- ( গত অর্থ বছরের আমদানীকৃত ৪৫৮ কোটি ডলারের ভারতীয় পন্যের মধ্যে – ১৫০ কোটি ডলার) এ আমদানী না করে উপায় নেই। কারন হল আমাদের গার্মেন্টস শিল্প, যা আমাদের রফতানীর ৮০% শতাংশ তা বন্ধ হয়ে যাবে যদি আমরা ওগুলো না আমদানী করি।
বিকল্প উৎস কি হতে পারে এই পন্যগুলোর। তুলা এবং তূলাজাত পন্য আমদানীর বিকল্প উৎস হিসেবে কাজাখস্থান এবং পাকিস্তান থেকে তুলা সূতা এবং কাপড় আমদানী করা হয়েছিল কিন্তু সেখানে দেখা গেল ভারত থেকে আমদানী করতে যে পরিমান খরচ হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশী খরচ হচ্ছে ঐ দেশ গুলো থেকে আমদানী করতে। দ্বিতীয় যে পন্য তা হল যানবাহন এবং যন্ত্রাংশ। নিসন্দেহে ভারতীয় যানবাহনের তুলনায় জাপানী যানবাহন অনেক উন্নতমানের। কিন্তু এখানে সমস্যা হল জাপানী পন্যের চেয়ে ভারতীয় যানবাহন সস্তা এবং এর খুচরা যন্ত্রপাতি সহজলভ্য।
ফলে ক্রমে ক্রমে জাপানী যানবাহনকে হটিয়ে দিচ্ছে ভারতীয় যানবাহন। ইতিমহধ্যেই মিনিবাস এবং ট্রাকের ৯০% এর ও বেশী ভারতীয়। ট্যাক্সি বা সেডান গাড়ি যদি আমরা দেখি জাপানী গাড়ী অনেক বেশী টেকসই এবং নির্ভর যোগ্য। সেই জাপানী কোম্পানী গুলো ভারতে তাদের কারখানা বসিয়ে তৈরী করছে একই মানের গাড়ী, কিন্তু দাম হচ্ছে অনেক কম। ফলে আশঙ্কা হচ্ছে যে অদুর ভবিষ্যতে এ গুলোও চলে যাবে ভারতীয়দের দখলে।
তৃতীয় স্থানে আছে খাদ্যশস্য যেমন চাল,ডাল, গরু,পিয়াজ ইত্যাদি। আমরা এ গুলো আমদানী করি আমাদের ঘাটতি মেটাতে। এই পন্য গুলো আমাদের দেশে উৎপন্ন হয় কিন্ত তা যথেস্ট নয়। ফলে আমদানী করতে হয়। আমরা ভারত থেকে আমদানী করি কারন আমরা তা অপেক্ষাকৃত কম দামে আমদানী করতে পারি।
উদাহরন স্বরুপ বলা যায় যে তুরস্ক থেকে আমদানীকৃত পিয়াজের দাম ভারতীয় পিয়াজের দামের প্রায় দ্বিগুন। ফলে আমরা খাদ্যশস্য ভারত থেকে আমদানী করি।
ভারতের সাথে বানিজ্য আজ এমন পর্য্যায়ে চলে গেছে যে আমাদেরকে রফতানীর চেয়ে ১০ গুন বেশী আমদানী করতে হয় ভারত থেকে। ফলে আমরা ক্রমশঃ ভারত নির্ভর হয়ে যাচ্ছি। ভারতের সাথে এই বানিজ্য ঘাটতি নিসন্দেহে উদবেগের কারন।
প্রশ্ন হল আমরা কিভাবে এটা কমাতে পারি। ভারতে রফতানী বাড়িয়ে এবং ভারত থেকে আমদানী কমিয়ে। বাংলাদেশের প্রধান রফতানী দ্রব্য হল পোষাক। তার খুব ভালো বাজার ভারতে নেই। কারন হল ভারত নিজেও পোষাক রফতানী কারক দেশ এবং ননট্যারিফ ব্যারিয়ার।
যদিও ভারত বেশী পরিমান পোষাক বাংলাদেশ থেকে আমদানী করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তা বানিজ্যে ঘাটতি পূরনে কতটুকু ভূমিকা রাখবে?
ভারতীয় পন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে বিকল্প কিছু আমাদেরকে খুজে বার করতে হবে। যা যা আমরা আমদানী করি তা দেশেই উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি দেশি পন্য পাওয়া যায় ভারতীয় পন্য কেউ কিনবে বলে মনে হয় না। সুতরাং ভারত নির্ভরশীলতা কমাতে আমাদেরকে প্রথমে বিকল্প উৎস খুজে বার করতে হবে। যেমন ভারত থেকে গাড়ী আমদানী না করে দেশেই গাড়ীর কারখানা স্থাপন করতে হবে ।
ওয়ালটন মোটর সাইকেল তৈরী করছে , আশা করছি ভবিষ্যতে আমাদের দেশে গাড়ীও তৈরী হবে। প্রথম এবং শেষ কথা হল আমাদের প্রয়োজন আমাদেরকেই মিটাতে হবে, আমদানী করে নয়। আর যদি আমদানী করতে হয় সেখানে কিন্তু ভৌগলিক এবং সস্তা দামের কারনে ভারতীয়রা অগ্রাধিকার পেয়ে যাবে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।