আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সালতামামি ২০১১

অনির্দিষ্ট কালের জন্য আমি ছুটিতে.... ২০১০ যদি হয় না পাওয়ার বছর, ২০১১ তবে সব পাওয়ার বছর। ২০১০ এর রঙ ছিল কাল আর নীল, ২০১১ এর রঙ লাল আর হলুদ। ২০১০ এর ২৫ শে অক্টোবর, MCAT এর রেজাল্ট আমারে ২০ নং প্রজাতির বাঁশ দিলো। আমি তখন যাকে বলে "ছ্যাকা খায়া ব্যাকা"। ঢাবিতেও সিরিয়াল ভাল আসলো না।

আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে জাবিতে প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান পাইলাম। ডুবন্ত মানুষ যেমন খড়কুটোয় আঁকড়ে ধরতে চায়, আমি তেমনি জাবিকে ধরে ভাসতে থাকলাম। সেখান থেকেই ২০১১ এর শুরু... জানুয়ারি ২০১০ পর্যন্ত জীবন থেকে আমার যে উপলব্ধি তা হল, "জীবনে অবসর বলে আসলে কিছু নাই। যা করতে চাও, করে ফেলবা -জমায়ে রাখলে সেটা কোনদিনই করা হয়ে উঠবে না। " জাবির একটা অলিখিত নিয়ম হল ভর্তি টিকিয়ে রাখার জন্য ন্যূনতম ১০ দিন ক্লাস করতে হয়।

দশদিন খুবই কম সময়, তবে এই দশদিনে ভার্সিটি লাইফের ফ্লেভার যতটুকু নেওয়া যায় তা নেওয়ার চেষ্টা করছি। জাবির ক্যাম্পাস আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর ক্যাম্পাস। সুন্দর কিছু মানুষকেও পেলাম বন্ধু হিসেবে। কল্পনা খালামনিরা চার বছর পর আসলো দেশে। আমার বাংলাদেশি বোন আর কানাডিয়ান ভাইটার সাথে মজা করতে করতেই জানুয়ারি শেষ হয়ে গেল।

ফেব্রুয়ারি আমার প্রতিদিনকার রুটিন এরকম যে আমি বাংলা একাডেমিতে যাই, বই নাড়াচাড়া করি, প্রতিদিন একটা-দুইটা বই কিনে মেসে ফিরি। কোচিং এর পড়া ফেলে, নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে সেই বই পড়ি। মাসের শেষ দশ দিনে এরকম অবস্থা দাড়ালো যে আমার কাছে খাওয়ার পয়সা নাই। বাসায় টাকা চাইতেও শরম করে। রাত জাগি, দুপুর ১২টা-১টার দিকে উঠি।

এতে করে সকালে খাওয়ার খরচ বেঁচে যায়। ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ একসাথে দুপুরে করি। রাতে খাই মামার দোকানে ডিম-পরটা। এইভাবে ডায়েট করতে করতে ফেব্রুয়ারি গেল... মার্চ ১০৪, আরামবাগ। আমার কলেজ লাইফের মেসে উঠে পড়লাম আবার।

পড়াশোনা চান্দের দেশে। কোচিং এর ভাইয়াদের সাথে আমি পলানটুক(Hide n Seek) খেলে যাচ্ছি। বাসায় নিয়মিত কোচিং থেকে ফোন যায়। আর আব্বার মাথায় ধরে আগুন। আব্বার একটা মজার ব্যাপার হল আমারে সরাসরি কিছু বলে না।

আম্মারে দিয়ে বলায়। আমার ক্ষেত্রেও একি কথা প্রযোজ্য। আমিও আব্বারে সরাসরি কিছু বলি না। নতুন একটা অভ্যাস হইছে - রাতে একরাশ হতাশা নিয়ে রুম থেকে বের হই, নটর ডেম কলেজের সামনে এক কাপ চা খাই। তারপর কলেজের চারদিকে একটা চক্কর দিয়া রুমে ফেরত যাই।

কাল থেকে পইড়া ফাটাইয়া ফালামু এরকম একটা মানসিকতা নিয়ে ঘুমাই। এবং যথারীতি ১২ টার পরে ঘুম থেকে উঠি। পোলাপাইনের সাথে মেসের নিচের ছাপাখানার দোকানে ক্রিকেট বিশ্বকাপের খেলা দেখার সময়গুলো আনন্দময় ছিল। মার্চের ৪ তারিখ তো বেশ আয়োজন করে টিএসসি তেই চলে গেলাম খেলা দেখতে। আমি যে সমর্থক হিসেবে কুফা, তা প্রমাণ করার জন্যই কি না বাংলাদেশ ওয়ানডেতে তাদের সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর করলো! এপ্রিল, মে বাসায় চলে আসছি।

এখনো পড়ার চেষ্টা চালায়ে যাচ্ছি। বই খুলি। দুই-এক পৃষ্ঠা পড়েই আর পড়তে ইচ্ছা করে না। এপ্রিল আর মে- কে আমি তাই ডাকছি - অলস এপ্রিল আর ম্যাড়ম্যাড়ে মে । জুন ঢাকা আসলাম বাসায় দীর্ঘ একটা সময় কাটিয়ে।

খুব এলোমেলো সময় পার করতেছি। কোচিং এ নিয়মিত যাওয়া হয় না। জুলাই নতুন বাসায় উঠলাম। আগস্ট আরেক দফা বাসা পরিবর্তন। সজীব্দের ওখানে উঠলাম।

এবারের জন্মদিনটা অনেক জোস ছিল। ১৬ তারিখ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করলাম। ঈদে বাসায় যাওয়া নিয়ে টেনশনে। দেশের যোগাযোগব্যাবস্থার অবস্থা কেরোসিন। যাহোক শেষ পর্যন্ত যাওয়া হল।

পরীক্ষার টেনশনরে দূরে খেদাইয়া বন্ধুদের সাথে অনেক মাস্তিভরা সময় পার করলাম। সেপ্টেম্বর চোখে সরষে ফুল দেখতেছি। বলদের মত পড়তেই আছি, শেষ আর হয় না... সারা বছর ফাঁকিবাজির ফলাফল হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি এখন। সেপ্টেম্বরের ১৮ তারিখ আমি অভ্যাসমত চেয়ারে বসে দুলতে দুলতে কেমিস্ট্রি পড়তেছি। হঠাৎ করে দুলুনি অশ্লীল(!) আকার নিলো।

আমি ভাবলাম বোধহয় বন্ধু রাতুল দুলাচ্ছে। পিছে তাকায়ে দেখি কেউ নাই। আমার ত পিলে গেল চমকে। তারপরই আমাদের গোটা বিল্ডিং টাই একটা রামঝাঁকুনি দিলো। মোবাইলে সাথে সাথে ভূমিকম্পজনিত স্ট্যাটাস দিতে দিতে ৬ তলা থেকে এক দৌড়ে নিচের মাঠে... ৩০ তারিখ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা হল।

প্রশ্ন দেখে মাথার তার গেল ছিঁড়ে। ধুমায়া বৃত্ত ভরাট শুরু করলাম। পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে কাউকেই বলতে শুনলাম না আশির কম পাবে! আব্বুকে বলে দিলাম "বাবা, জাহাঙ্গিরনগর খুব ভাল ইউনিভার্সিটি!" অক্টোবর করুণার বারিধারা... রেজাল্ট যখন হাতে পাইলাম সবকিছু কেমন যেন স্লো হয়ে গেল। পরম করুণাময়ের অশেষ মেহেরবানি, আমি রংপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পাইলাম। নভেম্বর, ডিসেম্বর কিছুই করার নাই।

খুব বোরিং সময় পার করতেছি। খাই, দাই, ঘুমাই। বিকেলের দিকে নদীর ধারে গিয়ে বসে থাকি। সূর্যটা যখন টুপ করে নন্দকূজার ভিতরে ডুব দেয়, তখন আমি আর তন্ময় সুকুমার জ্যাঠার স্টলে গিয়ে চা খাই। কিছুক্ষণ গল্প করি।

তারপর হাঁটতে থাকি। হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে যাই। যখন ক্লান্ত হয়ে যাই। বসে বসে আকাশ দেখি। বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া করে ঘুম... আর অপেক্ষা নতুন সকালের... বছরটা চলেই গেল।

মন কিছুটা বিষণ্ণ। বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে বলে। নতুন জায়গা, নতুন মুখ। স্বভাবতই কিছুটা উত্তেজনাও কাজ করছে। নতুন বছর সবার অ-নে-ক ভাল কাটুক এই কামনায়... বিদায় ২০১১, স্বাগতম ২০১২ ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।